alt

ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট, বিপর্যস্ত জনজীবন

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ ও মুকুল কুমার মল্লিক : শনিবার, ১৯ জুন ২০২১

বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি-৩) বা দ্রুতগতির পৃথক বাস লেন। এটি নির্মাণ করা হচ্ছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে। গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে উত্তরা বিমান বন্দর ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেড (ডিবিআরটিসিএল)।

প্রকল্পের কাজের ধীরগতির কারণে প্রতিনিয়ত যানজটে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি শিকার হতে হচ্ছে এই মহাসড়কের যাত্রীদের।

মহাসড়কটিতে আধাঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ৩/৪ ঘণ্টা। এই দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা। নির্মাণ কাজে সড়কে বৃষ্টির পানি জমে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পানি জমে সড়কে কাঁদামাটি একাকার অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাই সড়কের পাশদিয়ে হেঁটে চলাও কষ্টকর হয়ে পড়ছে বলে স্থানীয়রা জানান।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির পাশাপাশি বিআরটি প্রকল্পের পরিকল্পনার ভুলের কারণে গাজীপুরবাসীদের এই দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক সংবাদকে বলেন, ‘কৌশলগত পরিকল্পনার (এসটিপি) বাইরে গিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিআরটি-৩ প্রথম অংশটি কেরানীগঞ্জ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু না করে আগেই গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর অংশের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই বিআরটি’র শহরে বাইরে এই করিডরে বাস্তবায়নের কথা না। বিআরটি সাধারণত শহরের ভিতরে নির্মাণ করে। দুই পৃথক র‌্যাবিয়ার দিয়ে বাসের জন্য আলাদা লেন নির্মাণ করা হয়। বিআরটি নির্মাণ সবচেয়ে ব্যয় ও সময় কম লাগে। কিন্তু আমাদের বিআরটি নির্মাণের সময় ও ব্যয় বেশি লাগছে। এর মাধ্যমে আমার রেকর্ড তৈরি করছি। এর কারণ হলো আমরা এসটিপি অনুসরণ করছি না। এসটিপি’র বাইরে গিয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’ যার কারণে বছরের পর বছর দুর্ভোগ ও ভোগান্তি শিকার হলেও তেমন কার্যকরিতা মানুষ পাবে না বলে জানান তিনি।

দুর্ভোগ ও ভোগান্তি

বিআরটি’র নির্মাণ কাজের জন্য দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে। প্রকল্পের কাজের কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এসব গর্তে যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।

সরেজমিন সড়কটির বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানিতে সড়কের বিভিন্ন অংশে পিচ উঠে গেছে। কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। এসব গর্তে জমে আছে পানি। সড়কের পাশে ও মাঝখানে জমে আছে বালুর স্তূপ। সড়কের কাছে পড়ে আছে ইটের খোয়া, বালু বা বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী। এর মধ্যেই চলাচল করছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, রিকশা, অটোরিকশাসহ অন্য যানবাহন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভয়াবহ যানজটের কারণে দৈনিক প্রায় আট ঘণ্টা করে কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষের। পর্যাপ্ত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যানজট নিরসনে দিন-রাত দায়িত্ব পালন করার পরও এ ভয়াবহ যানজট থেকে নিস্তার পাচ্ছে না নগরবাসী।

টঙ্গী প্রতিনিধি জানান, মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট কাদা ও ধুলাবালিতে নাকাল টঙ্গীবাসী। বিশেষ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী আবদুল্লাহপুর ব্রিজ থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়টি বিআরটি’র কাজের ধীরগতির কারণে এ দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।

এ বিষয়ে আবদুল হামিদ নামের চেরাগ আলী মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘দুর্ভোগের বিষয়ে আর কি বলব, ব্যবসা-বাণিজ্য সব শেষ। সড়কের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কে জনসাধারণ চলাচল করতে পারছে না। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা থাকা সত্ত্বে¡ও লোকজন সড়কে ভোগান্তির কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসতে পারছে না। তাই বেচাকেনা নেই।’ দেশে উন্নয়ন হবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু জনগনকে কষ্ট দিয়ে উন্নয়ন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এটাও চিন্তা করা উচিত বলে জানান তিনি।

আসমা বেগম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘গাড়ি চলছে না, পায়ে হেঁটে যাব তারও কোন সুযোগ নেই। সড়কের দু’পাশের্^ কাদা পানি। মানুষ হাঁটার জন্য কোন ফুটপাত নেই, যত কষ্ট শুধু আমাদের। সড়কের কাজ হবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এত দীর্ঘ সময় ধরে জনগনকে কষ্ট দিয়ে কাজ করাটা অযৌক্তিক ও অন্যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এমন হচ্ছে। জনগণ এ দুর্দশা থেকে মুক্তি চায়।’

মো. শামীম নামের টঙ্গীর এক বাসিন্দা বলেন, ‘গাজীপুর হচ্ছে রাজধানী ঢাকার প্রবেশ পথ। এ মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের অনেক জেলার লোকজন যাতায়াত করে থাকে। তারা গাজীপুর মহানগর এলাকার মহাসড়কে এসে চরম ভোগান্তিতে পড়ে। ঘন্টার পর ঘণ্টা গাড়ির মধ্যে তারা আটকা পড়ে অসহনীয় দুর্ভোগ, কষ্ট-যন্ত্রণায় নিমজ্জিত হয়। সরকারের উচিত বিশাল জনগোষ্ঠীর কষ্ট লাঘবে অতি দ্রুত মহাসড়কের কাজটি শেষ করা।

টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি মো. শাহ আলম সংবাদকে বলেন, টঙ্গী অঞ্চলের মহাসড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ মহাসড়কে প্রচুর যানবাহন চলাচল করে। দিন রাত ২৪ ঘণ্টাই এই মহাসড়কটি ব্যস্ত থাকে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কাজের গতি অনেক কম। এই মহাসড়কটি সব সময় পরিষ্কার ও যানজটমুক্ত রাখার জন্য হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশও দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী জনসাধারণ মহাসড়কের কাজটি দ্রুত শেষ করে ভোগান্তি, দুর্ভোগ ও কষ্ট নিরসনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

বিআরটি-৩ প্রকল্প ৮ বছরে অগ্রগতি ৬০ শতাংশ

২০১২ সালের ডিসেম্বরে গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট (বিআরটি, গাজীপুর-বিমানবন্দর) অনুমোদন করে সরকার। গাজীপুর শিববাড়ী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বিআরটি সড়কটি তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। প্রথম দফায় মেয়াদ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। ব্যয় দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ডিপিপি আরও এক দফা সংশোধন করে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ।

বিআরটি লেন বাস্তবায়নে তিনটি প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত। এর মধ্যে ১৬ কিলোমিটার অ্যাটগেড (সমতল) সড়ক নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ), ৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এলিভেটেড অংশ নির্মাণের দায়িত্বে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং বাস ডিপো, সংযোগ সড়ক ও হাটবাজার নির্মাণের দায়িত্বে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

এ বিষয়ে ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ভালো। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তবে প্রকল্প এলাকায় যাতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না হয় সেজন্য সড়কের পাশে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কিছু জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল’ কিন্তু বর্তমানের এটা অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।

ছবি

কক্সবাজারে স্বামীকে হত্যার পর স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, আটক ১

ছবি

সরকারি হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশে নতুন নিয়ম

ছবি

মাতামুহুরী নদী ভরাট ও বিষ দিয়ে নিধনকাণ্ডে বিপন্ন হচ্ছে দেশীয় মাছ

ছবি

‘অবৈধ বাংলাদেশি’ বলে হেনস্থা, পশ্চিমবঙ্গের অনেক মানুষ বিপাকে

ছবি

এবার আগারগাঁওয়ে ‘নিষিদ্ধ’ আওয়ামী লীগের মিছিল, আটক দুই

ছবি

১১ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ‘৮৬ হাজারের বেশি’

ছবি

পীরগঞ্জ সরকারী আব্দুর রউফ কলেজে তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে তোলপাড়

ছবি

দুমকি প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল, সম্পাদক সাইদুর

ছবি

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি প্রত্যাহার

ছবি

ভালুকায় দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ১৫

ছবি

বোয়ালখালীতে গৃহবধূর মৃত্যু

ছবি

ভুটভুটির ধাক্কায় সাইকেল আরোহী নিহত

ছবি

ডিমলা থানা পুলিশের কার্যক্রম চলছে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে

ছবি

জয়পুরহাটে স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যার চেষ্টা

ছবি

চাঁদপুরে জেলা প্রশাসক কাপ সাঁতার প্রতিযোগিতা

ছবি

বাল্কহেড চলাচলে ধলেশ্বরীর দুই তীরে ভাঙন

ছবি

শেরপুরে অটোরিকশা চালক আবু বক্কর হত্যার রহস্য উন্মোচন

ছবি

রায়গঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীদের কর্মবিরতি, গ্রাহকদের ভোগান্তি

ছবি

রাজবাড়ীতে শুরু হয়েছে ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল অলিম্পিয়াড সিজন ২

ছবি

ঝিনাইগাতীতে কৃষকের কাকরুল গাছ কেটে ফেলল প্রতিপক্ষরা

ছবি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনায় আওয়ামীলীগের ঝটিকা মিছিল

ছবি

রাণীনগরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ

ছবি

শেরপুরে চাঁদা না দেওয়ায় ইমামকে হত্যাচেষ্টা, বিচারের দাবীতে মানববন্ধন

ছবি

শেরপুরে দুর্নীতির অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত

ছবি

গোবিন্দগঞ্জে রাতের আঁধারে কৃষকের আখ কর্তন ও চুরি

ছবি

সুন্দরগঞ্জে সেতু আছে সংযোগ সড়ক নেই

ছবি

কেশবপুরে জলাবদ্ধতা নিরসনে পলি অপসারণ শুরু

ছবি

বাঁশের সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার

ছবি

কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে ‘সরকারবিরোধী’ মিছিল: ছাত্রলীগের দুই কর্মীসহ চারজন গ্রেপ্তার

ছবি

নিহত নারীর মাথা উদ্ধার

ছবি

৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করলেন বিএনপি নেতা শাহাফুজ আলম

ছবি

শারদীয় দুর্গোৎসব মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ

ছবি

ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় আলোকিত মওলানা ভাসানী সেতু

ছবি

দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদনের প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে

ছবি

মোরেলগঞ্জে রাস্তার বেহালদশা ৮ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ

ভৈরবে প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে দুই পরিবারের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

tab

news » bangladesh

ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট, বিপর্যস্ত জনজীবন

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ ও মুকুল কুমার মল্লিক

শনিবার, ১৯ জুন ২০২১

বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি-৩) বা দ্রুতগতির পৃথক বাস লেন। এটি নির্মাণ করা হচ্ছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে। গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে উত্তরা বিমান বন্দর ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেড (ডিবিআরটিসিএল)।

প্রকল্পের কাজের ধীরগতির কারণে প্রতিনিয়ত যানজটে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি শিকার হতে হচ্ছে এই মহাসড়কের যাত্রীদের।

মহাসড়কটিতে আধাঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ৩/৪ ঘণ্টা। এই দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা। নির্মাণ কাজে সড়কে বৃষ্টির পানি জমে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে পানি জমে সড়কে কাঁদামাটি একাকার অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাই সড়কের পাশদিয়ে হেঁটে চলাও কষ্টকর হয়ে পড়ছে বলে স্থানীয়রা জানান।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির পাশাপাশি বিআরটি প্রকল্পের পরিকল্পনার ভুলের কারণে গাজীপুরবাসীদের এই দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. সামছুল হক সংবাদকে বলেন, ‘কৌশলগত পরিকল্পনার (এসটিপি) বাইরে গিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিআরটি-৩ প্রথম অংশটি কেরানীগঞ্জ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণ করার কথা ছিল। কিন্তু না করে আগেই গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর অংশের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই বিআরটি’র শহরে বাইরে এই করিডরে বাস্তবায়নের কথা না। বিআরটি সাধারণত শহরের ভিতরে নির্মাণ করে। দুই পৃথক র‌্যাবিয়ার দিয়ে বাসের জন্য আলাদা লেন নির্মাণ করা হয়। বিআরটি নির্মাণ সবচেয়ে ব্যয় ও সময় কম লাগে। কিন্তু আমাদের বিআরটি নির্মাণের সময় ও ব্যয় বেশি লাগছে। এর মাধ্যমে আমার রেকর্ড তৈরি করছি। এর কারণ হলো আমরা এসটিপি অনুসরণ করছি না। এসটিপি’র বাইরে গিয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’ যার কারণে বছরের পর বছর দুর্ভোগ ও ভোগান্তি শিকার হলেও তেমন কার্যকরিতা মানুষ পাবে না বলে জানান তিনি।

দুর্ভোগ ও ভোগান্তি

বিআরটি’র নির্মাণ কাজের জন্য দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে। প্রকল্পের কাজের কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এসব গর্তে যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।

সরেজমিন সড়কটির বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির পানিতে সড়কের বিভিন্ন অংশে পিচ উঠে গেছে। কোথাও কোথাও তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। এসব গর্তে জমে আছে পানি। সড়কের পাশে ও মাঝখানে জমে আছে বালুর স্তূপ। সড়কের কাছে পড়ে আছে ইটের খোয়া, বালু বা বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী। এর মধ্যেই চলাচল করছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, রিকশা, অটোরিকশাসহ অন্য যানবাহন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার পথে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভয়াবহ যানজটের কারণে দৈনিক প্রায় আট ঘণ্টা করে কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষের। পর্যাপ্ত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যানজট নিরসনে দিন-রাত দায়িত্ব পালন করার পরও এ ভয়াবহ যানজট থেকে নিস্তার পাচ্ছে না নগরবাসী।

টঙ্গী প্রতিনিধি জানান, মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট কাদা ও ধুলাবালিতে নাকাল টঙ্গীবাসী। বিশেষ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী আবদুল্লাহপুর ব্রিজ থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়টি বিআরটি’র কাজের ধীরগতির কারণে এ দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান।

এ বিষয়ে আবদুল হামিদ নামের চেরাগ আলী মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘দুর্ভোগের বিষয়ে আর কি বলব, ব্যবসা-বাণিজ্য সব শেষ। সড়কের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সড়কে জনসাধারণ চলাচল করতে পারছে না। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা থাকা সত্ত্বে¡ও লোকজন সড়কে ভোগান্তির কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আসতে পারছে না। তাই বেচাকেনা নেই।’ দেশে উন্নয়ন হবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু জনগনকে কষ্ট দিয়ে উন্নয়ন করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ এটাও চিন্তা করা উচিত বলে জানান তিনি।

আসমা বেগম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘গাড়ি চলছে না, পায়ে হেঁটে যাব তারও কোন সুযোগ নেই। সড়কের দু’পাশের্^ কাদা পানি। মানুষ হাঁটার জন্য কোন ফুটপাত নেই, যত কষ্ট শুধু আমাদের। সড়কের কাজ হবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এত দীর্ঘ সময় ধরে জনগনকে কষ্ট দিয়ে কাজ করাটা অযৌক্তিক ও অন্যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এমন হচ্ছে। জনগণ এ দুর্দশা থেকে মুক্তি চায়।’

মো. শামীম নামের টঙ্গীর এক বাসিন্দা বলেন, ‘গাজীপুর হচ্ছে রাজধানী ঢাকার প্রবেশ পথ। এ মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের অনেক জেলার লোকজন যাতায়াত করে থাকে। তারা গাজীপুর মহানগর এলাকার মহাসড়কে এসে চরম ভোগান্তিতে পড়ে। ঘন্টার পর ঘণ্টা গাড়ির মধ্যে তারা আটকা পড়ে অসহনীয় দুর্ভোগ, কষ্ট-যন্ত্রণায় নিমজ্জিত হয়। সরকারের উচিত বিশাল জনগোষ্ঠীর কষ্ট লাঘবে অতি দ্রুত মহাসড়কের কাজটি শেষ করা।

টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি মো. শাহ আলম সংবাদকে বলেন, টঙ্গী অঞ্চলের মহাসড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ মহাসড়কে প্রচুর যানবাহন চলাচল করে। দিন রাত ২৪ ঘণ্টাই এই মহাসড়কটি ব্যস্ত থাকে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কাজের গতি অনেক কম। এই মহাসড়কটি সব সময় পরিষ্কার ও যানজটমুক্ত রাখার জন্য হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশও দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী জনসাধারণ মহাসড়কের কাজটি দ্রুত শেষ করে ভোগান্তি, দুর্ভোগ ও কষ্ট নিরসনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

বিআরটি-৩ প্রকল্প ৮ বছরে অগ্রগতি ৬০ শতাংশ

২০১২ সালের ডিসেম্বরে গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট (বিআরটি, গাজীপুর-বিমানবন্দর) অনুমোদন করে সরকার। গাজীপুর শিববাড়ী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বিআরটি সড়কটি তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। প্রথম দফায় মেয়াদ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। ব্যয় দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ডিপিপি আরও এক দফা সংশোধন করে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ।

বিআরটি লেন বাস্তবায়নে তিনটি প্রতিষ্ঠান নিয়োজিত। এর মধ্যে ১৬ কিলোমিটার অ্যাটগেড (সমতল) সড়ক নির্মাণ করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ), ৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এলিভেটেড অংশ নির্মাণের দায়িত্বে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং বাস ডিপো, সংযোগ সড়ক ও হাটবাজার নির্মাণের দায়িত্বে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

এ বিষয়ে ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ভালো। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তবে প্রকল্প এলাকায় যাতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না হয় সেজন্য সড়কের পাশে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কিছু জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল’ কিন্তু বর্তমানের এটা অনেকটা স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।

back to top