alt

রপ্তানির নতুন বাজার খুঁজছে বরেন্দ্র অঞ্চলের আম

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী : রোববার, ১৯ মে ২০২৪

রাজশাহীতে রপ্তানির জন্য প্যাকিং হচ্ছে আম-সংবাদ

প্রতিবারের মতো এবারও আম বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নিচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের উদ্যোতারা। আমচাষিরা বলছেন, চলতি মৌসুমে এমনিতেই রাজশাহীতে গাছে আম এসেছে কম। শুরুতে আমের গুটি ঝরে গেছে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। আমের পরিচর্যা করতে তাদের খরচ বেশি হয়েছে। এবার আমের দাম গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ হতে পারে ধারণা আমের বাগান মালিক ও চাষিদের। কৃষি বিভাগ বলছেন, মুকুল দেরিতে আসলেও আমের উৎপাদন এবার কমছে না। গেল বছরের মতো এবারও আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আমের আকারও বড় হচ্ছে। আম এবার কম হয়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ী ও চাষিরা। তবে এবার গাছে গাছে আমের সংখ্যাগত পরিমাণ কম থাকলেও আকার বড় হওয়ায় শেষ সময়ের হিসাবে লাভের আশা করছেন সংশিষ্টরা। অন্যদিকে বিদেশে রপ্তানির জন্য নতুন বাজার তৈরির জন্য খোঁজ-খবর ও প্রশিক্ষণ ও নিচ্ছেন আমচাষিসহ সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে বাঘা উপজেলার আম ১২ বছর থেকে রাশিয়া, হংকং, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাষ্ট, ইংল্যান্ড, কানাডা ও সুইজারল্যান্ডসহ আটটি দেশে আম রপ্তানি হয়ে আসছে। রাজশাহীর বাঘায় বিদেশে আম রপ্তানির চুক্তিবদ্ধ চাষি নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের একটি আম বাগানে দিন ব্যাপী এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

এসএমআর এগ্রোটেক ইন্ডাষ্টিজ লিমিটেডের আয়োজনে কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ মো. আজহাররুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক রাকাব এর চেয়ারম্যান মো. রইছ উল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহা-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলাম, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ খবির উদ্দিন মোলা, রাজশাহী জেলা দায়রা জজের বিচারক মো. এনায়েত কবির, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. ফাইসাল কবির, বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউলাহ সুলতান ।

মৌসুমে রাজশাহী থেকে শুধু সরকারিভাবেই প্রায় ৩ কোটি টাকার আম রপ্তানির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন কৃষি দপ্তর। আর এ লক্ষ্যে শুধু রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ২২০ চাষি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এসব চাষিরা ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৩০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানির জন্য উপযোগী করে চাষও করেছেন।

এদিকে গত কয়েক বছর যাবৎ গোপালভোগ আম সুইডেনে পাঠানোর লক্ষ্যে রপ্তানিকারকের কাছে পাঠিয়েছেন। এই আম চাষির নাম আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি রাজশাহী এগ্রো ফুড সোসাইটির সভাপতি। রাজশাহী নগরীর জিন্নানগর এলাকায় বসবাসরত আনোয়ারুল ইসলামের আমবাগান থেকে প্রতিবছরই আম বিদেশে পাঠিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে রাজশাহী এগ্রে ফুড সোসাইটির এই সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কৃষি বিভাগ শুধু বাঘা উপজেলার চাষিদের কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের আওতায় আনে। কিন্তু আম তো বাঘা ছাড়াও রাজশাহী মহানগরীসহ অন্যান্য উপজেলাতেও চাষ হয়। এমনকি পুঠিয়া ও পবা উপজেলা থেকেও আম রপ্তানি হয়। আনোয়ারুল আরও জানান, এনজেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এন হোসেন সজলের মাধ্যমে তিনি সুইডেনে আম পাঠাচ্ছেন। আনোয়ারুল দাবি করে বলেন, আমার ব্যাগিং করা আম খুবই ফ্রেশ। আমের কাছে কিটনাশক তো দূরের কথা; একটা পিঁপড়াও যেতে পারে না।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরে ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমির আম গাছে ফলন এসেছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন আম। গত বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন। তবে ঝড়ের কবলে না পড়লে এ আম দিয়েই দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। রাজশাহীতে এবার দেড় হাজার কোটি টাকার আমের বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গতবারেও একই ছিল লক্ষ্যমাত্রা।

গত শুক্রবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কুমারপুর গ্রামে আমের বাগান পরিদর্শন ও আমচাষিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, আমরা রাশিয়া, বেলারুশ, চীন, জাপান ও ভারতের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বাংলাদেশের আম নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাই আমরা চেষ্টা করছি বেশি পরিমাণ আম রপ্তানি করার। এজন্য চীনের একটি প্রতিনিধিদল শীঘ্রই রাজশাহীর আম দেখতে আসবে। আর এ দলটির সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলে আমের সঠিক মূল্য নির্ধারণের জন্য কিছু কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, আম রপ্তানির জন্য ২৫০ থেকে ৩০০ কৃষককে এরই মধ্যে সহায়তা করা হয়েছে। আর আম রপ্তানির জন্য রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম গ্রেডিং শেড ও ট্রিটমেন্ট প্যান্ট করা হচ্ছে। এ সময় সংরক্ষণের অভাবে প্রচুর আম নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আম পচনশীল পণ্য। তাই মৌসুমে একটা পার্সেন্টেজ আম নষ্ট হবেই। আমরা আম কিছু সময়ের জন্য সংরক্ষণ করতে চাই, অন্যান্য কৃষিজাত পণ্যও সংরক্ষণ করতে চাই। সেজন্য দেশের আটটি বিভাগে আটটি কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করবো। তবে এর জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এ প্রজেক্টের জন্য অনেক টাকার দরকার। আমরা দেশি-বিদেশি সহযোগিতায় এটা করতে চাই।

এর আগে মন্ত্রী সোনাদীঘি গ্রামের কৃষক রাতুলের ফার্মে মাটিবিহীন চারা উৎপাদন, ই-ফারমিং, ভার্মি কম্পোস্ট, বসতবাড়ি বাগান ও কৃষিখেত পরিদর্শন করেন।

কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- বিশ্বব্যাংকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাইকেল জন ওয়েবস্টের, কোকাকোলা বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জু-উন নাহার চৌধুরী ও রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল। এছাড়া কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ১২ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বাগান মালিকদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আম নামানোর সময়সীমা নির্ধারণ করেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। এ সময় কৃষি কর্মকর্তা, আমচাষি, ব্যবসায়ী ও আম পরিবহনে নিয়োজিত সবার সঙ্গে আলোচনা করে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়। সেখানেও এবারের আমের দাম নিয়ে কথা উঠে।

গত ১৫ মে থেকে গুটি আম পাড়া যাবে, আগামী ২৫ মে থেকে গোপালভোগ ও রানিপছন্দ, ৩০ মে থেকে খিরসাপাত, ২৫ মে থেকে লক্ষণভোগ, ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম, ১৫ জুন থেকে আম্রপলি ও ফজলি, ০৫ জুলাই থেকে বারি আম-৪, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি আর ২০ আগস্ট থেকে পরিপক্ব ইলামতি আম নামানো যাবে। এছাড়া কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, রাজশাহীর আম বিখ্যাত। কোনো অসাধু ব্যক্তি আমের দাম না বাড়াতে পারে আমরা সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। আমাদের একাধিক টিম কাজও করবে। ইতোমধ্যে কেউ সময়ের আগে আম নামাচ্ছে কি না তা লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।

ছবি

দেশে আন্তর্জাতিক মানের সবুজ কারখানা ২৬৮টি

ছবি

বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিলেন মেজর জেনারেল মোয়াজ্জেম

ছবি

ওসিরিস গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু এশিয়া গ্রুপের

ছবি

কর জাল সম্প্রসারণে ১২ নতুন কাস্টম অফিস, ৩৫৯৭ লোকবল নেবে এনবিআর

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ, শিপিং ব্যয় বাড়ার প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর

ছবি

ভারত থেকে ঢুকছে জাল টাকা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্ক বার্তা

ছবি

গ্রাহক আস্থায় ব্যাংকের তুলনায় অনেক পিছিয়ে বিমা খাত

ছবি

১ ও ২ টাকার মুদ্রা না নেয়ার চেষ্টা আইনের লঙ্ঘন: বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

আইসিসিবিতে বসেছে ৩ দিনব্যাপী ইন্টেরিয়র-ফার্নিচার-সাইনেজ এক্সপো

ছবি

স্বর্ণের দাম বাড়ছেই

ভবিষ্যৎ নীতিতে খাদ্য অধিকারকে অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান

ছবি

কঠিন শর্তে আইএমএফ-এর অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

ছবি

চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৯ শতাংশ: আইএমএফ

ছবি

ব্যাংক থেকে আরও ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার কিনলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে ৫৬ সেবায় বাড়তি ট্যারিফ কার্যকর

ছবি

সঞ্চয়পত্রের সুদহার আরও কমাতে যাচ্ছে সরকার

ছবি

এনবিআরের কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগে নতুন ১২ দপ্তর

ছবি

ডিজিটাল লেনদেন ব্যবসায় আসছে রবি ও বাংলালিংক

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে মধ্যরাত থেকে বর্ধিত ট্যারিফ চালু, গড়ে ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি

ছবি

সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়নি: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

মোবাইল ব্যাংক থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠাতে হাজারে খরচ হবে সাড়ে ৮ টাকা

ছবি

ভেজাল ও নকলকারীদের বিরুদ্ধে বিএসটিআইকে আরও কঠোর হতে হবে, বিশ্ব মান দিবসে বক্তারা

ছবি

ঢাকায় ৫ দিনব্যাপী ফার্নিচার মেলা শুরু

ছবি

কৃষি ও এসএমই ঋণ বাড়াতে নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ছাড় পেল ব্যাংকগুলো

ছবি

শিল্প আমদানিকারকদের নতুন সুবিধা দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

বাংলাদেশে সংস্কার অগ্রগতি যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আগ্রহ বাড়াবে: অর্থ উপদেষ্টা

শেরপুরে দুধের বাজারে ঘণ্টায় লাখ লাখ টাকার দুধ বিক্রি

ছবি

‘প্রযুক্তির মাধ্যমেই টেকসই প্রবৃদ্ধি’র ব্যাখ্যা দিয়ে অর্থনীতিতে নোবেল জয় তিন গবেষকের

ছবি

দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মর্যাদা পেল কক্সবাজার বিমানবন্দর

ছবি

ক্যাশলেস অর্থনীতির যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, আসছে শাখাবিহীন ডিজিটাল ব্যাংক

ছবি

সংশোধন হচ্ছে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা

ছবি

৫ ব্যাংক একীভূতকরণ: বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির প্রচারণা গুজব ও ভিত্তিহীন, সতর্ক করল অর্থ মন্ত্রণালয়

ছবি

৯৩ শতাংশ জেলে জানে না নিষিদ্ধ জালে উৎপাদন-প্রজননের ক্ষতি হয়: কোস্ট ফাউন্ডেশন

ছবি

আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা শুরু

ছবি

১১ দিনে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয়

ছবি

ডিসেম্বরের মধ্যে তিন টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেয়া হবে: নৌ-সচিব

tab

রপ্তানির নতুন বাজার খুঁজছে বরেন্দ্র অঞ্চলের আম

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী

রাজশাহীতে রপ্তানির জন্য প্যাকিং হচ্ছে আম-সংবাদ

রোববার, ১৯ মে ২০২৪

প্রতিবারের মতো এবারও আম বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নিচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের উদ্যোতারা। আমচাষিরা বলছেন, চলতি মৌসুমে এমনিতেই রাজশাহীতে গাছে আম এসেছে কম। শুরুতে আমের গুটি ঝরে গেছে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এমনটি হয়েছে। আমের পরিচর্যা করতে তাদের খরচ বেশি হয়েছে। এবার আমের দাম গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ হতে পারে ধারণা আমের বাগান মালিক ও চাষিদের। কৃষি বিভাগ বলছেন, মুকুল দেরিতে আসলেও আমের উৎপাদন এবার কমছে না। গেল বছরের মতো এবারও আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আমের আকারও বড় হচ্ছে। আম এবার কম হয়েছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ী ও চাষিরা। তবে এবার গাছে গাছে আমের সংখ্যাগত পরিমাণ কম থাকলেও আকার বড় হওয়ায় শেষ সময়ের হিসাবে লাভের আশা করছেন সংশিষ্টরা। অন্যদিকে বিদেশে রপ্তানির জন্য নতুন বাজার তৈরির জন্য খোঁজ-খবর ও প্রশিক্ষণ ও নিচ্ছেন আমচাষিসহ সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে বাঘা উপজেলার আম ১২ বছর থেকে রাশিয়া, হংকং, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাষ্ট, ইংল্যান্ড, কানাডা ও সুইজারল্যান্ডসহ আটটি দেশে আম রপ্তানি হয়ে আসছে। রাজশাহীর বাঘায় বিদেশে আম রপ্তানির চুক্তিবদ্ধ চাষি নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের একটি আম বাগানে দিন ব্যাপী এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

এসএমআর এগ্রোটেক ইন্ডাষ্টিজ লিমিটেডের আয়োজনে কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ মো. আজহাররুল ইসলাম। প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক রাকাব এর চেয়ারম্যান মো. রইছ উল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহা-পরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুল ইসলাম, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ খবির উদ্দিন মোলা, রাজশাহী জেলা দায়রা জজের বিচারক মো. এনায়েত কবির, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. ফাইসাল কবির, বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউলাহ সুলতান ।

মৌসুমে রাজশাহী থেকে শুধু সরকারিভাবেই প্রায় ৩ কোটি টাকার আম রপ্তানির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন কৃষি দপ্তর। আর এ লক্ষ্যে শুধু রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ২২০ চাষি রপ্তানিকারকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এসব চাষিরা ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৩০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানির জন্য উপযোগী করে চাষও করেছেন।

এদিকে গত কয়েক বছর যাবৎ গোপালভোগ আম সুইডেনে পাঠানোর লক্ষ্যে রপ্তানিকারকের কাছে পাঠিয়েছেন। এই আম চাষির নাম আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি রাজশাহী এগ্রো ফুড সোসাইটির সভাপতি। রাজশাহী নগরীর জিন্নানগর এলাকায় বসবাসরত আনোয়ারুল ইসলামের আমবাগান থেকে প্রতিবছরই আম বিদেশে পাঠিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে রাজশাহী এগ্রে ফুড সোসাইটির এই সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কৃষি বিভাগ শুধু বাঘা উপজেলার চাষিদের কন্টাক্ট ফার্মিংয়ের আওতায় আনে। কিন্তু আম তো বাঘা ছাড়াও রাজশাহী মহানগরীসহ অন্যান্য উপজেলাতেও চাষ হয়। এমনকি পুঠিয়া ও পবা উপজেলা থেকেও আম রপ্তানি হয়। আনোয়ারুল আরও জানান, এনজেল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এন হোসেন সজলের মাধ্যমে তিনি সুইডেনে আম পাঠাচ্ছেন। আনোয়ারুল দাবি করে বলেন, আমার ব্যাগিং করা আম খুবই ফ্রেশ। আমের কাছে কিটনাশক তো দূরের কথা; একটা পিঁপড়াও যেতে পারে না।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরে ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমির আম গাছে ফলন এসেছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন আম। গত বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১৫ মেট্রিক টন। তবে ঝড়ের কবলে না পড়লে এ আম দিয়েই দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। রাজশাহীতে এবার দেড় হাজার কোটি টাকার আমের বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গতবারেও একই ছিল লক্ষ্যমাত্রা।

গত শুক্রবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কুমারপুর গ্রামে আমের বাগান পরিদর্শন ও আমচাষিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, আমরা রাশিয়া, বেলারুশ, চীন, জাপান ও ভারতের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বাংলাদেশের আম নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাই আমরা চেষ্টা করছি বেশি পরিমাণ আম রপ্তানি করার। এজন্য চীনের একটি প্রতিনিধিদল শীঘ্রই রাজশাহীর আম দেখতে আসবে। আর এ দলটির সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলে আমের সঠিক মূল্য নির্ধারণের জন্য কিছু কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, আম রপ্তানির জন্য ২৫০ থেকে ৩০০ কৃষককে এরই মধ্যে সহায়তা করা হয়েছে। আর আম রপ্তানির জন্য রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম গ্রেডিং শেড ও ট্রিটমেন্ট প্যান্ট করা হচ্ছে। এ সময় সংরক্ষণের অভাবে প্রচুর আম নষ্ট হওয়ার ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আম পচনশীল পণ্য। তাই মৌসুমে একটা পার্সেন্টেজ আম নষ্ট হবেই। আমরা আম কিছু সময়ের জন্য সংরক্ষণ করতে চাই, অন্যান্য কৃষিজাত পণ্যও সংরক্ষণ করতে চাই। সেজন্য দেশের আটটি বিভাগে আটটি কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করবো। তবে এর জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এ প্রজেক্টের জন্য অনেক টাকার দরকার। আমরা দেশি-বিদেশি সহযোগিতায় এটা করতে চাই।

এর আগে মন্ত্রী সোনাদীঘি গ্রামের কৃষক রাতুলের ফার্মে মাটিবিহীন চারা উৎপাদন, ই-ফারমিং, ভার্মি কম্পোস্ট, বসতবাড়ি বাগান ও কৃষিখেত পরিদর্শন করেন।

কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- বিশ্বব্যাংকের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মাইকেল জন ওয়েবস্টের, কোকাকোলা বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জু-উন নাহার চৌধুরী ও রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল। এছাড়া কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ১২ মে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বাগান মালিকদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে আম নামানোর সময়সীমা নির্ধারণ করেন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। এ সময় কৃষি কর্মকর্তা, আমচাষি, ব্যবসায়ী ও আম পরিবহনে নিয়োজিত সবার সঙ্গে আলোচনা করে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়। সেখানেও এবারের আমের দাম নিয়ে কথা উঠে।

গত ১৫ মে থেকে গুটি আম পাড়া যাবে, আগামী ২৫ মে থেকে গোপালভোগ ও রানিপছন্দ, ৩০ মে থেকে খিরসাপাত, ২৫ মে থেকে লক্ষণভোগ, ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম, ১৫ জুন থেকে আম্রপলি ও ফজলি, ০৫ জুলাই থেকে বারি আম-৪, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি আর ২০ আগস্ট থেকে পরিপক্ব ইলামতি আম নামানো যাবে। এছাড়া কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, রাজশাহীর আম বিখ্যাত। কোনো অসাধু ব্যক্তি আমের দাম না বাড়াতে পারে আমরা সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে। আমাদের একাধিক টিম কাজও করবে। ইতোমধ্যে কেউ সময়ের আগে আম নামাচ্ছে কি না তা লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।

back to top