alt

একীভূত ব্যাংক : পাঁচটির বাইরে আপাতত আর না

রমজান আলী : সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪

এখন নতুন করে আর কোনো ব্যাংককে একীভূত হওয়ার অনুমতি দিবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সিদ্ধান্ত আগামী তিন বছরের জন্য। এ পর্যন্ত পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া বা আলোচনা শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সোমবার (১৫ এপ্রিল) বলেন, ‘আগামী তিন বছরের মধ্যে আর কোনো ব্যাংকের একীভূত হওয়ার অনুমোদন দিবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। যে পাঁচটি ব্যাংকের একীভূত হওয়ার আলোচনা রয়েছে সেগুলোর কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে আর কোনো ব্যাংকের একীভূত হওয়ার অনুমোদন দেয়া হবে না।’

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংকের সঙ্গে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার জন্য এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিলো। তা নাহলে আগামী বছর থেকে একীভূতকরণে অনেক ব্যাংককে বাধ্য করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। রোজার ঈদের আগে ‘স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যাংক-কোম্পানির একীভূতকরণ সম্পর্কিত নীতিমালা’ জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই প্রক্রিয়াকে একীভূতকরণ বলা হলেও আদতে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংক দুর্বল ব্যাংককে অধিগ্রহণ করবে।

এখন এই প্রক্রিয়ায় কেন বিরতি তার ব্যাখ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকএর মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘ওই পাঁচটি ব্যাংকের নিরীক্ষার জন্য পাঁচটি অডিট ফার্ম নিয়োগ দিতে হবে। এই নিরীক্ষাও সময়ের ব্যাপার। তাই এই পাঁচটি ব্যাংকের সব ধরনের কাজ শেষ হওয়ার পরে অন্য ব্যাংকের একীভূত হতে চাইলে তখন দেয়া যেতে পারে। তবে আপতত কেউ সেচ্ছায় চাইলেও আর একীভূত হওয়ার অনুমোদন দিবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।’

সম্প্রতি বেসরকারি খাতের পদ্মা ও ন্যাশনাল ব্যাংক, এবং রাষ্ট্রীয় খাতের রাকাব, বেসিক ও বিডিবিএল ব্যাংকের অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত বা বিলীন হওয়ার প্রক্রিয়া বা আলোচনা শুরু হয়েছে।

এর মধ্যে শুধু পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের চুক্তি হয়েছে। বাকি চারটির শুধু আলোচনা হয়েছে। এখনও কোনো চুক্তি হয়নি।

ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংক, বিডিবিএলের সঙ্গে সোনালী ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক এবং কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাকাব বা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের একীভূত হওয়ার আলোচনা হয়েছে।

এর মধ্যে কাগজ-কলমে ন্যাশনাল ব্যাংকের ও রাকাবের খেলাপি ২৬ শতাংশ। বাস্তবে আরও বেশি। বেসিকের ৬২ শতাংশ ও বিডিবিএলের ৪৪ শতাংশ খেলাপি রয়েছে।

৪ মার্চ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠকে গভর্নর জানান, চলতি বছরের মধ্যে ৭ থেকে ১০টি দুর্বল ব্যাংককে সবল বা ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে। এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বাকি চারটির একীভূত হওয়ার আলোচনা চলছে।

এই প্রক্রিয়ায় যেগুলো আলোচনায় ছিল, তার মধ্যে একটি এবি ব্যাংক, যার খেলাপি পরিমাণ ১২ শতাংশের মতো। এছাড়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, এবং বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারে বলে আলোচনায় ছিল। এছাড়া গুঞ্জন ছিল বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, গ্লোবাল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক একীভূত হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে একীভূত (মার্জার) করতে একটি রোডম্যাপ ঠিক করার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে এক বছর সময় দিয়ে ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন’ বা পিসিএ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নেয়া হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার, মূলধনের পর্যাপ্ততা, নগদ অর্থের প্রবাহ, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্যকে প্রাধান্য দিয়ে আর্থিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সূচক ঠিক করে দেয়া হয়েছে। সেই সূচকে কাঙ্ক্ষিত মানদ-ের নিচে থাকা ব্যাংকগুলোকে ‘দুর্বল’ শ্রেণীভুক্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ব্যাংক টেনে তোলার শেষ পদক্ষেপ হিসেবে অন্য ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার এই প্রক্রিয়া।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের ৯ শতাংশ। এছাড় অর্থ ঋণ আদালতে ২ লাখ কোটি টাকার অর্থ মামলায় আটকে রয়েছে, যা খেলাপি হিসেবে গণ্য করলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার মতো হবে খেলাপি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘শুধু ব্যাংক একীভূত করেই ব্যাংক খাত ঠিক করা যাবে না। পাশাপাশি বেনামি ঋণ ও যেসব ঋণ খেলাপি দেখানো হচ্ছে না, তাও খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া ‘যেসব ব্যাংক দুর্বল, তার তালিকা করে খারাপ সম্পদগুলো আগে আলাদা করে ফেলতে হবে। এরপর ব্যাংকগুলোকে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার আহ্বান জানালে সেটা ভালো হবে। চাপ দিয়ে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে খারাপ ব্যাংক একীভূত করলে তা ভালো ফল নাও দিতে পারে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবক্ষেত্রে সম-আইন প্রয়োগ শুরু করতে হবে। কাউকে রেখে কাউকে ধরার দিন শেষ হয়ে গেছে। সবার আগে আমানতকারীদের অর্থের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তারপরে একীভূত করতে হবে ব্যাংক।,

বাংলাদেশ ব্যাংক যে একীভূতকরণ নীতমালা জারি করেছে তাতে উল্লেখিত বিষয়ের সঙ্গে চারটি সংযুক্তি দেয়া হয়েছে। দুর্বল ব্যাংক অধিগ্রহণ করলে খেলাপি ঋণ ও পুঞ্জীভূত লোকসানের পুরোটা বহন করতে হবে গ্রহীতা ব্যাংককে। তবে এ জন্য নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে (প্রভিশন) বিশেষ ছাড় পাবে তারা। এর বাইরে সরকারি বিশেষ নীতি সহায়তাও দেয়া হবে।

নীতিমালার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, ‘অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান এবং একই সঙ্গে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাংকের কার্যক্রম উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা; যাতে করে জনস্বার্থে একীভূত ব্যাংক-কোম্পানি অধিকতর সেবা প্রদান করতে পারে।’

নীতিমালায় বলা হয়েছে নিরীক্ষা এবং আর্থিক ও আইনি কাজ সম্পন্ন করার খরচ বহন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতকারী, পাওনাদার ও শেয়ারহোল্ডারদের দাবি পরিশোধসহ সম্পূর্ণ একত্রীকরণ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা ফার্ম তার নিরীক্ষা এবং আর্থিক ও আইনি কার্যক্রম প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিবে। এসব বিষয়ে তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার অনুমোদন বাতিলও করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে দেশের ৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টির অবস্থা খুবই খারাপ, তার মধ্যে ৯টি ব্যাংক ইতোমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। অন্য ৩টির অবস্থান ইয়েলো জোনে অর্থাৎ রেড জোনের খুব কাছাকাছি রয়েছে বলে সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন থেকে অর্ধ-বার্ষিক আর্থিক কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য ব্যাংকের স্বাস্থ্য সূচক তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগ।

ছবি

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পেছাতে ব্যবসায়ীদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান

ছবি

আড়াইগুণ প্রতিষ্ঠানের দরপতনে বাজার মূলধন কমলো ৩ হাজার কোটি টাকা

ছবি

পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে রোববার ঢাকায় আসছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল

ছবি

বাংলাদেশে ব্লুটুথ হেডফোন ও ডেটা কেবল তৈরির কারখানা করবে চীন

ছবি

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার নিয়ম

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে অপো এ৫ এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট

ছবি

নিত্যপণ্যের বাজারে সবজির সঙ্গে বেড়েছে চাল ও মুরগির দামও

ছবি

ডিসেম্বরের মধ্যে এনবিআরের কার্যক্রম দুই ভাগ হয়ে যাবে

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৭ মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২২ শতাংশ

ছবি

শরিয়াহ ব্যাংকগুলোর আমানত এক মাসে বেড়েছে ৮ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা

ছবি

বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ৩০০ শতাংশ বেড়েছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

সমুদ্রগামী জাহাজ আমদানিতে মূসক অব্যাহতি

ছবি

অর্থ বিভাগের পরিপত্র: ৯ মাসে ৬০ শতাংশ খরচ করতে না পারলে অর্থছাড় বন্ধ

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে মিতসুবিশি’র নতুন এক্সপ্যান্ডার ব্ল্যাক সিরিজ

ছবি

বেসিসের নতুন প্রশাসক আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ্ খান

ছবি

দারাজ বাংলাদেশের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ৯.৯ অ্যানিভার্সারি মেগা সেল

ছবি

শাওমি বাজারে নিয়ে এলো রেডমি প্যাড ২

ছবি

নভেম্বরের মধ্যেই একীভূত হবে পাঁচ ব্যাংক

ছবি

আইএমএফ-এর এমডি’র সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ভিডিও কনফারেন্স ১৬ সেপ্টেম্বর

ছবি

স্যালভো কেমিক্যালের শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব ফের বাতিল করলো বিএসইসি

ছবি

সর্ববৃহৎ-অত্যাধুনিক ওয়াটার প্রোডাকশন প্ল্যান্ট উদ্বোধন করলো আকিজ ভেঞ্চার

ছবি

বহুজাতিক কোম্পানির অর্থপাচার ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়া নজরদারি, প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

ছবি

পুনঃঅর্থায়ন তহবিল বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংকের চুক্তি সই

ছবি

বিভিন্ন ধরনের বন্ডে সংশোধনী আনতে যাচ্ছে বিএসইসি

ছবি

শেয়ারে কারসাজি, ছয় ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা, একজন ৫ বছর নিষিদ্ধ শেয়ারবাজারে

ছবি

বাংলাদেশের সঙ্গে ইপিএ করতে জাপান আগ্রহী: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

রপ্তানিকারকদের শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির সুযোগ দেবে এনবিআর: চেয়ারম্যান

ছবি

আটাব নির্বাচন: প্যানেল প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসবেন প্রশাসক

ছবি

‘অনলাইন রিটার্নের সঙ্গে ব্যাংক হিসাবের সংযোগে ভয়ের কিছু নেই’

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে টেকনো মেগাবুক টি১ ১৫.৬

ছবি

শেয়ারবাজারে ৯ দিন পর হাজার কোটির নিচে লেনদেন

ছবি

ব্যাংক গ্যারান্টি দিলে বন্ড সুবিধা পাবেন আংশিক রপ্তানিকারকেরা

ছবি

ঢাকায় আসছেন মার্কিন সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধিদল

ছবি

শেখ হাসিনার পূবালী ব্যাংকের লকার জব্দ করেছে এনবিআর

ছবি

স্বর্ণের দামে আবার নতুন রেকর্ড, ভরি ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৭ টাকা

ছবি

উত্তরা ব্যাংকে নতুন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক

tab

news » business

একীভূত ব্যাংক : পাঁচটির বাইরে আপাতত আর না

রমজান আলী

সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪

এখন নতুন করে আর কোনো ব্যাংককে একীভূত হওয়ার অনুমতি দিবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সিদ্ধান্ত আগামী তিন বছরের জন্য। এ পর্যন্ত পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া বা আলোচনা শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সোমবার (১৫ এপ্রিল) বলেন, ‘আগামী তিন বছরের মধ্যে আর কোনো ব্যাংকের একীভূত হওয়ার অনুমোদন দিবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। যে পাঁচটি ব্যাংকের একীভূত হওয়ার আলোচনা রয়েছে সেগুলোর কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে আর কোনো ব্যাংকের একীভূত হওয়ার অনুমোদন দেয়া হবে না।’

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংকের সঙ্গে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার জন্য এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিলো। তা নাহলে আগামী বছর থেকে একীভূতকরণে অনেক ব্যাংককে বাধ্য করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। রোজার ঈদের আগে ‘স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যাংক-কোম্পানির একীভূতকরণ সম্পর্কিত নীতিমালা’ জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই প্রক্রিয়াকে একীভূতকরণ বলা হলেও আদতে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংক দুর্বল ব্যাংককে অধিগ্রহণ করবে।

এখন এই প্রক্রিয়ায় কেন বিরতি তার ব্যাখ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকএর মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘ওই পাঁচটি ব্যাংকের নিরীক্ষার জন্য পাঁচটি অডিট ফার্ম নিয়োগ দিতে হবে। এই নিরীক্ষাও সময়ের ব্যাপার। তাই এই পাঁচটি ব্যাংকের সব ধরনের কাজ শেষ হওয়ার পরে অন্য ব্যাংকের একীভূত হতে চাইলে তখন দেয়া যেতে পারে। তবে আপতত কেউ সেচ্ছায় চাইলেও আর একীভূত হওয়ার অনুমোদন দিবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।’

সম্প্রতি বেসরকারি খাতের পদ্মা ও ন্যাশনাল ব্যাংক, এবং রাষ্ট্রীয় খাতের রাকাব, বেসিক ও বিডিবিএল ব্যাংকের অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত বা বিলীন হওয়ার প্রক্রিয়া বা আলোচনা শুরু হয়েছে।

এর মধ্যে শুধু পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের চুক্তি হয়েছে। বাকি চারটির শুধু আলোচনা হয়েছে। এখনও কোনো চুক্তি হয়নি।

ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংক, বিডিবিএলের সঙ্গে সোনালী ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক এবং কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাকাব বা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের একীভূত হওয়ার আলোচনা হয়েছে।

এর মধ্যে কাগজ-কলমে ন্যাশনাল ব্যাংকের ও রাকাবের খেলাপি ২৬ শতাংশ। বাস্তবে আরও বেশি। বেসিকের ৬২ শতাংশ ও বিডিবিএলের ৪৪ শতাংশ খেলাপি রয়েছে।

৪ মার্চ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠকে গভর্নর জানান, চলতি বছরের মধ্যে ৭ থেকে ১০টি দুর্বল ব্যাংককে সবল বা ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে। এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বাকি চারটির একীভূত হওয়ার আলোচনা চলছে।

এই প্রক্রিয়ায় যেগুলো আলোচনায় ছিল, তার মধ্যে একটি এবি ব্যাংক, যার খেলাপি পরিমাণ ১২ শতাংশের মতো। এছাড়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, এবং বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারে বলে আলোচনায় ছিল। এছাড়া গুঞ্জন ছিল বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, গ্লোবাল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক একীভূত হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে একীভূত (মার্জার) করতে একটি রোডম্যাপ ঠিক করার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে এক বছর সময় দিয়ে ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন’ বা পিসিএ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নেয়া হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার, মূলধনের পর্যাপ্ততা, নগদ অর্থের প্রবাহ, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্যকে প্রাধান্য দিয়ে আর্থিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সূচক ঠিক করে দেয়া হয়েছে। সেই সূচকে কাঙ্ক্ষিত মানদ-ের নিচে থাকা ব্যাংকগুলোকে ‘দুর্বল’ শ্রেণীভুক্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ব্যাংক টেনে তোলার শেষ পদক্ষেপ হিসেবে অন্য ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার এই প্রক্রিয়া।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের ৯ শতাংশ। এছাড় অর্থ ঋণ আদালতে ২ লাখ কোটি টাকার অর্থ মামলায় আটকে রয়েছে, যা খেলাপি হিসেবে গণ্য করলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার মতো হবে খেলাপি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘শুধু ব্যাংক একীভূত করেই ব্যাংক খাত ঠিক করা যাবে না। পাশাপাশি বেনামি ঋণ ও যেসব ঋণ খেলাপি দেখানো হচ্ছে না, তাও খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া ‘যেসব ব্যাংক দুর্বল, তার তালিকা করে খারাপ সম্পদগুলো আগে আলাদা করে ফেলতে হবে। এরপর ব্যাংকগুলোকে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার আহ্বান জানালে সেটা ভালো হবে। চাপ দিয়ে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে খারাপ ব্যাংক একীভূত করলে তা ভালো ফল নাও দিতে পারে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবক্ষেত্রে সম-আইন প্রয়োগ শুরু করতে হবে। কাউকে রেখে কাউকে ধরার দিন শেষ হয়ে গেছে। সবার আগে আমানতকারীদের অর্থের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তারপরে একীভূত করতে হবে ব্যাংক।,

বাংলাদেশ ব্যাংক যে একীভূতকরণ নীতমালা জারি করেছে তাতে উল্লেখিত বিষয়ের সঙ্গে চারটি সংযুক্তি দেয়া হয়েছে। দুর্বল ব্যাংক অধিগ্রহণ করলে খেলাপি ঋণ ও পুঞ্জীভূত লোকসানের পুরোটা বহন করতে হবে গ্রহীতা ব্যাংককে। তবে এ জন্য নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে (প্রভিশন) বিশেষ ছাড় পাবে তারা। এর বাইরে সরকারি বিশেষ নীতি সহায়তাও দেয়া হবে।

নীতিমালার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, ‘অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান এবং একই সঙ্গে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাংকের কার্যক্রম উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা; যাতে করে জনস্বার্থে একীভূত ব্যাংক-কোম্পানি অধিকতর সেবা প্রদান করতে পারে।’

নীতিমালায় বলা হয়েছে নিরীক্ষা এবং আর্থিক ও আইনি কাজ সম্পন্ন করার খরচ বহন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতকারী, পাওনাদার ও শেয়ারহোল্ডারদের দাবি পরিশোধসহ সম্পূর্ণ একত্রীকরণ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা ফার্ম তার নিরীক্ষা এবং আর্থিক ও আইনি কার্যক্রম প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিবে। এসব বিষয়ে তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার অনুমোদন বাতিলও করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে দেশের ৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টির অবস্থা খুবই খারাপ, তার মধ্যে ৯টি ব্যাংক ইতোমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। অন্য ৩টির অবস্থান ইয়েলো জোনে অর্থাৎ রেড জোনের খুব কাছাকাছি রয়েছে বলে সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন থেকে অর্ধ-বার্ষিক আর্থিক কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য ব্যাংকের স্বাস্থ্য সূচক তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগ।

back to top