মোট শনাক্ত ১৭ লাখের বেশি
দ্বিতীয়বারের মতো দেশে দৈনিক কোভিড শনাক্ত ১৬ হাজারের ঘর ছাড়ালো। করোনার ‘ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের’ প্রভাবে টানা দুদিন দৈনিক শনাক্তের হারও ৩২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তবে এদিন দেশের অন্তত ১৭টি জেলায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৪০ শতাংশের বেশি। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেটসহ কয়েকটি জেলায় বেশি রোগী শনাক্ত হলেও সেসব জেলায় তুলনামূলক নমুনা পরীক্ষা বেশি হওয়ায় শনাক্তের হার কিছুটা কমেছে।
করোনারব ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের (ধরন) সংক্রমণের সময় গত বছরের ২৮ জুলাই সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। এর আগে দৈনিক কোভিড শনাক্ত কখনো ১৬ হাজারের ওপরে উঠেনি।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) দৈনিক করোনা শনাক্ত ফের ১৬ হাজারের ঘর অতিক্রম করে। এদিন ১৬ হাজার ৩৩ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত এবং আক্রান্তদের মধ্যে ১৮ জনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সর্বশেষ একদিনে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে মহানগরীসহ ঢাকা জেলায়। ঢাকায় ২৪ ঘণ্টায় ৩০ হাজার ৪৩৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৯ হাজার ৪৮৭ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ হিসাবে শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ১৭ শতাংশ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, মানুষের অতি আত্মবিশ্বাসের কারণে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এক থেকে ৩২ শতাংশে উঠেছে সংক্রমণের হার। এটা খুবই আশঙ্কাজনক। সারা বিশ্বে সংক্রমণ বাড়ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশেও বাড়ছে। তবে আশার খবর হলো, ইউরোপে কমছে, ভারতে কমছে। তাদের আক্রান্তের সংখ্যা লাখ লাখ ছিল, এখন কমে আসছে। ‘ওমিক্রন মাইল্ড’ হতে পারে কিন্তু তার সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি জানিয়ের মন্ত্রী বলেন, সংক্রমণ যখন বেশি হবে তখন মৃত্যু বেশি হবে।
কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসায় হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রাজধানীতে সরকারি যে হাসপাতাল আছে, সেগুলোর ২৫ শতাংশ শয্যা ভরে গেছে। এভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে বেডের চাহিদা বাড়বে। জাহিদ মালেক জানান, সংক্রমণ বাড়লেও সেই হারে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে না। এটার কারণ হচ্ছে টিকা। অনেক মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। ফলে ‘হসপিটালাইজেশন’ কম হবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের টার্গেটেড আরও তিন কোটি লোক টিকা নেয়ার বাকি আছে। ট্রান্সপোর্ট, ইন্ডাস্ট্রি, কনস্ট্রাকশন সেক্টরে বাকি আছে। তারা এগিয়ে আসেনি নেয়ার জন্য। তাদের কীভাবে টিকা দেয়া যায় সে বিষয়ে আমরা বৈঠক করেছি।’
শনাক্ত ১৭ লাখ ছাড়ালো
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হওয়া রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৯৭ জনে। আর একদিনে মৃত্যু হওয়া ১৮ জনকে নিয়ে দেশে করোনায় মোট ২৮ হাজার ২৫৬ জন মারা গেলেন। শনাক্ত রোগীর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক হাজার ৯৫ জন। তাদের নিয়ে দেশে মোট সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৪ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৪৯ হাজার ৪৯২টি। এসব নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ৪০ শতাংশ। মোট শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯০ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার এক দশমিক ৬৫ শতাংশ। দেশে এ পর্যন্ত মোট এক কোটি ২২ লাখ ১২ হাজার ১৭৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। মোট পরীক্ষা বিবেচনায় কোভিড শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ০৫ শতাংশ। একদিনে মৃত্যু হওয়া ১৮ জনের মধ্যে পুরুষ ১২ জন ও নারী ছিলেন ছয়জন। তাদের নিয়ে দেশে করোনায় এ পর্যন্ত মৃত্যু হওয়া মোট লোকজনের মধ্যে পুরুষ ১৮ হাজার ৬২ জন এবং নারী ছিলেন ১০ হাজার ১৯৪ জন।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, একদিনে মৃত্যু হওয়া ১৮ জনের মধ্যে ১০ বছরের কম বয়সী একজন, ১১ থেকে ২০ বছরের একজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের দুইজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের পাঁচজন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের চারজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের তিনজন এবং দুইজনের বয়স ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে ছিল।
জেলাভিত্তিক হিসাবে দেখা যায়, একদিনে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ঢাকার সাতজন, চট্টগ্রামের তিনজন এবং গাজীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, কুমিল্লা, বগুড়া, সাতক্ষীরা, বরগুনা ও হবিগঞ্জে একজন করে কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১০ জন ও বেসরকারি হাসপাতালে আটজনের মৃত্যু হয়েছে।
১৭ জেলায় শনাক্তের হার ৪০ শতাংশের বেশি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৭টি জেলায় নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার ৪০ শতাংশের বেশি ছিল। এর মধ্যে সীমান্ত সংলগ্ন জেলাই বেশি। জেলাগুলোর মধ্যে রাজশাহীতে ৫৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩২৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৫৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৬ জনের কোভিড পাওয়া গেছে। এ হিসাবে চাঁপাইয়ে শনাক্তের হার ৬০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। নাটোরে ৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নাটোরে শনাক্তের হার ৪৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ। দিনাজপুরে ১৭৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে; এই জেলায় শনাক্তের হার ৫২ দশমিক ২৭ শতাংশ। যশোরে ৪৪৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৯৬ জনের দেহে সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এ হিসাবে যশোরে শনাক্তের হার ৪৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। সাতক্ষীরায় ১২৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬১ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই জেলায় শনাক্তের হার ৪৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বরিশালে ২৬১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১২০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। বরিশালে শনাক্তের হার ৪৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এছাড়া গাজীপুরে একদিনে ১৬৮ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের ৪৯ দশমিক ১২ শতাংশ; রাজবাড়ীতে ৪২ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৪৮ দশমিক ২৭ শতাংশ; শেরপুরে ৫৫ জনের করোনা শনাক্ত এবং ৫৯ দশমিক ১৩ শতাংশ; বান্দরবানে ৫১ জনের কোভিড শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৫০ দশমিক ৪৯ শতাংশ; খাঘড়াছড়িতে ৩৫ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৪৮ দশমিক ৬১ শতাংশ; কুমিল্লায় ২০২ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ছিল ৪৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্য জেলাগুলোর মধ্যে পাবনায় ১০৯ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৪৯ দশমিক ০৯ শতাংশ; বগুড়ায় ২০০ জনের কোভিড শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৫০ দশমিক ২৫ শতাংশ; হবিগঞ্জে ১০৫ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৪৬ দশমিক ০৫ শতাংশ; মৌলভীবাজারে ১৩৫ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ছিল ৪৭ দশমিক ২০ শতাংশ।
এছাড়া কয়েকটি জেলায় তুলনামূলক নমুনা পরীক্ষা বেশি হওয়ায় সেগুলোতে শনাক্তের হার কিছুটা কম হয়েছে। জেলাগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহে ২৪ ঘণ্টায় ২৫৩ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ; চট্টগ্রামে এক হাজার ৩৪৯ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৩৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ; রাঙ্গামাটিতে ১০২ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৩৪ দশমিক ২২ শতাংশ; চাঁদপুরে ১১৪ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ; খুলনায় ১৮২ জনের করোনা শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ২৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ; সিলেটে ৪৪৮ জনের কোভিড শনাক্ত এবং শনাক্তের হার ছিল ২৯ দশমিক ৬২ শতাংশ।
অর্থ-বাণিজ্য: রিজার্ভ ফের ৩২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো
অর্থ-বাণিজ্য: স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১ হাজার ৫০ টাকা
অপরাধ ও দুর্নীতি: সাবেক মন্ত্রী গাজীসহ ৮জনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা