alt

অভিযান, জরিমানা, কিন্তু কমেনি ডিমের দাম

আমিরুল মোমিনিন সাগর : শনিবার, ১২ আগস্ট ২০২৩

ডিমের দাম আবারও বেড়েছে, এক হালির দাম গিয়ে ঠেকেছে ৬০ টাকায়। অর্থাৎ একটি ডিমের দাম ১৫ টাকা। তবে এক সঙ্গে এক ডজন কিনলে এলাকাভেদে তা ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় পাওয়া যায়।

আর এই পরিস্থিতিতে শনিবার (১২ আগস্ট) অভিযানে নেমেছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। রাজধানীর কাপ্তান বাজারে ৩টি পাইকারি ডিম বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করেছে তারা। মূল্য তালিকা না টানানো এবং পাকা রশিদ না রাখার দায়ে তাদের জরিমানা করা হয়।

তবে এই অভিযানে ডিমের দাম কমেনি। ওই অভিযানের পর বিকেলে রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে কথা হয় ঝর্ণা বেগমের সঙ্গে। ডিম কতো করে কিনলেন জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ডিম নিলাম তো ডজন ১৬০ টাকা করে। না নিয়ে পারি না। একদিন খাব না, দুইদিন খাব না, তিন দিনের দিন তো অবশ্যই খেতে হবে। সকালে নাস্তার সঙ্গে ডিম একটা লাগেই। আগে দুই ডজন নিতাম। আজ এক ডজন নিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে সব কন্ট্রোল করতে হবে। তাহলে সবার জন্যই ভালো হবে। দেখেন, আমরা হয়তো খেতে পারছি। এমনও মানুষ আছে যাদের পক্ষে ডিম কেনা সম্ভব না।’

হঠাৎ ডিমের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ওই বাজারের ডিম ব্যবসায়ী রিপন সংবাদকে বলেন, ‘বড় বড় খামারিরা, তেজগাঁওয়ের বড় বড় ব্যবসায়ীরা, কোম্পানিরা মিলে সিন্ডিকেট করছে। তাদের ওপর অভিযান চালালে সেখানে ডিমের দাম কমতো। সঠিক জায়গায় অভিযান চলছে না। খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর অভিযান চালালে ডিমের দাম কমবে না।’

‘ডিমের ডজন ১৬০ টাকা হওয়া উচিত না। ডিমের দাম বাড়ার কারণে আমাদেরও সমস্যা হয়েছে,’ বলেন রিপন।

শনিবার কাপ্তানবাজারে অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার মন্ডল। তিনি বলেন, ‘৩টি প্রতিষ্ঠানে তদারকি করে আমরা যেটি দেখলাম, যেখান থেকে ডিমগুলো ক্রয় করা হয়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি ক্যাশ মেমো দেয়া হয়নি। কিছু কিছু ক্যাশ মেমো আছে কিন্তু তাতে টাকার উল্লেখ নেই, শুধু ডিমের সংখ্যার উল্লেখ রয়েছে।’

‘একটিতে আমরা দেখলাম ব্যবসায়ী ১ লাখ ৮০০ পিস ডিম ক্রয় করেছেন। কিন্তু কী রেটে ক্রয় করা হয়েছে তার তথ্য উল্লেখ নেই। ডিমগুলো বিক্রি করছেন পাইকারী রেটে কিন্তু কী রেটে বিক্রি করছেন সেই তথ্যগুলো আমরা পাচ্ছি না। কারণ তারা পাকা ক্যাশ মেমো দিচ্ছেন না। মূল্য তালিকা টানানো বিধান ছিল সেটিও তারা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করছেন না। এসব কারণে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার করে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে,’ বলেন জব্বার মন্ডল।

ব্যবসায়ীদের দাবি, বড় বড় কোম্পানিগুলো পাকা রশিদ দেয় না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এফবিসিসিআই, দোকান মালিক সমিতির সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। আমরা মাইকিং করেছি, লিফলেট বিতরণ করেছি যে, পাকা রশিদ রাখতে হবে এবং ক্রেতাদের পাকা রশিদ দিতে হবে। তারা এই নির্দেশনা সম্পর্কে অবগত। এছাড়া আমাদের মহাপরিচালক চিঠি আকারে এই নির্দেশনা দিয়েছেন।’

‘বড় কোম্পানি পাকা রশিদ দিচ্ছে না সেটা পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমাদের জানায়নি। আমরা লিখিত প্রতিবেদন দেবো এবং যেসব কোম্পানি পাকা রশিদ দিচ্ছে না তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে,’ বলেন তিনি।

রাজধানী কারওয়ান বাজারের কাঁচা বাজারের সামনে রাস্তায় ডিম বিক্রি করছেন হোসাইন। ডিমের দরদামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে জানান, হালি ৬০ টাকা, ডজন ১৬০ টাকা আর ১০০ নিলে তেরোশ’ টাকা।’ ‘পাঁচ-ছয় দিন ধরে এ দামেই ডিম বিক্রি করছি’ জানান হুসাইন। ডিমের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তেজগাঁও এলাকার নিমতলী মাজার জামে মসজিদের পাশের দোকানের ডিম ব্যবসায়ী মাসুদ বলেন, ‘বড় বড় ব্যবসায়ী যারা খামারিদের কাছ থেকে ডিম নিয়ে আটকাইয়া দেয় তাদের কাছে তেজগাঁওয়ের আড়তদারও জিম্মি। আর খামারিরা খাদ্য ওয়ালাদের কাছে জিম্মি।’

‘আজ (শনিবার) অভিযানের কারণে ডিম বেচাকেনা কম। তবে অভিযানের দরকার আছে। আগে এক ভ্যান ডিম কিনতাম পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে। আর এখন কিনতে পড়ে সত্তর হাজার টাকা,’ বলেন ডিম ব্যবসায়ী মাসুদ।

হঠাৎ ডিমের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লা সংবাদকে বলেন, ‘প্রচন্ড গরমে অনেক মুরগি মারা গেছে। প্রডাকশন কস্ট বাড়ছে। ডিমের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন নাই। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সরবরাহে সমস্যা।’

ক্ষুদ্র খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা ন্যায্যমূল্য না পেয়ে অধিকাংশ মুরগি বিক্রি করে দিয়েছে। যার কারণে বাজারে ডিমের সংকট। এই সংকটের মধ্যে করপোরেট গ্রুপ দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা মাত্র ২০ শতাংশ ডিম উৎপাদন করে। অন্যদিকে আমরা ৮০ শতাংশ ডিম উৎপাদন করি। এই সংকট সমাধানে সরকার শুধু করপোরেটদের নিয়ে বৈঠক করে। অথচ আমাদের কোন মতামত নেয়া হয় না। সময় অসময়ে ডিম ও মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়ে তারা লাভবান হলেও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা হুমকির মুখে পড়ছে। মাঝে ভোক্তাদের পকেট ফাঁকা হচ্ছে।’

বাংলাদেশ ডিম উৎপাদক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি ডিমের প্রয়োজন হয়। আর ডিমের একটি বড় অংশ আসে সারাদেশের খামারগুলো থেকে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে মুরগির ডিমের হালির গড় দাম ছিল ২৭ টাকার আশপাশে। এখন তা ৬০ টাকায় ঠেকেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে দেশে ২ হাজার ৩৩৭ কোটি পিস ডিম উৎপাদিত হয়েছিল। তার আগের অর্থবছরে যা ছিল ২ হাজার ৩৩৫ কোটি পিস।

ছবি

মেট্রোরেল প্রকল্প বাতিল হয়নি, ব্যয় কমানোর চেষ্টা চলছে: ডিএমটিসিএল এমডি

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে চিঠি

ছবি

নতুন পে-স্কেলের ফ্রেমওয়ার্ক দিয়ে যাবে বর্তমান সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

চট্টগ্রামে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল: ৩০ বছর চালাবে ডেনমার্কের কোম্পানি

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানত নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার অনুরোধ প্রশাসকদের

ছবি

বৃহস্পতিবার দোকান ও বিপণিবিতান খোলা রাখার ঘোষণা ব্যবসায়ীদের

ছবি

চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চান ব্যবসায়ীরা

ছবি

তিন শতাধিক শেয়ারের দরপতনে তলানিতে লেনদেন শেয়ারবাজারে

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা একতরফা সিদ্ধান্ত: বিএমবিএ

ছবি

সাবেক এমপিদের ৩১ বিলাসবহুল গাড়ি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দিল এনবিআর

ছবি

তরূণদের অংশগ্রহনে নারায়ণগঞ্জে উদ্যোক্তা সম্মেলন হলো

ছবি

বাজারে নতুন স্মার্টফোন হেলিও ৪৫

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে রিয়েলমি সি৮৫ প্রো উন্মোচন

ছবি

এলডিসি উত্তরণ ৩ বছর পিছিয়ে দেয়ার অনুরোধ ব্যবসায়ীদের

ছবি

শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করবে আরএসসি, সায় দিচ্ছে না বিজিএমইএ

ছবি

শেয়ারবাজারে ৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

ছবি

বাংলাদেশের তৈরি ফ্যাশনেবল পোশাকের আমদানি বাড়াবে জাপান

ছবি

স্বর্ণের দাম আবার বাড়লো

একনেকে ৭১৫০ কোটি টাকার ১২ প্রকল্প পাস

আবারও ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সুপারিশ

ছবি

আকুর বিল পরিশোধের পরও ৩১ বিলিয়নের ওপরে রিজার্ভ

ছবি

লাইসেন্স পেলো ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’, চেয়ারম্যান নাজমা

ছবি

মুঠোফোনের ওপর শুল্ক-কর কমাতে এনবিআরকে বিটিআরসির চিঠি

ছবি

এলডিসি পেছানোর আবেদন করলে অন্য দেশ বিরোধিতা করবে: সেলিম রায়হান

ছবি

শেয়ারবাজারে পরপর সাত দিন পতন, লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার ঘরে

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার শূন্য বিষয়ে গভর্নরের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নয়: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

সিলেটে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ২০তম বিডিনগ সম্মেলন

ছবি

নতুন পে কমিশনের সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী সরকার: অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ

ছবি

বাজারে অনারের নতুন স্মার্টফোন প্লে ১০

ছবি

শেয়ারবাজারে বড় পতন, ডিএসইর প্রধান সূচক কমলো ৬৮ পয়েন্ট

ছবি

সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতনের সিদ্ধান্ত নেবে আগামী সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

চলতি সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম না কমলে আমদানির অনুমতি: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

সুন্দরাতে ব্ল্যাক ফ্রাইডে এখন শপফেস্ট!

ছবি

কীটনাশক উৎপাদনের বাধা দূর করতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

ছবি

ব্যাংক খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা হচ্ছে

ছবি

ধারাবাহিক পতনে বাজার মূলধন হারালো সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা

tab

অভিযান, জরিমানা, কিন্তু কমেনি ডিমের দাম

আমিরুল মোমিনিন সাগর

শনিবার, ১২ আগস্ট ২০২৩

ডিমের দাম আবারও বেড়েছে, এক হালির দাম গিয়ে ঠেকেছে ৬০ টাকায়। অর্থাৎ একটি ডিমের দাম ১৫ টাকা। তবে এক সঙ্গে এক ডজন কিনলে এলাকাভেদে তা ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় পাওয়া যায়।

আর এই পরিস্থিতিতে শনিবার (১২ আগস্ট) অভিযানে নেমেছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। রাজধানীর কাপ্তান বাজারে ৩টি পাইকারি ডিম বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করেছে তারা। মূল্য তালিকা না টানানো এবং পাকা রশিদ না রাখার দায়ে তাদের জরিমানা করা হয়।

তবে এই অভিযানে ডিমের দাম কমেনি। ওই অভিযানের পর বিকেলে রাজধানীর শান্তিনগর বাজারে কথা হয় ঝর্ণা বেগমের সঙ্গে। ডিম কতো করে কিনলেন জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ডিম নিলাম তো ডজন ১৬০ টাকা করে। না নিয়ে পারি না। একদিন খাব না, দুইদিন খাব না, তিন দিনের দিন তো অবশ্যই খেতে হবে। সকালে নাস্তার সঙ্গে ডিম একটা লাগেই। আগে দুই ডজন নিতাম। আজ এক ডজন নিলাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে সব কন্ট্রোল করতে হবে। তাহলে সবার জন্যই ভালো হবে। দেখেন, আমরা হয়তো খেতে পারছি। এমনও মানুষ আছে যাদের পক্ষে ডিম কেনা সম্ভব না।’

হঠাৎ ডিমের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে ওই বাজারের ডিম ব্যবসায়ী রিপন সংবাদকে বলেন, ‘বড় বড় খামারিরা, তেজগাঁওয়ের বড় বড় ব্যবসায়ীরা, কোম্পানিরা মিলে সিন্ডিকেট করছে। তাদের ওপর অভিযান চালালে সেখানে ডিমের দাম কমতো। সঠিক জায়গায় অভিযান চলছে না। খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর অভিযান চালালে ডিমের দাম কমবে না।’

‘ডিমের ডজন ১৬০ টাকা হওয়া উচিত না। ডিমের দাম বাড়ার কারণে আমাদেরও সমস্যা হয়েছে,’ বলেন রিপন।

শনিবার কাপ্তানবাজারে অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার মন্ডল। তিনি বলেন, ‘৩টি প্রতিষ্ঠানে তদারকি করে আমরা যেটি দেখলাম, যেখান থেকে ডিমগুলো ক্রয় করা হয়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি ক্যাশ মেমো দেয়া হয়নি। কিছু কিছু ক্যাশ মেমো আছে কিন্তু তাতে টাকার উল্লেখ নেই, শুধু ডিমের সংখ্যার উল্লেখ রয়েছে।’

‘একটিতে আমরা দেখলাম ব্যবসায়ী ১ লাখ ৮০০ পিস ডিম ক্রয় করেছেন। কিন্তু কী রেটে ক্রয় করা হয়েছে তার তথ্য উল্লেখ নেই। ডিমগুলো বিক্রি করছেন পাইকারী রেটে কিন্তু কী রেটে বিক্রি করছেন সেই তথ্যগুলো আমরা পাচ্ছি না। কারণ তারা পাকা ক্যাশ মেমো দিচ্ছেন না। মূল্য তালিকা টানানো বিধান ছিল সেটিও তারা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করছেন না। এসব কারণে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার করে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে,’ বলেন জব্বার মন্ডল।

ব্যবসায়ীদের দাবি, বড় বড় কোম্পানিগুলো পাকা রশিদ দেয় না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এফবিসিসিআই, দোকান মালিক সমিতির সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। আমরা মাইকিং করেছি, লিফলেট বিতরণ করেছি যে, পাকা রশিদ রাখতে হবে এবং ক্রেতাদের পাকা রশিদ দিতে হবে। তারা এই নির্দেশনা সম্পর্কে অবগত। এছাড়া আমাদের মহাপরিচালক চিঠি আকারে এই নির্দেশনা দিয়েছেন।’

‘বড় কোম্পানি পাকা রশিদ দিচ্ছে না সেটা পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমাদের জানায়নি। আমরা লিখিত প্রতিবেদন দেবো এবং যেসব কোম্পানি পাকা রশিদ দিচ্ছে না তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে,’ বলেন তিনি।

রাজধানী কারওয়ান বাজারের কাঁচা বাজারের সামনে রাস্তায় ডিম বিক্রি করছেন হোসাইন। ডিমের দরদামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে জানান, হালি ৬০ টাকা, ডজন ১৬০ টাকা আর ১০০ নিলে তেরোশ’ টাকা।’ ‘পাঁচ-ছয় দিন ধরে এ দামেই ডিম বিক্রি করছি’ জানান হুসাইন। ডিমের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তেজগাঁও এলাকার নিমতলী মাজার জামে মসজিদের পাশের দোকানের ডিম ব্যবসায়ী মাসুদ বলেন, ‘বড় বড় ব্যবসায়ী যারা খামারিদের কাছ থেকে ডিম নিয়ে আটকাইয়া দেয় তাদের কাছে তেজগাঁওয়ের আড়তদারও জিম্মি। আর খামারিরা খাদ্য ওয়ালাদের কাছে জিম্মি।’

‘আজ (শনিবার) অভিযানের কারণে ডিম বেচাকেনা কম। তবে অভিযানের দরকার আছে। আগে এক ভ্যান ডিম কিনতাম পঁয়তাল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে। আর এখন কিনতে পড়ে সত্তর হাজার টাকা,’ বলেন ডিম ব্যবসায়ী মাসুদ।

হঠাৎ ডিমের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লা সংবাদকে বলেন, ‘প্রচন্ড গরমে অনেক মুরগি মারা গেছে। প্রডাকশন কস্ট বাড়ছে। ডিমের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন নাই। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সরবরাহে সমস্যা।’

ক্ষুদ্র খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা ন্যায্যমূল্য না পেয়ে অধিকাংশ মুরগি বিক্রি করে দিয়েছে। যার কারণে বাজারে ডিমের সংকট। এই সংকটের মধ্যে করপোরেট গ্রুপ দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা মাত্র ২০ শতাংশ ডিম উৎপাদন করে। অন্যদিকে আমরা ৮০ শতাংশ ডিম উৎপাদন করি। এই সংকট সমাধানে সরকার শুধু করপোরেটদের নিয়ে বৈঠক করে। অথচ আমাদের কোন মতামত নেয়া হয় না। সময় অসময়ে ডিম ও মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়ে তারা লাভবান হলেও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা হুমকির মুখে পড়ছে। মাঝে ভোক্তাদের পকেট ফাঁকা হচ্ছে।’

বাংলাদেশ ডিম উৎপাদক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি ডিমের প্রয়োজন হয়। আর ডিমের একটি বড় অংশ আসে সারাদেশের খামারগুলো থেকে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে মুরগির ডিমের হালির গড় দাম ছিল ২৭ টাকার আশপাশে। এখন তা ৬০ টাকায় ঠেকেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে দেশে ২ হাজার ৩৩৭ কোটি পিস ডিম উৎপাদিত হয়েছিল। তার আগের অর্থবছরে যা ছিল ২ হাজার ৩৩৫ কোটি পিস।

back to top