alt

যানবাহনের বেপরোয়া গতি-ওভারটেক

সাত বছরে সড়কে প্রাণ গেছে অর্ধলাখের বেশি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : রোববার, ২৩ জানুয়ারী ২০২২

যানবাহনের বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং ও রাস্তাঘাটের ত্রুটির কারণে গত সাত বছরের ৩৭ হাজার ৪২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় অর্ধ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় বেশির ভাগেই পথচারী। সড়কপথে যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার ও মাদক সেবন করে যানবাহন চালানোর জন্য সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছর ৮৫ দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও ২০২১ সালে পাঁচ হাজার ৬২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৮০৯ জন নিহত, ৯ হাজার ৩৯ জন আহত হয়েছে। ২০২০ সালের তুলনায় বিদায়ী বছর সড়ক দুর্ঘটনা ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

রোববার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। এ সময় ২০২১ সালে রেলপথে ৪০২টি দুর্ঘটনায় ৩৯৬ জন নিহত ও ১৩৪ জন আহত হয়েছে। নৌপথে ১৮২টি দুর্ঘটনায় ৩১১ জন নিহত, ৫৭৮ জন আহত এবং ৫৪৪ জন নিখোঁজ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিগত সাত বছরে ৩৭ হাজার ৪২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১ হাজার ৬৬৫ জন নিহত ও আহত হয়েছে ১০ হাজার ৩৯৭ জন। ২০২০ সালে চার হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ৬৮৬ জন নিহত ও আট হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও আহত ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় বার্ষিক ক্ষয়ক্ষতি জিডিপির প্রায় এক দশমিক ৫ শতাংশ। এসব হতাহতদের ৭৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ ১৫ থেকে ৪৫ বছরের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক হাদিউজ্জামান বলেন, ‘সড়ক টেকসই ও আধুনিকায়নের জন্য সরকার যা বিনিয়োগ করছে, তার ফল পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও পরিবহন মালিক-চালক যখন যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণ করতে থাকেন, তখন বুঝতে হবে এদেশে দুর্ঘটনা শুধু কারিগরি সমস্যা নয়, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ও জড়িত।’

তিনি বলেন, ‘নীতিনির্ধারকেরা ভারতে সড়কে দেড় লাখ মৃত্যুর তথ্য টানেন। অথচ ভারতে প্রতি ১০ হাজার নিবন্ধিত যানবাহনের বিপরীতে ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে, আর বাংলাদেশ তা ৪৫ জন। অন্য দেশগুলো যখন গণপরিবহনমুখী উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে, তখন এ দেশে মোটরসাইকেলমুখী উন্নয়ন চলছে। মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।’ সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির জন্য রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ, ছোট যানবাহন বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজি, রাস্তার পাশে হাট-বাজার, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো ও দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি-ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থাসহ ১৬টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

তাই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সড়ক পরিবহন খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা, সড়ক নিরাপত্তায় বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা, নতুন গণপরিবহন নামানো, দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তায় তহবিল গঠনসহ ১২টি সুপারিশ করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫৪ দশমিক ০৭ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেয়ার ঘটনা, ২২ দশমিক ১৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬ দশমিক ১৩ শতাংশ খাদে পড়ে, ৬ দশমিক ২১ শতাংশ বিবিধ কারণে, শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।’

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এ বছর মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩১ দশমিক ৫১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২০ দশমিক ৩৪ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে। মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘ প্রায় ৩ মাস গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও বিগত বছরের চেয়ে বিদায়ী বছরে জাতীয় মহাসড়কে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ফিডার রোডে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ, রেলক্রসিং এ শূন্য দশমিক ০৬ শতাংশ দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে আঞ্চলিক মহাসড়কে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ দুর্ঘটনা কমেছে।’

সাত বছরে সড়ক দুর্ঘটনা

২০১৫ সালে ৬৫৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় আট হাাজার ৬৪২ জন নিহত ও ২১ হাজার ৮৫৫ জন আহত হয়েছে। ২০১৬ সালে চার হাজার ৩১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ৫৫ জন নিহত ও ১৫ হাজার ৯১৪ জন আহত হয়েছে। ২০১৭ সালে চার হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৩৯৭ জন নিহত ও ১৬ হাজার ১৯৩ জন আহত হয়েছে। ২০১৮ সালে পাঁচ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ২২১ জন নিহত ও ১৫ হাজার ৪৬৬ জন আহত হয়েছে। ২০১৯ সালে পাঁচ হাজার ৫১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৮৫৫ জন নিহত ও ১৩ হাজার ৩৩০ জন আহত হয়েছে। ২০২০ সালে চার হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ৬৮৬ জন নিহত ও আট হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছে। ২০২১ সালে পাঁচ হাহার ৬২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৮০৯ জন নিহত, ৯ হাজার ৩৯ জন আহত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার রোগ কিন্তু কোন কারিগরি সমস্যা নয়, এটা রাজনৈতিক সমস্যা। রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধান করতে হবে। যখনই একটা দুর্ঘটনা হয়, বলে যে একটা ফুটওভারব্রিজ করে দিচ্ছি। এটা কোন সমাধান নয়। সবার আগে প্রয়োজন জবাবদিহিতা। আমাদের কাগজে-কলমে অনেক কিছু আছে। কিন্তু বাস্তবে কিছু নেই। বর্তমানে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা বেড়েছে। আমরা বলেছি মোটরসাইকেল সড়ক দুর্ঘটনার ক্যান্সার সেল, এটা বন্ধ করুন। কিন্তু তা হয়নি। এটা জরুরি, কেননা সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা খুব বেশি বাড়ছে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ১২ দফা সুপারিশ

সড়ক নিরাপত্তায় বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা, আইনের ত্রুটি চিহ্নিত করে সংস্কারপূর্বক ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন, সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, সড়ক মন্ত্রণালয়ে আলাদা সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট গঠন, ইতোমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করা, সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন, জেব্রা ক্রসিং অঙ্কন করা, চালকদের পেশাদার ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা, পরিবহন সেক্টরে অনিয়ম-দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ, গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি আধুনিকায়ন, সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠন ও হতাহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, দেশব্যাপী চাহিদানুযায়ী পর্যাপ্ত নতুন গণপরিবহন নামানো, ট্রাফিক পুলিশের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তোলা, গণপরিবহনে সেবা ও নিরাপত্তার মান পর্যবেক্ষণের জন্য দেশের সব মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, জেলা প্রশাসকদের প্রতিমাসে একদিন পরিচয় গোপন রেখে গণপরিবহন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

ছবি

৯৩ বছরে দেশের সমবায় সমিতির অনন্য মডেল প্রতিষ্ঠানে পরিনত

ছবি

রংপুরে ‘পদ্মরাগ কমিউটার’ ট্রেনের ছয় বগি লাইনচ্যুত, ট্রেন চলাচল বন্ধ

ছবি

ইমামকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার

ছবি

ডিমলায় অবৈধ পেট্রোল পাম্পকে জরিমানা, বন্ধের নির্দেশ

ছবি

টাঙ্গাইলে শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় ফুটে উঠছে দেবীর মুর্তি

ছবি

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রশিক্ষণ

ছবি

চুয়াডাঙ্গায় ইলিশের দামে সাধারণ ক্রেতা দিশেহারা

ছবি

সাপাহারে তরুণ উদ্যোক্তা সোহেল রানার আমচাষে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ

ছবি

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর মাঝি গ্রেপ্তার

ছবি

ফরিদগঞ্জে মাদকসেবী যুবদল নেতা দণ্ডিত

ইয়াবাসহ জামাই-শাশুড়ি আটক

ছবি

ডুমুরিয়ায় শামুক নিধন, হুমকিতে পরিবেশ

ছবি

আ’লীগের ঝটিকা মিছিল, আটক ৩

ছবি

নাসিরনগরে ২০০ বস্তা সরকারি চাল জব্দ

ছবি

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় জরিমানা

ছবি

ভবানীপুর স্কুলে প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষক লাঞ্ছিত

ছবি

কেশবপুরে আদালতে বিপক্ষে সাক্ষী দেয়ায় পোল্ট্রি খামার ভাঙচুর

ছবি

পিবিআই’র হাজতখানা থেকে আসামীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

ছবি

শেরপুরে ৯১টি মন্ডপে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি

ছবি

একসঙ্গে ৪ শিশুর জন্ম চমেক হাসপাতালে, মা-শিশু সবাই সুস্থ

ছবি

বেগুন খেতে মোজাইক ভাইরাস, দুশ্চিন্তায় কৃষক

ছবি

আসন পুনর্বিন্যাস: ভাঙ্গায় অবরোধ তুলে নিলেন আন্দোলনকারীরা, যান চলাচল স্বাভাবিক

ছবি

আসন ফিরে পেতে বাগেরহাটে নির্বাচন অফিস ঘেরাও, উচ্চ আদালতে রিট

ছবি

মোরেলগঞ্জে থোকায় থোকায় ঝুলছে মাল্টা, সফল উদ্যোক্তা বাশার

ছবি

আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪২৮ জন

ছবি

বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে সিলেট, শঙ্কা প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির

ছবি

নারায়ণগঞ্জে ফ্ল্যাট বাসা থেকে একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার

মাধবপুরে পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত ৬, আতঙ্কে এলাকাবাসী

নাইক্ষ্যংছড়িতে রাবার বাগানের গাছ থেকে শ্রমিকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

বাড়ছে নদীর পানি, সিলেটে বন্যার আভাস

সোনারগাঁয়ে মাদ্রাসা শিক্ষকের শরীর টিপে না দেয়ায় ছাত্রকে আটক রেখে নির্যাতন

ফ্যানে ঝুলছিলেন যুবক, খাটে স্ত্রী-সন্তানের মরদেহ, আর্থিক দুরাবস্থায় ছিল পরিবারটি

ছবি

বিরামপুরে কুকুরে কামড়ানো সগাভীর মাংস বিক্রির চেষ্টা

ছবি

রায়পুরায় ভিডব্লিউবি উপকার ভোগীদের মাঝে চাল বিতরণ

ছবি

গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নতুন ঘর পেলেন মোজাম্মেল-জহুরা দম্পতি

ছবি

আদমদীঘিতে তিন মাদক ব্যবসায়ি আটক

tab

যানবাহনের বেপরোয়া গতি-ওভারটেক

সাত বছরে সড়কে প্রাণ গেছে অর্ধলাখের বেশি

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

রোববার, ২৩ জানুয়ারী ২০২২

যানবাহনের বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং ও রাস্তাঘাটের ত্রুটির কারণে গত সাত বছরের ৩৭ হাজার ৪২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় অর্ধ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় বেশির ভাগেই পথচারী। সড়কপথে যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার ও মাদক সেবন করে যানবাহন চালানোর জন্য সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছর ৮৫ দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও ২০২১ সালে পাঁচ হাজার ৬২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৮০৯ জন নিহত, ৯ হাজার ৩৯ জন আহত হয়েছে। ২০২০ সালের তুলনায় বিদায়ী বছর সড়ক দুর্ঘটনা ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

রোববার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। এ সময় ২০২১ সালে রেলপথে ৪০২টি দুর্ঘটনায় ৩৯৬ জন নিহত ও ১৩৪ জন আহত হয়েছে। নৌপথে ১৮২টি দুর্ঘটনায় ৩১১ জন নিহত, ৫৭৮ জন আহত এবং ৫৪৪ জন নিখোঁজ হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিগত সাত বছরে ৩৭ হাজার ৪২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১ হাজার ৬৬৫ জন নিহত ও আহত হয়েছে ১০ হাজার ৩৯৭ জন। ২০২০ সালে চার হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ৬৮৬ জন নিহত ও আট হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও আহত ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় বার্ষিক ক্ষয়ক্ষতি জিডিপির প্রায় এক দশমিক ৫ শতাংশ। এসব হতাহতদের ৭৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ ১৫ থেকে ৪৫ বছরের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক হাদিউজ্জামান বলেন, ‘সড়ক টেকসই ও আধুনিকায়নের জন্য সরকার যা বিনিয়োগ করছে, তার ফল পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও পরিবহন মালিক-চালক যখন যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণ করতে থাকেন, তখন বুঝতে হবে এদেশে দুর্ঘটনা শুধু কারিগরি সমস্যা নয়, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ও জড়িত।’

তিনি বলেন, ‘নীতিনির্ধারকেরা ভারতে সড়কে দেড় লাখ মৃত্যুর তথ্য টানেন। অথচ ভারতে প্রতি ১০ হাজার নিবন্ধিত যানবাহনের বিপরীতে ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে, আর বাংলাদেশ তা ৪৫ জন। অন্য দেশগুলো যখন গণপরিবহনমুখী উন্নয়নের দিকে এগোচ্ছে, তখন এ দেশে মোটরসাইকেলমুখী উন্নয়ন চলছে। মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।’ সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির জন্য রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ, ছোট যানবাহন বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজি, রাস্তার পাশে হাট-বাজার, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো ও দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি-ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থাসহ ১৬টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

তাই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সড়ক পরিবহন খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা, সড়ক নিরাপত্তায় বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা, নতুন গণপরিবহন নামানো, দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তায় তহবিল গঠনসহ ১২টি সুপারিশ করা হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫৪ দশমিক ০৭ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেয়ার ঘটনা, ২২ দশমিক ১৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬ দশমিক ১৩ শতাংশ খাদে পড়ে, ৬ দশমিক ২১ শতাংশ বিবিধ কারণে, শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।’

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এ বছর মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩১ দশমিক ৫১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৯ দশমিক ২৯ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২০ দশমিক ৩৪ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে। মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘দীর্ঘ প্রায় ৩ মাস গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরও বিগত বছরের চেয়ে বিদায়ী বছরে জাতীয় মহাসড়কে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ফিডার রোডে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ, রেলক্রসিং এ শূন্য দশমিক ০৬ শতাংশ দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে আঞ্চলিক মহাসড়কে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ দুর্ঘটনা কমেছে।’

সাত বছরে সড়ক দুর্ঘটনা

২০১৫ সালে ৬৫৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় আট হাাজার ৬৪২ জন নিহত ও ২১ হাজার ৮৫৫ জন আহত হয়েছে। ২০১৬ সালে চার হাজার ৩১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ৫৫ জন নিহত ও ১৫ হাজার ৯১৪ জন আহত হয়েছে। ২০১৭ সালে চার হাজার ৯৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৩৯৭ জন নিহত ও ১৬ হাজার ১৯৩ জন আহত হয়েছে। ২০১৮ সালে পাঁচ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ২২১ জন নিহত ও ১৫ হাজার ৪৬৬ জন আহত হয়েছে। ২০১৯ সালে পাঁচ হাজার ৫১৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৮৫৫ জন নিহত ও ১৩ হাজার ৩৩০ জন আহত হয়েছে। ২০২০ সালে চার হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় হাজার ৬৮৬ জন নিহত ও আট হাজার ৬০০ জন আহত হয়েছে। ২০২১ সালে পাঁচ হাহার ৬২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ৮০৯ জন নিহত, ৯ হাজার ৩৯ জন আহত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার রোগ কিন্তু কোন কারিগরি সমস্যা নয়, এটা রাজনৈতিক সমস্যা। রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধান করতে হবে। যখনই একটা দুর্ঘটনা হয়, বলে যে একটা ফুটওভারব্রিজ করে দিচ্ছি। এটা কোন সমাধান নয়। সবার আগে প্রয়োজন জবাবদিহিতা। আমাদের কাগজে-কলমে অনেক কিছু আছে। কিন্তু বাস্তবে কিছু নেই। বর্তমানে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনা বেড়েছে। আমরা বলেছি মোটরসাইকেল সড়ক দুর্ঘটনার ক্যান্সার সেল, এটা বন্ধ করুন। কিন্তু তা হয়নি। এটা জরুরি, কেননা সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা খুব বেশি বাড়ছে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ১২ দফা সুপারিশ

সড়ক নিরাপত্তায় বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা, আইনের ত্রুটি চিহ্নিত করে সংস্কারপূর্বক ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন, সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, সড়ক মন্ত্রণালয়ে আলাদা সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট গঠন, ইতোমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করা, সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন, জেব্রা ক্রসিং অঙ্কন করা, চালকদের পেশাদার ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা, পরিবহন সেক্টরে অনিয়ম-দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ, গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি আধুনিকায়ন, সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠন ও হতাহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, দেশব্যাপী চাহিদানুযায়ী পর্যাপ্ত নতুন গণপরিবহন নামানো, ট্রাফিক পুলিশের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তোলা, গণপরিবহনে সেবা ও নিরাপত্তার মান পর্যবেক্ষণের জন্য দেশের সব মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব, জেলা প্রশাসকদের প্রতিমাসে একদিন পরিচয় গোপন রেখে গণপরিবহন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

back to top