মেলা থেকে বই কিনলে ২৫ শতাংশ, বিকাশ পেমেন্টে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ছাড়
যানজটে নাকাল রাজধানীবাসীর কাছে উত্তরা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া এখন আর কোনো বিষয় না। কারণ মেট্রোরেল। শুধুমাত্র যাতায়াতের কারণে বইমেলায় যাওয়া হতো না বলছিলেন আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনে কাজ করা ফারহান নেওয়াজ। এখন অফিস শেষে আগারগাঁও থেকে মেট্রোতে চাপলেই চোখের পলকে চলে আসেন বই মেলায়। এই কারণে এবার প্রায়ই আসা হচ্ছে বইমেলায়, জানান ফারহান। সবটাই মেট্রোরেলের কল্যাণে হচ্ছে বলতে ভুল্লেন না।
গতকাল ছিল কর্মব্যস্ত দিন। লোকজনের আনাগোনা কিছুটা কম হবে ভেবেই মেলায় এসেছেন ফারহানের মতো আরো অনেকে। সুমি আক্তার বলেন, নিরিবিলি পরিবেশে বই কিনতে সুবিধা। আগামীকাল একুশে ফেব্রুয়ারি আমার তো মনে হয় কাল ঢুকতেই পারবো না। এমনটা ভেবেই গতকাল অফিস শেষে মেলায় এসেছিলেন সুমি সহকর্মীদের সাথে। উপন্যাস, ইতিহাস ও রাজনীতি বিষয়ের বই কিনবেন বলে জানালেন তারা।
মিরপুর থেকে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে মেলায় এসেছেন শামসুজ্জোহা সুজন। তিনি ছেলেদের জন্য জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন ও মুহম্মদ আসাদুজ্জামানের সম্পাদিত কিশোর রূপাবলী বই খুঁজছিলেন বিশ্ব সাহিত্য ভবনে ৩২ নম্বর প্যাভিলিয়নে। বইয়ের দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো কিনি নাই বই। তবে এখন তো চাল, ডাল পিঁয়াজ, মরিচ সব কিছুর দামই বাড়তি। বইয়ের দাম তো বাড়ারই কথা’।
বইয়ের দাম নিয়ে কথাপ্রকাশের বিক্রয় প্রতিনিধি রিয়াজ হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম বেড়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাগজের দাম বেড়েছে তাই স্বাভাবিকভাবে বইয়ের দাম তো একটু বেশি হবেই। তবে খুব বেশি যে বেড়েছে সেটি মনে হয় না। বইয়ের দাম কিন্তু মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মাঝেই আছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাঁওলী সামরিজা বলেন, ‘বই ত আমরা কিনবোই। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য একটা ছাড় থাকলে খুব ভালো হয়। অনেকেই হোস্টেলে থাকে। তারা কিন্তু খরচ বাঁচিয়ে বই কেনে। তা ছাড়া একটা ছাড় বা অফার শিক্ষার্থীদের বই পড়ায় ও সংগ্রহে উৎসাহ দিতে খুব ভালো কাজে দেবে বলে মনে হয়’।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামি আহমেদ বলেন, ‘বই প্রকাশে আনুষঙ্গিক সব উপাদানের দাম বেড়েছে এটা ঠিক। তবে এই দাম বৃদ্ধির বিষয়টা প্রকাশক এবং লেখক নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে নিলে আমাদের মতো যারা শিক্ষার্থী পাঠক আছি তাদের জন্য ভালো হতো।’
‘তারপরও এটা যেহেতু বই-ই তাই দাম বাড়লেও কিছু করার নেই। তবে দাম অতিরিক্ত মনে হয়নি, সহনীয় পর্যায়েই রাখা হয়েছে’ বলে জানান তারা দুজনই।
অন্যান্যবার বইয়ের দাম কাগজ ইত্যাদি নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও এবার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় নাই বলে সংবাদকে জানান ছায়াবিথী প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন।
শাহাদাত বলেন, দাম বাড়লেও তা পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ রয়েছে কিন্তু পাঠকের হাতে। কারণ অমর একুশে বইমেলা থেকে বই কিনলে পাঠকরা প্রতি বইয়ে ২৫ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন। এ ছাড়া মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান বিকাশ পেমেন্টে থাকছে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ছাড়।
ফাতিমা বুলবুল, অন্বেষা প্রকাশনীর সিইও, তিনি বলেন, ‘গতবছরের তুলনায় কাগজের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। সেই অনুযায়ী আমরা দাম বাড়াইনি। যে পরিমাণ বাড়ালে ন্যূনতম লাভ করা যায় বইয়ের দাম আমরা তার চেয়ে কম রাখার চেষ্টা করেছি। আমাদের প্রকাশনীতে ১২০ টাকা দিয়েও বই পাওয়া যায়। এরচেয়ে কম দামে আর কি হতে পারে।
শিক্ষার্থীদের বই কেনা নিয়ে বুলবুল বলেন, ‘শুনতে খারাপ লাগবে, তারপরও বলছি- আমাদের শিক্ষার্থীরা অনায়াসে ২০০ টাকায় বার্গার, কফি খেয়ে ফেলেন। কিন্তু বইয়ের দাম দুই শ টাকা দেখলে তারা সেটি কিনতে চান না। তবে এবার কিন্তু বই কিনছে শিক্ষার্থীরা।
মৃদুল প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী বলেন, ‘গত বছরের শুরুতে একটা কাগজের রিম ছিল ১৬০০-১৭০০ টাকা। একই কাগজের দাম এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২০০-৩৮০০ টাকা। সে অনুযায়ী দাম না বাড়িয়ে গতবছর যে বইয়ের দাম ছিল ১৫০ টাকা এবছর সেই বইয়ের দাম রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা।’
কাগজের দামের সঙ্গে বইয়ের দামের ব্যালান্স করা হয় কীভাবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানই কিন্তু লস দিয়ে ব্যবসা করে না। প্রকাশনা মালিকের একটা লাভের জায়গা থাকে। আর লেখক একটা রয়্যালটি পায়। লাভ এবং রয়্যালটি থেকে পাঁচ শতাংশ করে ছাড় দিয়েই এই ব্যালান্সটা আসলে করা হয়।’
একই কথা বলেছেন ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক জহিরুল আবেদীন জুয়েল বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এই বছর বইয়ের কাগজের দাম না বাড়লেও বই প্রকাশে আনুষঙ্গিক সব উপাদানের দাম বেড়েছে। তারপরও আমরা এই বছর নতুন করে কোন বইয়ের দাম বাড়াইনি। গত বছর যা ছিল এ বছরও দাম সেটাই রাখা হয়েছে। এ বছরও দাম বাড়ালে পাঠকদের কাছে সেটা অসহনীয় হয়ে যেতো।’
এই স্টলে তরুণ লেখক মুবাশশিরা তাসনিম মৌমিতার ‘ছায়াঘর’ বইটি কিনতে আসেন চিকিৎসক নাফিসা এখলাস। এই বই নিয়ে তিনি বলেন, মেয়েটি মেডিকেল প্রথম বর্ষের ছাত্রি। একই তো বাচ্চা মেয়ে তার ওপর চিকিৎসক - কেমন লিখেছে তা জানতেই মূলত বইটা কিনলাম। আমার কাছে তো বইয়ের দাম কমই মনে হচ্ছে’।
তবে প্রায় প্রকাশকই বলেন বিভিন্ন উপাদানের দাম বাড়ানো হলেও তারা এ বছর নতুন করে বইয়ের দাম বাড়াননি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মেলা থেকে বই কিনলে ২৫ শতাংশ, বিকাশ পেমেন্টে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ছাড়
মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
যানজটে নাকাল রাজধানীবাসীর কাছে উত্তরা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া এখন আর কোনো বিষয় না। কারণ মেট্রোরেল। শুধুমাত্র যাতায়াতের কারণে বইমেলায় যাওয়া হতো না বলছিলেন আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনে কাজ করা ফারহান নেওয়াজ। এখন অফিস শেষে আগারগাঁও থেকে মেট্রোতে চাপলেই চোখের পলকে চলে আসেন বই মেলায়। এই কারণে এবার প্রায়ই আসা হচ্ছে বইমেলায়, জানান ফারহান। সবটাই মেট্রোরেলের কল্যাণে হচ্ছে বলতে ভুল্লেন না।
গতকাল ছিল কর্মব্যস্ত দিন। লোকজনের আনাগোনা কিছুটা কম হবে ভেবেই মেলায় এসেছেন ফারহানের মতো আরো অনেকে। সুমি আক্তার বলেন, নিরিবিলি পরিবেশে বই কিনতে সুবিধা। আগামীকাল একুশে ফেব্রুয়ারি আমার তো মনে হয় কাল ঢুকতেই পারবো না। এমনটা ভেবেই গতকাল অফিস শেষে মেলায় এসেছিলেন সুমি সহকর্মীদের সাথে। উপন্যাস, ইতিহাস ও রাজনীতি বিষয়ের বই কিনবেন বলে জানালেন তারা।
মিরপুর থেকে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে মেলায় এসেছেন শামসুজ্জোহা সুজন। তিনি ছেলেদের জন্য জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন ও মুহম্মদ আসাদুজ্জামানের সম্পাদিত কিশোর রূপাবলী বই খুঁজছিলেন বিশ্ব সাহিত্য ভবনে ৩২ নম্বর প্যাভিলিয়নে। বইয়ের দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো কিনি নাই বই। তবে এখন তো চাল, ডাল পিঁয়াজ, মরিচ সব কিছুর দামই বাড়তি। বইয়ের দাম তো বাড়ারই কথা’।
বইয়ের দাম নিয়ে কথাপ্রকাশের বিক্রয় প্রতিনিধি রিয়াজ হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দাম বেড়েছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাগজের দাম বেড়েছে তাই স্বাভাবিকভাবে বইয়ের দাম তো একটু বেশি হবেই। তবে খুব বেশি যে বেড়েছে সেটি মনে হয় না। বইয়ের দাম কিন্তু মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মাঝেই আছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাঁওলী সামরিজা বলেন, ‘বই ত আমরা কিনবোই। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য একটা ছাড় থাকলে খুব ভালো হয়। অনেকেই হোস্টেলে থাকে। তারা কিন্তু খরচ বাঁচিয়ে বই কেনে। তা ছাড়া একটা ছাড় বা অফার শিক্ষার্থীদের বই পড়ায় ও সংগ্রহে উৎসাহ দিতে খুব ভালো কাজে দেবে বলে মনে হয়’।
একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামি আহমেদ বলেন, ‘বই প্রকাশে আনুষঙ্গিক সব উপাদানের দাম বেড়েছে এটা ঠিক। তবে এই দাম বৃদ্ধির বিষয়টা প্রকাশক এবং লেখক নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে নিলে আমাদের মতো যারা শিক্ষার্থী পাঠক আছি তাদের জন্য ভালো হতো।’
‘তারপরও এটা যেহেতু বই-ই তাই দাম বাড়লেও কিছু করার নেই। তবে দাম অতিরিক্ত মনে হয়নি, সহনীয় পর্যায়েই রাখা হয়েছে’ বলে জানান তারা দুজনই।
অন্যান্যবার বইয়ের দাম কাগজ ইত্যাদি নিয়ে নানা অভিযোগ থাকলেও এবার কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় নাই বলে সংবাদকে জানান ছায়াবিথী প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন।
শাহাদাত বলেন, দাম বাড়লেও তা পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ রয়েছে কিন্তু পাঠকের হাতে। কারণ অমর একুশে বইমেলা থেকে বই কিনলে পাঠকরা প্রতি বইয়ে ২৫ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন। এ ছাড়া মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান বিকাশ পেমেন্টে থাকছে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ছাড়।
ফাতিমা বুলবুল, অন্বেষা প্রকাশনীর সিইও, তিনি বলেন, ‘গতবছরের তুলনায় কাগজের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। সেই অনুযায়ী আমরা দাম বাড়াইনি। যে পরিমাণ বাড়ালে ন্যূনতম লাভ করা যায় বইয়ের দাম আমরা তার চেয়ে কম রাখার চেষ্টা করেছি। আমাদের প্রকাশনীতে ১২০ টাকা দিয়েও বই পাওয়া যায়। এরচেয়ে কম দামে আর কি হতে পারে।
শিক্ষার্থীদের বই কেনা নিয়ে বুলবুল বলেন, ‘শুনতে খারাপ লাগবে, তারপরও বলছি- আমাদের শিক্ষার্থীরা অনায়াসে ২০০ টাকায় বার্গার, কফি খেয়ে ফেলেন। কিন্তু বইয়ের দাম দুই শ টাকা দেখলে তারা সেটি কিনতে চান না। তবে এবার কিন্তু বই কিনছে শিক্ষার্থীরা।
মৃদুল প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী বলেন, ‘গত বছরের শুরুতে একটা কাগজের রিম ছিল ১৬০০-১৭০০ টাকা। একই কাগজের দাম এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২০০-৩৮০০ টাকা। সে অনুযায়ী দাম না বাড়িয়ে গতবছর যে বইয়ের দাম ছিল ১৫০ টাকা এবছর সেই বইয়ের দাম রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ ১৮০ টাকা।’
কাগজের দামের সঙ্গে বইয়ের দামের ব্যালান্স করা হয় কীভাবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানই কিন্তু লস দিয়ে ব্যবসা করে না। প্রকাশনা মালিকের একটা লাভের জায়গা থাকে। আর লেখক একটা রয়্যালটি পায়। লাভ এবং রয়্যালটি থেকে পাঁচ শতাংশ করে ছাড় দিয়েই এই ব্যালান্সটা আসলে করা হয়।’
একই কথা বলেছেন ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক জহিরুল আবেদীন জুয়েল বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এই বছর বইয়ের কাগজের দাম না বাড়লেও বই প্রকাশে আনুষঙ্গিক সব উপাদানের দাম বেড়েছে। তারপরও আমরা এই বছর নতুন করে কোন বইয়ের দাম বাড়াইনি। গত বছর যা ছিল এ বছরও দাম সেটাই রাখা হয়েছে। এ বছরও দাম বাড়ালে পাঠকদের কাছে সেটা অসহনীয় হয়ে যেতো।’
এই স্টলে তরুণ লেখক মুবাশশিরা তাসনিম মৌমিতার ‘ছায়াঘর’ বইটি কিনতে আসেন চিকিৎসক নাফিসা এখলাস। এই বই নিয়ে তিনি বলেন, মেয়েটি মেডিকেল প্রথম বর্ষের ছাত্রি। একই তো বাচ্চা মেয়ে তার ওপর চিকিৎসক - কেমন লিখেছে তা জানতেই মূলত বইটা কিনলাম। আমার কাছে তো বইয়ের দাম কমই মনে হচ্ছে’।
তবে প্রায় প্রকাশকই বলেন বিভিন্ন উপাদানের দাম বাড়ানো হলেও তারা এ বছর নতুন করে বইয়ের দাম বাড়াননি।