alt

অর্থ-বাণিজ্য

# অর্থপাচার হলে ফেরত আনা কঠিন : মাসুদ বিশ্বাস # বিএফআইইউর তথ্যে অর্থ পাচারের মামলা ৫৯টি: মাসুদ বিশ্বাস # এস আলম ও সাবেক এক মন্ত্রীর বিষয়ে তদন্ত চলছে

অর্থপাচারের ৮০ শতাংশই ব্যাংকিং চ্যানেলে : বিএফআইইউ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

অর্থচারেরর ৮০ শতাংশই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। এলসির মাধ্যমে এই অর্থপাচার থাকে বলে মন্তব্য করেছেন বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস। তিনি বলেন ব্যাংক যদি এটি বন্ধে সহযোগিতা না করে তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। তবে কী পরিমাণ অর্থপাচার হযেছে তা জানাবেন না তারা, কারণ এটা প্রকাশ করা যাবে না বলে তাদের অভিমত।

গতকাল অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের কেন্দ্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস।

তিনি বলেন, টাকা পাচার হয়ে গেলে তা ফেরত আনা কঠিন। কারণ এর সঙ্গে অনেক পক্ষ যুক্ত থাকে। তবে এ পর্যন্ত সিঙ্গাপুর থেকে আরাফাত রহমান কোকোর ২০ লাখ ৪১ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার ফেরত আনা হয়েছিল। এছাড়া আর কোন অর্থ ফেরত আনা যায়নি।

দেশের আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) ও সন্দেহজনক কার্যক্রম ব্যাপকহারে বেড়েছে। গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে ১৪ হাজার ১০৬টি। এক বছরে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৬৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ বা ৫ হাজার ৫৩৫টি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৫৭১টি এবং ২০২০-২১ ছিল ৫ হাজার ২৮০টি।

এক প্রশ্নের উত্তরে বিএফআইইউর প্রধান বলেন, বিএফআইইউর তথ্যে ভিত্তিতে অর্থ পাচারের মামলা হয়েছে ৫৯টি। এর মধ্যে দুদক মামলা করেছে ৪৭টি, সিআইডি ১০টি এবং এনবিআরের বিশেষ সেল ২টি। এগুলো এখনো এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

অন্য আরেক প্রশ্নে এস আলমের গ্রুপের অর্থপাচার নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগের বিষয়ে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনুসন্ধান চলছে।

সাবেক এক মন্ত্রীর বিদেশে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদের উৎস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করেন আরেক সাংবাদিক। এর উত্তরে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, “বড় দুটি ঘটনার এটি একটি। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও আমরা যোগাযোগ করছি। আমাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, বিএফআইইউ তার কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতি বছর বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। এ বছরের প্রতিবেদনে পূর্বের বছরের ন্যায় বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি হুন্ডি, অবৈধ গেমিং/বেটিং, ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং ও ফরেঞ্জ ট্রেডিং প্রতিরোধে বিএফআইইউ সোচ্চার ছিল।

মাসুদ বিশ্বাস বলেন, বিএফআইইউ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩৩টি আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থায় প্রেরণ করে যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ৫৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি।

তিনি বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারি অন্যান্য সংস্থার সাথে ১,০৭১টি তথ্য বিনিময় করেছে যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ২৮.৫৭ শতাংশ বেশি। বিগত অর্থবছরে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদারকরণের ফলে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ৫টি দেশকে পিছনে ফেলে র‌্যাংকিং ৪১ নম্বর দেশ হতে ৪৬ নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে।

এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এমন লেনদেন ও কার্যক্রম হয়েছিল ৩ হাজার ৬৭৫টি। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এমন লেনদেন ও কার্যক্রম হয়েছিল ৩ হাজার ৫৭৩টি।

অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের কেন্দ্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।

তিনি জানান, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা ও সহযোগিতার জন্য ১০ দেশের সঙ্গে এমওইউর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সব সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) অপরাধ নয়। লেনদেন সন্দেহজনক হলে তদন্ত করি। এরপর যদি কোনো অপরাধের তথ্য প্রমাণ মিলে তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই।

বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরো অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৮০৯টি সন্দেহজনক লেনদেনের রিপোর্ট জমা দিয়েছে ব্যাংকগুলো। তার আগের অর্থবছরে ৭ হাজার ৯৯৯টি রিপোর্ট জমা দিয়েছিল ব্যাংকগুলো। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রিপোর্ট জমা দেয় ১২১টি। আর এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ৯০০ রিপোর্ট জমা দিয়েছে।

এস আলম গ্রুপ ও সাবেক এক মন্ত্রীর অর্থপাচার

এস আলমের অর্থচপাচার অর্থপাচার নিয়ে জানতে চাইলে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, “সর্বশেষ আদালত থেকে যে রায় এসেছে, সে অনুযায়ী আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে। আমরা সে কাজগুলো করছি।”

২০২৩ সালের ৪ অগাস্ট ইংরেজি দৈনিকে ‘এস আলম’স আলাদিন‘স ল্যাম্প’ এস আলমের আলাদিনের চেরাগ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দুদিন পর ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন একজন আইনজীবী।

পত্রিকায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে ‘কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলেছেন। যদিও বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো অনুমতি তিনি নেননি।

ইংরেজি দৈনিকে লিখেছে, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বাইরে বিনিয়োগের জন্য এ পর্যন্ত ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিলেও চট্টগ্রামভিত্তিক বৃহৎ এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম সেই তালিকায় নেই। তারপরও, গত এক দশকে সিঙ্গাপুরে এস আলম অন্তত দুটি হোটেল, দুটি বাড়ি, একটি বাণিজ্যিক স্পেস এবং অন্যান্য সম্পদ কিনেছেন। এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপায়ে কাগজপত্র থেকে তার নাম বাদ রাখা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নথির বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশ থেকে ৪০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার বিদেশে বিনিয়োগের জন্য নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বৈধ উপায়ে সিঙ্গাপুরে এক লাখ ৭ হাজার ডলার পাঠিয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানও এস আলমের মালিকানাধীন নয়। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ সে সময় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেয়। এস আলমের অর্থ পাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান করে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্টদের দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয় সেই আদেশে।

আর এই অর্থ পাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যর্থতা’ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

সর্বশেষ গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টের ওই রুল খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বা বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে নিজস্ব উদ্যোগে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে পারবে বলে রায়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।

আদালতের ওই আদেশের আলোকেই বিএফআইইউ এস আলমের বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মাসুদ বিশ্বাস।

সাবেক এক মন্ত্রীর বিদেশে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদের উৎস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করেন আরেক সাংবাদিক। এর উত্তরে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, “বড় দুটি ঘটনার এটি একটি। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও আমরা যোগাযোগ করছি। আমাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”

তবে অর্থ একবার পাচার হয়ে গেলে তা ফেরানো যে কঠিন, সেই বাস্তবতা তুলে ধরে বিএফআইইউ প্রধান বলেন, “আমরা নতুন দশটি রাষ্ট্রের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) করার উদ্যোগ নিয়েছি। অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা চলমান রয়েছে। আমরা অর্থপাচার বন্ধে বেশি জোর দিচ্ছি।”

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত ২৬ ডিসেম্বর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে, বিদেশে এক মন্ত্রীর দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে।

ওই সম্পদের তথ্য ওই মন্ত্রী তার নির্বাচনী হলফনামায় দেননি। সংবাদ সম্মেলনে ওই মন্ত্রীর নাম প্রকাশ করেনি টিআইবি।

পরে সংবাদ মাধ্যমে নাম প্রকাশ করে বলা হয়, তিনি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। ব্রিটেনে তার ও স্ত্রীর নামে ওই পরিমাণ সম্পদ রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএফআইইউ নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম, বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগের পরিচালক সারোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পরিচালক কামাল হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।

ছবি

বাংলাদেশে ওয়ানপ্লাস-এর প্রথম ফ্ল্যাগশিপ স্টোর উদ্বোধন

ছবি

পুষ্টিগ্রাম: বাড়ির আঙিনায় নিরাপদ সবজি চাষে ভাগ্যবদল

ছবি

বাজারে চাঁদাবাজি করলে ডিসিদের ব্যবস্থা নিতে বলেছি : অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

চলতি বছরে সোনার দাম বেড়েছে ২১ শতাংশ, কেনা বন্ধ রেখেছে চীন

ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামছে রিজার্ভ

‘আশা সবাই দেখায়, আসলে আমরা বলির পাঁঠা’,‘চারিদিকের অবস্থা খারাপ’

ছবি

বেক্সিমকো গ্রুপের সম্পদ দেখভালে রিসিভার নিয়োগে উচ্চ আদালতের রুল

ছবি

বন্যা ও অচলাবস্থার কারণে পণ্যবাজারে স্বস্তি দিতে শুল্ক ছাড়

ছবি

ইসলামী ব্যাংকের ঋণের অর্ধেকের বেশি নিয়েছে এস আলম

ছবি

শেয়ারবাজারে ইতিহাস, ৪১০০ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে লিন্ডে বিডি

ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি: আমানতকারীদের স্বার্থে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

ঋণ খেলাপি নিয়ন্ত্রণে তিনটি টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত

ছবি

বড় ঋণ খেলাপিদের সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে ঋণ আদায়ে উদ্যোগ: বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

পোশাক কারখানা খুলে দিতে বিজিএমইএ’র সিদ্ধান্ত, যৌথ অভিযান শুরু

ছবি

স্পট মার্কেট থেকে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন

ছবি

রেজার ক্যাপিটালের ‘সিরিজ এ’ বিনিয়োগ পেল আইফার্মার

ছবি

বিকাশে আইডিএলসি লোনের কিস্তি পরিশোধের সুযোগ

ছবি

সরানো হল সালমান এফ রহমানকে, আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহমুদ হোসেন

ছবি

সূচকের ওঠানামায় পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে

ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বাড়লো ৬৬ হাজার কোটি টাকা

ছবি

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা আল আরাফাহ ও কমার্স ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন

ছবি

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ রেকর্ড পরিমাণে, জুন শেষে ছাড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার কোটি

ছবি

পর্ষদ পুনর্গঠন করা ব্যাংকের সংকট নিয়ে বসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

বিএসইসির কমিশনার হলেন ফারজানা লালারুখ

ছবি

ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গুঁড়া দুধ ছাড়া সব পণ্য আমদানির অনুমতি

ছবি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন, নিয়োগ পেলেন সাত স্বতন্ত্র পরিচালক

ছবি

সূচকের উত্থানে পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন

ছবি

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে সিআইডির অনুসন্ধান

ছবি

সেপ্টেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম কমালো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

ছবি

এক্সিম ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন

ছবি

ডিমের দাম বেড়েছে, কমেছে সবজির

ছবি

বাজারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন স্যামসাংয়ের নতুন রেফ্রিজারেটর

ছবি

দেশের বেকারত্বের হার বৃদ্ধি: বিবিএসের জরিপ

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট মুনাফা ১৫,১০০ কোটি টাকা

ছবি

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সচিব আকিজ উদ্দিনের ব্যাংক হিসাব জব্দ

ছবি

সালমান এফ রহমান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ

tab

অর্থ-বাণিজ্য

# অর্থপাচার হলে ফেরত আনা কঠিন : মাসুদ বিশ্বাস # বিএফআইইউর তথ্যে অর্থ পাচারের মামলা ৫৯টি: মাসুদ বিশ্বাস # এস আলম ও সাবেক এক মন্ত্রীর বিষয়ে তদন্ত চলছে

অর্থপাচারের ৮০ শতাংশই ব্যাংকিং চ্যানেলে : বিএফআইইউ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

অর্থচারেরর ৮০ শতাংশই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। এলসির মাধ্যমে এই অর্থপাচার থাকে বলে মন্তব্য করেছেন বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস। তিনি বলেন ব্যাংক যদি এটি বন্ধে সহযোগিতা না করে তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। তবে কী পরিমাণ অর্থপাচার হযেছে তা জানাবেন না তারা, কারণ এটা প্রকাশ করা যাবে না বলে তাদের অভিমত।

গতকাল অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের কেন্দ্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস।

তিনি বলেন, টাকা পাচার হয়ে গেলে তা ফেরত আনা কঠিন। কারণ এর সঙ্গে অনেক পক্ষ যুক্ত থাকে। তবে এ পর্যন্ত সিঙ্গাপুর থেকে আরাফাত রহমান কোকোর ২০ লাখ ৪১ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার ফেরত আনা হয়েছিল। এছাড়া আর কোন অর্থ ফেরত আনা যায়নি।

দেশের আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) ও সন্দেহজনক কার্যক্রম ব্যাপকহারে বেড়েছে। গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে ১৪ হাজার ১০৬টি। এক বছরে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৬৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ বা ৫ হাজার ৫৩৫টি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৫৭১টি এবং ২০২০-২১ ছিল ৫ হাজার ২৮০টি।

এক প্রশ্নের উত্তরে বিএফআইইউর প্রধান বলেন, বিএফআইইউর তথ্যে ভিত্তিতে অর্থ পাচারের মামলা হয়েছে ৫৯টি। এর মধ্যে দুদক মামলা করেছে ৪৭টি, সিআইডি ১০টি এবং এনবিআরের বিশেষ সেল ২টি। এগুলো এখনো এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

অন্য আরেক প্রশ্নে এস আলমের গ্রুপের অর্থপাচার নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগের বিষয়ে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনুসন্ধান চলছে।

সাবেক এক মন্ত্রীর বিদেশে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদের উৎস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করেন আরেক সাংবাদিক। এর উত্তরে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, “বড় দুটি ঘটনার এটি একটি। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও আমরা যোগাযোগ করছি। আমাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, বিএফআইইউ তার কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতি বছর বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। এ বছরের প্রতিবেদনে পূর্বের বছরের ন্যায় বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি হুন্ডি, অবৈধ গেমিং/বেটিং, ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং ও ফরেঞ্জ ট্রেডিং প্রতিরোধে বিএফআইইউ সোচ্চার ছিল।

মাসুদ বিশ্বাস বলেন, বিএফআইইউ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩৩টি আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থায় প্রেরণ করে যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ৫৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি।

তিনি বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারি অন্যান্য সংস্থার সাথে ১,০৭১টি তথ্য বিনিময় করেছে যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ২৮.৫৭ শতাংশ বেশি। বিগত অর্থবছরে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদারকরণের ফলে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ৫টি দেশকে পিছনে ফেলে র‌্যাংকিং ৪১ নম্বর দেশ হতে ৪৬ নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে।

এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এমন লেনদেন ও কার্যক্রম হয়েছিল ৩ হাজার ৬৭৫টি। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এমন লেনদেন ও কার্যক্রম হয়েছিল ৩ হাজার ৫৭৩টি।

অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধের কেন্দ্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।

তিনি জানান, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা ও সহযোগিতার জন্য ১০ দেশের সঙ্গে এমওইউর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সব সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) অপরাধ নয়। লেনদেন সন্দেহজনক হলে তদন্ত করি। এরপর যদি কোনো অপরাধের তথ্য প্রমাণ মিলে তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই।

বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরো অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৮০৯টি সন্দেহজনক লেনদেনের রিপোর্ট জমা দিয়েছে ব্যাংকগুলো। তার আগের অর্থবছরে ৭ হাজার ৯৯৯টি রিপোর্ট জমা দিয়েছিল ব্যাংকগুলো। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রিপোর্ট জমা দেয় ১২১টি। আর এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ৯০০ রিপোর্ট জমা দিয়েছে।

এস আলম গ্রুপ ও সাবেক এক মন্ত্রীর অর্থপাচার

এস আলমের অর্থচপাচার অর্থপাচার নিয়ে জানতে চাইলে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, “সর্বশেষ আদালত থেকে যে রায় এসেছে, সে অনুযায়ী আমাদের কার্যক্রম চলমান আছে। আমরা সে কাজগুলো করছি।”

২০২৩ সালের ৪ অগাস্ট ইংরেজি দৈনিকে ‘এস আলম’স আলাদিন‘স ল্যাম্প’ এস আলমের আলাদিনের চেরাগ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দুদিন পর ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন একজন আইনজীবী।

পত্রিকায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে ‘কমপক্ষে এক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলেছেন। যদিও বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো অনুমতি তিনি নেননি।

ইংরেজি দৈনিকে লিখেছে, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বাইরে বিনিয়োগের জন্য এ পর্যন্ত ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিলেও চট্টগ্রামভিত্তিক বৃহৎ এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম সেই তালিকায় নেই। তারপরও, গত এক দশকে সিঙ্গাপুরে এস আলম অন্তত দুটি হোটেল, দুটি বাড়ি, একটি বাণিজ্যিক স্পেস এবং অন্যান্য সম্পদ কিনেছেন। এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপায়ে কাগজপত্র থেকে তার নাম বাদ রাখা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নথির বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশ থেকে ৪০ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার বিদেশে বিনিয়োগের জন্য নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বৈধ উপায়ে সিঙ্গাপুরে এক লাখ ৭ হাজার ডলার পাঠিয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানও এস আলমের মালিকানাধীন নয়। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাই কোর্ট বেঞ্চ সে সময় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেয়। এস আলমের অর্থ পাচারের অভিযোগের অনুসন্ধান করে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্টদের দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয় সেই আদেশে।

আর এই অর্থ পাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যর্থতা’ কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।

সর্বশেষ গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টের ওই রুল খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বা বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে নিজস্ব উদ্যোগে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে পারবে বলে রায়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।

আদালতের ওই আদেশের আলোকেই বিএফআইইউ এস আলমের বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মাসুদ বিশ্বাস।

সাবেক এক মন্ত্রীর বিদেশে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদের উৎস নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করেন আরেক সাংবাদিক। এর উত্তরে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, “বড় দুটি ঘটনার এটি একটি। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও আমরা যোগাযোগ করছি। আমাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।”

তবে অর্থ একবার পাচার হয়ে গেলে তা ফেরানো যে কঠিন, সেই বাস্তবতা তুলে ধরে বিএফআইইউ প্রধান বলেন, “আমরা নতুন দশটি রাষ্ট্রের সঙ্গে তথ্য বিনিময় করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) করার উদ্যোগ নিয়েছি। অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা চলমান রয়েছে। আমরা অর্থপাচার বন্ধে বেশি জোর দিচ্ছি।”

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত ২৬ ডিসেম্বর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে, বিদেশে এক মন্ত্রীর দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে।

ওই সম্পদের তথ্য ওই মন্ত্রী তার নির্বাচনী হলফনামায় দেননি। সংবাদ সম্মেলনে ওই মন্ত্রীর নাম প্রকাশ করেনি টিআইবি।

পরে সংবাদ মাধ্যমে নাম প্রকাশ করে বলা হয়, তিনি সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। ব্রিটেনে তার ও স্ত্রীর নামে ওই পরিমাণ সম্পদ রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএফআইইউ নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম, বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগের পরিচালক সারোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পরিচালক কামাল হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।

back to top