alt

যশোর শহরে ড্রেন নির্মাণের ১০০ কোটি টাকা ভেসে গেল

যশোর অফিস : মঙ্গলবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২১

যশোর : মানুষের দুর্ভোগ

প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে সোমবারের দিনভর টানা বৃষ্টিতে পৌর এলাকার বেশিরভাগ অঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। সেখানে একপ্রকার বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

জলাবদ্ধতার শিকার নগবাসীর অভিযোগ, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ এই জলাবদ্ধতার কারণ। বেশির ভাগ ড্রেনের স্লাব (ঢাল) ঠিক নেই। যে কারণে পানি নিষ্কাশন ঠিকমত হচ্ছে না।

দেশবন্ধু সড়কের টিবি ক্লিনিক মোড়ের বাসিন্দা যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের শিক্ষার্থী বিদিশা মিত্র বলেন, বাড়ির সামনে দিয়ে নদী বয়ে যাচ্ছে। তিনি মনে করেন, বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে অপকল্পিত উন্নয়নের ‘ষোল আনা মিছে’!

যশোর পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত সাত বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে শহরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ হয়েছে। সিআরডিপি (সিটি রিজন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট) ও ইউজিপআইআই-৩ (তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নীতকরণ সেক্টর প্রকল্প) প্রকল্পের মাধ্যমে এই ড্রেন নির্মাণ হয়। এতে ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ৯৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া কাঁচা-পাকা মিলিয়ে শহরে প্রায় ২৪৬ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে।

কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পৌরসভার এসব ড্রেনের বেশির ভাগেরই স্লাব (ঢাল) ঠিক নেই। তাই এগুলো দিয়ে পানি গড়ায় না। ড্রেনের ভেতর পানি স্থির হয়ে জমে থাকে। ফলে বৃষ্টি হলে ড্রেন উপচে পড়ে। বৃষ্টির ও ড্রেনের কাদাপানি একাকার হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে যায়। এ ছাড়া শহরের বেশির ভাগ বাসাবাড়ির পয়োবর্জ্যরে ট্যাংকিগুলো পাইপ দিয়ে ড্রেনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে যখন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় তখন ড্রেন থেকে কাদা ও মল মিশ্রিত বর্জ্যে রাস্তা সয়লাব হয়ে যায়।

যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শরীফ হাসান বলছেন ভিন্ন কথা। তার ভাষ্যমতে, ড্রেনের স্লাবের কোন সমস্যা নেই নির্মাণের সময়ই ড্রেনের ঢাল শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। যাতে ড্রেনে পানির প্রবাহ ঠিক থাকে।

তিনি বলেন, শহরের একটি অংশের পানি নিষ্কাশন হয় মুক্তেশরী নদী দিয়ে। কিন্তু এটির মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। চার থেকে পাঁচ বছর আগে একটি খাল কেটে এর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। ক্যানেলটি দিয়ে শহরের পানি মুক্তেশরীতে গিয়ে পড়ত। খালটি কেটে আবার সংস্কার করতে হবে। তাহলে পানি নিষ্কাশন সমস্যার সমাধান হবে।

শরীফ হাসান মনে করেন, নাগরিক অসচেতনতাও জলাবদ্ধাতার জন্য দায়ী। অনেকে ড্রেনে ময়লা ফেলেন। এ ছাড়া পাইলিংয়ের সময় পাইপ লাইন ড্রেনে যুক্ত করে দেন। বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী ডেনে ফেলেন। ফলে ড্রেনের বেড উঁচু হয়ে যায়। এতে পানির প্রবাহ বিঘ্নিত হয়।

সারাদিনের গড় বৃষ্টিপাত ছিল ১২১ মিলিমিটার। এতে শহরের দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন সড়ক, টিবি ক্লিনিক, ফুড গোডাউন, পিটিআই রোড, ছোটনের মোড়, এমএম কলেজ দক্ষিণ গেট, খড়কির কলাবাগান, জেবিন মোড়, শংকরপুর ইসহাক সড়ক, নলডাঙারোডসহ অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এখানকার রাস্তাগুলোয় গোড়ালি থেকে হাঁটুপানি জমে যায়। কোথাও কোথাও কোমর সমান পানিও জমে। এখানকার বাসা-বাড়ির ভেতরও পানি ঢুকে যায়। ড্রেনে ফেলা ময়লা ও পয়োবর্জ্য মিশ্রিত পানিতে ভাসছে এসব এলাকা।

যশোর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জানান, তাদের এলাকার জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ ড্রেনেজ সমস্যা। খালধার রোডের বড় ড্রেনটি দিয়ে এখানকার পানি নিষ্কাশন হয়। আর সমস্যা এই দুই এলাকার দুটি ড্রেনে। ড্রেন দুটির সংযোগস্থল রবীন্দ্রনাথ সড়কে (আরএন রোড) রানা স্টিল প্লাজার পাশে। এখানটায় বেজপাড়ার ড্রেনটি নিচু। অন্যদিকে খালধার রোডের ড্রেনটি উঁচু। ফলে পানি বের হতে সমস্যা হয়।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রদীপ কুমার নাথ বাবলু ড্রেনের স্লাবের সমস্যার পাশাপাশি মানুষজনের অসচেতনা দায়ী বলে মনে করেন।

সরেজমিন দেখা যায়, শহরের চারখাম্বা, রেলরোড টিবি ক্লিনিক, ফুড গোডাউন, আনসার ক্যাম্প এলাকায় গোড়ালি থেকে হাঁটু সমান পানি। এসব এলাকার অনেক বাড়ির ভেতরও জলমগ্ন। স্থানীয় বাসিন্দা ও ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) যশোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, চারখাম্বা ও রেলরোডে আগে যখন ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল না তখন কোন পানি জমত না। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণের পর এখন দেখছি বৃষ্টি হলেই এই জায়গা যেন হয়ে ওঠে পদ্মা নদী। তিনি মনে করেন, অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণই এই জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। ড্রেনগুলোর ঢাল ঠিক না থাকায় পানি গড়াচ্ছে না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার।

শহরের খড়কির কলাবাগান, এমএম কলেজ দক্ষিণ গেট, জেবিন মোড়সহ আরও কয়েক জায়গায় জলাবদ্ধতার দৃশ্য চোখে পড়ে। এর মধ্যে কলাবাগান পাড়া, খড়কি জেবিন মোড় ও এমএম কলেজ দক্ষিণ গেটের আশপাশে জলাবদ্ধতা সবচেয়ে বেশি। গোড়ালি থেকে হাঁটুঅবধি পানি জমেছে। বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে গেছে।

জলাবদ্ধতা নিয়ে যশোর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজিবুল আলমও স্বীকার করেছেন, তার এলাকারও অনেক ড্রেনের স্লাব (ঢাল) ঠিক নেই। যার কারণে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া অনেকে ড্রেনের ভেতর বাসাবাড়ির ময়লা ফেলেন। যার কারণে পানি বের হতে সমস্যা হওয়ায় জলাবদ্ধতা হয়েছে।

রাজিবুল আলম আরও জানান, জিলা স্কুলের সামনে থেকে সিভিল কোর্ট মোড় পর্যন্ত ড্রেন পরিষ্কার করাতে গিয়ে দেখেন ভেতরে পরিষ্কার পানি। ড্রেনের মধ্যে ময়লাও তেমন ছিল না। তার ভাষ্যমতে, ড্রেনটি দিয়ে প্রকৃত অর্থে কোন পানিই নিষ্কাশন হয় না। ‘ওয়াটার লেভেল’ (পানির স্তর) ঠিক না থাকায় এমনটি হয়েছে। এর সমাধানে পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অবহিত করেছেন।

যশোর পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন বলেন, বিরতীহীন প্রচন্ড বৃষ্টিপাতের কারণে শহরে প্রচুর পরিমাণ পানি জমেছে। ড্রেনের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পানির কারণে নিষ্কাশন হতে সময় একটু বেশি লাগছে। বৃষ্টি কমে আসলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পানি বের হয়ে যাবে।

ছবি

ডেঙ্গু: আক্রান্ত ৩৯ হাজার ছাড়িয়েছে

ছবি

আনোয়ারায় আবারও ৩১ রোহিঙ্গা আটক

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনে বিপর্যস্ত টেকনাফ

ছবি

তিতাসে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ, উৎসবের আমেজ নদী পাড়ে

ছবি

রাজধানীতে ৩ স্থানে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল

ছবি

রংপুরে জুলাই যোদ্ধাদের নামে অটোরিকশার লাইসেন্স, ৫ কোটি টাকা বাণিজ্যের পাঁয়তারা!

ছবি

বাগেরহাটের বিষয়ে হাইকোর্টের রুল, ফরিদপুরে নতুন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

ছবি

সওজের জায়গা দখল করে নির্মাণ হচ্ছে বাণিজ্যিক ভবন

ছবি

সিরাজগঞ্জে রোপা আমন খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

ছবি

গৌরনদীতে ২০ পরিবারের চলাচলের একমাত্র রাস্তায় দেয়াল নির্মাণ

ছবি

পীরগাছায় গাছ কাটার সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি

ছবি

শিবালয়ে ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করায় ৫ বখাটে আটক

ছবি

মহেশপুরে বিষ পানে প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা

ছবি

আশুলিয়ায় গুলিবিদ্ধ যুবককের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র ৫ চিকিৎসকে চলছে স্বাস্থ্যসেবা

অনিয়মের অভিযোগে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে দুদকের অভিযান

ছবি

ভালুকায় শ্রমিক লীগের দুই নেতা গ্রেপ্তার

ছবি

কালীগঞ্জে নিখোঁজ যুবকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

হবিগঞ্জে সিএনজি-টমটম সংঘর্ষে নিহত ১

ছবি

বিস্ফোরণ মামলার পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

পাঁচবিবিতে ৭৫টি মণ্ডপে চলছে দূর্গা পূজার প্রস্তুতি

ছবি

ডিমলায় প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে নব্যতা হারাচ্ছে নদীগুলো

ছবি

কালুখালীর নূরনেছা কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

ছবি

৯৩ বছরে দেশের সমবায় সমিতির অনন্য মডেল প্রতিষ্ঠানে পরিনত

ছবি

রংপুরে ‘পদ্মরাগ কমিউটার’ ট্রেনের ছয় বগি লাইনচ্যুত, ট্রেন চলাচল বন্ধ

ছবি

ইমামকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

ছবি

ডিমলায় অবৈধ পেট্রোল পাম্পকে জরিমানা, বন্ধের নির্দেশ

ছবি

টাঙ্গাইলে শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় ফুটে উঠছে দেবীর মুর্তি

ছবি

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রশিক্ষণ

ছবি

চুয়াডাঙ্গায় ইলিশের দামে সাধারণ ক্রেতা দিশেহারা

ছবি

সাপাহারে তরুণ উদ্যোক্তা সোহেল রানার আমচাষে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ

ছবি

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর মাঝি গ্রেপ্তার

ছবি

ফরিদগঞ্জে মাদকসেবী যুবদল নেতা দণ্ডিত

ইয়াবাসহ জামাই-শাশুড়ি আটক

ছবি

ডুমুরিয়ায় শামুক নিধন, হুমকিতে পরিবেশ

ছবি

আ’লীগের ঝটিকা মিছিল, আটক ৩

tab

যশোর শহরে ড্রেন নির্মাণের ১০০ কোটি টাকা ভেসে গেল

যশোর অফিস

যশোর : মানুষের দুর্ভোগ

মঙ্গলবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২১

প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে সোমবারের দিনভর টানা বৃষ্টিতে পৌর এলাকার বেশিরভাগ অঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। সেখানে একপ্রকার বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

জলাবদ্ধতার শিকার নগবাসীর অভিযোগ, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ এই জলাবদ্ধতার কারণ। বেশির ভাগ ড্রেনের স্লাব (ঢাল) ঠিক নেই। যে কারণে পানি নিষ্কাশন ঠিকমত হচ্ছে না।

দেশবন্ধু সড়কের টিবি ক্লিনিক মোড়ের বাসিন্দা যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের শিক্ষার্থী বিদিশা মিত্র বলেন, বাড়ির সামনে দিয়ে নদী বয়ে যাচ্ছে। তিনি মনে করেন, বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে অপকল্পিত উন্নয়নের ‘ষোল আনা মিছে’!

যশোর পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত সাত বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে শহরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ হয়েছে। সিআরডিপি (সিটি রিজন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট) ও ইউজিপআইআই-৩ (তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নীতকরণ সেক্টর প্রকল্প) প্রকল্পের মাধ্যমে এই ড্রেন নির্মাণ হয়। এতে ব্যয়ের পরিমাণ প্রায় ৯৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া কাঁচা-পাকা মিলিয়ে শহরে প্রায় ২৪৬ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে।

কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পৌরসভার এসব ড্রেনের বেশির ভাগেরই স্লাব (ঢাল) ঠিক নেই। তাই এগুলো দিয়ে পানি গড়ায় না। ড্রেনের ভেতর পানি স্থির হয়ে জমে থাকে। ফলে বৃষ্টি হলে ড্রেন উপচে পড়ে। বৃষ্টির ও ড্রেনের কাদাপানি একাকার হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে যায়। এ ছাড়া শহরের বেশির ভাগ বাসাবাড়ির পয়োবর্জ্যরে ট্যাংকিগুলো পাইপ দিয়ে ড্রেনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে যখন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় তখন ড্রেন থেকে কাদা ও মল মিশ্রিত বর্জ্যে রাস্তা সয়লাব হয়ে যায়।

যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শরীফ হাসান বলছেন ভিন্ন কথা। তার ভাষ্যমতে, ড্রেনের স্লাবের কোন সমস্যা নেই নির্মাণের সময়ই ড্রেনের ঢাল শতভাগ নিশ্চিত করা হয়েছে। যাতে ড্রেনে পানির প্রবাহ ঠিক থাকে।

তিনি বলেন, শহরের একটি অংশের পানি নিষ্কাশন হয় মুক্তেশরী নদী দিয়ে। কিন্তু এটির মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। চার থেকে পাঁচ বছর আগে একটি খাল কেটে এর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। ক্যানেলটি দিয়ে শহরের পানি মুক্তেশরীতে গিয়ে পড়ত। খালটি কেটে আবার সংস্কার করতে হবে। তাহলে পানি নিষ্কাশন সমস্যার সমাধান হবে।

শরীফ হাসান মনে করেন, নাগরিক অসচেতনতাও জলাবদ্ধাতার জন্য দায়ী। অনেকে ড্রেনে ময়লা ফেলেন। এ ছাড়া পাইলিংয়ের সময় পাইপ লাইন ড্রেনে যুক্ত করে দেন। বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী ডেনে ফেলেন। ফলে ড্রেনের বেড উঁচু হয়ে যায়। এতে পানির প্রবাহ বিঘ্নিত হয়।

সারাদিনের গড় বৃষ্টিপাত ছিল ১২১ মিলিমিটার। এতে শহরের দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন সড়ক, টিবি ক্লিনিক, ফুড গোডাউন, পিটিআই রোড, ছোটনের মোড়, এমএম কলেজ দক্ষিণ গেট, খড়কির কলাবাগান, জেবিন মোড়, শংকরপুর ইসহাক সড়ক, নলডাঙারোডসহ অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এখানকার রাস্তাগুলোয় গোড়ালি থেকে হাঁটুপানি জমে যায়। কোথাও কোথাও কোমর সমান পানিও জমে। এখানকার বাসা-বাড়ির ভেতরও পানি ঢুকে যায়। ড্রেনে ফেলা ময়লা ও পয়োবর্জ্য মিশ্রিত পানিতে ভাসছে এসব এলাকা।

যশোর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জানান, তাদের এলাকার জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ ড্রেনেজ সমস্যা। খালধার রোডের বড় ড্রেনটি দিয়ে এখানকার পানি নিষ্কাশন হয়। আর সমস্যা এই দুই এলাকার দুটি ড্রেনে। ড্রেন দুটির সংযোগস্থল রবীন্দ্রনাথ সড়কে (আরএন রোড) রানা স্টিল প্লাজার পাশে। এখানটায় বেজপাড়ার ড্রেনটি নিচু। অন্যদিকে খালধার রোডের ড্রেনটি উঁচু। ফলে পানি বের হতে সমস্যা হয়।

ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রদীপ কুমার নাথ বাবলু ড্রেনের স্লাবের সমস্যার পাশাপাশি মানুষজনের অসচেতনা দায়ী বলে মনে করেন।

সরেজমিন দেখা যায়, শহরের চারখাম্বা, রেলরোড টিবি ক্লিনিক, ফুড গোডাউন, আনসার ক্যাম্প এলাকায় গোড়ালি থেকে হাঁটু সমান পানি। এসব এলাকার অনেক বাড়ির ভেতরও জলমগ্ন। স্থানীয় বাসিন্দা ও ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্কসবাদী) যশোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, চারখাম্বা ও রেলরোডে আগে যখন ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছিল না তখন কোন পানি জমত না। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণের পর এখন দেখছি বৃষ্টি হলেই এই জায়গা যেন হয়ে ওঠে পদ্মা নদী। তিনি মনে করেন, অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণই এই জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ। ড্রেনগুলোর ঢাল ঠিক না থাকায় পানি গড়াচ্ছে না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার।

শহরের খড়কির কলাবাগান, এমএম কলেজ দক্ষিণ গেট, জেবিন মোড়সহ আরও কয়েক জায়গায় জলাবদ্ধতার দৃশ্য চোখে পড়ে। এর মধ্যে কলাবাগান পাড়া, খড়কি জেবিন মোড় ও এমএম কলেজ দক্ষিণ গেটের আশপাশে জলাবদ্ধতা সবচেয়ে বেশি। গোড়ালি থেকে হাঁটুঅবধি পানি জমেছে। বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে গেছে।

জলাবদ্ধতা নিয়ে যশোর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজিবুল আলমও স্বীকার করেছেন, তার এলাকারও অনেক ড্রেনের স্লাব (ঢাল) ঠিক নেই। যার কারণে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া অনেকে ড্রেনের ভেতর বাসাবাড়ির ময়লা ফেলেন। যার কারণে পানি বের হতে সমস্যা হওয়ায় জলাবদ্ধতা হয়েছে।

রাজিবুল আলম আরও জানান, জিলা স্কুলের সামনে থেকে সিভিল কোর্ট মোড় পর্যন্ত ড্রেন পরিষ্কার করাতে গিয়ে দেখেন ভেতরে পরিষ্কার পানি। ড্রেনের মধ্যে ময়লাও তেমন ছিল না। তার ভাষ্যমতে, ড্রেনটি দিয়ে প্রকৃত অর্থে কোন পানিই নিষ্কাশন হয় না। ‘ওয়াটার লেভেল’ (পানির স্তর) ঠিক না থাকায় এমনটি হয়েছে। এর সমাধানে পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অবহিত করেছেন।

যশোর পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন বলেন, বিরতীহীন প্রচন্ড বৃষ্টিপাতের কারণে শহরে প্রচুর পরিমাণ পানি জমেছে। ড্রেনের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত পানির কারণে নিষ্কাশন হতে সময় একটু বেশি লাগছে। বৃষ্টি কমে আসলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পানি বের হয়ে যাবে।

back to top