alt

দল থেকেও কি বাদ পড়ছেন মুরাদ ?

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২১

অডিও কেলেঙ্কারিতে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসানকে অশালীন ও শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য দেয়ায় কারণে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক শেষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানান। জেলা আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্ত মঙ্গলবারই কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানো হয় বলে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহামেদ চৌধুরী জানান।

তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আভাস দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।

দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদে হারালেও দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থাকবে মুরাদের। সে বিষয়ে কেবল কেন্দ্রীয় কমিটিই সিদ্ধান্ত নিতে পরে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হলে তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থাকবে কি-না এ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম বলেন, ‘তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে। দলের দায়িত্বশীল পদে থাকা কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে, তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন, তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।’

দল থেকে বহিষ্কার হলে অনিশ্চয়তায় পড়বে মুরাদের সংসদ সদস্য পদ। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে ‘নারীবিদ্বেষী’ মন্তব্য করে সম্প্রতি বিএনপি নেতাদের সমালোচনায় পড়েন মুরাদ হাসান। এরপর চিত্রনায়িকা মাহি ও চিত্রনায়ক ইমনের সঙ্গে একটি টেলিফোন আলাপের অডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে মাহির সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলতে এবং হুমকি দিতে শোনা যায় এক ব্যক্তিকে। বলা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি মুরাদ হাসান।

এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যেই সোমবার (৬ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, মুরাদকে পদত্যাগ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর মঙ্গলবার দুপুরে ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন মুরাদ হাসান। সেখানে তিনি লেখেন, প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ‘ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায়’ তিনি পদত্যাগ করতে চান।

যদি ‘ভুল’ করে থাকেন তবে ‘ক্ষমা’ চান মুরাদ

মঙ্গলবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ‘ক্ষমা’ চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন মুরাদ হাসান। তবে তিনি লিখেছেন ‘যদি কোন ভুল করে থাকি’ তবে তিনি ক্ষমা চান।

তিনি লিখেন- ‘আমি যদি কোন ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মা দেশরত্ন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সকল সিদ্ধান্ত মেনে নিবো আজীবন।’

ফেইসবুকে দেয়া এই স্টাটাস চার ঘণ্টায় লাইক পড়েছে ৮৩ হাজার, কমেন্ট ৩৮ হাজার। শেয়ার হয়েছে তিন হাজার ৪০০। স্ট্যাটাসের কমেন্টে তার অনৈতিক কর্মকান্ড বর্ণনা ও ঘটনার শাস্তি দাবি করা হয়েছে।

কমেন্টে সায়েফ তুরান নামে একজন লিখেন, ‘পতন তো মাত্র শুরু কপালে আরও দুর্গতি আছে মনে রাখবেন।’

আদ্রিতা ত্রয়ী বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী হয়ে নিজের তথ্যটা গোপন রাখতে পারলে না মুরাদ!’

মো. জাহিদ আল হাসান বলেন, ‘রসালো মুরাদ.. তোমার শুকরিয়া করা উচিত যে, নেত্রী পদত্যাগ করতে বলেছে, আগুনে ঝাপ দিতে বলে নাই’।

রাকিব আল হাসান বলেন, ‘সম্পর্ক বদলে গেলো একটি পলকে, কে আপন কে যে পর হলো রে...’

পদত্যাগপত্রেও প্রতিমন্ত্রীর ভুল

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান মঙ্গলবার তার দপ্তরে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। ওই পদত্যাগপত্রে তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদানের তারিখ ২০২১ সালের ১৯ মে উল্লেখ করেছেন। পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করা তারিখটি ঠিক থাকলেও সালটি ভুল। তাকে ২০১৯ সালের ১৯ মে দায়িত্ব দেয়া হয়।

দুপুরে প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেয়া হয়েছে। সে সময় দায়িত্বপ্রদানের ভুলটি সংশোধন করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়।

মৌসুমী, শাকিবকে নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য

চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা ও ভয়ভীতি দেখানো ছাড়াও ডা. মুরাদ হাসান ঢালিউডের দুই জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীকে নিয়েও মানহানিকর মন্তব্য করেন ডা. মুরাদ হাসান। একটি সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান সরকারের এই মন্ত্রী চিত্রনায়িকা মৌসুমীর শারীরিক গঠন নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে ঢালিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খানকে নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। একটি সংবাদ সম্মেলনে মুরাদ হাসান বলেছেন, ‘শাকিব খান তেলাপোকার মতো অভিনয় করেন!’

মৌসুমীর শারীরিক গঠন নিয়ে ডা. মুরাদ হাসান কটাক্ষ করেন, সোহানেরই রাজকুমার নামের একটি চলচ্চিত্রের মহরত অনুষ্ঠানে। দেশের চলচ্চিত্রের এমন এক অভিনয়শিল্পীকে শারীরিকভাবে কটাক্ষ করায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত কাউকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। তবে ফেইসবুকে এ নিয়ে ভক্তরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মুরাদ হাসান সেদিন তার বক্তব্যে বলেন, ‘মৌসুমী ভালো করছে, শুধু ওয়েটটা কমাতে হবে। ফিল্মে যারা অভিনয় করবেন, তাদের আমি হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, ওয়েটটার দিকে একটু নজর দিন। ‘রাজকুমারী’ চলচ্চিত্রের জন্য যে ছেলেকে নেয়া হয়েছে, সে ফিট, গুড লুকিং ও হ্যান্ডসাম এবং ‘রাজকুমারী’র জন্য যে মেয়েকে নির্বাচন করেছেন সোহান ভাই, আমাকে ছবি দেখিয়েছেন, সে-ও ফিট।’

সেদিনের অনুষ্ঠানে মুরাদ হাসান বলেন, ‘আমি চলচ্চিত্রের অনুষ্ঠানে আসতে চাই না। কারণ, বিতর্ক তৈরি হয়। মাঝে তো বিতর্কের চোটে ফিল্মপাড়ায় পা দেয়া মানেই আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার মতো। তাই আমি সবাইকে অনুরোধ করছি, স্ক্যান্ডাল থেকে দূরে থাকতে।’

মৌসুমীর এই ঘটনার কিছুদিন পরই শাকিবকে খোঁচা দিতে গিয়ে ভক্তদের প্রতিবাদের মুখে পড়েন মুরাদ হাসান। তবে মৌসুমী ও শাকিব খানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যে করায় বিনোদন অঙ্গনের কোন তারকাকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি।

মুরাদের ‘আচরণে’ পরিবর্তন

মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন গেল তিন মাস ধরে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের আচরণে ‘একটু পরিবর্তন এসেছিল’।

হাছান মাহমুদ বলেন, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সব সময় মুরাদ হাসানের সহযোগিতা পেয়েছি। তবে গেল তিন মাস ধরে তার আচরণে পরিবর্তন দেখেছি। তার সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই তিনি দিয়েছেন। দল বা সরকার বিব্রত হয় এমন কোন কিছুই প্রধানমন্ত্রী সহ্য করেন না।

তিনি বলেন, ‘আমার কাছে পরিবর্তন মনে হয়েছে তিনি আগে যেমন ছিলেন তার চেয়ে ভিন্ন মনে হয়েছে। এটি আমার পারসোনাল অবজারভেশন।’

ছাত্রদল ‘ক্যাডার’ থেকে আজকের মুরাদ

আমাদের ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ডা. মুরাদ হাসান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ১৯৯৩ সালে এম-৩০ ব্যাচে ভর্তি হয়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি ছাত্রদলের একজন সক্রিয় কর্মী ও ‘ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিতি পান।

সে সময় দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় থাকার ফলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের সৈয়দ মাহবুব-উল কাদির ও মো. ইসাহাকের নেতৃত্বের কমিটির প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান।

সে সময়ের ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ ও মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ তার বেশ কয়েকজন সহপাঠী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তারা জানিয়েছেন, দায়িত্ব লাভের পর থেকে মুরাদ ‘বেপরোয়া ছাত্রদল ক্যাডার’ হিসেবে ছাত্রলীগের কর্মীদের ওপর ‘অত্যাচার’ শুরু করেন। এ ছাড়া মেডিকেল কলেজের ছাত্র থাকাকালে মুরাদ হাসানের উশৃঙ্খল জীবন যাপন নিয়ে নেতারা তার ওপর বিরক্ত ছিল বলেও তারা উল্লেখ করেন।

মুরাদ হাসানের বাবা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান তালুকদার ১৯৭৮ সালে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। সে কারণে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন কয়েকজন নেতার উদ্যোগে মুরাদ হাসানকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়।

আওয়ামী পরিবারের লোক হিসেবে মুরাদ হাসানকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়।

প্রস্তাব অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ছাত্রদল থেকে পদত্যাগ করে ছাত্রলীগে যোগদান করেন তিনি। এই তথ্য নিশ্চিত করে তৎকালীন ছাত্রদল কমিটির নেতারা জানান, ১৯৯৩ সালে এম-৩০ ব্যাচে ডাক্তার মুরাদ হাসান এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সক্রিয় হন। পরে মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে ছাত্রদলের কমিটি নেতারা সবাই ক্যাম্পাসের বাইরে চলে যায়। কিন্তু ডাক্তার মুরাদ হাসান ক্যাম্পাসে থেকে যান এবং ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ছাত্রলীগে যোগদান করেন।

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগ ও মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডাক্তার মুরাদ হাসান ১৯৯৭-৯৮ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৯৯-২০০০ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

মুরাদের কুশপুত্তলিকা দাহ

জামালপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের নির্দেশ দেয়ার খবরে তার নির্বাচনী এলাকা জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আনন্দ মিছিল ও কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে আওয়ামী লীগসহ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার ও সোমবার রাতে তারাকান্দি শহীদ মিনার চত্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন।

২০১৯ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে মুরাদ হাসানকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। আড়াই বছর ধরে এই মন্ত্রণালয়ে ছিলেন তিনি।

মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য। তার বাবা প্রয়াত মতিউর রহমান তালুকদার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

না বলে পাঁচতারকা হোটেল ছেড়েছেন মুরাদ

বিতর্কিত মন্তব্য আর অশ্লীল কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁসের রাতেই ঢাকা ছাড়েন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। সোমবার গোপনে চট্টগ্রামে পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লুতে উঠেছিলেন তিনি। পরে একই দিন রাত ৩টায় কাউকে কিছু না জানিয়ে হোটেল ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় তার সঙ্গে কোন প্রটোকল ছিল না বলে হোটেল সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

রেডিসন ব্লু বে ভিউ হোটেলের ব্যবস্থাপক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা রাফাত সালমান বলেন, মন্ত্রী সোমবার দুপুর নাগাদ আমাদের হোটেলে এসেছিলেন। ওনার জন্য একটি রুম বুক (অগ্রিম ভাড়া) করা ছিল। সেখানেই ওঠেন তিনি। তবে মধ্যরাতের আগে কাউকে কিছু না বলে তিনি চলে যান। আমাদের অভ্যর্থনার দায়িত্বে থাকা কেউই ওনার হোটেল ছাড়ার বিষয়টি জানতেন না।

মাগুরায় গাছে ট্রাকের ধাক্কা, সহকারী নিহত

ছবি

গাজীপুরে কাশিমপুর শ্মশান মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর

ছবি

শাহজালালে যাত্রীর পাকস্থলী থেকে উদ্ধার ১ হাজার ইয়াবা

ছবি

নরসিংদীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে গুলিতে নিহত ১

ছবি

দুর্গাপূজায় তিন স্তরে নিরাপত্তা, প্রয়োজনে ৯৯৯

ছবি

১৭ বিয়ের অভিযোগ ওঠা আলোচিত বন কর্মকর্তা সাময়িক বহিষ্কার

ছবি

জুলাই শহীদদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ প্রতিবেদন প্রকাশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ছবি

না’গঞ্জে ইজিবাইক চালক ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ, আহত ১২

ছবি

চোখ রাঙানি বাড়ছেই এডিসের, কমছে না ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

ছবি

দুবাইয়ে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি, আটকে আছেন ১৭৮ যাত্রী

ছবি

বিআরটিসি বাস চালকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ছবি

দাফনের পূর্বে শিশুর নড়াচড়া, হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় আটক

ছবি

পাঙ্গাস মাছের পায়েস, দুই ভাই ভাইরাল

ছবি

অফিস-কমিটি-মাঠ সবই আছে, নেই শুধু খেলার আয়োজন

ছবি

সরকারি মতিলাল ডিগ্রি কলেজে খণ্ডকালীন দিয়ে চলছে পাঠদান

ছবি

অনুপস্থিত থেকেও নিচ্ছেন বেতন-ভাতা

ছবি

নির্মাণের ১৪ মাসেও চালু হয়নি বরুড়ায় ২০ শয্যার হাসপাতাল

ছবি

দুমকিতে দূর্গোৎসব উপলক্ষে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

ছবি

পটিয়ায় অস্ত্রের মুখে মুরগি ব্যবসায়ী অপহরণের দুই ঘণ্টা পর উদ্ধার

ছবি

সখীপুরে ৮ মাসে ২৪০ জনকে সর্প দংশন, হাসপাতালে নেই অ্যান্টিভেনম

ছবি

শারদীয় দুর্গোৎসবে শ্রীমঙ্গলে জমজমাট পোশাকের বাজার

ছবি

বাক প্রতিবন্ধী মাসুম জীবনযুদ্ধে জয়ী, যা সবার অনুকরনীয়

ছবি

রাজশাহীতে ডাকাতির লুণ্ঠিত মালামালসহ আটক ৮

ছবি

জগন্নাথপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিনা খরচে মিলছে ডেলিভারি সেবা

ছবি

গোপালগঞ্জে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় চালকের সহকারী নিহত

ছবি

বাগেরহাটে মহাসড়কে প্রাণ গেল স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার

ছবি

চুনারুঘাটে ধর্ষণের অভিযোগে দুই কিশোর আটক

ছবি

সিরাজগঞ্জে বাবাকে হত্যায় ছেলের মৃত্যুদণ্ড

ছবি

আদমদীঘিতে ১ বছর ধরে বেতন বন্ধ খন্ডকালিন ৫ শিক্ষক-কর্মচারির

ছবি

অবৈধভাবে ভারত থেকে ফেরার পথে ৩ বাংলাদেশি আটক

ছবি

ঈশ্বরদীতে পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু

ছবি

শিবগঞ্জে মা ও ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

সিরাজদিখানে সড়ক পাকা করার দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

দোয়ারাবাজার সীমান্তে বিজিবির অভিযানে ভারতীয় গরু জব্দ

ছবি

ডিমলায় হিসাবরক্ষণ অফিসে সেবা গ্রহীতাদের ভোগান্তি

ছবি

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে জামাতের প্রার্থীর ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ

tab

দল থেকেও কি বাদ পড়ছেন মুরাদ ?

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২১

অডিও কেলেঙ্কারিতে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসানকে অশালীন ও শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য দেয়ায় কারণে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টায় জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক শেষে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানান। জেলা আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্ত মঙ্গলবারই কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে পাঠানো হয় বলে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহামেদ চৌধুরী জানান।

তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আভাস দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা।

দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদকের পদে হারালেও দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থাকবে মুরাদের। সে বিষয়ে কেবল কেন্দ্রীয় কমিটিই সিদ্ধান্ত নিতে পরে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হলে তখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

আওয়ামী লীগের সদস্যপদ থাকবে কি-না এ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম বলেন, ‘তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে। দলের দায়িত্বশীল পদে থাকা কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে, তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন, তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।’

দল থেকে বহিষ্কার হলে অনিশ্চয়তায় পড়বে মুরাদের সংসদ সদস্য পদ। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে ‘নারীবিদ্বেষী’ মন্তব্য করে সম্প্রতি বিএনপি নেতাদের সমালোচনায় পড়েন মুরাদ হাসান। এরপর চিত্রনায়িকা মাহি ও চিত্রনায়ক ইমনের সঙ্গে একটি টেলিফোন আলাপের অডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে মাহির সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলতে এবং হুমকি দিতে শোনা যায় এক ব্যক্তিকে। বলা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি মুরাদ হাসান।

এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যেই সোমবার (৬ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, মুরাদকে পদত্যাগ করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর মঙ্গলবার দুপুরে ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন মুরাদ হাসান। সেখানে তিনি লেখেন, প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ‘ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায়’ তিনি পদত্যাগ করতে চান।

যদি ‘ভুল’ করে থাকেন তবে ‘ক্ষমা’ চান মুরাদ

মঙ্গলবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ‘ক্ষমা’ চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন মুরাদ হাসান। তবে তিনি লিখেছেন ‘যদি কোন ভুল করে থাকি’ তবে তিনি ক্ষমা চান।

তিনি লিখেন- ‘আমি যদি কোন ভুল করে থাকি অথবা আমার কথায় মা-বোনদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মমতাময়ী মা দেশরত্ন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সকল সিদ্ধান্ত মেনে নিবো আজীবন।’

ফেইসবুকে দেয়া এই স্টাটাস চার ঘণ্টায় লাইক পড়েছে ৮৩ হাজার, কমেন্ট ৩৮ হাজার। শেয়ার হয়েছে তিন হাজার ৪০০। স্ট্যাটাসের কমেন্টে তার অনৈতিক কর্মকান্ড বর্ণনা ও ঘটনার শাস্তি দাবি করা হয়েছে।

কমেন্টে সায়েফ তুরান নামে একজন লিখেন, ‘পতন তো মাত্র শুরু কপালে আরও দুর্গতি আছে মনে রাখবেন।’

আদ্রিতা ত্রয়ী বলেন, ‘তথ্যমন্ত্রী হয়ে নিজের তথ্যটা গোপন রাখতে পারলে না মুরাদ!’

মো. জাহিদ আল হাসান বলেন, ‘রসালো মুরাদ.. তোমার শুকরিয়া করা উচিত যে, নেত্রী পদত্যাগ করতে বলেছে, আগুনে ঝাপ দিতে বলে নাই’।

রাকিব আল হাসান বলেন, ‘সম্পর্ক বদলে গেলো একটি পলকে, কে আপন কে যে পর হলো রে...’

পদত্যাগপত্রেও প্রতিমন্ত্রীর ভুল

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান মঙ্গলবার তার দপ্তরে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। ওই পদত্যাগপত্রে তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদানের তারিখ ২০২১ সালের ১৯ মে উল্লেখ করেছেন। পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করা তারিখটি ঠিক থাকলেও সালটি ভুল। তাকে ২০১৯ সালের ১৯ মে দায়িত্ব দেয়া হয়।

দুপুরে প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দেয়া হয়েছে। সে সময় দায়িত্বপ্রদানের ভুলটি সংশোধন করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়।

মৌসুমী, শাকিবকে নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য

চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা ও ভয়ভীতি দেখানো ছাড়াও ডা. মুরাদ হাসান ঢালিউডের দুই জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পীকে নিয়েও মানহানিকর মন্তব্য করেন ডা. মুরাদ হাসান। একটি সংবাদ সম্মেলনে বর্তমান সরকারের এই মন্ত্রী চিত্রনায়িকা মৌসুমীর শারীরিক গঠন নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে ঢালিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক শাকিব খানকে নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। একটি সংবাদ সম্মেলনে মুরাদ হাসান বলেছেন, ‘শাকিব খান তেলাপোকার মতো অভিনয় করেন!’

মৌসুমীর শারীরিক গঠন নিয়ে ডা. মুরাদ হাসান কটাক্ষ করেন, সোহানেরই রাজকুমার নামের একটি চলচ্চিত্রের মহরত অনুষ্ঠানে। দেশের চলচ্চিত্রের এমন এক অভিনয়শিল্পীকে শারীরিকভাবে কটাক্ষ করায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত কাউকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। তবে ফেইসবুকে এ নিয়ে ভক্তরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

মুরাদ হাসান সেদিন তার বক্তব্যে বলেন, ‘মৌসুমী ভালো করছে, শুধু ওয়েটটা কমাতে হবে। ফিল্মে যারা অভিনয় করবেন, তাদের আমি হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, ওয়েটটার দিকে একটু নজর দিন। ‘রাজকুমারী’ চলচ্চিত্রের জন্য যে ছেলেকে নেয়া হয়েছে, সে ফিট, গুড লুকিং ও হ্যান্ডসাম এবং ‘রাজকুমারী’র জন্য যে মেয়েকে নির্বাচন করেছেন সোহান ভাই, আমাকে ছবি দেখিয়েছেন, সে-ও ফিট।’

সেদিনের অনুষ্ঠানে মুরাদ হাসান বলেন, ‘আমি চলচ্চিত্রের অনুষ্ঠানে আসতে চাই না। কারণ, বিতর্ক তৈরি হয়। মাঝে তো বিতর্কের চোটে ফিল্মপাড়ায় পা দেয়া মানেই আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার মতো। তাই আমি সবাইকে অনুরোধ করছি, স্ক্যান্ডাল থেকে দূরে থাকতে।’

মৌসুমীর এই ঘটনার কিছুদিন পরই শাকিবকে খোঁচা দিতে গিয়ে ভক্তদের প্রতিবাদের মুখে পড়েন মুরাদ হাসান। তবে মৌসুমী ও শাকিব খানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যে করায় বিনোদন অঙ্গনের কোন তারকাকে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি।

মুরাদের ‘আচরণে’ পরিবর্তন

মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন গেল তিন মাস ধরে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের আচরণে ‘একটু পরিবর্তন এসেছিল’।

হাছান মাহমুদ বলেন, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সব সময় মুরাদ হাসানের সহযোগিতা পেয়েছি। তবে গেল তিন মাস ধরে তার আচরণে পরিবর্তন দেখেছি। তার সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই তিনি দিয়েছেন। দল বা সরকার বিব্রত হয় এমন কোন কিছুই প্রধানমন্ত্রী সহ্য করেন না।

তিনি বলেন, ‘আমার কাছে পরিবর্তন মনে হয়েছে তিনি আগে যেমন ছিলেন তার চেয়ে ভিন্ন মনে হয়েছে। এটি আমার পারসোনাল অবজারভেশন।’

ছাত্রদল ‘ক্যাডার’ থেকে আজকের মুরাদ

আমাদের ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ডা. মুরাদ হাসান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ১৯৯৩ সালে এম-৩০ ব্যাচে ভর্তি হয়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি ছাত্রদলের একজন সক্রিয় কর্মী ও ‘ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিতি পান।

সে সময় দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় থাকার ফলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের সৈয়দ মাহবুব-উল কাদির ও মো. ইসাহাকের নেতৃত্বের কমিটির প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান।

সে সময়ের ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ ও মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ তার বেশ কয়েকজন সহপাঠী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তারা জানিয়েছেন, দায়িত্ব লাভের পর থেকে মুরাদ ‘বেপরোয়া ছাত্রদল ক্যাডার’ হিসেবে ছাত্রলীগের কর্মীদের ওপর ‘অত্যাচার’ শুরু করেন। এ ছাড়া মেডিকেল কলেজের ছাত্র থাকাকালে মুরাদ হাসানের উশৃঙ্খল জীবন যাপন নিয়ে নেতারা তার ওপর বিরক্ত ছিল বলেও তারা উল্লেখ করেন।

মুরাদ হাসানের বাবা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান তালুকদার ১৯৭৮ সালে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। সে কারণে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন কয়েকজন নেতার উদ্যোগে মুরাদ হাসানকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়।

আওয়ামী পরিবারের লোক হিসেবে মুরাদ হাসানকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যোগ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়।

প্রস্তাব অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ছাত্রদল থেকে পদত্যাগ করে ছাত্রলীগে যোগদান করেন তিনি। এই তথ্য নিশ্চিত করে তৎকালীন ছাত্রদল কমিটির নেতারা জানান, ১৯৯৩ সালে এম-৩০ ব্যাচে ডাক্তার মুরাদ হাসান এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সক্রিয় হন। পরে মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে ছাত্রদলের কমিটি নেতারা সবাই ক্যাম্পাসের বাইরে চলে যায়। কিন্তু ডাক্তার মুরাদ হাসান ক্যাম্পাসে থেকে যান এবং ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে ছাত্রলীগে যোগদান করেন।

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতা ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগ ও মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডাক্তার মুরাদ হাসান ১৯৯৭-৯৮ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৯৯-২০০০ সালে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

মুরাদের কুশপুত্তলিকা দাহ

জামালপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগের নির্দেশ দেয়ার খবরে তার নির্বাচনী এলাকা জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে আনন্দ মিছিল ও কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে আওয়ামী লীগসহ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার ও সোমবার রাতে তারাকান্দি শহীদ মিনার চত্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলামের কর্মী-সমর্থকরা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন।

২০১৯ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে মুরাদ হাসানকে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। আড়াই বছর ধরে এই মন্ত্রণালয়ে ছিলেন তিনি।

মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য। তার বাবা প্রয়াত মতিউর রহমান তালুকদার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

না বলে পাঁচতারকা হোটেল ছেড়েছেন মুরাদ

বিতর্কিত মন্তব্য আর অশ্লীল কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁসের রাতেই ঢাকা ছাড়েন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। সোমবার গোপনে চট্টগ্রামে পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লুতে উঠেছিলেন তিনি। পরে একই দিন রাত ৩টায় কাউকে কিছু না জানিয়ে হোটেল ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় তার সঙ্গে কোন প্রটোকল ছিল না বলে হোটেল সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

রেডিসন ব্লু বে ভিউ হোটেলের ব্যবস্থাপক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা রাফাত সালমান বলেন, মন্ত্রী সোমবার দুপুর নাগাদ আমাদের হোটেলে এসেছিলেন। ওনার জন্য একটি রুম বুক (অগ্রিম ভাড়া) করা ছিল। সেখানেই ওঠেন তিনি। তবে মধ্যরাতের আগে কাউকে কিছু না বলে তিনি চলে যান। আমাদের অভ্যর্থনার দায়িত্বে থাকা কেউই ওনার হোটেল ছাড়ার বিষয়টি জানতেন না।

back to top