ফরিদপুরের ভাঙ্গায় শনিবার রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে অ্যাম্বুলেন্সে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায় -সংবাদ
হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য একমাস আগে ঢাকায় যান ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ফেলাননগর গ্রামের আজিজার শেখের স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৫৫)। রাজধানীতে এক মাস চিকিৎসা নিয়ে শনিবার (২৪ জুন) দুই মেয়ে ও চার নাতি-নাতনিকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে বাড়ি ফিরছিলেন। তবে রোগে নয়, ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মহাসড়কে (এক্সপ্রেসওয়ে) দুর্ঘটনায় প্রাণ দিতে হলো এই নারীকে। সঙ্গে তার দুই মেয়ে ও চার নাতি-নাতনিকেও নির্মম মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিতে হয়েছে।
এদিকে, ঢাকায় নেয়ার পথে প্রাণ হারান একই দুর্ঘটনায় আহত চালক। সবমিলিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে আগুন লেগে মোট আট জন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন- তাছলিমার মেয়ে কমলা পারভিন (২৬) ও বিউটি বেগম (২৪), নাতি হাসিব (৮), আরিফ (১২) মেহেদি (১২) ও নাতনি হাফসা (২)। এর মধ্যে কমলা বেগম ঢাকায় বসবাস করতেন। তার স্বামীর নাম আলমগীর বিদ্যুতে চাকরি করেন। হাফসা, হাসিব ও আরিফ এই দম্পতির সন্তান। বিউটি উপজেলার শেখর ইউনিয়নের মাইটকুমরা গ্রামের মাহমুদ ইসলাম রনির স্ত্রী। মেহেদি তাদের সন্তান।
নিহত অন্যজন হলেন- অ্যাম্বুলেন্স চালক মৃদুল মালো (২৫)। তিনি ফরিদপুর শহরের গুহলক্ষ্মীপুর এলাকার তকি মোল্লা সড়কের সুভাষ চন্দ্র মালোর ছেলে। তাকে আহত অবস্থায় প্রথমে ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রেফার্ড করা হয়। ঢাকায় নেয়ার পথে তিনিও মারা যান।
তাসলিমার চাচা আবদুল হামিদ শেখ বলেন, ‘আমার ভাতিজি অসুস্থ ছিল। ঢাকায় তার চিকিৎসা শেষে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিল। পথিমধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাসলিমার সঙ্গে তার দুই মেয়ে ও নাতি-নাতনিরা ছিল তারা সবাই মারা গেছে।’
শনিবার বেলা ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা অ্যাম্বুলেন্সটি মালিগ্রাম এলাকায় এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের রেলিংয়ে ধাক্কা লেগে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়লে চালক ছাড়া ভেতরে থাকা কেউ বের হতে পারেনি। সবাই পুড়ে মারা যান।
এই ঘটনায় ওই এক্সপ্রেসওয়েতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর্যন্ত যান চলাচল স্থবির ছিল। এর মধ্যে সংযোগ সড়ক দিয়ে কিছু যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করে হাইওয়ে পুলিশ। দুপুর দেড়টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী মো. মিন্টু বলেন, ‘আমরা ওই সময় ব্রিজের নিচে ছিলাম। এক্সপ্রেসওয়ের ব্রিজে ওঠার আগেই গাড়িটির চাকা ব্রাস্ট হয়ে যায়। এ সময় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের রেলিংয়ে ধাক্কা লেগে ঘুরে যায়। এরপরই আগুন ধরে। চালক সামনের ভাঙা দরজা দিয়ে বের হয়ে আসেন। কিন্তু অন্যরা ভেতরে আটকা পড়েন। মুহূর্তেই পুরো গাড়ি পুড়ে যায়। গাড়ির কাছে আগুনের তাপে যাওয়া যায়নি।’
ফায়ার সার্ভিস ভাঙ্গা স্টেশনের ইনচার্জ আবু জাফর বলেন, ‘খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। তখন গাড়িটি জ্বলছিল। ভেতরেই নারী-শিশুসহ সাত জন মারা গেছে। গাড়িটির সামনের অংশে আগুন ধরেছিল। রেলিংয়ে ধাক্কা লেগেই আগুন ধরে যায়। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলে ভেতর থেকে সাত জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।’
হাইওয়ে পুলিশের ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মাহবুব আলম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের ডিভাইডারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আগুন ধরে যায়। চালকের পাশের জানালাটি খোলা ছিল। এছাড়া সব জানালা আটকানো ছিল। চালক রক্তাক্ত অবস্থায় বের হয়ে এলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। অন্যরা কেউ বের হতে পারেননি।’
জেলা পুলিশ সুপার শাহজাহান বলেন, ‘লাশ ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের হাতে লাশ তুলে দেয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, ‘ দাফনের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারাও কমিটিতে রয়েছেন। দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি তৈমুর ইসলাম বলেন, ‘এটা মাদারীপুরের শিবচর হাইওয়ে থানার অন্তর্ভুক্ত। তাই শিবচর হাইওয়ে থানাও এ ঘটনা নিয়ে কাজ করছে।’
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। তিনি ঘটনাকে অত্যন্ত মর্মান্তিক উল্লেখ করে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
এছাড়া এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুর হোসেন বুলবুল।
তদন্ত কমিটি গঠন
দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার।
এ সময় তিনি নিহতদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় শনিবার রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে অ্যাম্বুলেন্সে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায় -সংবাদ
শনিবার, ২৪ জুন ২০২৩
হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য একমাস আগে ঢাকায় যান ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ফেলাননগর গ্রামের আজিজার শেখের স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৫৫)। রাজধানীতে এক মাস চিকিৎসা নিয়ে শনিবার (২৪ জুন) দুই মেয়ে ও চার নাতি-নাতনিকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে বাড়ি ফিরছিলেন। তবে রোগে নয়, ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মহাসড়কে (এক্সপ্রেসওয়ে) দুর্ঘটনায় প্রাণ দিতে হলো এই নারীকে। সঙ্গে তার দুই মেয়ে ও চার নাতি-নাতনিকেও নির্মম মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিতে হয়েছে।
এদিকে, ঢাকায় নেয়ার পথে প্রাণ হারান একই দুর্ঘটনায় আহত চালক। সবমিলিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে আগুন লেগে মোট আট জন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন- তাছলিমার মেয়ে কমলা পারভিন (২৬) ও বিউটি বেগম (২৪), নাতি হাসিব (৮), আরিফ (১২) মেহেদি (১২) ও নাতনি হাফসা (২)। এর মধ্যে কমলা বেগম ঢাকায় বসবাস করতেন। তার স্বামীর নাম আলমগীর বিদ্যুতে চাকরি করেন। হাফসা, হাসিব ও আরিফ এই দম্পতির সন্তান। বিউটি উপজেলার শেখর ইউনিয়নের মাইটকুমরা গ্রামের মাহমুদ ইসলাম রনির স্ত্রী। মেহেদি তাদের সন্তান।
নিহত অন্যজন হলেন- অ্যাম্বুলেন্স চালক মৃদুল মালো (২৫)। তিনি ফরিদপুর শহরের গুহলক্ষ্মীপুর এলাকার তকি মোল্লা সড়কের সুভাষ চন্দ্র মালোর ছেলে। তাকে আহত অবস্থায় প্রথমে ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রেফার্ড করা হয়। ঢাকায় নেয়ার পথে তিনিও মারা যান।
তাসলিমার চাচা আবদুল হামিদ শেখ বলেন, ‘আমার ভাতিজি অসুস্থ ছিল। ঢাকায় তার চিকিৎসা শেষে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিল। পথিমধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাসলিমার সঙ্গে তার দুই মেয়ে ও নাতি-নাতনিরা ছিল তারা সবাই মারা গেছে।’
শনিবার বেলা ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা অ্যাম্বুলেন্সটি মালিগ্রাম এলাকায় এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের রেলিংয়ে ধাক্কা লেগে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়লে চালক ছাড়া ভেতরে থাকা কেউ বের হতে পারেনি। সবাই পুড়ে মারা যান।
এই ঘটনায় ওই এক্সপ্রেসওয়েতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর্যন্ত যান চলাচল স্থবির ছিল। এর মধ্যে সংযোগ সড়ক দিয়ে কিছু যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করে হাইওয়ে পুলিশ। দুপুর দেড়টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী মো. মিন্টু বলেন, ‘আমরা ওই সময় ব্রিজের নিচে ছিলাম। এক্সপ্রেসওয়ের ব্রিজে ওঠার আগেই গাড়িটির চাকা ব্রাস্ট হয়ে যায়। এ সময় গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের রেলিংয়ে ধাক্কা লেগে ঘুরে যায়। এরপরই আগুন ধরে। চালক সামনের ভাঙা দরজা দিয়ে বের হয়ে আসেন। কিন্তু অন্যরা ভেতরে আটকা পড়েন। মুহূর্তেই পুরো গাড়ি পুড়ে যায়। গাড়ির কাছে আগুনের তাপে যাওয়া যায়নি।’
ফায়ার সার্ভিস ভাঙ্গা স্টেশনের ইনচার্জ আবু জাফর বলেন, ‘খবর পেয়েই আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। তখন গাড়িটি জ্বলছিল। ভেতরেই নারী-শিশুসহ সাত জন মারা গেছে। গাড়িটির সামনের অংশে আগুন ধরেছিল। রেলিংয়ে ধাক্কা লেগেই আগুন ধরে যায়। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলে ভেতর থেকে সাত জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।’
হাইওয়ে পুলিশের ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মাহবুব আলম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের ডিভাইডারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আগুন ধরে যায়। চালকের পাশের জানালাটি খোলা ছিল। এছাড়া সব জানালা আটকানো ছিল। চালক রক্তাক্ত অবস্থায় বের হয়ে এলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। অন্যরা কেউ বের হতে পারেননি।’
জেলা পুলিশ সুপার শাহজাহান বলেন, ‘লাশ ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের হাতে লাশ তুলে দেয়া হবে।’
জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, ‘ দাফনের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারাও কমিটিতে রয়েছেন। দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি তৈমুর ইসলাম বলেন, ‘এটা মাদারীপুরের শিবচর হাইওয়ে থানার অন্তর্ভুক্ত। তাই শিবচর হাইওয়ে থানাও এ ঘটনা নিয়ে কাজ করছে।’
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। তিনি ঘটনাকে অত্যন্ত মর্মান্তিক উল্লেখ করে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
এছাড়া এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুর হোসেন বুলবুল।
তদন্ত কমিটি গঠন
দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার।
এ সময় তিনি নিহতদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান।