বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় চার ধরনের উদ্বেগ রয়েছে বলে মনে করেন পিআরআই ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ। এগুলো হলো ১. চলতি হিসাবে বড় ঘাটতি; ২. রিজার্ভ কমে যাওয়া ও টাকার অবমূল্যায়ন; ৩. দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ৪. রাজস্ব আহরোণ কম হওয়া। তিনি বলেন, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সরকারের গৃহীত কিছু ভুলনীতি ও সঠিক পদক্ষেপের অভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তাই অর্থনীতিতে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত ‘সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও এর চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সাদিক আহমেদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার ও এমসিসিআইয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আনিস এ খান প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফারুক আহমেদ।
তিনি আরও বলেন, খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে দুর্বল ও সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদান বন্ধ করা দেয়া উচিত। খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে কমিয়ে আনার আগপর্যন্ত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে নতুন ঋণ দেওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। এটিই খেলাপি ঋণ কমানোর সবচেয়ে প্রত্যক্ষ ও টেকসই উপায়।
স্বাগত বক্তব্যে এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অংশীজন ও নীতিনির্ধারকদের গুরুত্বসহকারে কাজ করতে হবে
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত তথ্য উল্লেখ করে সাদিক আহমেদ বলেন, এ সময় পর্যন্ত ১৬টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বিতরণ করা মোট ঋণের ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। এর মধ্যে ৯টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০ শতাংশের বেশি। এই সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগই ব্যাংকিং পরিচালনা রীতি (ব্যাসেল ৩ নিয়মের আওতায় মূলধন পর্যাপ্ততার শর্ত) পূরণ করেনি।
সাদিক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে যে দীর্ঘমেয়াদি অগ্রগতি হচ্ছিল, তা গত চার বছরে একাধিক বাহ্যিক ধাক্কায় হুমকির মুখে পড়েছে। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, তবে এর ফলাফল এখন পর্যন্ত আশানুরূপ নয়। বর্তমানে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী রয়েছে। বিনিয়োগ ও রপ্তানি বৃদ্ধির হারও কম।
বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে উদ্বেগগুলোর মধ্যে চলতি হিসাবে ঘাটতিকে প্রথম স্থানে রাখেন সাদিক আহমেদ। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ায় বড় ধরনের বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সরকার আমদানি কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করলেও মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করেনি। ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রিজার্ভ কমেছে। মাত্র ১১ মাসে ৪৪ শতাংশ বা ২১ বিলিয়নের বেশি রিজার্ভ কমেছে। এটা বড় ধরনের চাপ।
সাদিক আহমেদের মতে, বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় দ্বিতীয় উদ্বেগ হচ্ছে রিজার্ভ কমে যাওয়া ও টাকার অবমূল্যায়ন। তিনি বলেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও শুল্ক বৃদ্ধির পরও সরকার রিজার্ভের ক্ষতি রোধ করতে পারেনি। সরকার দীর্ঘদিন যাবৎ বিনিময় হার এক জায়গায় বেঁধে রেখেছিল। এখন টাকার অবমূল্যায়ন করে বিনিময় হার সমন্বয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে বর্তমান মূল্যস্ফীতির জন্য টাকার অবমূল্যায়নকে নয়, বরং বিনিময় হার ধরে রাখাকে দোষ দিতে হবে।
পিআরআই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের আগস্টে বৃদ্ধি পেয়ে ৯ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছায়। এরপর থেকে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশে থাকছে। এছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে কর-জিডিপি হার বাড়ছে না। এসব বিষয়ে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে কোনো উদ্যোগই কাজ করেনি।
সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করার ঘোষণা এসেছে। এ বিষয়ে সাদিক আহমেদ বলেন, ব্যাংক একীভূত করা ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত। সাধারণত কেউ দুর্বল প্রতিষ্ঠান একীভূত করতে চায় না। ফলে জোর করে ব্যাংক একীভূত করা কোনো সমাধান না। এছাড়া মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণে বাংলাদেশ ব্যাংক যে ক্রলিং পেগ ব্যবস্থা চালু করেছে, সেটি পুরোপুরি তুলে দিয়ে তা বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সরকার দীর্ঘদিন ধরে নয়-ছয় ভিত্তিতে সুদহার রেখেছিল। এটিকে ভুল সিদ্ধান্ত মনে করেন সাদিক আহমেদ। তিনি বলেন, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও বিনিয়োগে নয়-ছয় সুদহারের কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি।
সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে এই মুহূর্তে রাজস্ব নীতি সংস্কারে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পিআরআই ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, রাজস্ব নীতি হতে হবে মুদ্রা নীতির সহায়ক। তা না হলে মুদ্রানীতি ঠিকভাবে কাজ করবে না। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। ফলে মুদ্রার বিনিময় হার আবার বেসামাল হয়ে যাবে।
সাদিক আহমেদ আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও সময় লাগবে। এ জন্য ভবিষ্যতে সুদহার আরও বাড়াতে হতে পারে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে অবশ্যই বাজেট ঘাটতি কমাতে হবে। রাজস্ব নীতিতে পর্যাপ্ত সংস্কার না আনায় এখনো বাজেট ঘাটতি কমানো সম্ভব হয়নি।
আন্তর্জাতিক: বৃষ্টিতে তলিয়ে গেল আশ্রয় শিবির, তীব্র শীতে দুর্ভোগ
আন্তর্জাতিক: ট্রাম্পের অভিবাসী ফেরত অভিযান কি আরও জোরালো হবে
সারাদেশ: বোয়ালখালীতে কৃষকের গরু চুরি