alt

বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে আদালতে হচ্ছে ‘ন্যায়কুঞ্জ’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট ২০২২

দেশের সর্বোচ্চ আদালতে দূর-দূরান্ত থেকে যারা বিচারের জন্য আসেন, দিনভর তাদের অপেক্ষা করতে হয় আদালত চত্বরে, গাছতলা কিংবা ফুটপাতে। রোদ পুড়ে বা বৃষ্টিতে ভিজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘদিনের সেই ভোগান্তি এবার লাঘব হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত এসব বিচারপ্রার্থীদের জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ন্যায়কুঞ্জ’, যাতে থাকছে বসার জায়গা, টয়লেট, সুপেয় পানির ব্যবস্থা এবং মায়েদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার।

কেবল সুপ্রিম কোর্টই নয়, সারা দেশের জেলা ও দায়রা জজ আদালতেও একই ভোগান্তি কমাতে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। গত জুনে বিষয়টি নিয়ে হাই কোর্ট থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়।

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিশ্রামাগার নির্মাণের কাজ শেষ। বৃহস্পতিবারই তা উদ্বোধন করার কথা জানিয়েছেন আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার ও সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মুহাম্মদ সাইফুর রহমান।

এতদিন ধরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিশ্রামাগার না থাকায় যে দুর্দশা ও সমস্যার পড়তে হয়েছে, সেই কথায় বলছিলেন কক্সবাজার সদরের মো. ইলিয়াস মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাক আহমেদ। বিদ্যালয়ের একটি মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কিছুদিন পর পর তাকে হাই কোর্টে আসতে হয়।

মোস্তাক বলেন, “আদালত ভবনের ভেতরে বসার কোনো জায়গা নেই, বাইরে অন্তত বসার একটু জায়গা হলে ভালো হত, কিন্তু সেই ব্যবস্থাটিও সেখানে নেই। এখানে মানুষ নিরূপায় হয়েই আসেন, কিন্তু তারা এখানে এসে অনেক কষ্ট করেন।”

গত সপ্তাহে ভর দুপুরে আদালত চত্বরের গাছের নিচে বসে ওই শিক্ষক বলছিলেন, “এখন যদি বৃষ্টি হয় কী হবে? বারান্দায় দাঁড়াতে দেওয়া হয় না। মানুষগুলো যাবে কোথায়, তাকে তো বৃষ্টিতেই ভিজতে হবে।”

একই মামলার বিষয়ে মোস্তাকের সঙ্গে আসা বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান হেলালের ভাষ্য, “মানুষ দূর-দূরাস্ত থেকে এই কোর্টে আসেন, কেউ আসের বিপদে পড়ে, আবার কেউ বিপদ থেকে উদ্ধার হতে এখানে আসেন। উকিলের রুমে গিয়ে সাক্ষাতের পর দেখা গেল সেখানে বসার জায়গা কম, মক্কেল বেশি; তখন তিনি বলেন- দুই ঘণ্টা পর আসেন, ঘুরে আসেন।

“তো আমরা কোথায় যাব? হোটেল তো অনেক দূরে, বাধ্য হয়ে এই রোদে ঘুরাঘুরি করতে হয়। টয়লেটের ভালো ব্যবস্থা নেই, পানির ব্যবস্থা নেই।”

একটি ফৌজদারী মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কয়েক মাস পর পর উচ্চ আদালতে আসতে হয় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বাসিন্দা মীর আবুল হাসেমকে। ঢাকায় আসলে থাকে মিরপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় উঠতে হয়।

হাসেম বলেন, “যে দিনই এই কোর্টে আসতে হয় খুব সকালেই আসি, কারণ উকিল সাব তো খুব বেশি সময় দিতে পারেন না। তারপর কোর্টের দরজায় অপেক্ষা করি। সেখানেও সব সময় দাঁড়াতে দেওয়া হয় না, বাইরেও বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। টয়লেটের কোনো সুযোগ নেই। কোর্টের আসলে সারাদিন এসব সমস্যার ভেতরেই থাকতে হয়।”

গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিচারপ্রার্থীদের এসব ভোগান্তির কথা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলে আসছিলেন প্রধান বিচারপতি। পরে তার নির্দেশনায় সুপ্রিম কের্টের সড়ক ভবন চত্বরে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নামে বিশ্রামাগারে নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর নূর দুলাল বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট, অধ্স্তন আদালত হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের জন্য। তাদের জন্য একটি শেডের অপ্রতুলতা ছিল, সেটা করা হয়েছে জন্য প্রধান বিচারপতিকে সাধুবাদ জানাই।”

সুপ্রিম কোর্টের ‘ন্যায়কুঞ্জের’ মতো দেশের প্রত্যক জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিশ্রামাগারের নির্মাণে গত জুনে যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল সেখানেও বিচারপ্রার্থীদের নানা সমস্যার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

হাই কোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, “দেশের প্রায় সকল অধস্তন আদালতের এজলাসকক্ষ/বিচারকক্ষের আসন সীমিত হওয়ায় আইনজীবী ব্যতীত বিচারপ্রার্থীদের বসার তেমন কোনো সুযোগ হয় না। ফলে বিচার কার্যক্রম শুরুর আগে ও পরে বিচারপ্রার্থীদের আদালতের বারান্দায় বা যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।

“এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হন নারী, অসুস্থ ব্যক্তি এবং শিশুদের মায়েরা। এই সমস্যা সমধানে প্রত্যেক জেলায় পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বিচারপ্রার্থী-বিশ্রামাগার স্থাপন করা আবশ্যক।”

চিঠিতে প্রধান বিচারপতির নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নির্মাণের বিষয়ে বলা হয়, “প্রতিটি জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে কমপক্ষে ১০০ জনের এবং চৌকি আদালতে ৪০ থেকে ৫০ জনের বসার উপযোগী বিশ্রামাগার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা প্রধান বিচারপতি অনুধাবন করেছেন।”

কী থাকছে ‘ন্যায়কুঞ্জে’

>> নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা ইউনিট

>> ব্রেস্টফিডিংয়ের জন্য মায়েদের আলাদা কক্ষ

>> প্রত্যেক ইউনিটে দুটি টয়লেট

>> সুপেয় পানির ব্যবস্থা

>> একটি ছোট স্টেশনারি দোকান

‘ন্যায়কুঞ্জ’ নির্মাণে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, আইন সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সচিব, সকল জেলা ও দায়রা জজ, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছিল।

বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর নূর দুলাল বলেন, “বিচারপ্রার্থীরা অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আমাদের কাছে আসেন। জুডিসিয়ারির স্টেকহোল্ডার হচ্ছেন তারা। তাদের জন্য বিচার। তাদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণের উদ্যোগকে শুভ কামনা।”

ছবি

সস কারখানার মালিককে ৩ লাখ টাকা জরিমানা

ছবি

পূর্বাচল এলাকায় পরিবহনে হিজড়াদের চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ১২

ছবি

আমার জীবন আমার স্বপ্ন উদযাপন

ছবি

১০ টাকা কেজি ইলিশ বিক্রি, জনতার চাপে পালালেন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী

ছবি

লড়াই ষাঁড়ের আঘাতে প্রাণ গেল যুবকের

ছবি

নৈতিকতার ভিত্তিতেই হতে হবে আদর্শ মানুষ: মেয়র

ছবি

কিশোরগঞ্জে ঈদগাহ মাঠ রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন

ছবি

‘খেলাধুলা যুব সমাজকে মাদক, সন্ত্রাস থেকে দূরে রাখবে’

ছবি

তারাগঞ্জে কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ

ছবি

গঙ্গাচড়ায় দ্বিতীয় তিস্তা সেতুরক্ষা বাঁধে ধস, ৬০ মিটার নদীতে বিলীন

ছবি

হোমনায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ

ছবি

রংপুর পুলিশের এসআই ও পলিটেকনিক শিক্ষকের বাড়ি ক্রোক করেছে দুদক

ছবি

ড্রেজারে বালু উওোলন অভিযুক্তকে জরিমানা

ছবি

নোয়াখালীতে বাসের ধাক্কায় বাসচালক নিহত, আহত-১৭

ছবি

গোবিন্দগঞ্জে ফাঁসিতলা-কোচাশহর সড়ক বেহাল, চরম জনদূর্ভোগ

মাগুরায় গাছে ট্রাকের ধাক্কা, সহকারী নিহত

ছবি

গাজীপুরে কাশিমপুর শ্মশান মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুর

ছবি

শাহজালালে যাত্রীর পাকস্থলী থেকে উদ্ধার ১ হাজার ইয়াবা

ছবি

নরসিংদীতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে গুলিতে নিহত ১

ছবি

দুর্গাপূজায় তিন স্তরে নিরাপত্তা, প্রয়োজনে ৯৯৯

ছবি

১৭ বিয়ের অভিযোগ ওঠা আলোচিত বন কর্মকর্তা সাময়িক বহিষ্কার

ছবি

জুলাই শহীদদের নিয়ে ‘আপত্তিকর’ প্রতিবেদন প্রকাশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ছবি

না’গঞ্জে ইজিবাইক চালক ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ, আহত ১২

ছবি

চোখ রাঙানি বাড়ছেই এডিসের, কমছে না ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

ছবি

দুবাইয়ে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি, আটকে আছেন ১৭৮ যাত্রী

ছবি

বিআরটিসি বাস চালকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

ছবি

দাফনের পূর্বে শিশুর নড়াচড়া, হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় আটক

ছবি

পাঙ্গাস মাছের পায়েস, দুই ভাই ভাইরাল

ছবি

অফিস-কমিটি-মাঠ সবই আছে, নেই শুধু খেলার আয়োজন

ছবি

সরকারি মতিলাল ডিগ্রি কলেজে খণ্ডকালীন দিয়ে চলছে পাঠদান

ছবি

অনুপস্থিত থেকেও নিচ্ছেন বেতন-ভাতা

ছবি

নির্মাণের ১৪ মাসেও চালু হয়নি বরুড়ায় ২০ শয্যার হাসপাতাল

ছবি

দুমকিতে দূর্গোৎসব উপলক্ষে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

ছবি

পটিয়ায় অস্ত্রের মুখে মুরগি ব্যবসায়ী অপহরণের দুই ঘণ্টা পর উদ্ধার

ছবি

সখীপুরে ৮ মাসে ২৪০ জনকে সর্প দংশন, হাসপাতালে নেই অ্যান্টিভেনম

ছবি

শারদীয় দুর্গোৎসবে শ্রীমঙ্গলে জমজমাট পোশাকের বাজার

tab

বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে আদালতে হচ্ছে ‘ন্যায়কুঞ্জ’

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট ২০২২

দেশের সর্বোচ্চ আদালতে দূর-দূরান্ত থেকে যারা বিচারের জন্য আসেন, দিনভর তাদের অপেক্ষা করতে হয় আদালত চত্বরে, গাছতলা কিংবা ফুটপাতে। রোদ পুড়ে বা বৃষ্টিতে ভিজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘদিনের সেই ভোগান্তি এবার লাঘব হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত এসব বিচারপ্রার্থীদের জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ন্যায়কুঞ্জ’, যাতে থাকছে বসার জায়গা, টয়লেট, সুপেয় পানির ব্যবস্থা এবং মায়েদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার।

কেবল সুপ্রিম কোর্টই নয়, সারা দেশের জেলা ও দায়রা জজ আদালতেও একই ভোগান্তি কমাতে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। গত জুনে বিষয়টি নিয়ে হাই কোর্ট থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়।

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিশ্রামাগার নির্মাণের কাজ শেষ। বৃহস্পতিবারই তা উদ্বোধন করার কথা জানিয়েছেন আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার ও সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মুহাম্মদ সাইফুর রহমান।

এতদিন ধরে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিশ্রামাগার না থাকায় যে দুর্দশা ও সমস্যার পড়তে হয়েছে, সেই কথায় বলছিলেন কক্সবাজার সদরের মো. ইলিয়াস মিয়া চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাক আহমেদ। বিদ্যালয়ের একটি মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কিছুদিন পর পর তাকে হাই কোর্টে আসতে হয়।

মোস্তাক বলেন, “আদালত ভবনের ভেতরে বসার কোনো জায়গা নেই, বাইরে অন্তত বসার একটু জায়গা হলে ভালো হত, কিন্তু সেই ব্যবস্থাটিও সেখানে নেই। এখানে মানুষ নিরূপায় হয়েই আসেন, কিন্তু তারা এখানে এসে অনেক কষ্ট করেন।”

গত সপ্তাহে ভর দুপুরে আদালত চত্বরের গাছের নিচে বসে ওই শিক্ষক বলছিলেন, “এখন যদি বৃষ্টি হয় কী হবে? বারান্দায় দাঁড়াতে দেওয়া হয় না। মানুষগুলো যাবে কোথায়, তাকে তো বৃষ্টিতেই ভিজতে হবে।”

একই মামলার বিষয়ে মোস্তাকের সঙ্গে আসা বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান হেলালের ভাষ্য, “মানুষ দূর-দূরাস্ত থেকে এই কোর্টে আসেন, কেউ আসের বিপদে পড়ে, আবার কেউ বিপদ থেকে উদ্ধার হতে এখানে আসেন। উকিলের রুমে গিয়ে সাক্ষাতের পর দেখা গেল সেখানে বসার জায়গা কম, মক্কেল বেশি; তখন তিনি বলেন- দুই ঘণ্টা পর আসেন, ঘুরে আসেন।

“তো আমরা কোথায় যাব? হোটেল তো অনেক দূরে, বাধ্য হয়ে এই রোদে ঘুরাঘুরি করতে হয়। টয়লেটের ভালো ব্যবস্থা নেই, পানির ব্যবস্থা নেই।”

একটি ফৌজদারী মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কয়েক মাস পর পর উচ্চ আদালতে আসতে হয় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বাসিন্দা মীর আবুল হাসেমকে। ঢাকায় আসলে থাকে মিরপুরে এক আত্মীয়ের বাসায় উঠতে হয়।

হাসেম বলেন, “যে দিনই এই কোর্টে আসতে হয় খুব সকালেই আসি, কারণ উকিল সাব তো খুব বেশি সময় দিতে পারেন না। তারপর কোর্টের দরজায় অপেক্ষা করি। সেখানেও সব সময় দাঁড়াতে দেওয়া হয় না, বাইরেও বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। টয়লেটের কোনো সুযোগ নেই। কোর্টের আসলে সারাদিন এসব সমস্যার ভেতরেই থাকতে হয়।”

গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিচারপ্রার্থীদের এসব ভোগান্তির কথা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলে আসছিলেন প্রধান বিচারপতি। পরে তার নির্দেশনায় সুপ্রিম কের্টের সড়ক ভবন চত্বরে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নামে বিশ্রামাগারে নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর নূর দুলাল বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট, অধ্স্তন আদালত হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের জন্য। তাদের জন্য একটি শেডের অপ্রতুলতা ছিল, সেটা করা হয়েছে জন্য প্রধান বিচারপতিকে সাধুবাদ জানাই।”

সুপ্রিম কোর্টের ‘ন্যায়কুঞ্জের’ মতো দেশের প্রত্যক জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিশ্রামাগারের নির্মাণে গত জুনে যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল সেখানেও বিচারপ্রার্থীদের নানা সমস্যার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

হাই কোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, “দেশের প্রায় সকল অধস্তন আদালতের এজলাসকক্ষ/বিচারকক্ষের আসন সীমিত হওয়ায় আইনজীবী ব্যতীত বিচারপ্রার্থীদের বসার তেমন কোনো সুযোগ হয় না। ফলে বিচার কার্যক্রম শুরুর আগে ও পরে বিচারপ্রার্থীদের আদালতের বারান্দায় বা যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।

“এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখোমুখি হন নারী, অসুস্থ ব্যক্তি এবং শিশুদের মায়েরা। এই সমস্যা সমধানে প্রত্যেক জেলায় পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বিচারপ্রার্থী-বিশ্রামাগার স্থাপন করা আবশ্যক।”

চিঠিতে প্রধান বিচারপতির নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নির্মাণের বিষয়ে বলা হয়, “প্রতিটি জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে কমপক্ষে ১০০ জনের এবং চৌকি আদালতে ৪০ থেকে ৫০ জনের বসার উপযোগী বিশ্রামাগার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা প্রধান বিচারপতি অনুধাবন করেছেন।”

কী থাকছে ‘ন্যায়কুঞ্জে’

>> নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা ইউনিট

>> ব্রেস্টফিডিংয়ের জন্য মায়েদের আলাদা কক্ষ

>> প্রত্যেক ইউনিটে দুটি টয়লেট

>> সুপেয় পানির ব্যবস্থা

>> একটি ছোট স্টেশনারি দোকান

‘ন্যায়কুঞ্জ’ নির্মাণে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, আইন সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সচিব, সকল জেলা ও দায়রা জজ, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছিল।

বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুর নূর দুলাল বলেন, “বিচারপ্রার্থীরা অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আমাদের কাছে আসেন। জুডিসিয়ারির স্টেকহোল্ডার হচ্ছেন তারা। তাদের জন্য বিচার। তাদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণের উদ্যোগকে শুভ কামনা।”

back to top