পাশে দাঁড়িয়ে নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান বাবু, নেতৃত্বে দেন ছেলে ফয়সাল
সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের ওপর পূর্ব থেকেই খিপ্ত ছিলেন জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল আলম বাবু (বাবু চেয়ারম্যান)। আর সেই খিপ্ততার কারণে সাংবাদিক নাদিমের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে একটি মামলা করে জেলে পাঠানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই মামলায় হেরে যান বাবু চেয়ারম্যান। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিক নাদিম স্ট্যাটার্স দেয়ায় আরও বেশি খিপ্ত হয়ে উঠেন। ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সাংবাদিক নাদিমকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নেন। আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরাসরি নেতত্বে দেন বাবু চেয়ারম্যান ও তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সাংবাদিক নাদিম হত্যার মূল নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী মাহমুদুল হক বাবুসহ ৪ জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য বেরিয়ে আসে।
সাংবাদিক নাদিম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুসহ (বাবু চেয়ারম্যান) কিলিং মিশনে অংশ নেয়া আরও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন র্যাব। শনিবার (১৭ জুন) ভোররাতে পঞ্চগর ও বগুড়ায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন- মনিরুজ্জামান মনির, জাকিরুল ইসলাম, এবং রেজাউল করিম। এর আগে পুলিশের অভিযানে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ৯ জনকে আটক করা হয়। সব মিলিয়ে সাংবাদিক নাদিম হত্যায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার নাদিম হত্যার ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জনকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী। গ্রেপ্তার বাবু পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমানের ভাই হন।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, সংবাদ প্রকাশের জেরে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যন ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদল আলমের পরিকল্পনায় পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় স্থানীয় সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে। ১৪ জুন রাতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা নাদিমকে বেধরক মারপিট করে রাস্তায় ফেলে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ জুন বিকেলে সাংবাদিক নাদিমের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শনিবার বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে নিহতের পরিবার। ঘটনার পর থেকে অভিযোগ ছিল ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নেতৃত্বে তার ছেলেসহ নিজস্ব বাহিনী সাংবাদিক নাদিমকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ হত্যকান্ডের ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। জেলায় জেলায় সাংবাদিকরা খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছিল।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ১৪ জুন সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জ উপজেলার পাটহাটি এলাকায় কতিপয় সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলার শিকার হন। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাকে রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যায়। স্থানীয় সাংবাদিক ও পথচারীরা তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রাথমিকভাবে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে রাতেই জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। ভিকটিম নাদিমের অবস্থার অবনতি হলে ১৫ জুন বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ওইদিন বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাদিম মৃত্যুবরণ করেন।
ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী বাদী হয়ে মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান অভিযুক্ত করে ২২ জনের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪ এর একটি আভিযানিক দল স্থানীয় র্যাবের সহযোগিতায় পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সাংবাদিক নাদিম হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু সহযোগী মো. মনিরুজ্জামান মনির ওরফে মনিরুল, জাকিরুল ইসলাম, মো. রেজাউল করিম কে গ্রেপ্তার করে।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানান. প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর পরিকল্পনাতেই এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়। সাংবাদিক নাদিম সাম্প্রতিক সময়ে বাবুর অপকর্ম নিয়ে অনলাইন পোর্টালে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাবু ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমকে বিভিন্নভাবে হুমকিসহ তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল মামলাটি খারিজ করে দেন। মামলা খারিজের বিষয়টি নিয়ে ভিকটিম নাদিম ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটার্স দেয়ায় বাবু আরও ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৪ জুন রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ভিকটিম নাদিম বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় বাবু তার সন্ত্রাসীদের নিয়ে নির্জন স্থানে ওঁৎ পেতে থাকে। ভিকটিম নাদিম তার সহকর্মীসহ মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে পেছন থেকে দৌঁড় দিয়ে বাবুর আরও কয়েকজন লোক এসে সাংবাদিক নাদিমকে মারতে মারতে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় এবং এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। ওই সময় প্রধান অভিযুক্ত বাবু ঘটনাস্থলের কাছ থেকে পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন। ভিকটিম নাদিমের সহকর্মী তাকে বাঁচাতে গেলে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকেও মারধর করে। একপর্যায়ে ভিকটিম নাদিমের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে বাবু ও তার সন্ত্রাসী গ্রুপ দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তী দিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক নাদিম মৃত্যুবরণ করেন।
র্যাবের ভাষ্য, গ্রেপ্তারকৃত মাহমুদুল আলম বাবু সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও ভিকটিম নাদিমের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে। ঘটনার পর থেকে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে তার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে জামালপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত রেজাউল, মনির এবং জাকির মাহমুদুল হাসান বাবুর সন্ত্রাসী গ্রুপের অন্যতম সহযোগী। গেপ্তারকৃত রেজাউল দৌড়ে গিয়ে নিহত নাদিমকে ধাক্কা দিয়ে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলেই বাবুর নির্দেশে তারা নাদিমকে বেদম প্রহার করতে থাকে। একপর্যায়ে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় এবং এলোপাতাড়ি আঘাত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ইতোপূর্বে তাদের বিরুদ্ধে জামালপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
নাদিমকে হত্যায় চেয়ারম্যানের ছক
র্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, পূর্ব থেকে সাংবাদিক নাদিমের ওপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত ছিলেন বাবু চেয়ারম্যান। প্রথমে শিক্ষা দিতে সাংবাদিক নাদিমের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে একটি মামলা করেছিলেন। কিন্তু সেই মামলা আদালত খারিজ করে দেয়। মামলা থেকে রেহাই পেয়ে সাংবাদিক নাদিম ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটার্স দেয়। এতে আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন বাবু চেয়ারম্যান। সাংবাদিক নাদিমকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হত্যার পরিকল্পনার ছক নিজেই আঁকেন। ব্যবহার করেন ছেলে এবং বিশ্বস্ত নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীকে। বাইরে থেকে কোন সন্ত্রাসীকে ভাড়া করেননি।
র্যাবের ভাষ্য, বাবুর নিজস্ব বাহিনী পূর্ব থেকেই ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে ছিল। সেখানে বাবু চেয়ারম্যান নিজেও ছিল। সাংবাদিক নাদিম কখন কোন পথ দিয়ে বাসায় যাবে সবকিছু জেনেই তারা পরিকল্পনা করেছিল। তাকে হত্যার বিষয়টি যাতে ধরা না পড়ে সে জন্য সিসি ক্যামেরা ফুটেজের বাইরে নিয়ে তাকে মারা হয়। কিন্তু নাদিমের সঙ্গে তার একজন সহকর্মী থাকার কারণে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য তৈরি হয়ে যায় ঘটনায়। প্রথমে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বাবুর সহযোগী রেজাউল। দৌড়ে গিয়ে বাবুকে প্রথম আঘাত করে আরেক সহযোগী মনির। এরপর বাবুকে টেনেহিঁচড়ে অন্ধাকারে যখন নিয়ে যাওয়া হয় তখন পাশে থেকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন বাবু চেয়ারম্যান। ঘটনাস্থলে থাকা বাবু চেয়ারম্যানের ছেলে ফয়সাল ইট দিয়ে সাংবাদিক নাদিমের মাথায় সজোরে আঘাত করেন। আর ওই আঘাতের কারণেই নাদিমের মৃত্যু হয়।
বাবুর ছেলে রিফাতকেও খুঁজছে র্যাব
র্যাব জানিয়েছে, সাংবাদিক নাদিম হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল প্রধান অভিযুক্ত বাবুর ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চেয়ারম্যান বাবু জানিয়েছে, ঘটনার সময় ছেলে রিফাতও ছিল। তবে তাকে গ্রেপ্তারের আগে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তাকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
ফেইসবুক লাইভে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। এরপরও তাকে মরতে হলো এমন প্রশ্নের উত্তরে কমান্ডার মঈন বলেন, ভুক্তভোগী সাংবাদিক ফেইসবুকে লাইভ করেছেন, নিরাপত্তা চেয়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ ভালো বলতে পারবেন। তবে তিনি আমাদের কাছে কোন অভিযোগ করেননি। তিনি যদি অভিযোগ করতেন তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ ছিল।
২২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
আমাদের জামালপুর প্রতিনিধি জানান জামালপুরের বকশীগঞ্জে বাংলানিউজ ২৪ ডটকম এর জেলা প্রতিনিধি ও বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যার ঘটনায় ২২ জনের নামে ও অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে শনিবার দুপুরে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু ও তার ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাতসহ অনেককেই আসামি করা হয়েছে।
নাদিম হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার ঘটনায় আটককৃত ৯ জনকে শনিবার দুপুরে জামালপুর কোর্টে প্রেরণ করেছেন থানা পুলিশ। সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যার ঘটনায় খুনিদের বিচারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে বকশীগঞ্জ উপজেলাসহ সারাদেশ। হত্যার ঘটনায় পুরো সাংবাদিক সমাজসহ স্থানীয় এলাকাবাসী দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন। সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাংবাদিক নাদিমের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। খুনিদের ফাঁসির দাবি করেছেন নাদিমের পরিবারসহ পুরো এলাকার মানুষ। শনিবার দুপুর ১২টায় বকশীগঞ্জের কর্মরত সাংবাদিকরা নাদিমের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। একই দিন বকশীগঞ্জ পৌর এলাকার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে আরেকটি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষুব্ধরা এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির দাবি জানান। নিহত সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম সাংবাদিকদের জানান, তার স্বামীর হত্যাকারীরা যেন পার না পায়। খুনি মাহমুদুল আলম বাবু ও তার ছেলে রিফাতসহ সবার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তিনি।
বকশীগঞ্জ থানার ওসি মো. সোহেল রানা জানান, সাংবাদিক নাদিম হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিসহ ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। ইতোমধ্যে থানা পুলিশের হাতে ৯ জনকে জামালপুর কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
পাশে দাঁড়িয়ে নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান বাবু, নেতৃত্বে দেন ছেলে ফয়সাল
শনিবার, ১৭ জুন ২০২৩
সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের ওপর পূর্ব থেকেই খিপ্ত ছিলেন জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল আলম বাবু (বাবু চেয়ারম্যান)। আর সেই খিপ্ততার কারণে সাংবাদিক নাদিমের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে একটি মামলা করে জেলে পাঠানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেই মামলায় হেরে যান বাবু চেয়ারম্যান। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিক নাদিম স্ট্যাটার্স দেয়ায় আরও বেশি খিপ্ত হয়ে উঠেন। ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সাংবাদিক নাদিমকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নেন। আর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরাসরি নেতত্বে দেন বাবু চেয়ারম্যান ও তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সাংবাদিক নাদিম হত্যার মূল নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী মাহমুদুল হক বাবুসহ ৪ জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য বেরিয়ে আসে।
সাংবাদিক নাদিম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুসহ (বাবু চেয়ারম্যান) কিলিং মিশনে অংশ নেয়া আরও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন র্যাব। শনিবার (১৭ জুন) ভোররাতে পঞ্চগর ও বগুড়ায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন- মনিরুজ্জামান মনির, জাকিরুল ইসলাম, এবং রেজাউল করিম। এর আগে পুলিশের অভিযানে কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ৯ জনকে আটক করা হয়। সব মিলিয়ে সাংবাদিক নাদিম হত্যায় ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার নাদিম হত্যার ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জনকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী। গ্রেপ্তার বাবু পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমানের ভাই হন।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, সংবাদ প্রকাশের জেরে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যন ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদল আলমের পরিকল্পনায় পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় স্থানীয় সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমকে। ১৪ জুন রাতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা নাদিমকে বেধরক মারপিট করে রাস্তায় ফেলে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ জুন বিকেলে সাংবাদিক নাদিমের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শনিবার বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে নিহতের পরিবার। ঘটনার পর থেকে অভিযোগ ছিল ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নেতৃত্বে তার ছেলেসহ নিজস্ব বাহিনী সাংবাদিক নাদিমকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ হত্যকান্ডের ঘটনায় সারাদেশে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। জেলায় জেলায় সাংবাদিকরা খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে আসছিল।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গত ১৪ জুন সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জ উপজেলার পাটহাটি এলাকায় কতিপয় সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলার শিকার হন। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাকে রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যায়। স্থানীয় সাংবাদিক ও পথচারীরা তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে প্রাথমিকভাবে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে রাতেই জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। ভিকটিম নাদিমের অবস্থার অবনতি হলে ১৫ জুন বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং ওইদিন বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাদিম মৃত্যুবরণ করেন।
ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী বাদী হয়ে মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান অভিযুক্ত করে ২২ জনের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪ এর একটি আভিযানিক দল স্থানীয় র্যাবের সহযোগিতায় পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সাংবাদিক নাদিম হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু সহযোগী মো. মনিরুজ্জামান মনির ওরফে মনিরুল, জাকিরুল ইসলাম, মো. রেজাউল করিম কে গ্রেপ্তার করে।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার আল মঈন জানান. প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর পরিকল্পনাতেই এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়। সাংবাদিক নাদিম সাম্প্রতিক সময়ে বাবুর অপকর্ম নিয়ে অনলাইন পোর্টালে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাবু ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমকে বিভিন্নভাবে হুমকিসহ তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল মামলাটি খারিজ করে দেন। মামলা খারিজের বিষয়টি নিয়ে ভিকটিম নাদিম ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটার্স দেয়ায় বাবু আরও ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক নাদিমকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৪ জুন রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ভিকটিম নাদিম বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় বাবু তার সন্ত্রাসীদের নিয়ে নির্জন স্থানে ওঁৎ পেতে থাকে। ভিকটিম নাদিম তার সহকর্মীসহ মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে পেছন থেকে দৌঁড় দিয়ে বাবুর আরও কয়েকজন লোক এসে সাংবাদিক নাদিমকে মারতে মারতে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় এবং এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। ওই সময় প্রধান অভিযুক্ত বাবু ঘটনাস্থলের কাছ থেকে পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন। ভিকটিম নাদিমের সহকর্মী তাকে বাঁচাতে গেলে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকেও মারধর করে। একপর্যায়ে ভিকটিম নাদিমের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে বাবু ও তার সন্ত্রাসী গ্রুপ দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তী দিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক নাদিম মৃত্যুবরণ করেন।
র্যাবের ভাষ্য, গ্রেপ্তারকৃত মাহমুদুল আলম বাবু সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও ভিকটিম নাদিমের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে। ঘটনার পর থেকে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে তার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়। ইতোপূর্বে তার বিরুদ্ধে জামালপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত রেজাউল, মনির এবং জাকির মাহমুদুল হাসান বাবুর সন্ত্রাসী গ্রুপের অন্যতম সহযোগী। গেপ্তারকৃত রেজাউল দৌড়ে গিয়ে নিহত নাদিমকে ধাক্কা দিয়ে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলেই বাবুর নির্দেশে তারা নাদিমকে বেদম প্রহার করতে থাকে। একপর্যায়ে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় এবং এলোপাতাড়ি আঘাত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ইতোপূর্বে তাদের বিরুদ্ধে জামালপুরের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
নাদিমকে হত্যায় চেয়ারম্যানের ছক
র্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, পূর্ব থেকে সাংবাদিক নাদিমের ওপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত ছিলেন বাবু চেয়ারম্যান। প্রথমে শিক্ষা দিতে সাংবাদিক নাদিমের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে একটি মামলা করেছিলেন। কিন্তু সেই মামলা আদালত খারিজ করে দেয়। মামলা থেকে রেহাই পেয়ে সাংবাদিক নাদিম ফেইসবুকে একটি স্ট্যাটার্স দেয়। এতে আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন বাবু চেয়ারম্যান। সাংবাদিক নাদিমকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হত্যার পরিকল্পনার ছক নিজেই আঁকেন। ব্যবহার করেন ছেলে এবং বিশ্বস্ত নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীকে। বাইরে থেকে কোন সন্ত্রাসীকে ভাড়া করেননি।
র্যাবের ভাষ্য, বাবুর নিজস্ব বাহিনী পূর্ব থেকেই ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে ছিল। সেখানে বাবু চেয়ারম্যান নিজেও ছিল। সাংবাদিক নাদিম কখন কোন পথ দিয়ে বাসায় যাবে সবকিছু জেনেই তারা পরিকল্পনা করেছিল। তাকে হত্যার বিষয়টি যাতে ধরা না পড়ে সে জন্য সিসি ক্যামেরা ফুটেজের বাইরে নিয়ে তাকে মারা হয়। কিন্তু নাদিমের সঙ্গে তার একজন সহকর্মী থাকার কারণে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য তৈরি হয়ে যায় ঘটনায়। প্রথমে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বাবুর সহযোগী রেজাউল। দৌড়ে গিয়ে বাবুকে প্রথম আঘাত করে আরেক সহযোগী মনির। এরপর বাবুকে টেনেহিঁচড়ে অন্ধাকারে যখন নিয়ে যাওয়া হয় তখন পাশে থেকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন বাবু চেয়ারম্যান। ঘটনাস্থলে থাকা বাবু চেয়ারম্যানের ছেলে ফয়সাল ইট দিয়ে সাংবাদিক নাদিমের মাথায় সজোরে আঘাত করেন। আর ওই আঘাতের কারণেই নাদিমের মৃত্যু হয়।
বাবুর ছেলে রিফাতকেও খুঁজছে র্যাব
র্যাব জানিয়েছে, সাংবাদিক নাদিম হামলার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল প্রধান অভিযুক্ত বাবুর ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চেয়ারম্যান বাবু জানিয়েছে, ঘটনার সময় ছেলে রিফাতও ছিল। তবে তাকে গ্রেপ্তারের আগে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তাকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
ফেইসবুক লাইভে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। এরপরও তাকে মরতে হলো এমন প্রশ্নের উত্তরে কমান্ডার মঈন বলেন, ভুক্তভোগী সাংবাদিক ফেইসবুকে লাইভ করেছেন, নিরাপত্তা চেয়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ ভালো বলতে পারবেন। তবে তিনি আমাদের কাছে কোন অভিযোগ করেননি। তিনি যদি অভিযোগ করতেন তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ ছিল।
২২ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
আমাদের জামালপুর প্রতিনিধি জানান জামালপুরের বকশীগঞ্জে বাংলানিউজ ২৪ ডটকম এর জেলা প্রতিনিধি ও বকশীগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যার ঘটনায় ২২ জনের নামে ও অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে শনিবার দুপুরে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু ও তার ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাতসহ অনেককেই আসামি করা হয়েছে।
নাদিম হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার ঘটনায় আটককৃত ৯ জনকে শনিবার দুপুরে জামালপুর কোর্টে প্রেরণ করেছেন থানা পুলিশ। সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যার ঘটনায় খুনিদের বিচারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে বকশীগঞ্জ উপজেলাসহ সারাদেশ। হত্যার ঘটনায় পুরো সাংবাদিক সমাজসহ স্থানীয় এলাকাবাসী দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন। সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাংবাদিক নাদিমের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। খুনিদের ফাঁসির দাবি করেছেন নাদিমের পরিবারসহ পুরো এলাকার মানুষ। শনিবার দুপুর ১২টায় বকশীগঞ্জের কর্মরত সাংবাদিকরা নাদিমের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। একই দিন বকশীগঞ্জ পৌর এলাকার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে আরেকটি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষুব্ধরা এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির দাবি জানান। নিহত সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম সাংবাদিকদের জানান, তার স্বামীর হত্যাকারীরা যেন পার না পায়। খুনি মাহমুদুল আলম বাবু ও তার ছেলে রিফাতসহ সবার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তিনি।
বকশীগঞ্জ থানার ওসি মো. সোহেল রানা জানান, সাংবাদিক নাদিম হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিসহ ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। ইতোমধ্যে থানা পুলিশের হাতে ৯ জনকে জামালপুর কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে।