alt

তুলে নেয়া হলো ভোররাতে, পরে জানা গেলো গভীর রাতে মামলা, এরপর দেখানো হলো গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশকনিজস্ব বার্তা পরিবেশক, ঢাকা ও প্রতিনিধি, সাভার : বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩

সাভারে বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে ভোররাতে এক সাংবাদিককে তুলে নেয়ার অভিযোগের পর কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। স্থানীয় পুলিশ এবং সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয় তারা কিছু জানেন না। পরে দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান একটি মামলার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তখন তিনিও বিস্তারিত জানাতে পারেননি।

পরে জানা গেলো তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এক ব্যক্তি গত মঙ্গলবার ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলায় বাদী নিজেকে রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিয়েছেন। ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ তথ্য প্রচারের অভিযোগে ওই মামলা।

ভোররাতে যা ঘটেছে

গতকাল ভোর ৪টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার আমবাগানের ভাড়াবাসা থেকে তুলে নেয়া হয় প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে। এ সময় সাদা পোশাকে সিআইডি পরিচয় দিয়ে ওই সাংবাদিকের বাসায় প্রবেশ করে এক দল লোক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর রাতে ৩টি গাড়িতে ১৫/১৬ জন লোক সিআইডি পরিচয়ে সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বাসায় আসে। তাদের মধ্যে ৭-৮ জন লোক বাসার ভেতরে ঢুকে। এদের একজন বাসায় তল্লাশি চালায়। এ সময় তার ব্যবহৃত একজন একটি ল্যাপটপ, দুইটি মোবাইলফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়। বাসায় ১০-১৫ মিনিট অবস্থান করার পর তাকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় যান তারা।

বটতলার নুরজাহার হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন, একজন নিরাপত্তা প্রহরী ও শামসুজ্জামানসহ মোট ১৯ জন ব্যক্তি সেহেরির খাবার খান। ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে বটতলা থেকে তারা আবার শামসুজ্জামানের বাসায় যান। পরে বাসায় এসে তারা জব্দ করা মালামালের তালিকা করেন।

এরপর শামসুজ্জামানকে জামাকাপড় নিতে বলা হয়। এ সময় কক্ষের ভেতরে দাঁড় করিয়ে তার ছবি তোলা হয় এবং ৫-৭ মিনিটের মধ্যে আবার তারা বের হয়ে যান।

ওই সময় শামসুজ্জামানের বাড়িতে অবস্থানরত এক স্থানীয় সাংবাদিক বলেন, ‘আমি অফিসের কাজে গত মঙ্গলবার ঢাকা গিয়েছিলাম। ফেরার পথে বেশি রাত হওয়ায় ভাইয়ের [শামসুজ্জামানের] বাসায় আসি। আমি রাতে ঘুমিয়েছিলাম। ভোর ৪টার দিকে শামস ভাই আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। উঠে দেখি ডাইনিংয়ে ৫-৬ ব্যক্তি দাঁড়ানো। আর এক ব্যক্তি ভাইয়ের কক্ষে তল্লাশি করে তার ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুইটি মুঠোফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে নেয়। বাইরে থাকা একটি ব্যাগ ফাঁকা করে সেই ব্যাগে ওসব ঢুকাচ্ছে। এরপর কর্মকর্তাদের একজন ঘরের ভিতরে ঢুকে আমার কাছে পরিচয় জানতে চায়। পরে তাদের এক জন বলে, জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তারপর বাসায় দিয়ে যাবে শামস ভাইকে।’

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন কোন কথা বলতে রাজি হননি। আর আশুলিয়া থানার ওসি এসএম কামরুজ্জামান জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তার কাছে আটকের এমন কোনও তথ্য নেই।

এ বিষয়ে শামসের ভাবি রাজধানীর হলি আর্টিজানে নিহত পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউলের স্ত্রী উম্মে ইসলাম জানান, ‘শামসকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। কি কারণে তাকে নিয়ে গেছে, কি তার অপরাধ কিছুই জানি না। গতকালও শামসের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তখনও এ বিষয়ে শামস আমাকে কিছু বলেনি। শামস এর আগে প্রথম আলোতে কাজ করার কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে দেয়। এরপর ব্যাংকে চাকরি নেয়। এরপর পুনরায় প্রথম আলোতে কাজ শুরু করে।’

গভীর রাতে মামলা

গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৩২ মিনিটে তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি অভিযোগ দায়ের করেন মো. গোলাম কিবরিয়া। এটি রাত সোয়া ২টায় মামলা হিসেবে রুজু হয়। মামলায় বাদী কিবরিয়া নিজেকে রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। তার স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে নাটোর সদর উপজেলায়। কিবরিয়া ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। সংগঠনে তিনি এসএম কিবরিয়া ওরফে পিয়াস নামে পরিচিত।

এজাহারে কী আছে

মামলার বাদী অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৩২ মিনিটের দিকে তিনি ব্যক্তিগত কাজে ফার্মগেটের আলরাজী হাসপাতালের সামনে অবস্থান করার সময় মোবাইল ফোনে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল দেখছিলেন। এ সময় দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের একটি ছবিসহ সংবাদ দেখেন। সংবাদটি দৈনিক প্রথম আলো তাদের ফেইসবুক পেজ থেকে শেয়ার করে।

সংবাদটিতে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি সেই শিশুটির নাম জাকির হোসেন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’ সামাজিক মাধ্যমে এ সংক্রান্ত পোস্টটি ভাইরাল হয়।

সংবাদটি দেশ-বিদেশে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করেন। এই ঘটনায় মহান স্বাধীনতা দিবসে দেশের গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে জনগণসহ বহির্বিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় বলে মামলায় অভিযোগ।

মামলার এজাহারে বলে হয়, পরবর্তীতে ৭১ টিভিসহ তাদের অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, প্রথম আলো ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও মিথ্যা উদ্ধৃতি’ দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। যে শিশুটির কথা প্রথম আলোর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে তার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে। নাম পরিচয় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। শিশুটি জানিয়েছে, প্রথম আলোর সাংবাদিক তার হাতে ১০ টাকা দিয়ে এই ছবি তুলেছে।

মামলায় অভিযোগ, ‘এতে প্রমাণিত হয় স্বাধীনতা দিবসে দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং বাংলাদেশের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন উদ্দেশ্যে একটি অশুভ চক্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই মিথ্যা সংবাদ তৈরি ও পরিবেশন করে অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যার ফলে দেশের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’

মহান স্বাধীনতা দিবসে এমন মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ এবং বিশ্বব্যাপী প্রচার করায় বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বাদী ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন।

মামলার বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. ইমরান হোসেন মোল্লা বলেন, প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

আর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার আজিমুল হক বলেন, ‘মামলায় কেবল একজনের নাম রয়েছে। আমরা আসামিকে বুঝে পাইনি। মামলাও সিআইডিকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক, উপসর্গ নিয়ে দু’জনের মৃত্যু

ছবি

পটুয়াখালীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু, আহত ১

ছবি

টাঙ্গাইলের মগড়ায় বিএনপি নেতাকে না পেয়ে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা

ছবি

ভাঙ্গার কুমার নদে কিশোর-তরুণদের অস্ত্র প্রদর্শনের মহড়া

ছবি

জয়পুরহাটে ৭ ছাত্রদল নেতাকে বহিষ্কার

ছবি

কালীগঞ্জে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

ছবি

কুড়িগ্রামে কৃষক সংলাপ অনুষ্ঠিত

ছবি

রংপুর বিভাগের গুণী প্রধান শিক্ষক উলিপুরের মাহবুবার রহমান

ছবি

কোটি টাকার স্বর্ণবারসহ পাচারকারী আটক

ছবি

থানচিতে নির্মাণের দুই বছরেই সড়ক মৃত্যুফাঁদ!

ছবি

খুড়ে রাখা সড়কে হাঁটু পানি ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

ছবি

রুমায় সরকারি জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ

ছবি

রায়গঞ্জে পাখির তাড়াতে ধান খেতে নেট ব্যবহার

ছবি

কুষ্টিয়ায় দুর্গাপূজায় বেড়েছে ২২টি পূজা মন্ডপ

ছবি

যশোরের শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক শার্শার খাদিজা খাতুন

ছবি

রিয়াদ হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন

ছবি

পার্বতীপুর-রাজশাহী রুটে ২২ মাস ধরে বন্ধ উত্তরা এ´প্রেস ট্রেন

ছবি

সিরাজগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১

ছবি

বরুড়ায় আখের ভাল ফলনে চাষী ও বিক্রেতা উভয়েই খুশি

ছবি

মোল্লাহাটে গৃহবধূর আত্মহত্যা

ছবি

জাল সনদে ১২ বছর চাকরি, বেরোবির ইরিনা নাহার বরখাস্ত

ছবি

৫০ হাজার শিশুরা পাচ্ছেন বিনামূল্যে টাইফয়েড প্রতিরোধ টিকা

ছবি

ধ্বংসের পথে শরৎচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত কাশিপুর জমিদার বাড়ি

ছবি

দুমকিতে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো ভোগান্তিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা

ছবি

দশমিনায় মাচায় লাউ আবাদ বাড়ছে

ছবি

মোরেলগঞ্জে সরকারি ভাতা বঞ্চিত হানিফের সংসার চলে বিলের শাপলায়

ছবি

চট্টগ্রামে ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা

ছবি

মহাদেবপুরে শিক্ষার্থীদের মাঝে চারা বিতরণ

ছবি

আলোচনা সভায় বক্তারা রোহিঙ্গা সংকটকে বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে দেখা উচিত

ছবি

চুয়াডাঙ্গায় ছাদ থেকে পড়ে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

ছবি

চাঁদপুর শহরের খেলার মাঠসমূহ খেলাধুলার উপযোগী করার দাবি

ছবি

সস কারখানার মালিককে ৩ লাখ টাকা জরিমানা

ছবি

পূর্বাচল এলাকায় পরিবহনে হিজড়াদের চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার ১২

ছবি

আমার জীবন আমার স্বপ্ন উদযাপন

ছবি

১০ টাকা কেজি ইলিশ বিক্রি, জনতার চাপে পালালেন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী

ছবি

লড়াই ষাঁড়ের আঘাতে প্রাণ গেল যুবকের

tab

তুলে নেয়া হলো ভোররাতে, পরে জানা গেলো গভীর রাতে মামলা, এরপর দেখানো হলো গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশকনিজস্ব বার্তা পরিবেশক, ঢাকা ও প্রতিনিধি, সাভার

বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩

সাভারে বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে ভোররাতে এক সাংবাদিককে তুলে নেয়ার অভিযোগের পর কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। স্থানীয় পুলিশ এবং সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয় তারা কিছু জানেন না। পরে দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান একটি মামলার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তখন তিনিও বিস্তারিত জানাতে পারেননি।

পরে জানা গেলো তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এক ব্যক্তি গত মঙ্গলবার ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলায় বাদী নিজেকে রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা বলে পরিচয় দিয়েছেন। ‘মিথ্যা ও মানহানিকর’ তথ্য প্রচারের অভিযোগে ওই মামলা।

ভোররাতে যা ঘটেছে

গতকাল ভোর ৪টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার আমবাগানের ভাড়াবাসা থেকে তুলে নেয়া হয় প্রথম আলোর প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে। এ সময় সাদা পোশাকে সিআইডি পরিচয় দিয়ে ওই সাংবাদিকের বাসায় প্রবেশ করে এক দল লোক।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোর রাতে ৩টি গাড়িতে ১৫/১৬ জন লোক সিআইডি পরিচয়ে সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বাসায় আসে। তাদের মধ্যে ৭-৮ জন লোক বাসার ভেতরে ঢুকে। এদের একজন বাসায় তল্লাশি চালায়। এ সময় তার ব্যবহৃত একজন একটি ল্যাপটপ, দুইটি মোবাইলফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে যায়। বাসায় ১০-১৫ মিনিট অবস্থান করার পর তাকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় যান তারা।

বটতলার নুরজাহার হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন, একজন নিরাপত্তা প্রহরী ও শামসুজ্জামানসহ মোট ১৯ জন ব্যক্তি সেহেরির খাবার খান। ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে বটতলা থেকে তারা আবার শামসুজ্জামানের বাসায় যান। পরে বাসায় এসে তারা জব্দ করা মালামালের তালিকা করেন।

এরপর শামসুজ্জামানকে জামাকাপড় নিতে বলা হয়। এ সময় কক্ষের ভেতরে দাঁড় করিয়ে তার ছবি তোলা হয় এবং ৫-৭ মিনিটের মধ্যে আবার তারা বের হয়ে যান।

ওই সময় শামসুজ্জামানের বাড়িতে অবস্থানরত এক স্থানীয় সাংবাদিক বলেন, ‘আমি অফিসের কাজে গত মঙ্গলবার ঢাকা গিয়েছিলাম। ফেরার পথে বেশি রাত হওয়ায় ভাইয়ের [শামসুজ্জামানের] বাসায় আসি। আমি রাতে ঘুমিয়েছিলাম। ভোর ৪টার দিকে শামস ভাই আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে। উঠে দেখি ডাইনিংয়ে ৫-৬ ব্যক্তি দাঁড়ানো। আর এক ব্যক্তি ভাইয়ের কক্ষে তল্লাশি করে তার ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, দুইটি মুঠোফোন ও একটি পোর্টেবল হার্ডডিস্ক নিয়ে নেয়। বাইরে থাকা একটি ব্যাগ ফাঁকা করে সেই ব্যাগে ওসব ঢুকাচ্ছে। এরপর কর্মকর্তাদের একজন ঘরের ভিতরে ঢুকে আমার কাছে পরিচয় জানতে চায়। পরে তাদের এক জন বলে, জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তারপর বাসায় দিয়ে যাবে শামস ভাইকে।’

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন কোন কথা বলতে রাজি হননি। আর আশুলিয়া থানার ওসি এসএম কামরুজ্জামান জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তার কাছে আটকের এমন কোনও তথ্য নেই।

এ বিষয়ে শামসের ভাবি রাজধানীর হলি আর্টিজানে নিহত পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউলের স্ত্রী উম্মে ইসলাম জানান, ‘শামসকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। কি কারণে তাকে নিয়ে গেছে, কি তার অপরাধ কিছুই জানি না। গতকালও শামসের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তখনও এ বিষয়ে শামস আমাকে কিছু বলেনি। শামস এর আগে প্রথম আলোতে কাজ করার কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে দেয়। এরপর ব্যাংকে চাকরি নেয়। এরপর পুনরায় প্রথম আলোতে কাজ শুরু করে।’

গভীর রাতে মামলা

গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৩২ মিনিটে তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি অভিযোগ দায়ের করেন মো. গোলাম কিবরিয়া। এটি রাত সোয়া ২টায় মামলা হিসেবে রুজু হয়। মামলায় বাদী কিবরিয়া নিজেকে রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। তার স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে নাটোর সদর উপজেলায়। কিবরিয়া ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। সংগঠনে তিনি এসএম কিবরিয়া ওরফে পিয়াস নামে পরিচিত।

এজাহারে কী আছে

মামলার বাদী অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ৩২ মিনিটের দিকে তিনি ব্যক্তিগত কাজে ফার্মগেটের আলরাজী হাসপাতালের সামনে অবস্থান করার সময় মোবাইল ফোনে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল দেখছিলেন। এ সময় দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের একটি ছবিসহ সংবাদ দেখেন। সংবাদটি দৈনিক প্রথম আলো তাদের ফেইসবুক পেজ থেকে শেয়ার করে।

সংবাদটিতে দেখা যায়, একটি শিশু ফুল হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধের ফটকে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবেদকের দাবি সেই শিশুটির নাম জাকির হোসেন। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, শিশু জাকির হোসেন বলে, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’ সামাজিক মাধ্যমে এ সংক্রান্ত পোস্টটি ভাইরাল হয়।

সংবাদটি দেশ-বিদেশে অবস্থানরত হাজার হাজার মানুষ তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ক্রিনশটসহ শেয়ার করেন। এই ঘটনায় মহান স্বাধীনতা দিবসে দেশের গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি নিয়ে জনগণসহ বহির্বিশ্বে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় বলে মামলায় অভিযোগ।

মামলার এজাহারে বলে হয়, পরবর্তীতে ৭১ টিভিসহ তাদের অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, প্রথম আলো ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা পরিচয় ও মিথ্যা উদ্ধৃতি’ দিয়ে সংবাদটি পরিবেশন করেছে। যে শিশুটির কথা প্রথম আলোর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে তার সম্পর্কে ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে। নাম পরিচয় ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। শিশুটি জানিয়েছে, প্রথম আলোর সাংবাদিক তার হাতে ১০ টাকা দিয়ে এই ছবি তুলেছে।

মামলায় অভিযোগ, ‘এতে প্রমাণিত হয় স্বাধীনতা দিবসে দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং বাংলাদেশের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন উদ্দেশ্যে একটি অশুভ চক্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এই মিথ্যা সংবাদ তৈরি ও পরিবেশন করে অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যার ফলে দেশের অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।’

মহান স্বাধীনতা দিবসে এমন মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ এবং বিশ্বব্যাপী প্রচার করায় বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বাদী ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন।

মামলার বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. ইমরান হোসেন মোল্লা বলেন, প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

আর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার আজিমুল হক বলেন, ‘মামলায় কেবল একজনের নাম রয়েছে। আমরা আসামিকে বুঝে পাইনি। মামলাও সিআইডিকে হস্তান্তর করা হয়েছে।

back to top