alt

থামছে না ঘরমুখো মানুষের ঢল

নানাভাবে ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছেন, ঘাটে ঘাটে বিজিবি মোতায়েন

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : শনিবার, ০৮ মে ২০২১

পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। মানুষ ছুটছে গ্রামে। লঞ্চ-বাস-ট্রেন না থাকায় বিভিন্ন বাহনে নদীর পাড় গিয়ে পৌঁছে। ফেরিতে এত যাত্রী বোঝাই করা হয় যে কোন মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। মাওয়া ঘাটের চিত্র -সোহরাব আলম

ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও ফেরি বন্ধের পরও থামানো যাচ্ছে না গ্রামমুখী মানুষের ঢল। শনিবারও (৮ মে) ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথেছিল ঘরমুখো মানুষের প্রচন্ড ভিড়। জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চালু থাকায় ভেঙে ভেঙে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে তাদের। মহাসড়কে বিভিন্ন নামে ব্যানার লাগিয়ে লুকিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে দূরপাল্লার বাসে। তবে যাত্রাপথে মানা হচ্ছে না কোন সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি। ফেরিঘাটে মানুষের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার (৭ মে) মধ্যরাত থেকে দিনের বেলায় ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। তবু ঘরমুখো মানুষের ঢল থামানো যায়নি- জানান সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে শনিবার যাত্রী ঠেকাতে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া এবং পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া ঘাটে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিআইডব্লিটিসির মাওয়া ঘাটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, শনিবার ভোর সাড়ে ৩টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায়ও ঘরমুখী মানুষের ঢল থামছে না। শুক্রবার শিমুলিয়া ঘাটে যেভাবে জন¯স্রোত নেমেছিল তাতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছিল। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে লাখো মানুষ ঘাটে ভিড় জমিয়েছিল; সব জায়গায় গাদাগাদি ভিড়। এমনকি অনেকের মুখে মাস্কও ছিল না। তাই ঝুঁকি এড়াতে দিনের বেলায় ফেরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও হাইওয়ে পুলিশকে টাকা দিয়ে গোপনে দ্বিগুণ ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছে কিছু আন্তঃজেলা সার্ভিস। এ বিষয়ে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘টার্মিনাল থেকে কোন বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। বিভিন্ন ‘এক্সিট পয়েন্ট’ থেকে দুই-চারটা গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। এর জন্য তো হাইওয়ে পুলিশ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে।’

লুকিয়ে দূরপাল্লার বাসে দিনাজপুরে যাওয়া আলিউল ইসলাম এক যাত্রী সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার অনেকটা ‘লুকোচুরির’ মধ্যেই দিনাজপুর যাওয়ার বাসের টিকিট পান তিনি। এর জন্য অগ্রিম টাকা দিতে হয়েছে বিকাশে। টিকিট কাটতে যেতে হয়েছে আশুলিয়ায়। আর মাইক্রোবাসে চন্দ্রা থেকে বাসে উঠতে হয়েছে। শুক্রবার রাতে রওনা দিয়ে দিনাজপুর পৌঁছেছেন শনিবার দুপুরে। তবে ৫০০ টাকার ভাড়া ১২০০ টাকা দিতে হয়েছে।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে করে গ্রামে যাচ্ছেন ঘরমুখী মানুষ। এ জন্য তাদের দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে সাধারণ সময়ের ২০০ টাকার ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৬০০ টাকা। ফেনী যেতে ৩০০ টাকার ভাড়া দিতে হচ্ছে ১২০০ টাকা। নোয়াখালী যেতে ৭০০ টাকার ভাড়া ২ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে সাইফুল নামের চাঁদপুরের এক যাত্রী জানান, ঢাকার মিরপুর থেকে সায়েদাবাদে সিএনজিতে আসতে খরচ হয়েছে ৫০০ টাকা। বন্ধ থাকায় প্রাইভেটকারে বাড়ি যাচ্ছি কিন্তু প্রাইভেটকারে ভাড়া তিন গুণ বেশি। চাঁদপুরে ভাড়া ২০০ টাকা কিন্তু এখন যেতে হচ্ছে ৬০০ টাকায়। কী করব পরিবার নিয়ে ঈদ করতে হবে। তাই বেশি ভাড়া দিয়ে বাড়ি যেতে হচ্ছে। তারপরেও বাড়িতে যেতে পারছি এটাই স্বস্তি।

নোয়াখালীর অপর এক যাত্রী বলেন, ‘গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও প্রাইভেটকারে করে বাড়িতে যাওয়া যায় শুনেছি। বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি একজন লোক নোয়াখালী, কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরে যাওয়ার যাত্রী ডাকছেন। জিজ্ঞেস করলাম ভাড়া কত? বলল, ১৫০০ টাকা কিন্তু ভাড়াটা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি।’

তিনি বলেন, ‘সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার গণপরিবহন খুলে দিলে ভালো হতো। কারণ, আমরা যারা ছোট চাকরি করি বাড়িতে আসা-যাওয়ার অনেক বেশি খরচ হওয়ায় পরিবারের ওপর চাপ পড়ছে। বাড়িতে যাচ্ছি বৃদ্ধ মা-বাবা, ছেলে মেয়ের সঙ্গে ঈদের সময়টা থাকতে পারলে ভালো লাগবে বলে।’

আনোয়ার নামের এক প্রাইভেটকার চালক বলেন, ‘সরকার গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় যাত্রীর চাপ আছে। তবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে যাত্রী আনা-নেয়া করা লাগে। পুলিশ জানলে মামলা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাবে। প্রাইভেটকারের খরচ বেশি। সেজন্য আমরা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছি। তাছাড়া রাস্তায় পুলিশ ধরলে টাকা-পয়সা দিতে হয়।’

যানজট মহাসড়কে

ঢাকা ও আরিচাগামী ছোট-বড় পরিবহনের চাপে ও গণপরিবহনগুলো ইউটার্ন নেয়ার কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে অসহ্য গরম ও সড়কের পাশে থাকা ধুলায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। এছাড়া ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম প্রান্ত থেকে সিরাজগঞ্জের নলকা মোড় পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস না কম থাকলেও প্রাইভেটকার ও ট্রাকের চাপছিল বেশি।

সিরাজগঞ্জের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আবদুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মহাসড়কে দূরপাল্লার কোন বাস চলতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে মহাসড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি ও ট্রাকের দীর্ঘ সারি রয়েছে। পুলিশ যানজট নিরসনে কাজ করছে। ঈদে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

১০ কিলোমিটার মহাসড়কেই ব্যক্তিগত গাড়ির আধিপত্য দেখা গেছে। উল্টো পথেও গাড়ি চালাতে দেখা গেছে অনেককে। বাকি নামে ঢাকা থেকে আসা এক ট্রাকচালক বলেন, সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে যানজটের শুরু হয়েছে। আমার এখানে আসতে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় লেগেছে।

স্থানীয়রা জানান, আমিনবাজার ইউটার্ন পয়েন্ট থেকে সালেহপুর সেতু পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি আটকে থাকতে হয়েছে সড়কে। এছাড়া আরিচাগামী লেনে উল্টো পাশ থেকে জরুরি সেবার অ্যাম্বুলেন্সসহ ভিআইপি গাড়িগুলো প্রবেশ করায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গাবতলী থেকে মানুষ হেঁটে এসে আমিনবাজার থেকে পরিবহনে করে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ করিম খান সাংবাদিকদের বলেন, তুলনামূলকভাবে এখন একটু গাড়ির চাপ বেশি। এছাড়া গণপরিবহনগুলো আমিনবাজার পয়েন্টে গিয়ে ইউটার্ন নেয়ার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। চেষ্টা করছি, সড়কের যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে।

ছবি

আসন ফিরে পেতে বাগেরহাটে নির্বাচন অফিস ঘেরাও, উচ্চ আদালতে রিট

ছবি

মোরেলগঞ্জে থোকায় থোকায় ঝুলছে মাল্টা, সফল উদ্যোক্তা বাশার

ছবি

আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪২৮ জন

ছবি

বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে সিলেট, শঙ্কা প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির

ছবি

নারায়ণগঞ্জে ফ্ল্যাট বাসা থেকে একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার

মাধবপুরে পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত ৬, আতঙ্কে এলাকাবাসী

নাইক্ষ্যংছড়িতে রাবার বাগানের গাছ থেকে শ্রমিকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

বাড়ছে নদীর পানি, সিলেটে বন্যার আভাস

সোনারগাঁয়ে মাদ্রাসা শিক্ষকের শরীর টিপে না দেয়ায় ছাত্রকে আটক রেখে নির্যাতন

ফ্যানে ঝুলছিলেন যুবক, খাটে স্ত্রী-সন্তানের মরদেহ, আর্থিক দুরাবস্থায় ছিল পরিবারটি

ছবি

বিরামপুরে কুকুরে কামড়ানো সগাভীর মাংস বিক্রির চেষ্টা

ছবি

রায়পুরায় ভিডব্লিউবি উপকার ভোগীদের মাঝে চাল বিতরণ

ছবি

গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নতুন ঘর পেলেন মোজাম্মেল-জহুরা দম্পতি

ছবি

আদমদীঘিতে তিন মাদক ব্যবসায়ি আটক

ছবি

রাঙাছড়া সেতু যেন মরণ ফাঁদ

ছবি

বাঁশবোঝাই ট্রাকে বাসের ধাক্কা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ৩

ছবি

উদ্বোধনের দিনই বিকল বেরোবি ভাড়া বাস

ছবি

কেন্দুয়া থেকে তিন নারীকে চীনে পাচারের চেষ্টা, আটক ২

ছবি

সারিয়াকান্দিতে বিনা মূল্যে গরু বিতরণ

ছবি

পূর্বধলায় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির সমন্বয় সভা

ছবি

কেশবপুর-কলাগাছি সড়ক বেহাল, ঘটছে দুর্ঘটনা

ছবি

মধুপুরে লাল মাটিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের পেঁপে চাষে লাভবান কৃষক

ছবি

গোবিপ্রবি ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদককে দুই সেমিস্টার বহিষ্কার

ছবি

বর্ষা মৌসুমেও দেশীয় মাছের আকাল

ছবি

পদ্মার ভাঙনে চর ছাড়ছেন বাসিন্দারা মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার শঙ্কা

ছবি

নদী খননের মাটি মজুদ রাখা নিয়ে উত্তেজনা

ছবি

রংপুরে প্রাণি সম্পদ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে প্রেজেনটেশনে শেখ মুজিব ও হাসিনার ছবি

ছবি

আড়াইহাজারে ছাত্রলীগ নেতা রবিন গ্রেপ্তার

ছবি

রায়পুরায় ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা

ছবি

সামাজিক বনায়নের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ছবি

গৌরনদীর হাট-বাজার সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি

ছবি

বাগেরহাটে অটো চালকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

নুরাল পাগলের মরদেহের ওপর তেল ছিটানো ব্যক্তি গ্রেপ্তার

ছবি

ভোলাহাটে ক্যানসার সচেতনতা সভা

ছবি

মাধবপুরে পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত ৬, আতঙ্কে এলাকাবাসী

ছবি

সিরাজগঞ্জে বাবাকে হত্যার অভিযোগে ছেলের মৃত্যুদন্ড

tab

news » bangladesh

থামছে না ঘরমুখো মানুষের ঢল

নানাভাবে ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছেন, ঘাটে ঘাটে বিজিবি মোতায়েন

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। মানুষ ছুটছে গ্রামে। লঞ্চ-বাস-ট্রেন না থাকায় বিভিন্ন বাহনে নদীর পাড় গিয়ে পৌঁছে। ফেরিতে এত যাত্রী বোঝাই করা হয় যে কোন মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। মাওয়া ঘাটের চিত্র -সোহরাব আলম

শনিবার, ০৮ মে ২০২১

ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও ফেরি বন্ধের পরও থামানো যাচ্ছে না গ্রামমুখী মানুষের ঢল। শনিবারও (৮ মে) ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথেছিল ঘরমুখো মানুষের প্রচন্ড ভিড়। জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চালু থাকায় ভেঙে ভেঙে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে তাদের। মহাসড়কে বিভিন্ন নামে ব্যানার লাগিয়ে লুকিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে দূরপাল্লার বাসে। তবে যাত্রাপথে মানা হচ্ছে না কোন সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি। ফেরিঘাটে মানুষের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার (৭ মে) মধ্যরাত থেকে দিনের বেলায় ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। তবু ঘরমুখো মানুষের ঢল থামানো যায়নি- জানান সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে শনিবার যাত্রী ঠেকাতে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া এবং পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া ঘাটে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিআইডব্লিটিসির মাওয়া ঘাটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, শনিবার ভোর সাড়ে ৩টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায়ও ঘরমুখী মানুষের ঢল থামছে না। শুক্রবার শিমুলিয়া ঘাটে যেভাবে জন¯স্রোত নেমেছিল তাতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছিল। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে লাখো মানুষ ঘাটে ভিড় জমিয়েছিল; সব জায়গায় গাদাগাদি ভিড়। এমনকি অনেকের মুখে মাস্কও ছিল না। তাই ঝুঁকি এড়াতে দিনের বেলায় ফেরি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও হাইওয়ে পুলিশকে টাকা দিয়ে গোপনে দ্বিগুণ ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করছে কিছু আন্তঃজেলা সার্ভিস। এ বিষয়ে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘টার্মিনাল থেকে কোন বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। বিভিন্ন ‘এক্সিট পয়েন্ট’ থেকে দুই-চারটা গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। এর জন্য তো হাইওয়ে পুলিশ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে।’

লুকিয়ে দূরপাল্লার বাসে দিনাজপুরে যাওয়া আলিউল ইসলাম এক যাত্রী সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার অনেকটা ‘লুকোচুরির’ মধ্যেই দিনাজপুর যাওয়ার বাসের টিকিট পান তিনি। এর জন্য অগ্রিম টাকা দিতে হয়েছে বিকাশে। টিকিট কাটতে যেতে হয়েছে আশুলিয়ায়। আর মাইক্রোবাসে চন্দ্রা থেকে বাসে উঠতে হয়েছে। শুক্রবার রাতে রওনা দিয়ে দিনাজপুর পৌঁছেছেন শনিবার দুপুরে। তবে ৫০০ টাকার ভাড়া ১২০০ টাকা দিতে হয়েছে।

সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে করে গ্রামে যাচ্ছেন ঘরমুখী মানুষ। এ জন্য তাদের দুই-তিন গুণ বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে সাধারণ সময়ের ২০০ টাকার ভাড়া গুনতে হচ্ছে ৬০০ টাকা। ফেনী যেতে ৩০০ টাকার ভাড়া দিতে হচ্ছে ১২০০ টাকা। নোয়াখালী যেতে ৭০০ টাকার ভাড়া ২ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে সাইফুল নামের চাঁদপুরের এক যাত্রী জানান, ঢাকার মিরপুর থেকে সায়েদাবাদে সিএনজিতে আসতে খরচ হয়েছে ৫০০ টাকা। বন্ধ থাকায় প্রাইভেটকারে বাড়ি যাচ্ছি কিন্তু প্রাইভেটকারে ভাড়া তিন গুণ বেশি। চাঁদপুরে ভাড়া ২০০ টাকা কিন্তু এখন যেতে হচ্ছে ৬০০ টাকায়। কী করব পরিবার নিয়ে ঈদ করতে হবে। তাই বেশি ভাড়া দিয়ে বাড়ি যেতে হচ্ছে। তারপরেও বাড়িতে যেতে পারছি এটাই স্বস্তি।

নোয়াখালীর অপর এক যাত্রী বলেন, ‘গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও প্রাইভেটকারে করে বাড়িতে যাওয়া যায় শুনেছি। বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি একজন লোক নোয়াখালী, কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরে যাওয়ার যাত্রী ডাকছেন। জিজ্ঞেস করলাম ভাড়া কত? বলল, ১৫০০ টাকা কিন্তু ভাড়াটা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি।’

তিনি বলেন, ‘সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার গণপরিবহন খুলে দিলে ভালো হতো। কারণ, আমরা যারা ছোট চাকরি করি বাড়িতে আসা-যাওয়ার অনেক বেশি খরচ হওয়ায় পরিবারের ওপর চাপ পড়ছে। বাড়িতে যাচ্ছি বৃদ্ধ মা-বাবা, ছেলে মেয়ের সঙ্গে ঈদের সময়টা থাকতে পারলে ভালো লাগবে বলে।’

আনোয়ার নামের এক প্রাইভেটকার চালক বলেন, ‘সরকার গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়ায় যাত্রীর চাপ আছে। তবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে যাত্রী আনা-নেয়া করা লাগে। পুলিশ জানলে মামলা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাবে। প্রাইভেটকারের খরচ বেশি। সেজন্য আমরা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছি। তাছাড়া রাস্তায় পুলিশ ধরলে টাকা-পয়সা দিতে হয়।’

যানজট মহাসড়কে

ঢাকা ও আরিচাগামী ছোট-বড় পরিবহনের চাপে ও গণপরিবহনগুলো ইউটার্ন নেয়ার কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে অসহ্য গরম ও সড়কের পাশে থাকা ধুলায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। এছাড়া ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম প্রান্ত থেকে সিরাজগঞ্জের নলকা মোড় পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস না কম থাকলেও প্রাইভেটকার ও ট্রাকের চাপছিল বেশি।

সিরাজগঞ্জের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আবদুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মহাসড়কে দূরপাল্লার কোন বাস চলতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে মহাসড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি ও ট্রাকের দীর্ঘ সারি রয়েছে। পুলিশ যানজট নিরসনে কাজ করছে। ঈদে গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

১০ কিলোমিটার মহাসড়কেই ব্যক্তিগত গাড়ির আধিপত্য দেখা গেছে। উল্টো পথেও গাড়ি চালাতে দেখা গেছে অনেককে। বাকি নামে ঢাকা থেকে আসা এক ট্রাকচালক বলেন, সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে যানজটের শুরু হয়েছে। আমার এখানে আসতে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় লেগেছে।

স্থানীয়রা জানান, আমিনবাজার ইউটার্ন পয়েন্ট থেকে সালেহপুর সেতু পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি আটকে থাকতে হয়েছে সড়কে। এছাড়া আরিচাগামী লেনে উল্টো পাশ থেকে জরুরি সেবার অ্যাম্বুলেন্সসহ ভিআইপি গাড়িগুলো প্রবেশ করায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গাবতলী থেকে মানুষ হেঁটে এসে আমিনবাজার থেকে পরিবহনে করে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ করিম খান সাংবাদিকদের বলেন, তুলনামূলকভাবে এখন একটু গাড়ির চাপ বেশি। এছাড়া গণপরিবহনগুলো আমিনবাজার পয়েন্টে গিয়ে ইউটার্ন নেয়ার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। চেষ্টা করছি, সড়কের যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে।

back to top