রাজশাহী জেলা পরিষদের নির্বাচন: ছায়াযুদ্ধে উত্তপ্ত হচ্ছে মাঠ

শুক্রবার, ০৭ অক্টোবর ২০২২
জেলা বার্তা পরিবেশক,রাজশাহী

আসন্ন রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তার সমর্থকদের ওপর প্রতিনিয়ত হামলা; পরবর্তীতে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের নামে মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে। এতে করে জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের মাঠ বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।

আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজশাহীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে বিদ্রোহী প্রার্থী আখতারুজ্জামান আখতার এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের কর্মী-সমর্থকদের ওপর অব্যাহত হামলা, মামলা ও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আখতার বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নের শুরু তেকেই নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করছি। প্রতীক বরাদ্দের পর তা আরও প্রকট আকার ধারন করেছে। শুরু থেকেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় আমিসহ আমার পক্ষের নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত হুমকি, মামলা ও হামলার শিকার হচ্ছে। ভোটারদের ওপর আমার প্রতিপক্ষের প্রার্থী ও তার নির্বাচনী সহযোগিরা কালো টাকার প্রভাব খাটিয়ে ভোটারদের ওপর অবৈধ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।’

প্রতিনিয়ত প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হচ্ছেন উল্যেখ করে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, গত বুধবার (৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলার মোহনপুর উপজেলার ধুরইলে প্রচারণার কাজে বাধা সৃষ্টি, নেতাকর্মীদের মারধর করে ইউনিয়ন পরিষদে আটকে রাখা হয়।

‘এসময় মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল আমার নির্বাচনের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট আবু রায়হান মাসুদসহ অন্যদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এই সময়ের মধ্যে আমার নেতাকর্মীদের ব্যবহৃত দুইটি মাইক্রেবাস নির্দেশে ভাঙচুর করা হয়। যা নির্বাচনি আইনের সরাসরি বরখেলাপ। ইউনিয়ন পরিষদে আটক অবস্থায় তাদের কাছে রক্ষিত মোবাইল ফোন, টাকাসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়।’

জেলা পরিষদ নির্বাচন অন্য সব নির্বাচনের মত নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এই নির্বাচন স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি দ্বারা নির্বাচিত হয়। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও উৎসবমুখর করার ক্ষেত্রে আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থী ও তাদের সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনীই বড় অন্তরায়।’

নির্বাচনে অংশগ্রহণের পর বেশ কয়েকবার হামলার শিকার হয়েছে উল্লেখ করে এই চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, ‘এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাকালে বেশ কয়েকবার আমার ও কর্মীদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য আমাকে নানাভাবে হুমকি-ভয়ভীতি দেখানো হয়। এছাড়া গত ২৯ সেপ্টেম্বর জেলার দুর্গাপুর পৌরসভায় মেয়র দপ্তরে ভোটারদের সাথে মতবিনিময়কালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমার ওপর হামলা চালিয়ে দুর্গাপুর থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। এসময় উপস্থিত ভোটারদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। গত ২ অক্টোবর জেলার বাঘা পৌরসভায় প্রচারণাকালে প্রতিপক্ষের লোকজন স্থান ত্যাগের করতে নানাভাবে হুমকি দেয়।’

মোহনপুরে তার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করা হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই বিদ্রোহী প্রার্থী বলেন, ‘ মোহনপুর থানায় অ্যাডভোকেট আবু রায়হান মাসুদকে প্রধান আসামি করে প্রায় ১৯ জন নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করি।’

আখতার সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন, ‘হামলা, মামলা ও নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর তিনটি অভিযোগ দাখিল করি। এর পরিপ্রেক্ষিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে রাজশাহী-০৫ (দুর্গাপুর-পুঠিয়া) আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মনসুর রহমান, রাজশাহী-০৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে সরে যেতে অনুরোধ করেন।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নির্দেশনা অমান্য করে প্রচার সংখ্যার কয়েকগুণ বেশি পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন ছাপিয়ে তা জেলাজুড়ে লাগানো হয়েছে। এটি নির্বাচনী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে আমার লাগানো পোস্টার প্রতিনিয়ত ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। এসব ঘটনার পরে আমি নিজেকে প্রার্থী হিসেবে নিরাপদ মনে করছি না। তাই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে আমি ও আমার ভোটারদের নিরাপত্তা বিধানে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর আবারো অভিযোগ দিয়েছি। আশা করছি, তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন।’

মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পোস্টার লাগানো নিয়ে বাকবিতন্ডা ও মামামারির খবর শুনে আমি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। বিদ্রোহী প্রার্থীর কয়েকজন সমর্থককে থানায় নিয়ে এসে পরে প্রার্থীর জিম্মায় দিয়ে দেয়া হয়েছে। এই ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাত ১১ টা ৫৫ মিনিটে মো. আবু ওয়াহাব নামের এক ব্যক্তি বাদি হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক আবু রায়হান মাসুদসহ ৭ জনের নাম উল্যেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তবে এই মামলায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।’

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» সারাদেশে ঘন কুয়াশার আভাস, ব্যাহত হতে পারে সড়ক-নৌ যোগাযোগ

» সোনারগাঁয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়িতে ডাকাতি, মোবাইল ও টাকা লুট

» সাগরে বিপুল পরিমাণ সিমেন্ট ও বাংলাদেশি পণ্যসহ ২২ পাচারকারী আটক

» বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে যুবলীগ নেতা আটক

» নোয়াখালীতে চর দখলের সংঘর্ষে নিহত আরেকজনের মরদেহ উদ্ধার

» ধূমপান নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশের অনুমোদন: ই-সিগারেট নিষিদ্ধের প্রস্তাব

সম্প্রতি