alt

অর্থ-বাণিজ্য

লাইটক্যাসল পার্টনার্স ও পলিসি একচেইঞ্জ বাংলাদেশের গবেষণা

পোশাক খাতে রপ্তানি বাড়লেও আসছে নতুন চ্যালেঞ্জ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : শনিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৩

গত অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৪৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। তবে আগের তুলনায় রপ্তানি বাড়লেও বর্তমান বাস্তবতায় পোশাক শিল্পে নতুন করে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া ও চীনভিত্তিক ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, বর্তমান দুর্বল বিশ্ব অর্থনীতি এবং আরেকটি ভবিষ্যৎ মন্দা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ। এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে এই খাতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ঘাটতি বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করে তুলেছে। ‘উন্নয়নের বিষয়সমূহ : পোশাক শিল্পে সামগ্রিক গবেষণা ও নারী শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে আসে।

দেশের বিজনেস কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স, পলিসি একচেইঞ্জ বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে এই সমীক্ষাটি পরিবেশন করে। সমীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যে অগ্রযাত্রা তা এগিয়ে নিতে পোশাক খাতে কী করণীয় ও কী কী বাধা আছে তা চিহ্নিত করা। শনিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরা হয়।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আবদুস সামাদ আল আজাদ ও বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএর) সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. এম. মাসরুর রিয়াজ। লাইটক্যাসল পার্টনার্স থেকে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক জাহেদুল আমিন, সামিহা আনোয়ার, পোর্টফোলিও ম্যানেজার রাদি শফিক ও অন্য কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঢাকা, সাভার, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের ৪২টির অধিক গার্মেন্ট শিল্প মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ভারত, কেনিয়া, ব্রাজিল, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশের পোশাক ক্রেতা এবং ৫০ জন নারীকর্মীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সমীক্ষাটি পরিচালনা করা হয়। সমীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে হ্রাসকৃত পোশাক চাহিদা এই শিল্পে সংকট আরও ঘণীভূত করবে। এর ফলে অনেক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাতে অনেক নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যেতে পারে।

এছাড়া এই খাতের নীতিনির্ধারক ও শিল্পপতিদের লক্ষ্য করে ‘বাংলাদেশে পোশাক খাতে ভবিষ্যৎ করণীয়’ শিরোনামে দুটি ‘সংক্ষিপ্ত নীতি’ তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বর্তমানে এইচ অ্যান্ড এম ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ও দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় ‘অপরাজিতা : বাংলাদেশে এই সংক্রান্ত ভবিষ্যৎ কাজে যৌথ প্রভাব’ শিরোনামে একটি-দুই বছরব্যাপী একটি প্রকল্প চালু রয়েছে। যাতে প্রকল্পের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, পোশাক শিল্পে আধুনিক মেশিন স্থাপনের প্রভাব বা পোশাক খাতকে অটোমেশনের ফলে নারী পোশাক কর্মীদের ভবিষ্যৎ জীবিকা সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। দেশের মোট রপ্তানির ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশই এই খাত থেকে হয়। দেশে ৪০০০টিরও অধিক কারখানায় প্রায় ৪০ লাখ লোক জড়িত, যাদের অধিকাংশই নারী। তাই শিল্পের উন্নয়নে ও শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে ন্যায়সঙ্গত মজুরির পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যৎ কাজের বাড়ানো, সুন্দরকর্ম পরিবেশ ও শারীরিক সুস্থতার ওপর জোর দেয়া উচিত।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ এই পোশাক খাতকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। যার ফলে অনেক আন্তর্জাতিক আদেশ (অর্ডার) বাতিল হয়েছে। এতে আনুমানিক ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে। ২০২২ সালে এর প্রভাব কাটানোর জন্য যেসব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছিল তা বিভিন্ন কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এই প্রেক্ষাপটে, এই খাতের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ধাক্কাগুলো সামাল দিতে হবে। এর পাশাপাশি এই শিল্পে গতিশীলতা ও দক্ষতা আনয়নে অটোমেশনের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও শ্রমিকদের কাজের সংস্থানের প্রভাবও বিবেচনায় আনা জরুরি।

এছাড়া সমীক্ষা প্রতিবেদনে, দেশে পরিবেশ সুরক্ষায় টেক্সটাইল বর্জ্যরে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পদ্ধতির দিকে মনোনিবেশ করা, শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত মজুরি, বয়স্ক কর্মীদের অন্য পেশায় স্থানান্তর এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির স্বার্থে এই খাতের আর্থিক নীতিগুলো সহজীকরণ ও বাস্তব সম্মতকরণের সুপারিশ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, এইসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ২০৩০ সালের মধ্যে এই খাতে বড় ধরনের ইতোবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আবদুস সামাদ আল আজাদ বলেন, ‘আমাদের এখন থেকেই তুলা-ভিত্তিক পোশাক থেকে মানুষ নির্মিত উপকরণগুলোর (Man Made Fiber-GgGgGd) মনোযোগ সরিয়ে নেয়ার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে। জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া হলো দুটি সম্ভাব্য অংশীদার যারা আমাদের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (Foreign Direct Investment-FDI) এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতায় সহায়তা করতে পারে। ইতোমধ্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী গত বছরের এপ্রিলে ‘বাংলাদেশ-জাপান শিল্প উন্নীতকরণ প্রকল্প’ নামে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ ও এই অগ্রযাত্রায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ২০২৯ সাল পর্যন্ত অগ্রাধিকারমূলক বাজার অ্যাক্সেসের সুবিধার একটি সম্প্রসারণ হতে চলেছে। এই সম্প্রসারণ নীতি-নির্ধারণকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করবে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য আরও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।’

বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের বর্জ্যরে জন্য মাত্র ২ থেকে ৩টি রিসাইক্লিং সেন্টার রয়েছে। আমরা যদি পুনর্ব্যবহৃত সুতা রপ্তানি করি তাহলে তা থেকে ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পরিবেশ সুরক্ষা বিবেচনায় আমাদের ফাইবার বৈচিত্রকরণ সম্পর্কিত নীতি গ্রহণ ও এই সংক্রান্ত উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে হবে।’

ফের পতন শেয়ার বাজারে

ছবি

দেশে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে

যা আছে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালায়

ছবি

ট্রাম্পের কর: বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার আশঙ্কা বাংলাদেশের

ছবি

শাওমির ঈদ ক্যাম্পেইন বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিলেন তামিম ইকবাল

ছবি

দারাজের ৬.৬ বিগ ঈদ সেল শুরু

ছবি

ভিভোর ঈদ ক্যাম্পেইন শুরু

ছবি

বছরের প্রথম প্রান্তিকে আয় কমেছে রবির

ছবি

অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের সঙ্গে জড়িত: গভর্নর

বিজিএমইএ নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদের ইশতেহার ঘোষণা

এফবিসিসিআইয়ে টানা ২ মেয়াদের বেশি নির্বাচন নয়

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন: ঢাকা চেম্বার

জাতীয় চা পুরস্কার পেলো ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান

বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ২৯ মে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর সভা

ছবি

ন্যায্যমূল্য পেতে এ বছর চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে

ছবি

চা উৎপাদন ও রপ্তানিতে অবদান রাখায় পুরস্কৃত ১০ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান

ছবি

এলডিসি থেকে বের হওয়া বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক: গভর্নর

ছবি

বৈঠক ফলপ্রসূ নয়, অব্যাহত থাকবে শুল্ক ও কর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচি

অর্থনৈতিক অঞ্চল ও কারখানায় হামলা হলে ছাড় দেবে না সরকার

ছবি

ইলন মাস্কের স্টারলিংক এবার বাংলাদেশে, সরকারের স্পেশাল সুবিধা কেন?

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে অপোর নতুন স্মার্টফোন ‘এ৫এক্স’

১৫ বছর ধরে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা নষ্ট করা হয়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

‘তড়িঘড়ি নয়, দরকার ছিল বিকল্পের’—স্টারলিংক নিয়ে সরকারের ব্যাখ্যা

প্রকৃত মুদি ব্যবসায়ীর লাইসেন্স ছাড়া টিসিবির ডিলার হওয়া যাবে না

আগামী বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে, শেয়ারবাজারে করছাড় আসতে পারে

দশ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন ৪১ দশমিক ৩১ শতাংশ, দেড় দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন

ছবি

ইউরোপে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে বড় উত্থান

ছবি

প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট বিপ্লব আনতে প্রস্তুত স্টারলিংক, উদ্যোক্তাদের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে

ছবি

স্টারলিংক চালু: জানুন সেবা, খরচ ও উদ্যোক্তাদের সুযোগ

ছবি

মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় রয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

স্টারলিংকের প্রতিটি ডিভাইসের উপর ট্যাক্স আরোপ করবো: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যে শুল্ক ছাড় দিচ্ছে সরকার

ছবি

এনবিআরকে ভাগ করা ঠিক, তবে ভুল পদ্ধতিতে করা হয়েছে: দেবপ্রিয়

ছবি

তারা অপকর্ম মুছে ফেলতে পারে: নগদের বর্তমান ব্যবস্থাপনা নিয়ে গভর্নরের শঙ্কা

ছবি

লুটপাটকারীদের অর্থ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংক ও জনকল্যাণে ব্যয় করবে সরকার

বিশ্ব পরিমাপ দিবস আজ

tab

অর্থ-বাণিজ্য

লাইটক্যাসল পার্টনার্স ও পলিসি একচেইঞ্জ বাংলাদেশের গবেষণা

পোশাক খাতে রপ্তানি বাড়লেও আসছে নতুন চ্যালেঞ্জ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

শনিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৩

গত অর্থবছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৪৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। তবে আগের তুলনায় রপ্তানি বাড়লেও বর্তমান বাস্তবতায় পোশাক শিল্পে নতুন করে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া ও চীনভিত্তিক ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, বর্তমান দুর্বল বিশ্ব অর্থনীতি এবং আরেকটি ভবিষ্যৎ মন্দা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ। এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে এই খাতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ঘাটতি বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করে তুলেছে। ‘উন্নয়নের বিষয়সমূহ : পোশাক শিল্পে সামগ্রিক গবেষণা ও নারী শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে আসে।

দেশের বিজনেস কনসালট্যান্ট প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স, পলিসি একচেইঞ্জ বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে এই সমীক্ষাটি পরিবেশন করে। সমীক্ষার উদ্দেশ্য ছিল স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যে অগ্রযাত্রা তা এগিয়ে নিতে পোশাক খাতে কী করণীয় ও কী কী বাধা আছে তা চিহ্নিত করা। শনিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরা হয়।

এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আবদুস সামাদ আল আজাদ ও বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএর) সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. এম. মাসরুর রিয়াজ। লাইটক্যাসল পার্টনার্স থেকে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক জাহেদুল আমিন, সামিহা আনোয়ার, পোর্টফোলিও ম্যানেজার রাদি শফিক ও অন্য কর্মকর্তারা।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঢাকা, সাভার, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের ৪২টির অধিক গার্মেন্ট শিল্প মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ভারত, কেনিয়া, ব্রাজিল, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশের পোশাক ক্রেতা এবং ৫০ জন নারীকর্মীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সমীক্ষাটি পরিচালনা করা হয়। সমীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছ থেকে হ্রাসকৃত পোশাক চাহিদা এই শিল্পে সংকট আরও ঘণীভূত করবে। এর ফলে অনেক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাতে অনেক নারী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যেতে পারে।

এছাড়া এই খাতের নীতিনির্ধারক ও শিল্পপতিদের লক্ষ্য করে ‘বাংলাদেশে পোশাক খাতে ভবিষ্যৎ করণীয়’ শিরোনামে দুটি ‘সংক্ষিপ্ত নীতি’ তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বর্তমানে এইচ অ্যান্ড এম ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ও দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় ‘অপরাজিতা : বাংলাদেশে এই সংক্রান্ত ভবিষ্যৎ কাজে যৌথ প্রভাব’ শিরোনামে একটি-দুই বছরব্যাপী একটি প্রকল্প চালু রয়েছে। যাতে প্রকল্পের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, পোশাক শিল্পে আধুনিক মেশিন স্থাপনের প্রভাব বা পোশাক খাতকে অটোমেশনের ফলে নারী পোশাক কর্মীদের ভবিষ্যৎ জীবিকা সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। দেশের মোট রপ্তানির ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশই এই খাত থেকে হয়। দেশে ৪০০০টিরও অধিক কারখানায় প্রায় ৪০ লাখ লোক জড়িত, যাদের অধিকাংশই নারী। তাই শিল্পের উন্নয়নে ও শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে ন্যায়সঙ্গত মজুরির পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যৎ কাজের বাড়ানো, সুন্দরকর্ম পরিবেশ ও শারীরিক সুস্থতার ওপর জোর দেয়া উচিত।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ এই পোশাক খাতকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। যার ফলে অনেক আন্তর্জাতিক আদেশ (অর্ডার) বাতিল হয়েছে। এতে আনুমানিক ৩ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে। ২০২২ সালে এর প্রভাব কাটানোর জন্য যেসব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছিল তা বিভিন্ন কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। এই প্রেক্ষাপটে, এই খাতের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ধাক্কাগুলো সামাল দিতে হবে। এর পাশাপাশি এই শিল্পে গতিশীলতা ও দক্ষতা আনয়নে অটোমেশনের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও শ্রমিকদের কাজের সংস্থানের প্রভাবও বিবেচনায় আনা জরুরি।

এছাড়া সমীক্ষা প্রতিবেদনে, দেশে পরিবেশ সুরক্ষায় টেক্সটাইল বর্জ্যরে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পদ্ধতির দিকে মনোনিবেশ করা, শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত মজুরি, বয়স্ক কর্মীদের অন্য পেশায় স্থানান্তর এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির স্বার্থে এই খাতের আর্থিক নীতিগুলো সহজীকরণ ও বাস্তব সম্মতকরণের সুপারিশ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, এইসব পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ২০৩০ সালের মধ্যে এই খাতে বড় ধরনের ইতোবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আবদুস সামাদ আল আজাদ বলেন, ‘আমাদের এখন থেকেই তুলা-ভিত্তিক পোশাক থেকে মানুষ নির্মিত উপকরণগুলোর (Man Made Fiber-GgGgGd) মনোযোগ সরিয়ে নেয়ার জন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে। জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া হলো দুটি সম্ভাব্য অংশীদার যারা আমাদের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (Foreign Direct Investment-FDI) এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতায় সহায়তা করতে পারে। ইতোমধ্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী গত বছরের এপ্রিলে ‘বাংলাদেশ-জাপান শিল্প উন্নীতকরণ প্রকল্প’ নামে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ ও এই অগ্রযাত্রায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ২০২৯ সাল পর্যন্ত অগ্রাধিকারমূলক বাজার অ্যাক্সেসের সুবিধার একটি সম্প্রসারণ হতে চলেছে। এই সম্প্রসারণ নীতি-নির্ধারণকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করবে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য আরও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।’

বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের বর্জ্যরে জন্য মাত্র ২ থেকে ৩টি রিসাইক্লিং সেন্টার রয়েছে। আমরা যদি পুনর্ব্যবহৃত সুতা রপ্তানি করি তাহলে তা থেকে ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পরিবেশ সুরক্ষা বিবেচনায় আমাদের ফাইবার বৈচিত্রকরণ সম্পর্কিত নীতি গ্রহণ ও এই সংক্রান্ত উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে হবে।’

back to top