alt

সড়কে ফের নিহত সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী

চট্টগ্রামে ট্রেন-বাস-অটো ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ৩

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২১

রাজধানীতে বেপরোয়া ট্রাক এবার কেড়ে নিল সংবাদ-এর সাংবাদিক এমদাদ হোসেনের (৬০) প্রাণ। শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর মিরপুর রোডের কলেজগেট এলাকায় তার মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় বেপরোয়া ট্রাক। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। এদিকে বিমানবন্দর এলাকায় আরেক বেপরোয়া কাভার্ডভ্যানের চাপায় নিহত হয়েছেন মাহাদী হাসান লিমন (২১) নামে এক শিক্ষার্থী। এদিকে চট্টগ্রামে ট্রেন-বাস-অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে তিন জন নিহত হয়।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় প্রাণ হারান নটর ডেম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র নাইম হাসান।

তার মৃত্যুর ঘটনায় সড়ক নিরাপদ করার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে ২৫ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারান সংবাদ-এর কর্মী আহসান কবির খান। ২৯ নভেম্বর রামপুরায় দুই বাসের রেষারেষিতে প্রাণ যায় এসএসসির ফল প্রত্যাশী নাইমুদ্দিন ইসলাম দুর্জয়ের। ওই ঘটনায় ১২টি বাসে আগুন দেয় শিক্ষার্থীরা।

সড়কে শিক্ষার্র্থীদের মৃত্যু, পরিবহন সেক্টরে মালিক শ্রমিকদের নৈরাজ্য, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানোসহ নানা ইস্যুতে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উত্তপ্ত রাজধানী। সড়কে শিক্ষার্র্থীদের এবং গাড়িতে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকরের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই এবার ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের চালক বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে প্রাণ কেড়ে নিল সংবাদ-এর সাংবাদিক এমদাদ হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান লিমনের।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত আড়াইটার দিকে মোটরসাইকেলে যাওয়ার পথে সংবাদ-এর সম্পাদনা সহকারী এমদাদ হোসেনকে পেছন থেকে দ্রুতগতির একটি ট্রাক চাপা দেয়। ট্রাকের চাকায় এমনভাবে পিষ্ট হয় যে, হেলমেট পরা অবস্থায়ই তার মাথা চ্যাপ্টা হয়ে যায়। তার মুখ দেখে চেনার উপায় ছিল না। স্থানীয়রা মোহাম্মদপুর থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত এমদাদ হোসেনের ছোট ভাই সেলিম জানান, তার ভাই সংবাদ-এর অফিসের কাজ শেষ করে রাতে নিজের মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন। কলেজ গেটে মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের সামনে আসার পর পেছন থেকে একটি ট্রাক তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। পুলিশ শনিবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ট্রাক এবং ট্রাকের চালককে শনাক্ত করতে পারেনি। তিনি নিজের মোটরসাইকেল চালিয়ে পত্রিকা অফিসের কাজে বের হতেন। আবার কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতেন। কিন্তু শুক্রবার রাতে তিনি আর ফিরলেন না। হাসপাতালে তার ক্ষতবিক্ষত দেহ মিলল। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করবেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন নৃশংস দুর্ঘটনায় যেহেতু কাউকে শনাক্ত বা ট্রাক আটক করা যায়নি, তাহলে কার বিরুদ্ধে মামলা করবো?

ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ টাঙ্গাইলের নাগরপুরের বেকরা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। এমদাদ হোসেনের ছেলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও মেয়ে কলেজে পড়েন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে সংবাদ পরিবার।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ বলেন, রাতে স্থানীয়দের ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে আমাদের টহল টিম পৌঁছে সংবাদ পত্রিকার সম্পাদনা সহকারী এমদাদকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়া ট্রাকটি শনাক্তে আমরা এরই মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পদ্মা তেল পাম্পের সামনে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহাদি হাসান লিমন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত লিমন গ্রিন ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্র্থী ছিলেন।

নিহত লিমনের খালা জানান, লিমন পরিবারের ছোট সন্তান, তার একটি বোন রয়েছে। তার মর্মান্তিক মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যরা এখন বাকরুদ্ধ। তারা কোনভাবেই সড়কে এভাবে লিমনের মৃত্যুর বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না।

নিহতের প্রতিবেশী মো. ইমাম হাসান জানান, লিমন মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। পদ্মা তেল পাম্পের সামনে একটি কাভার্ডভ্যান বেপরোয়া গতিতে এসে তাকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি রাস্তায় ছিটকে পড়েন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরও জানান, লিমন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার দমদমা পশ্চিম গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে।

লিমনের খালু মো. ইমাম হোসেন বলেন, ধানমন্ডির ঝিগাতলার নানার বাসা থেকে অসুস্থ খালাকে দেখে মোটরসাইকেলে নিজ বাসা কাউলায় ফিরছিলেন লিমন। লরিটি তাকে ধাক্কা দিয়ে বুকের ওপর দিয়ে চলে যায়। মোটরসাইকেলটিও দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

তিনি জানান, লিমনের বাবা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মো. মোফাজ্জল হোসেন বর্তমানে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। লিমনরা দুই ভাই, তাদের একমাত্র বোন রয়েছে। গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্র্থী লিমন চেয়েছিলেন পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের হাল ধরতে। সেই স্বপ্ন সড়কে পৃষ্ট হলো।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লিমনের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার দমদমা এলাকায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, লিমনকে চাপা দেয়া লরিটি আটক করা হয়েছে। লরির চালক পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

চট্টগ্রামে ট্রেন-বাস-অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার ঝাউতলায় বাস-অটোরিকশা ও ট্রেনের ত্রিমুখী সংঘর্ষে এক ট্রাফিক কনস্টেবলসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এতে আরও আটজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসাপাতালে নেয়া হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, ট্রাফিক কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম (৫৫), সাতরাজ শাহীন (১৯) ও বাহা উদ্দীন (৩০)। এর মধ্যে শাহীন এইচএসসি পরীক্ষার্থী বলে জানা গেছে। সে পাহাড়তলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করে নিহত সাতরাজের বন্ধু ওমর ফারুক বলেন, কলেজে বিএনসিসি কার্যালয়ে যাচ্ছিলো সাতরাজ। যাওয়ার পথেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন জয়নাল (২৬), জোবাইদা (২০), মাহমুদ (১০), জমির উদ্দীন (৫৫), শহীদুল ইসলাম (৪০), মাহবুবা খাতুন শামিম (১১), মো. মনির হোসেন (৪০) ও আফরান (৭)। এদিকে এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে জেলা চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী। তিনি জানান, আমাদের একটা নিজস্ব তদন্ত কমিটি এ দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করবে। তবে দুর্ঘটনার পর থেকে গেটম্যান আশরাফুল আলমগীর ভূঁইয়া পলাতক রয়েছে। দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলশী থানার ওসি শাহিনুজ্জামান বলেন, ট্রেনের সঙ্গে বাস ও অটোরিকশার সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এতে আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের চমেকে ভর্তি করা হয়েছে।

সিএমপি সূত্রে জানা যায়, নিহত পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম ১৯৭৭ সালে ১৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালের ৮ জুন তিনি পুলিশে যোগদান করেন। সিএমপিতে যোগদান করেন ২০১৩ সালের ১৭ জুন। ট্রাফিক উত্তরে যোগদান করেন ২০১৯ সালের ৮ জুন। পুলিশের চাকরি জীবনে মনিরুল ইসলাম কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ৪৯টি পুরস্কার পান ও চাকরি জীবনে কোন শাস্তি পাননি।

সরেজমিন জানা গেছে, নগরীর জাকির হোসেন সড়কের ঝাউতলা রেলগেটের এক পাশে লোহার বার ফেলা ছিল। তবে অন্য পাশে ছিল খোলা। গেট খোলা থাকায় শনিবার ঘটে এ দুর্ঘটনা।

পুলিশ জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে গেটম্যান আশরাফুল আলমগীর ভূঁইয়া পলাতক রয়েছে। এদিকে স্থানীয়রা জানান, ঝাউতলা ওই রেললাইনটি চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান প্রবেশপথ। ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাসসহ নগরের ভেতরে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহন চলে এই রেললাইনের ওপর দিয়ে। সেখানকার গেটম্যান মো. আলমগীর সঠিক দায়িত্ব পালন করেন না।

ঘটনাস্থলে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, গেটম্যান গেট না ফেলার কারণে গাড়িগুলো রেললাইনের ওপর চলে আসে। তখন ডেমু ট্রেনও এসে গাড়িগুলোকে ধাক্কা দিয়ে সামনে টেনে নিয়ে যায়। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় গাড়িগুলো। গেট ফেলা থাকলে এ দুর্ঘটনা ঘটত না। মো. আরিফ নামের স্থানীয় এক দোকানি বলেন, গেটম্যান সড়কের এক পাশের গেট ফেললেও অন্য পাশেরটা ফেলেননি। এতে জিইসি মোড় থেকে এ কে খান গেটগামী গাড়িগুলো রেললাইনের ওপর চলে আসে। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে।

শনিবার দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দেখা যায়, নিহত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম মেঝ মেয়ে বিবি ফাতেমা বিলাপ করছিলেন তার বাবার জন্য। শুধু দাদুকে বলছে, বাবা আর নেই, আমরা কি করবো? বাবা মারা গেছেন। ও দাদু, আমরা কি করবো? আমাদের আর কেউ ভালোবাসবে না। আব্বুর মতো কেউ তো আর ভালবাসবে না।

মনিরুল ইসলাম চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ট্রাফিক উত্তর বিভাগের কনস্টেবল। তিনি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার খোয়াজপুর গ্রামের কেবিএম ফয়েজ হোসেনের ছেলে। তিনি নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চন্দননগর এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।

বড় মেয়ে মাহমুদা ফেরদৌস লিমা বলেন, বাবা মারা গেছে, কে আমাদের দায়িত্ব নিবে। আমার বাবার কি দোষ ছিল? বাবা আমাদের শাসন করতেন আবার খুব আদরও করতেন। বাবা ছাড়া আমরা অসহায়। আল্লাহ, আমার আব্বুর সব পাপ মাফ করে দিন, তাকে জান্নাত দিন।

মনির হোসেনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গে নিয়ে যাওয়ার সময় মনির হোসেনের স্ত্রী সেলিনা আক্তার জরুরি বিভাগের পুলিশ বক্সে বসে কান্নাকাটি করছিলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমাদের কি হবে? সন্তানদের নিয়ে কি করবো? তাদের দায়িত্ব কে নিবে?

দুর্ঘটনার সময় ঝাউতলা রেল ক্রসিং এলাকায় মনির হোসেনের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল আলী। তিনি বলেন, মনির ভাই ভালো মানুষ ছিলেন। আমি পশ্চিম পাশে ডিউটি করছিলাম আর মনির ভাই ছিলেন পূর্বপাশে। ডেমু ট্রেন আসার সময় রেললাইনের ওপর বাস, অটোরিকশা ও টেম্পো উঠে গেলে তিনি সরাতে ছুটে যান। এ সময় ঘটে দুর্ঘটনা। ট্রেন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সার্জেন্ট স্যারের সহায়তায় মনির ভাইকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মেডিকেল নিয়ে আসি।

ছবি

চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকা’র সভাপতি হাছান ও সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল

ছবি

পেছন থেকে ট্রাককে বাসের ধাক্কা, নিহত ৫

ছবি

হাতের অপারেশন করতে গিয়ে প্রাণ গেল নারীর, ভুল চিকিৎসার অভিযোগ স্বজনদের

ছবি

দেশে অর্ধেকের বেশি মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার

ছবি

আগুন, বোমা: পুড়েছে বাস, কাভার্ড ভ্যান ও অ্যাম্বুলেন্স

ছবি

তিস্তায় পাথর উত্তোলনের হিড়িক, খোদ প্রশাসনের যোগসাজশের অভিযোগ

ছবি

চট্টগ্রাম ও পানগাঁও টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা—‘তাড়াহুড়ো ও গোপনীয়তার’ অভিযোগ বাম জোটের

ছবি

সীতাকুণ্ডে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে প্রাণ গেল পাঁচ যাত্রীর

ছবি

ভালুকায় বস্তায় আদা চাষে আক্তারের সাফল্য

ছবি

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে চসিকের বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু

ছবি

বেনাপোলের রঘুনাথপুর সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ

ছবি

কটিয়াদীতে ব্রি ধান-১০৩ জাতের বাম্পার ফলন

ছবি

হিমাগারে মওজুদ রয়ে গেছে প্রচুর আলু ঝুঁকিতে আলুচাষী ও ব্যবসায়ীরা

ছবি

মুক্তাগাছায় বাস চাপায় নানী-নাতি নিহত

ছবি

বোয়ালখালীতে হাইব্রিড লাউ চাষে সফল কৃষক সাজ্জাদ

ছবি

পৌরসভায় কাজ না করে ৮১ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা

ছবি

দুমকিতে আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ

ছবি

নন্দীগ্রামে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগাছানাশকে পুড়লো কৃষকের আধা পাকা ধান

ছবি

ভোলার মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন: গুলিবিদ্ধ তিন

ছবি

বিএনপি প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ

ছবি

আসতে না আসতেই বেতাগীতে জেঁকে বসেছে শীত

ছবি

বালু ব্যবসার অভিযোগ, বালুর স্তূপে চরম দুর্ভোগে এলাকাবাসী

বাগেরহাট কারাগারে বন্দি ভারতীয় জেলের মৃত্যু

ছবি

অপচিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু প্রসূতির অবস্থা আশঙ্কাজনক

ছবি

কোটচাঁদপুরে বেড়েই চলেছে নিষিদ্ধ পলেথিনের ব্যবহার

ছবি

ঝালকাঠিবাসী আজও সিডরের সেই ভয়াল স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে

ছবি

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তিন বাসে আগুন, হাতবোমা বিস্ফোরণ—হতাহতের খবর নেই

ছবি

সিলেটে নিজ ঘর থেকে মেডিকেল ছাত্রীর লাশ উদ্ধার

বাগেরহাটের বিদ্যুতায়িত হয়ে বিদ্যুৎ শ্রমিকের মৃত্যু

ছবি

সিরাজগঞ্জে সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুর উপরে শুকানো হচ্ছে ধান-খড়

ছবি

গাজীপুরের শ্রীপুরে গ্রামীণ ব্যাংক শাখায় গভীর রাতে পেট্রলবোমা হামলা

ছবি

মহম্মদপুরে ইউএনওসহ গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য, ভোগান্তিতে জনসাধারণ

ছবি

লৌহজংয়ে জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ বাড়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম

লালপুরে দুই কমিটির দ্বন্দ্বে গোঁসাই আশ্রমের নবান্ন উৎসব নিয়ে শঙ্কা

ছবি

সিলেটে দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ল অ্যাম্বুলেন্স ও বাস

ছবি

আজও সিডরের সেই ভয়াল স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে

tab

সড়কে ফের নিহত সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী

চট্টগ্রামে ট্রেন-বাস-অটো ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ৩

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শনিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২১

রাজধানীতে বেপরোয়া ট্রাক এবার কেড়ে নিল সংবাদ-এর সাংবাদিক এমদাদ হোসেনের (৬০) প্রাণ। শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর মিরপুর রোডের কলেজগেট এলাকায় তার মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় বেপরোয়া ট্রাক। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। এদিকে বিমানবন্দর এলাকায় আরেক বেপরোয়া কাভার্ডভ্যানের চাপায় নিহত হয়েছেন মাহাদী হাসান লিমন (২১) নামে এক শিক্ষার্থী। এদিকে চট্টগ্রামে ট্রেন-বাস-অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে তিন জন নিহত হয়।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় প্রাণ হারান নটর ডেম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র নাইম হাসান।

তার মৃত্যুর ঘটনায় সড়ক নিরাপদ করার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে ২৫ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারান সংবাদ-এর কর্মী আহসান কবির খান। ২৯ নভেম্বর রামপুরায় দুই বাসের রেষারেষিতে প্রাণ যায় এসএসসির ফল প্রত্যাশী নাইমুদ্দিন ইসলাম দুর্জয়ের। ওই ঘটনায় ১২টি বাসে আগুন দেয় শিক্ষার্থীরা।

সড়কে শিক্ষার্র্থীদের মৃত্যু, পরিবহন সেক্টরে মালিক শ্রমিকদের নৈরাজ্য, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানোসহ নানা ইস্যুতে গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উত্তপ্ত রাজধানী। সড়কে শিক্ষার্র্থীদের এবং গাড়িতে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকরের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই এবার ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের চালক বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে প্রাণ কেড়ে নিল সংবাদ-এর সাংবাদিক এমদাদ হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান লিমনের।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত আড়াইটার দিকে মোটরসাইকেলে যাওয়ার পথে সংবাদ-এর সম্পাদনা সহকারী এমদাদ হোসেনকে পেছন থেকে দ্রুতগতির একটি ট্রাক চাপা দেয়। ট্রাকের চাকায় এমনভাবে পিষ্ট হয় যে, হেলমেট পরা অবস্থায়ই তার মাথা চ্যাপ্টা হয়ে যায়। তার মুখ দেখে চেনার উপায় ছিল না। স্থানীয়রা মোহাম্মদপুর থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত এমদাদ হোসেনের ছোট ভাই সেলিম জানান, তার ভাই সংবাদ-এর অফিসের কাজ শেষ করে রাতে নিজের মোটরসাইকেলে বাসায় ফিরছিলেন। কলেজ গেটে মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের সামনে আসার পর পেছন থেকে একটি ট্রাক তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। পুলিশ শনিবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ট্রাক এবং ট্রাকের চালককে শনাক্ত করতে পারেনি। তিনি নিজের মোটরসাইকেল চালিয়ে পত্রিকা অফিসের কাজে বের হতেন। আবার কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতেন। কিন্তু শুক্রবার রাতে তিনি আর ফিরলেন না। হাসপাতালে তার ক্ষতবিক্ষত দেহ মিলল। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করবেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন নৃশংস দুর্ঘটনায় যেহেতু কাউকে শনাক্ত বা ট্রাক আটক করা যায়নি, তাহলে কার বিরুদ্ধে মামলা করবো?

ময়নাতদন্ত শেষে তার মরদেহ টাঙ্গাইলের নাগরপুরের বেকরা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। এমদাদ হোসেনের ছেলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও মেয়ে কলেজে পড়েন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে সংবাদ পরিবার।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ বলেন, রাতে স্থানীয়দের ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে আমাদের টহল টিম পৌঁছে সংবাদ পত্রিকার সম্পাদনা সহকারী এমদাদকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়া ট্রাকটি শনাক্তে আমরা এরই মধ্যে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পদ্মা তেল পাম্পের সামনে কাভার্ডভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহাদি হাসান লিমন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত লিমন গ্রিন ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্র্থী ছিলেন।

নিহত লিমনের খালা জানান, লিমন পরিবারের ছোট সন্তান, তার একটি বোন রয়েছে। তার মর্মান্তিক মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যরা এখন বাকরুদ্ধ। তারা কোনভাবেই সড়কে এভাবে লিমনের মৃত্যুর বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না।

নিহতের প্রতিবেশী মো. ইমাম হাসান জানান, লিমন মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন। পদ্মা তেল পাম্পের সামনে একটি কাভার্ডভ্যান বেপরোয়া গতিতে এসে তাকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি রাস্তায় ছিটকে পড়েন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরও জানান, লিমন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার দমদমা পশ্চিম গ্রামের মোজাম্মেল হকের ছেলে।

লিমনের খালু মো. ইমাম হোসেন বলেন, ধানমন্ডির ঝিগাতলার নানার বাসা থেকে অসুস্থ খালাকে দেখে মোটরসাইকেলে নিজ বাসা কাউলায় ফিরছিলেন লিমন। লরিটি তাকে ধাক্কা দিয়ে বুকের ওপর দিয়ে চলে যায়। মোটরসাইকেলটিও দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

তিনি জানান, লিমনের বাবা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মো. মোফাজ্জল হোসেন বর্তমানে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। লিমনরা দুই ভাই, তাদের একমাত্র বোন রয়েছে। গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্র্থী লিমন চেয়েছিলেন পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের হাল ধরতে। সেই স্বপ্ন সড়কে পৃষ্ট হলো।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লিমনের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার দমদমা এলাকায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, লিমনকে চাপা দেয়া লরিটি আটক করা হয়েছে। লরির চালক পালিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

চট্টগ্রামে ট্রেন-বাস-অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার ঝাউতলায় বাস-অটোরিকশা ও ট্রেনের ত্রিমুখী সংঘর্ষে এক ট্রাফিক কনস্টেবলসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এতে আরও আটজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসাপাতালে নেয়া হয়েছে। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, ট্রাফিক কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম (৫৫), সাতরাজ শাহীন (১৯) ও বাহা উদ্দীন (৩০)। এর মধ্যে শাহীন এইচএসসি পরীক্ষার্থী বলে জানা গেছে। সে পাহাড়তলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করে নিহত সাতরাজের বন্ধু ওমর ফারুক বলেন, কলেজে বিএনসিসি কার্যালয়ে যাচ্ছিলো সাতরাজ। যাওয়ার পথেই এ দুর্ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন জয়নাল (২৬), জোবাইদা (২০), মাহমুদ (১০), জমির উদ্দীন (৫৫), শহীদুল ইসলাম (৪০), মাহবুবা খাতুন শামিম (১১), মো. মনির হোসেন (৪০) ও আফরান (৭)। এদিকে এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে জেলা চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী। তিনি জানান, আমাদের একটা নিজস্ব তদন্ত কমিটি এ দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করবে। তবে দুর্ঘটনার পর থেকে গেটম্যান আশরাফুল আলমগীর ভূঁইয়া পলাতক রয়েছে। দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলশী থানার ওসি শাহিনুজ্জামান বলেন, ট্রেনের সঙ্গে বাস ও অটোরিকশার সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্যসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এতে আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের চমেকে ভর্তি করা হয়েছে।

সিএমপি সূত্রে জানা যায়, নিহত পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম ১৯৭৭ সালে ১৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালের ৮ জুন তিনি পুলিশে যোগদান করেন। সিএমপিতে যোগদান করেন ২০১৩ সালের ১৭ জুন। ট্রাফিক উত্তরে যোগদান করেন ২০১৯ সালের ৮ জুন। পুলিশের চাকরি জীবনে মনিরুল ইসলাম কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ৪৯টি পুরস্কার পান ও চাকরি জীবনে কোন শাস্তি পাননি।

সরেজমিন জানা গেছে, নগরীর জাকির হোসেন সড়কের ঝাউতলা রেলগেটের এক পাশে লোহার বার ফেলা ছিল। তবে অন্য পাশে ছিল খোলা। গেট খোলা থাকায় শনিবার ঘটে এ দুর্ঘটনা।

পুলিশ জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে গেটম্যান আশরাফুল আলমগীর ভূঁইয়া পলাতক রয়েছে। এদিকে স্থানীয়রা জানান, ঝাউতলা ওই রেললাইনটি চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান প্রবেশপথ। ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাসসহ নগরের ভেতরে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহন চলে এই রেললাইনের ওপর দিয়ে। সেখানকার গেটম্যান মো. আলমগীর সঠিক দায়িত্ব পালন করেন না।

ঘটনাস্থলে থাকা এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, গেটম্যান গেট না ফেলার কারণে গাড়িগুলো রেললাইনের ওপর চলে আসে। তখন ডেমু ট্রেনও এসে গাড়িগুলোকে ধাক্কা দিয়ে সামনে টেনে নিয়ে যায়। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় গাড়িগুলো। গেট ফেলা থাকলে এ দুর্ঘটনা ঘটত না। মো. আরিফ নামের স্থানীয় এক দোকানি বলেন, গেটম্যান সড়কের এক পাশের গেট ফেললেও অন্য পাশেরটা ফেলেননি। এতে জিইসি মোড় থেকে এ কে খান গেটগামী গাড়িগুলো রেললাইনের ওপর চলে আসে। তখনই দুর্ঘটনা ঘটে।

শনিবার দুর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দেখা যায়, নিহত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম মেঝ মেয়ে বিবি ফাতেমা বিলাপ করছিলেন তার বাবার জন্য। শুধু দাদুকে বলছে, বাবা আর নেই, আমরা কি করবো? বাবা মারা গেছেন। ও দাদু, আমরা কি করবো? আমাদের আর কেউ ভালোবাসবে না। আব্বুর মতো কেউ তো আর ভালবাসবে না।

মনিরুল ইসলাম চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ট্রাফিক উত্তর বিভাগের কনস্টেবল। তিনি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার খোয়াজপুর গ্রামের কেবিএম ফয়েজ হোসেনের ছেলে। তিনি নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চন্দননগর এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।

বড় মেয়ে মাহমুদা ফেরদৌস লিমা বলেন, বাবা মারা গেছে, কে আমাদের দায়িত্ব নিবে। আমার বাবার কি দোষ ছিল? বাবা আমাদের শাসন করতেন আবার খুব আদরও করতেন। বাবা ছাড়া আমরা অসহায়। আল্লাহ, আমার আব্বুর সব পাপ মাফ করে দিন, তাকে জান্নাত দিন।

মনির হোসেনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মর্গে নিয়ে যাওয়ার সময় মনির হোসেনের স্ত্রী সেলিনা আক্তার জরুরি বিভাগের পুলিশ বক্সে বসে কান্নাকাটি করছিলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমাদের কি হবে? সন্তানদের নিয়ে কি করবো? তাদের দায়িত্ব কে নিবে?

দুর্ঘটনার সময় ঝাউতলা রেল ক্রসিং এলাকায় মনির হোসেনের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল আলী। তিনি বলেন, মনির ভাই ভালো মানুষ ছিলেন। আমি পশ্চিম পাশে ডিউটি করছিলাম আর মনির ভাই ছিলেন পূর্বপাশে। ডেমু ট্রেন আসার সময় রেললাইনের ওপর বাস, অটোরিকশা ও টেম্পো উঠে গেলে তিনি সরাতে ছুটে যান। এ সময় ঘটে দুর্ঘটনা। ট্রেন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সার্জেন্ট স্যারের সহায়তায় মনির ভাইকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মেডিকেল নিয়ে আসি।

back to top