alt

নিহতদের পরিবারে মাতম

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : রোববার, ১৯ মার্চ ২০২৩

মাদারীপুরের শিবচরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বাবা কাঁদছেন তার ঢাবি পড়য়া মেয়ের জন্য। আবার মেয়ে কাদছেন তার বাবার জন্য। কেউ বা পড়শোনার খরচ চালানোর জন্য সুপারভাইজারের কাজ নিয়ে ফেরা হয়নি আর বাসায়।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

বাবা এখন ফিরবেন ঢাবি শিক্ষার্থী মেয়ের লাশ নিয়ে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পড়ুয়া মেয়েকে ঢাকায় পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন গোপালগঞ্জ শহরের পাচুরিয়া এলাকার মাসুদ মিয়া (৬০)। পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়ে তাদের বহনকারী বাসটি। দুর্ঘটনায় তার মেয়ে সুইটি (২০) নিহত হন।

রোববার (১৯ মার্চ) ভোরে গোপালগঞ্জ থেকে বাসে ওঠেন বাবা-মেয়ে। মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি প্রায় পঞ্চাশ ফুট নিচে পড়ে যায়।

এতে ঢাবি ছাত্রী সুইটি ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহত হন তার বাবা মাসুদ মিয়া। তাকে উদ্ধার করে শিবচরের পাঁচ্চর এলাকার ইসলামিয়া হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। নিজে বেঁচে থাকলেও চোখের সামনে মেয়েকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েছেন মাসুদ মিয়া।

জানা গেছে, সুইটি ঢাবির ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ঢাকার মিরপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। মাসুদ মিয়া মেয়েকে সেখানে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন।

এদিকে মেয়ের মৃত্যুর কথা শুনে মাসুদ মিয়ার গোপালগঞ্জের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র মেয়ের মৃত্যুর খবর মেনে নিতে পারছেন না সুইটির মা। বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন তিনি।

নিহত সুইটির মামা নুরু মিয়া বলেন, আমার দুলাভাই এসেনশিয়াল ড্রাগসে নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করেন। আমাদের একটাই ভাগ্নি। সুইটি তার বাবার সঙ্গে ঢাকায় যাচ্ছিল। ভোর সাড়ে পাঁচটার গাড়িতে তারা ঢাকায় যাচ্ছিল। দশটার দিকে আমাদের কাছে ফোন আসে আমার ভাগ্নি আর বেঁচে নেই। দুলাভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে।

আহত মাসুদ মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, রোববার সকাল সাড়ে পাঁচটায় ইমাদ পরিবহনের গাড়িতে ঢাকায় যাচ্ছিলাম মেয়েকে পৌঁছে দিতে। শিবচর পৌঁছানোর পর হঠাৎ গাড়িটা মোড় নেয়। এরপর আর আমার কিছু মনে নেই।

‘মেয়েকে পৌঁছে দিতে গিয়ে এখন ফিরতে হবে তার লাশ নিয়ে’- বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন মাসুদ মিয়া।

‘আব্বার লগে আর ভাত খাওয়া হইব না’

বাবাকে হারিয়ে পাগলপ্রায় সাথী আক্তার। ব্যবসার কাজে রোববার সকালে ঢাকা রওনা হয়েছিলেন ফরহাদ শিকদার (৫০)। মেয়ে সাথী আক্তারকে (২৮) ডেকে বলে গিয়েছিলেন দুপুরে ফিরে একসঙ্গে খাবার খাবেন। কিন্তু সেই খাওয়া আর হলো না ফরহাদের। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।

বাবা মারা যাওয়ার খবর পেয়ে বেলা একটায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন ফরহাদ শিকদারের একমাত্র মেয়ে সাথী আক্তার। আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, ‘আব্বায় কইছিল দুপুরে ভাত রান্না করতে, একসঙ্গে আইয়া ভাত খাইব। সেই খাওন আর হইল না। আইজ আমরা সর্বহারা হইয়া গেলাম। আল্লাহ তুমি আমাগো এতিম বানাইয়া দিলা। আমাগো বট গাছটা আজ চইলা গেল। আম্মারে বাড়িতে ফিরা কি জবাব দিমু? আল্লাহ তুমি এইডা কি করলা।’

নিহত ফরহাদ শিকদার নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার চরকরকী এলাকার মৃত ফকু শিকদারের ছেলে। এই দুর্ঘটনায় ফরহাদ শিকদারসহ ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ফরহাদের মেয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার ভোর পাঁচটায় ফরহাদ নড়াইল থেকে ইমাদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। তার এক ছেলে সৌদিপ্রবাসী ও দুই মেয়ে রয়েছে।

সাথী বলেন, ‘আব্বায় আমারে সব দিছে। আর কিছু চাই না। আম্মেরা আমার বাবার লাশটা দেন। কাটাছেঁড়া আর কইরেন না। আম্মেগো আছে আমার আর কিছু চাই না।’

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, রোববার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় দুমড়ে-মুচড়ে যায় বাসটি।

পড়ার খরচ চালাতে সুপারভাইজারের কাজ নেন মিনহাজুর

দুর্ঘটনার পর ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে দুজন ছিলেন মৃত। বাকি ৮ জন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মৃত দুজন হলেন, গোপালগঞ্জের মিনহাজুর রহমান বিশ্বাস (২০) এবং বাগেরহাটের শেখ আকাব্বর (৬৫)। মিনহাজুর ছিলেন ওই বাসের সুপারভাইজার এবং আকাব্বর ছিলেন যাত্রী। তাদের মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।

ইমাদ পরিবহনের অপর এক বাসের সুপারভাইজার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মিনহাজুর গোপালগঞ্জের একটি কলেজে পড়তো। বাবা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। তারা ২ ভাই ও এক বোন। বড় ভাইয়ের সামান্য ইনকামে সংসার চলতো না। তাই সে পড়ার খরচ চালাতে ইমাদ পরিবহনে সুপারভাইজারের কাজ নেয়। সে ট্রিপ-বাই-ট্রিপ চুক্তিতে কাজ করতো। প্রতি ট্রিপে হাজিরা পেত ৬০০ টাকা। মাসে ১৫-১৮টি ট্রিপে যেতে পারতো।’

‘রোববার রাত ৮টায় মিনহাজুর গোপালগঞ্জ থেকে ট্রিপ ধরার জন্য খুলনা যায়। আবার ভোর ৪টা ১০ মিনিটে তার বাস খুলনা ছাড়ে। পরে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় বাসটি দুর্ঘটনায় পড়ে। আমাদের বাসটি এর পেছনে ছিল। আমরা প্রায় ২০ মিনিট পর দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। বাসের কাছে গিয়ে দেখি চালক জাহিদুল ইসলাম ও হেলপার মারা গেছেন। চালকের দেহ দ্বিখ-িত হয়ে গিয়েছিল,’ বলেন তিনি।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা ছিল, এছাড়া আর কোন সমস্যা ছিল না। বাসটি ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনায় পড়েছে বলতে পারব না।’

ইমাদ পরিবহনের মোট ৮১টি বাস রয়েছে এবং সেগুলো ঢাকা (গুলিস্তান)-খুলনায় চলাচল করে বলেও জানান তিনি।

হাসপাতাল থেকে মিনহাজুরের চাচা হেদায়েত উল্লাহ বিশ্বাস বলেন, ‘মিনহাজুরের পড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। কাজ করে পড়ার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারের দায়িত্বও সে কাঁধে তুলে নিয়েছিল। কিন্তু কিছুই আর হলো না, সব শেষ।’

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসা শিক্ষক শেখ আকাব্বর চোখের ছানি অপারেশনের জন্য ঢাকার খিলক্ষেতে আসছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তার মেয়ের জামাই জাহাঙ্গীর হোসেন। বাস দুর্ঘটনায় শেখ আকাব্বর মারা গেছেন। আহত জামাই জাহাঙ্গীর হোসেন বর্তমানে শিবচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

হাসপাতাল থেকে শেখ আকাব্বরের আরেক মেয়ের জামাই তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার শ্বশুরের ৭ মেয়ে, কোন ছেলে নেই। ২০১৩ সালে তিনি অবসরগ্রহণ করেন। এক সপ্তাহ আগে তিনি জাহাঙ্গীর হোসেনের বাড়িতে যান। আজ (রোববার) ইমাদ পরিবহনের বাসে করে জাহাঙ্গীর হোসেন তাকে নিয়ে ঢাকায় আসছিলেন।’

ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন ঝুমা বেগম (৩৫)। বর্তমানে তিনি ঢামেকে চিকিৎসাধীন।

হাসপাতালে কথা হয় ঝুমা বেগমের স্বামীর মামাতো ভাই কাজী রিপন বিল্লাহর সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘ঝুমা বেগমের স্বামী সৌদিপ্রবাসী। তাদের ৩ মেয়ে ও এক ছেলে। শাশুড়ি ও সন্তানদের নিয়ে হজে যাওয়ার কথা ছিল ঝুমার। সেজন্য ভিসার কাগজপত্র নিতে দেবর সজিবুর রহমানের সঙ্গে ঢাকায় আসছিলেন তিনি। দুর্ঘটনায় সজিবুর মারা গেছেন। তবে ঝুমার অবস্থা অনেক খারাপ বলে বিষয়টি তাকে এখনও জানানো হয়নি।’

ছবি

আসন পুনর্বিন্যাস: ভাঙ্গায় অবরোধ তুলে নিলেন আন্দোলনকারীরা, যান চলাচল স্বাভাবিক

ছবি

আসন ফিরে পেতে বাগেরহাটে নির্বাচন অফিস ঘেরাও, উচ্চ আদালতে রিট

ছবি

মোরেলগঞ্জে থোকায় থোকায় ঝুলছে মাল্টা, সফল উদ্যোক্তা বাশার

ছবি

আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪২৮ জন

ছবি

বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে সিলেট, শঙ্কা প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির

ছবি

নারায়ণগঞ্জে ফ্ল্যাট বাসা থেকে একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার

মাধবপুরে পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত ৬, আতঙ্কে এলাকাবাসী

নাইক্ষ্যংছড়িতে রাবার বাগানের গাছ থেকে শ্রমিকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

বাড়ছে নদীর পানি, সিলেটে বন্যার আভাস

সোনারগাঁয়ে মাদ্রাসা শিক্ষকের শরীর টিপে না দেয়ায় ছাত্রকে আটক রেখে নির্যাতন

ফ্যানে ঝুলছিলেন যুবক, খাটে স্ত্রী-সন্তানের মরদেহ, আর্থিক দুরাবস্থায় ছিল পরিবারটি

ছবি

বিরামপুরে কুকুরে কামড়ানো সগাভীর মাংস বিক্রির চেষ্টা

ছবি

রায়পুরায় ভিডব্লিউবি উপকার ভোগীদের মাঝে চাল বিতরণ

ছবি

গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নতুন ঘর পেলেন মোজাম্মেল-জহুরা দম্পতি

ছবি

আদমদীঘিতে তিন মাদক ব্যবসায়ি আটক

ছবি

রাঙাছড়া সেতু যেন মরণ ফাঁদ

ছবি

বাঁশবোঝাই ট্রাকে বাসের ধাক্কা, পুলিশ কর্মকর্তাসহ নিহত ৩

ছবি

উদ্বোধনের দিনই বিকল বেরোবি ভাড়া বাস

ছবি

কেন্দুয়া থেকে তিন নারীকে চীনে পাচারের চেষ্টা, আটক ২

ছবি

সারিয়াকান্দিতে বিনা মূল্যে গরু বিতরণ

ছবি

পূর্বধলায় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির সমন্বয় সভা

ছবি

কেশবপুর-কলাগাছি সড়ক বেহাল, ঘটছে দুর্ঘটনা

ছবি

মধুপুরে লাল মাটিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের পেঁপে চাষে লাভবান কৃষক

ছবি

গোবিপ্রবি ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদককে দুই সেমিস্টার বহিষ্কার

ছবি

বর্ষা মৌসুমেও দেশীয় মাছের আকাল

ছবি

পদ্মার ভাঙনে চর ছাড়ছেন বাসিন্দারা মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার শঙ্কা

ছবি

নদী খননের মাটি মজুদ রাখা নিয়ে উত্তেজনা

ছবি

রংপুরে প্রাণি সম্পদ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে প্রেজেনটেশনে শেখ মুজিব ও হাসিনার ছবি

ছবি

আড়াইহাজারে ছাত্রলীগ নেতা রবিন গ্রেপ্তার

ছবি

রায়পুরায় ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা

ছবি

সামাজিক বনায়নের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

ছবি

গৌরনদীর হাট-বাজার সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি

ছবি

বাগেরহাটে অটো চালকের মরদেহ উদ্ধার

ছবি

নুরাল পাগলের মরদেহের ওপর তেল ছিটানো ব্যক্তি গ্রেপ্তার

ছবি

ভোলাহাটে ক্যানসার সচেতনতা সভা

ছবি

মাধবপুরে পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত ৬, আতঙ্কে এলাকাবাসী

tab

নিহতদের পরিবারে মাতম

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

রোববার, ১৯ মার্চ ২০২৩

মাদারীপুরের শিবচরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে থেকে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে নিহতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বাবা কাঁদছেন তার ঢাবি পড়য়া মেয়ের জন্য। আবার মেয়ে কাদছেন তার বাবার জন্য। কেউ বা পড়শোনার খরচ চালানোর জন্য সুপারভাইজারের কাজ নিয়ে ফেরা হয়নি আর বাসায়।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

বাবা এখন ফিরবেন ঢাবি শিক্ষার্থী মেয়ের লাশ নিয়ে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) পড়ুয়া মেয়েকে ঢাকায় পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন গোপালগঞ্জ শহরের পাচুরিয়া এলাকার মাসুদ মিয়া (৬০)। পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়ে তাদের বহনকারী বাসটি। দুর্ঘটনায় তার মেয়ে সুইটি (২০) নিহত হন।

রোববার (১৯ মার্চ) ভোরে গোপালগঞ্জ থেকে বাসে ওঠেন বাবা-মেয়ে। মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় পদ্মা সেতুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি প্রায় পঞ্চাশ ফুট নিচে পড়ে যায়।

এতে ঢাবি ছাত্রী সুইটি ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহত হন তার বাবা মাসুদ মিয়া। তাকে উদ্ধার করে শিবচরের পাঁচ্চর এলাকার ইসলামিয়া হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। নিজে বেঁচে থাকলেও চোখের সামনে মেয়েকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েছেন মাসুদ মিয়া।

জানা গেছে, সুইটি ঢাবির ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ঢাকার মিরপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। মাসুদ মিয়া মেয়েকে সেখানে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন।

এদিকে মেয়ের মৃত্যুর কথা শুনে মাসুদ মিয়ার গোপালগঞ্জের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র মেয়ের মৃত্যুর খবর মেনে নিতে পারছেন না সুইটির মা। বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন তিনি।

নিহত সুইটির মামা নুরু মিয়া বলেন, আমার দুলাভাই এসেনশিয়াল ড্রাগসে নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করেন। আমাদের একটাই ভাগ্নি। সুইটি তার বাবার সঙ্গে ঢাকায় যাচ্ছিল। ভোর সাড়ে পাঁচটার গাড়িতে তারা ঢাকায় যাচ্ছিল। দশটার দিকে আমাদের কাছে ফোন আসে আমার ভাগ্নি আর বেঁচে নেই। দুলাভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে।

আহত মাসুদ মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, রোববার সকাল সাড়ে পাঁচটায় ইমাদ পরিবহনের গাড়িতে ঢাকায় যাচ্ছিলাম মেয়েকে পৌঁছে দিতে। শিবচর পৌঁছানোর পর হঠাৎ গাড়িটা মোড় নেয়। এরপর আর আমার কিছু মনে নেই।

‘মেয়েকে পৌঁছে দিতে গিয়ে এখন ফিরতে হবে তার লাশ নিয়ে’- বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন মাসুদ মিয়া।

‘আব্বার লগে আর ভাত খাওয়া হইব না’

বাবাকে হারিয়ে পাগলপ্রায় সাথী আক্তার। ব্যবসার কাজে রোববার সকালে ঢাকা রওনা হয়েছিলেন ফরহাদ শিকদার (৫০)। মেয়ে সাথী আক্তারকে (২৮) ডেকে বলে গিয়েছিলেন দুপুরে ফিরে একসঙ্গে খাবার খাবেন। কিন্তু সেই খাওয়া আর হলো না ফরহাদের। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।

বাবা মারা যাওয়ার খবর পেয়ে বেলা একটায় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন ফরহাদ শিকদারের একমাত্র মেয়ে সাথী আক্তার। আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, ‘আব্বায় কইছিল দুপুরে ভাত রান্না করতে, একসঙ্গে আইয়া ভাত খাইব। সেই খাওন আর হইল না। আইজ আমরা সর্বহারা হইয়া গেলাম। আল্লাহ তুমি আমাগো এতিম বানাইয়া দিলা। আমাগো বট গাছটা আজ চইলা গেল। আম্মারে বাড়িতে ফিরা কি জবাব দিমু? আল্লাহ তুমি এইডা কি করলা।’

নিহত ফরহাদ শিকদার নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার চরকরকী এলাকার মৃত ফকু শিকদারের ছেলে। এই দুর্ঘটনায় ফরহাদ শিকদারসহ ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ফরহাদের মেয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার ভোর পাঁচটায় ফরহাদ নড়াইল থেকে ইমাদ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। তার এক ছেলে সৌদিপ্রবাসী ও দুই মেয়ে রয়েছে।

সাথী বলেন, ‘আব্বায় আমারে সব দিছে। আর কিছু চাই না। আম্মেরা আমার বাবার লাশটা দেন। কাটাছেঁড়া আর কইরেন না। আম্মেগো আছে আমার আর কিছু চাই না।’

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, রোববার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ইমাদ পরিবহনের একটি বাস পদ্মা সেতুর আগে এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এ সময় দুমড়ে-মুচড়ে যায় বাসটি।

পড়ার খরচ চালাতে সুপারভাইজারের কাজ নেন মিনহাজুর

দুর্ঘটনার পর ১০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাদের মধ্যে দুজন ছিলেন মৃত। বাকি ৮ জন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মৃত দুজন হলেন, গোপালগঞ্জের মিনহাজুর রহমান বিশ্বাস (২০) এবং বাগেরহাটের শেখ আকাব্বর (৬৫)। মিনহাজুর ছিলেন ওই বাসের সুপারভাইজার এবং আকাব্বর ছিলেন যাত্রী। তাদের মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।

ইমাদ পরিবহনের অপর এক বাসের সুপারভাইজার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মিনহাজুর গোপালগঞ্জের একটি কলেজে পড়তো। বাবা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। তারা ২ ভাই ও এক বোন। বড় ভাইয়ের সামান্য ইনকামে সংসার চলতো না। তাই সে পড়ার খরচ চালাতে ইমাদ পরিবহনে সুপারভাইজারের কাজ নেয়। সে ট্রিপ-বাই-ট্রিপ চুক্তিতে কাজ করতো। প্রতি ট্রিপে হাজিরা পেত ৬০০ টাকা। মাসে ১৫-১৮টি ট্রিপে যেতে পারতো।’

‘রোববার রাত ৮টায় মিনহাজুর গোপালগঞ্জ থেকে ট্রিপ ধরার জন্য খুলনা যায়। আবার ভোর ৪টা ১০ মিনিটে তার বাস খুলনা ছাড়ে। পরে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় বাসটি দুর্ঘটনায় পড়ে। আমাদের বাসটি এর পেছনে ছিল। আমরা প্রায় ২০ মিনিট পর দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। বাসের কাছে গিয়ে দেখি চালক জাহিদুল ইসলাম ও হেলপার মারা গেছেন। চালকের দেহ দ্বিখ-িত হয়ে গিয়েছিল,’ বলেন তিনি।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা ছিল, এছাড়া আর কোন সমস্যা ছিল না। বাসটি ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনায় পড়েছে বলতে পারব না।’

ইমাদ পরিবহনের মোট ৮১টি বাস রয়েছে এবং সেগুলো ঢাকা (গুলিস্তান)-খুলনায় চলাচল করে বলেও জানান তিনি।

হাসপাতাল থেকে মিনহাজুরের চাচা হেদায়েত উল্লাহ বিশ্বাস বলেন, ‘মিনহাজুরের পড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। কাজ করে পড়ার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারের দায়িত্বও সে কাঁধে তুলে নিয়েছিল। কিন্তু কিছুই আর হলো না, সব শেষ।’

বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসা শিক্ষক শেখ আকাব্বর চোখের ছানি অপারেশনের জন্য ঢাকার খিলক্ষেতে আসছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তার মেয়ের জামাই জাহাঙ্গীর হোসেন। বাস দুর্ঘটনায় শেখ আকাব্বর মারা গেছেন। আহত জামাই জাহাঙ্গীর হোসেন বর্তমানে শিবচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

হাসপাতাল থেকে শেখ আকাব্বরের আরেক মেয়ের জামাই তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার শ্বশুরের ৭ মেয়ে, কোন ছেলে নেই। ২০১৩ সালে তিনি অবসরগ্রহণ করেন। এক সপ্তাহ আগে তিনি জাহাঙ্গীর হোসেনের বাড়িতে যান। আজ (রোববার) ইমাদ পরিবহনের বাসে করে জাহাঙ্গীর হোসেন তাকে নিয়ে ঢাকায় আসছিলেন।’

ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন ঝুমা বেগম (৩৫)। বর্তমানে তিনি ঢামেকে চিকিৎসাধীন।

হাসপাতালে কথা হয় ঝুমা বেগমের স্বামীর মামাতো ভাই কাজী রিপন বিল্লাহর সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘ঝুমা বেগমের স্বামী সৌদিপ্রবাসী। তাদের ৩ মেয়ে ও এক ছেলে। শাশুড়ি ও সন্তানদের নিয়ে হজে যাওয়ার কথা ছিল ঝুমার। সেজন্য ভিসার কাগজপত্র নিতে দেবর সজিবুর রহমানের সঙ্গে ঢাকায় আসছিলেন তিনি। দুর্ঘটনায় সজিবুর মারা গেছেন। তবে ঝুমার অবস্থা অনেক খারাপ বলে বিষয়টি তাকে এখনও জানানো হয়নি।’

back to top