alt

অর্থ-বাণিজ্য

ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিবেদন বাংলাদেশের জন্য ‘সতর্কবার্তা’

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশের শ্রম ও মানবাধিকার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় কমিশন। এই প্রতিবেদনকে ‘সতর্ক বার্তা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ‘ইউরোপীয় কমিশনের উদ্বেগের বিষয়গুলো বাংলাদেশের গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।’

ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ বর্তমানে ইবিএ (এভরিথিং বাট আর্মস) সুবিধা পায়। এর অর্থ হচ্ছে, অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছাড়া রপ্তানিযোগ্য সব পণ্যের ইউরোপের বাজারে শুল্কমুক্ত ও কোটা-মুক্ত প্রবেশাধিকার। এই সুবিধার আওতায় বর্তমানে ৪৭টি দেশ রয়েছে। এই দেশগুলোকে ইউরোপে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নির্ধারিত ১২ শতাংশ শুল্ক দিতে হয় না।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটার মানে এটা নয় যে তারা ইবিএ থেকে উইথ-ড্র করবে সেইটা না, তাদের কিছু কনসার্ন আছে। সুতরাং সেদিক থেকে অবশ্যই এটা আমাদের সিরিয়াসলি নেয়া উচিত।’

গত ২১ নভেম্বর ইউরোপীয় কমিশন জিএসপি নিয়ে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনের সাথে হাই রিপ্রেজেনটেটিভ অব দ্য ইউনিয়ন ফর ফরেইন অ্যাফেয়ার্স এন্ড সিকিউরিটি পলিসি’র সঙ্গে যৌথভাবে করা একটি স্টাফ ওয়ার্কিং ডকুমেন্টসও রয়েছে। জিএসপি প্লাসভুক্ত ৯টি দেশের মধ্যে প্রত্যেকটির জন্য এবং ইবিএভুক্ত শুধু তিনটি দেশের জন্য একটি ডকুমেন্টস তৈরি করা হয়েছে।

ইবিএভুক্ত এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং কম্বোডিয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি এই তিনটি দেশের সঙ্গে তাদের ‘কর্মকান্ড বাড়িয়েছে’ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এসব দেশের সঙ্গে যেসব ক্ষেত্রে ‘কর্মকান্ড বাড়ানো’ হয়েছে তার মধ্যে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু রয়েছে যা জাতিসংঘের মূল নীতি ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিবেদন ও পরামর্শের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এতে ইবিএভুক্ত দেশগুলোতে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও কাউন্সিল, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা, সুশীল সমাজ ও ট্রেড ইউনিয়নের বিভিন্ন পরামর্শ বাস্তবায়নের অবস্থা নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

বর্তমানে থাকা জিএসপি নিয়মকানুনের মেয়াদ চলতি বছরের শেষদিকে শেষ হয়ে যাবে। নতুন জিএসপি নিয়মকানুন গ্রহণের আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এই সময়ে বর্তমান নিয়মকানুনের মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এই মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়ার শেষ ধাপের কাজ করছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং কাউন্সিল।

জিএসপি হচ্ছে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ইউরোপের বাজারে রপ্তানি সহায়তা দেয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য নীতি। এর মাধ্যমে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশগুলোকে ইউরোপের বাজারে পণ্য আমদানি-রপ্তানির শুল্ক মওকুফ বা কমানো হয়। বর্তমানে বিশ্বের ৬৫টি দেশ এই সুবিধা ভোগ করছে। তবে ইউরোপের বাজারে এই সুবিধা পাওয়ার জন্য মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, পরিবেশ ও জলবায়ু এবং সুশাসনের বিষয়ে কিছু শর্ত পালন করতে হয়।

ইউরোপের বাজারে বিভিন্ন দেশের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের তিনটি ভাগ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড জিএসপি বা সাধারণ জিএসপি। নিম্ন এবং নিম্নমধ্যবিত্ত দেশগুলোকে সাধারণ জিএসপি সুবিধা দেয়া হয়। এর আওতাভুক্ত দেশগুলোকে ইউরোপের বাজারে রপ্তানিকৃত পণ্যের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ পণ্যের শুল্ক পুরোপুরি বা আংশিক প্রত্যাহার করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপি সুবিধাভুক্ত দেশের সংখ্যা ১০টি।

টেকসই উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয় জিএসপি প্লাস এর আওতায়। এর আওতায় নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত দেশগুলোকে শূন্য শতাংশ শুল্কের আওতায় আনা হয়। তবে এর জন্য জিএসপি প্লাসভুক্ত দেশগুলোকে মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সুশাসন সংক্রান্ত ২৭টি আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই করতে হয় এবং সেগুলোকে বাস্তবায়ন করতে হয়। জিএসপি প্লাসভুক্ত দেশ হতে হলে এর জন্য আবেদন করতে হয়। বর্তমানে জিএসপি প্লাস সুবিধা ভোগকারী দেশের সংখ্যা ৮।

একটা দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার তিন বছর পর নিয়মানুযায়ী সেটি সাধারণ জিএসপি সুবিধার আওতায় পড়বে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাধারণভাবেই ২০২৯ সালের পর আর ইবিএ সুবিধা পাবে না। এর পর জিএসপির আওতায় আসবে দেশটি। তবে বাংলাদেশ তখন জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার আবেদন করতে পারবে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপে রপ্তানির ক্ষেত্রে ইবিএভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী দেশ। গত কয়েক দশকে এই সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়ন ঘটিয়েছে।

বাংলাদেশের রপ্তানি মূলত তৈরি পোশাক শিল্প নির্ভর। ২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে মোট রপ্তানির ৯০ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে হয়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে ২২,৬৭২ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

ইউরোপে বাংলাদেশের সব রপ্তানিই ইবিএ সুবিধার আওতায় হয়ে থাকে। ২০২০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত কোভিড মহামারী সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অন্য ইবিএভুক্ত দেশের তুলনায় ইতিবাচক ছিল। ২০১৮ ও ২০২১ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার সব শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে দেশটি এই তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হওয়ার মানে হচ্ছে এর তিন বছর পর বাংলাদেশ ইবিএভুক্ত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে সাধারণ জিএসপিভুক্ত দেশ হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়মিত তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো বাংলাদেশকে জানিয়েছে। এ পর্যন্ত দুটি পর্যবেক্ষণ মিশন বাংলাদেশ সফর করেছে। একটি ২০১৯ সালের অক্টোবরে এবং আরেকটি ২০২২ সালের মার্চে। এই সফরের সময় ইইউ-এর প্রতিনিধিরা আন্তর্জাতিক শ্রম আইন ও মানবাধিকার বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে।

মানবাধিকার নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগের বিষয়ে সীমিত উন্নতি সাধিত হয়েছে। ২০২১ ও ২০২২ সালে নির্যাতন, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও গুমের ক্ষেত্রে পূর্ণ তদন্ত করে দায়ীদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে সরকারের ব্যর্থতার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশন গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট একটি প্রস্তাবনার বিষয়ে যৌথ মোশন গ্রহণ করেছে।

ভবিষ্যতের যা করতে হবে সে বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রম অধিকারের উদ্বেগের বিষয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, শ্রম অধিকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে আইএলও এর রোড ম্যাপ অনুযায়ী অর্জিত অগ্রগতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জানাতে হবে।

ছবি

ঈদুল আজহা সামনে রেখে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি ২১ মে থেকে

ছবি

এপ্রিল মাসে অর্থনীতির গতি কমেছে, পিএমআই সূচক নামলো ৮ দশমিক ৮ পয়েন্টে

অনিবন্ধিত ও মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার

বাংলাদেশ জুড়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের টেকসই নানা উদ্যোগ

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করলেন এডিবি প্রেসিডেন্ট

মূল্যস্ফীতি ৪ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব: বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর

ছবি

কর প্রশাসন আধুনিকায়নে এডিবির সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থ উপদেষ্টার

বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ২ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ

ছবি

২০৩০ সালে চালু হবে বে টার্মিনাল, কর্মসংস্থান লাখ মানুষের

ছবি

চলতি অর্থবছরের সর্বনিম্ন রপ্তানি আয় এপ্রিলে

ছবি

গ্লাস শিল্পে কাঁচামাল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০৩০ সাল পর্যন্ত মওকুফ

বিজিএমইএ নির্বাচন: সম্মিলিত পরিষদের ৩৫ সদস্যের প্যানেল ঘোষণা

ছবি

মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মুনাফা ৩৩০০ কোটি টাকা, যা ব্র্যাক, সিটি ও পূবালী ব্যাংকের চেয়েও বেশি

দ্বিতীয় দিনেও আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতা হয়নি

ছবি

ডেনিম এক্সপো শুরু হচ্ছে ১২ মে

যুদ্ধের প্রভাবে সূচক পড়েছে ভারতের শেয়ারবাজারে, রুপিরও দরপতন

একনেকে ৩৭৫৬ কোটি টাকার ৯ প্রকল্প অনুমোদন

ছবি

রাজশাহীতে দেড় হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্য

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় ঢাকার শেয়ারবাজারে বড় ধস

ছবি

পুঁজিবাজার নিয়ে বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার হবে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা

ছবি

ফের পতন শেয়ারবাজারে, সূচকের অবস্থান ৪ হাজার ৯৫১ পয়েন্টে

চার খাতে এডিবির কাছে সহযোগিতা চাইলেন অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

বাংলাদেশকে প্রায় ৪০ কোটি ইউরো ঋণ ও অনুদান দিচ্ছে ইআইবি এবং ইইউ

ছবি

এপ্রিলে তৈরি পোশাকে রপ্তানি আয় ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার

ছবি

চট করে আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করব না: অর্থ উপদেষ্টা

বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন শেয়ারবাজারে

ছবি

বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হলো সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডিকে

বিনিয়োগ নিয়ে কাজ করা ছয় সংস্থা একীভূত করার উদ্যোগে কমিটি গঠন

ছবি

মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ২০ ব্যাংকের

রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংকে অভিন্ন পদোন্নতি নীতিমালা

ছবি

আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন ডিএসইতে, সূচক বেড়েছে ৮ পয়েন্ট

ছবি

ঋণের দুই কিস্তি ছাড়ে ফের আলোচনায় বসছে আইএমএফ

ছবি

আইএমএফ ঋণ নিয়ে এডিবির জিজ্ঞাসা, আশ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ

ছবি

উদ্যোক্তাদের সুবিধায় বিনিয়োগ সুবিধা নিয়ে এলো জাতিক ক্যাপিটাল

tab

অর্থ-বাণিজ্য

ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিবেদন বাংলাদেশের জন্য ‘সতর্কবার্তা’

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশের শ্রম ও মানবাধিকার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় কমিশন। এই প্রতিবেদনকে ‘সতর্ক বার্তা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ‘ইউরোপীয় কমিশনের উদ্বেগের বিষয়গুলো বাংলাদেশের গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।’

ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ বর্তমানে ইবিএ (এভরিথিং বাট আর্মস) সুবিধা পায়। এর অর্থ হচ্ছে, অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছাড়া রপ্তানিযোগ্য সব পণ্যের ইউরোপের বাজারে শুল্কমুক্ত ও কোটা-মুক্ত প্রবেশাধিকার। এই সুবিধার আওতায় বর্তমানে ৪৭টি দেশ রয়েছে। এই দেশগুলোকে ইউরোপে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নির্ধারিত ১২ শতাংশ শুল্ক দিতে হয় না।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটার মানে এটা নয় যে তারা ইবিএ থেকে উইথ-ড্র করবে সেইটা না, তাদের কিছু কনসার্ন আছে। সুতরাং সেদিক থেকে অবশ্যই এটা আমাদের সিরিয়াসলি নেয়া উচিত।’

গত ২১ নভেম্বর ইউরোপীয় কমিশন জিএসপি নিয়ে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনের সাথে হাই রিপ্রেজেনটেটিভ অব দ্য ইউনিয়ন ফর ফরেইন অ্যাফেয়ার্স এন্ড সিকিউরিটি পলিসি’র সঙ্গে যৌথভাবে করা একটি স্টাফ ওয়ার্কিং ডকুমেন্টসও রয়েছে। জিএসপি প্লাসভুক্ত ৯টি দেশের মধ্যে প্রত্যেকটির জন্য এবং ইবিএভুক্ত শুধু তিনটি দেশের জন্য একটি ডকুমেন্টস তৈরি করা হয়েছে।

ইবিএভুক্ত এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং কম্বোডিয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি এই তিনটি দেশের সঙ্গে তাদের ‘কর্মকান্ড বাড়িয়েছে’ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এসব দেশের সঙ্গে যেসব ক্ষেত্রে ‘কর্মকান্ড বাড়ানো’ হয়েছে তার মধ্যে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু রয়েছে যা জাতিসংঘের মূল নীতি ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিবেদন ও পরামর্শের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এতে ইবিএভুক্ত দেশগুলোতে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও কাউন্সিল, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা, সুশীল সমাজ ও ট্রেড ইউনিয়নের বিভিন্ন পরামর্শ বাস্তবায়নের অবস্থা নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

বর্তমানে থাকা জিএসপি নিয়মকানুনের মেয়াদ চলতি বছরের শেষদিকে শেষ হয়ে যাবে। নতুন জিএসপি নিয়মকানুন গ্রহণের আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এই সময়ে বর্তমান নিয়মকানুনের মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এই মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়ার শেষ ধাপের কাজ করছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং কাউন্সিল।

জিএসপি হচ্ছে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ইউরোপের বাজারে রপ্তানি সহায়তা দেয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য নীতি। এর মাধ্যমে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশগুলোকে ইউরোপের বাজারে পণ্য আমদানি-রপ্তানির শুল্ক মওকুফ বা কমানো হয়। বর্তমানে বিশ্বের ৬৫টি দেশ এই সুবিধা ভোগ করছে। তবে ইউরোপের বাজারে এই সুবিধা পাওয়ার জন্য মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, পরিবেশ ও জলবায়ু এবং সুশাসনের বিষয়ে কিছু শর্ত পালন করতে হয়।

ইউরোপের বাজারে বিভিন্ন দেশের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের তিনটি ভাগ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড জিএসপি বা সাধারণ জিএসপি। নিম্ন এবং নিম্নমধ্যবিত্ত দেশগুলোকে সাধারণ জিএসপি সুবিধা দেয়া হয়। এর আওতাভুক্ত দেশগুলোকে ইউরোপের বাজারে রপ্তানিকৃত পণ্যের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ পণ্যের শুল্ক পুরোপুরি বা আংশিক প্রত্যাহার করা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপি সুবিধাভুক্ত দেশের সংখ্যা ১০টি।

টেকসই উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয় জিএসপি প্লাস এর আওতায়। এর আওতায় নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত দেশগুলোকে শূন্য শতাংশ শুল্কের আওতায় আনা হয়। তবে এর জন্য জিএসপি প্লাসভুক্ত দেশগুলোকে মানবাধিকার, শ্রম অধিকার, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সুশাসন সংক্রান্ত ২৭টি আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই করতে হয় এবং সেগুলোকে বাস্তবায়ন করতে হয়। জিএসপি প্লাসভুক্ত দেশ হতে হলে এর জন্য আবেদন করতে হয়। বর্তমানে জিএসপি প্লাস সুবিধা ভোগকারী দেশের সংখ্যা ৮।

একটা দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার তিন বছর পর নিয়মানুযায়ী সেটি সাধারণ জিএসপি সুবিধার আওতায় পড়বে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাধারণভাবেই ২০২৯ সালের পর আর ইবিএ সুবিধা পাবে না। এর পর জিএসপির আওতায় আসবে দেশটি। তবে বাংলাদেশ তখন জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার আবেদন করতে পারবে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপে রপ্তানির ক্ষেত্রে ইবিএভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী দেশ। গত কয়েক দশকে এই সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়ন ঘটিয়েছে।

বাংলাদেশের রপ্তানি মূলত তৈরি পোশাক শিল্প নির্ভর। ২০২২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে মোট রপ্তানির ৯০ শতাংশ বাংলাদেশ থেকে হয়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে ২২,৬৭২ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

ইউরোপে বাংলাদেশের সব রপ্তানিই ইবিএ সুবিধার আওতায় হয়ে থাকে। ২০২০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত কোভিড মহামারী সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অন্য ইবিএভুক্ত দেশের তুলনায় ইতিবাচক ছিল। ২০১৮ ও ২০২১ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার সব শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে দেশটি এই তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হওয়ার মানে হচ্ছে এর তিন বছর পর বাংলাদেশ ইবিএভুক্ত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে সাধারণ জিএসপিভুক্ত দেশ হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিয়মিত তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো বাংলাদেশকে জানিয়েছে। এ পর্যন্ত দুটি পর্যবেক্ষণ মিশন বাংলাদেশ সফর করেছে। একটি ২০১৯ সালের অক্টোবরে এবং আরেকটি ২০২২ সালের মার্চে। এই সফরের সময় ইইউ-এর প্রতিনিধিরা আন্তর্জাতিক শ্রম আইন ও মানবাধিকার বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছে।

মানবাধিকার নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগের বিষয়ে সীমিত উন্নতি সাধিত হয়েছে। ২০২১ ও ২০২২ সালে নির্যাতন, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও গুমের ক্ষেত্রে পূর্ণ তদন্ত করে দায়ীদের ন্যায়বিচারের আওতায় আনতে সরকারের ব্যর্থতার বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশন গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে। ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট একটি প্রস্তাবনার বিষয়ে যৌথ মোশন গ্রহণ করেছে।

ভবিষ্যতের যা করতে হবে সে বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রম অধিকারের উদ্বেগের বিষয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, শ্রম অধিকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে আইএলও এর রোড ম্যাপ অনুযায়ী অর্জিত অগ্রগতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জানাতে হবে।

back to top