alt

খেলাপির সঠিক তথ্য প্রকাশ করছে না ব্যাংকগুলো : সিপিডি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪

খেলাপি ঋণের পরিমাণ, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ ও পুঁঞ্জীভূত নানা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে তথ্য প্রকাশ করছে তা যথাযথ না। বাস্তব চিত্র গোপন করা হচ্ছে পর্যবেক্ষণ দিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি প্রশ্ন তুলে বলেছে, আসলে দেশের ব্যাংক খাত কতোটা খারাপ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীর একটি অভিজাত হোটেলে ‘হোয়াট লাইস অ্যাহেড ফর ব্যাংকিং সেক্টর অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার। বাস্তবে তা সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোও তথ্য প্রকাশ করছে না জনসম্মুখে। দুর্ঘটনা ঘটার পর সবাই জানতে পারছে। আসলে ব্যাংক খাত কতোটা খারাপ, সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।’

গত ২০১২ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। দশ বছরে তা তিনগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে হয়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। খেলাপি এ ঋণের বাইরে ঋণ পুনঃতফসিল, আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও ঋণ অবলোপন যোগ করলে তার পরিমণ দাঁড়ায় সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা।

গত ২০২২ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট’ এর দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে সিডিপি বলেছে, তখন মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৭৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকা।

এরমধ্যে ঋণ অবলোপন ছিল ৪৪ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা, ঋণ পুনঃতফসিল ছিল দুই লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন খেলাপি ঋণ দেখিয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, গত এপ্রিলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ৭২ হাজার ৫৪৩টি মামলায় খেলাপি ঋণের এ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা আটকে আছে। সব মিলিয়ে গত ডিসেম্বর শেষে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।

অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে হালনাগাদ, এমনকি দৈনিক আকারে তথ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ‘রিয়েল টাইম’ তথ্য পাওয়া যায় না জানিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘তথ্যর সহজলভ্যতা থাকতে হবে। আগে আমরা সাংবাদিকদের মাধ্যমে হালনাগাদ তথ্য জানতে পারতাম। এখন সেখানেও বাধা আসছে। তথ্য যদি ভুল হয়, সঠিক না থাকে, তাহলে নীতি সিদ্ধান্ত ভুল হওয়ার শঙ্কা থেকে যায়।’

ব্যাংক খাতের মূল সমস্যা খেলাপি ঋণ। এটি বাড়ছে ব্যাংক খাতে সরকার ও ব্যবসায়ীদের হস্তক্ষেপে। খাতটিতে জবাবদিহিতা, সুশাসন ও স্বচছতা নিশ্চিত করতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সাময়ীক সময়ের জন্য হলেও ব্যাংক খাত কোনো সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা দেখতে ব্যাংক কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।’

তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা ব্যাংক খাতে ইসলামী ব্যাংকগুলোর তারল্য দিন দিন কমছে। মোট তারল্য বাজারে আগে ৩৯ শতাংশ ছিল। মালিকানা বদলের পরে তা ২৫ শতাংশে নেমেছে বলে মূল প্রবন্ধে উপস্থাপন করেন ফাহমিদা।

তিনি বলেন, ‘দেশের ব্যাংক খাত ক্রনি ক্যাপিটালিজমের মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা ব্যাংকগুলোকে তাদের আর্থিক লক্ষ্য পূরণে অলিগর্ক হয়ে উঠছেন।’

গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য চিকিৎসক জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘সমস্যা ক্যান্সারের মতো চারিদিকে ছড়িয়ে গিয়েছে। আর্থিক খাত এখন অলিগর্কদের দখলে। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা মিলে একটি নেক্সাস (বলয়) বানিয়েছে। এই নেক্সাসের কথায় ঋণ দেয়া হয়, ব্যাংক চলে। দুর্নীতি বন্ধ করতে যদি সরকার চায়, তাহলে হবে, না হলে কখনোই হবে না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এখন সমবায় সমিতিতে পরিণত হয়ে গেছে। সমবায় সমিতি যেমন সকলের সঙ্গে মিলেমিশে চলে, তেমনি ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আর্থিক খাতের প্রভাবশালীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে নীতি ঠিক করছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাদের কাজ নীতি তৈরি ও তা বাস্তবায়ন করা মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এখন অর্থনীতি ঠিক করার সময়ে এমন নীতি তৈরি করছে তাতে সাধারণ মানুষের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘এ ধরনের আলোচনায় অংশীজন হিসেবে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা থাকতে পারেন। কিন্তু তারা থাকেন না। থাকলে ভালো হয়, না থাকায় সরকারের ক্ষতি হচ্ছে, তারা তো অনেক কিছুই জানতে পারতেন।’

ব্যাংক খাতে তথ্য প্রবাহে বাধা এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পাবলিক ফিগার বা পাবলিক ইস্যুতে সব কিছুই স্বচছ ও তথ্যর অবাধ প্রবাহ থাকার পক্ষে আমি। এ বিষয়ে আমি সরকারের উপরের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। স্পর্শকাতর তথ্য নাম দিয়ে কিছু তথ্য আড়াল করা হচ্ছে। এভাবে স্পর্শকাতর নাম দিয়ে অন্য কিছু করা হচ্ছে কিনা তা দেখা দরকার, সব তথ্যই প্রকাশ করা উচিত। তাহলে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।’

সিপিডির ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংক খাত দেশের অর্থনীতিতে সচল রেখেছে। উদ্যোক্তা তৈরিতে ভূমিকা রাখছে এক সময়ে। ব্যাংক খাত সমস্যায় থাকলে অর্থনীতিতে প্রভাব আরও বেশি পড়বে।’

সেমিনারে আসা বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব ও সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদন সমন্বয় করে সুপারিশ আকারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ছবি

প্রতিদিনের মূল্য জানাতে ভোক্তা অধিদপ্তর নিয়ে এলো মোবাইল অ্যাপ-‘বাজারদর’

ছবি

সার আমদানিতে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

সিদ্ধান্ত ছিল তিন মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর, আমরা এক বছরেও বাড়াইনি : উপদেষ্টা

ছবি

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিজিএমইএর বৈঠক

ছবি

প্রাইম ব্যাংক ও প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এর মধ্যে পেরোল ব্যাংকিং চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

বৈশ্বিক অনিশ্চয়তায় সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে ব্রাজিল

ছবি

ডেলটা ফার্মার ৩১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, বেজার সঙ্গে লিজ চুক্তি

ছবি

কুঁড়ার তেল রফতানিতে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ

ছবি

বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষর

ছবি

ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার

ছবি

১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহে ২৮.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

ছবি

দুবাইয়ে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটিতে ২৬ ঘণ্টা ভোগান্তি

ছবি

২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ

ছবি

অধিকাংশ শেয়ারের দরপতন, সামান্য বেড়েছে লেনদেন

ছবি

অক্টোবরে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের প্রস্তুতি জাতিসংঘকে জানাতে হবে

ছবি

শ্রমিকের পাওনা পরিশোধে নাসা গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত

ছবি

একনেকে ৮৩৩৩ কোটি টাকার ১৩ প্রকল্প অনুমোদন

ছবি

ঢাকায় নিরাপত্তা প্রযুক্তির সর্বশেষ উদ্ভাবন নিয়ে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী

ছবি

পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মুখপাত্র মেজবাউল

ছবি

প্রথম চালানে ভারতে গেল সাড়ে ৩৭ টন ইলিশ

ছবি

তাপমাত্রা বাড়ায় বাংলাদেশের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা: বিশ্বব্যাংক

ছবি

পাঁচ বেসরকারি শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করার প্রথম ধাপে প্রশাসক বসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পেছানোর বিরোধিতা করছে

ছবি

শেয়ারবাজারে লেনদেন নামলো ৬শ’ কোটি টাকার ঘরে

ছবি

ব্যবসা মাঝে মন্থর ছিল, এখন একটু ভালো: অর্থ উপদেষ্টা.

ছবি

অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরে আশাবাদী জাপানি রাষ্ট্রদূত

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকে সভা: একীভূত হচ্ছে পাঁচ ব্যাংক, বসছে প্রশাসক

ছবি

বিজিএমইএ–মার্কিন প্রতিনিধিদল বৈঠক: শুল্ক কমাতে আহ্বান

ছবি

জুলাই-আগস্টে এডিপি বাস্তবায়ন ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ

ছবি

বিবিএসের নাম পরিবর্তন ও তদারক পরিষদ রাখার সুপারিশ

ছবি

শ্রম আইন সংশোধন দ্রুত শেষ করার তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের

ছবি

নগদ অর্থের ব্যবহার কমাতে আসছে একীভূত পেমেন্ট সিস্টেম: গভর্নর

ছবি

আড়াই মাসে ১৩৯ কোটি ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

ডিজিটাল ব্যাংক খুলতে আবেদনের সময় বাড়লো ২ নভেম্বর পর্যন্ত

ছবি

পুঁজিবাজারে সূচকের নামমাত্র উত্থান, লেনদেন আরও তলানিতে

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে গড়ে খরচ বাড়লো ৪১ শতাংশ

tab

খেলাপির সঠিক তথ্য প্রকাশ করছে না ব্যাংকগুলো : সিপিডি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪

খেলাপি ঋণের পরিমাণ, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ ও পুঁঞ্জীভূত নানা সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে তথ্য প্রকাশ করছে তা যথাযথ না। বাস্তব চিত্র গোপন করা হচ্ছে পর্যবেক্ষণ দিয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি প্রশ্ন তুলে বলেছে, আসলে দেশের ব্যাংক খাত কতোটা খারাপ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীর একটি অভিজাত হোটেলে ‘হোয়াট লাইস অ্যাহেড ফর ব্যাংকিং সেক্টর অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার। বাস্তবে তা সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোও তথ্য প্রকাশ করছে না জনসম্মুখে। দুর্ঘটনা ঘটার পর সবাই জানতে পারছে। আসলে ব্যাংক খাত কতোটা খারাপ, সেই প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।’

গত ২০১২ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। দশ বছরে তা তিনগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩ সালে হয়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। খেলাপি এ ঋণের বাইরে ঋণ পুনঃতফসিল, আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও ঋণ অবলোপন যোগ করলে তার পরিমণ দাঁড়ায় সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা।

গত ২০২২ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট’ এর দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে সিডিপি বলেছে, তখন মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৭৭ হাজার ৯২২ কোটি টাকা।

এরমধ্যে ঋণ অবলোপন ছিল ৪৪ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা, ঋণ পুনঃতফসিল ছিল দুই লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক তখন খেলাপি ঋণ দেখিয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, গত এপ্রিলে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ৭২ হাজার ৫৪৩টি মামলায় খেলাপি ঋণের এ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা আটকে আছে। সব মিলিয়ে গত ডিসেম্বর শেষে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে পাঁচ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।

অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে হালনাগাদ, এমনকি দৈনিক আকারে তথ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ‘রিয়েল টাইম’ তথ্য পাওয়া যায় না জানিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘তথ্যর সহজলভ্যতা থাকতে হবে। আগে আমরা সাংবাদিকদের মাধ্যমে হালনাগাদ তথ্য জানতে পারতাম। এখন সেখানেও বাধা আসছে। তথ্য যদি ভুল হয়, সঠিক না থাকে, তাহলে নীতি সিদ্ধান্ত ভুল হওয়ার শঙ্কা থেকে যায়।’

ব্যাংক খাতের মূল সমস্যা খেলাপি ঋণ। এটি বাড়ছে ব্যাংক খাতে সরকার ও ব্যবসায়ীদের হস্তক্ষেপে। খাতটিতে জবাবদিহিতা, সুশাসন ও স্বচছতা নিশ্চিত করতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকা প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সাময়ীক সময়ের জন্য হলেও ব্যাংক খাত কোনো সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তা দেখতে ব্যাংক কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।’

তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা ব্যাংক খাতে ইসলামী ব্যাংকগুলোর তারল্য দিন দিন কমছে। মোট তারল্য বাজারে আগে ৩৯ শতাংশ ছিল। মালিকানা বদলের পরে তা ২৫ শতাংশে নেমেছে বলে মূল প্রবন্ধে উপস্থাপন করেন ফাহমিদা।

তিনি বলেন, ‘দেশের ব্যাংক খাত ক্রনি ক্যাপিটালিজমের মাধ্যমে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা ব্যাংকগুলোকে তাদের আর্থিক লক্ষ্য পূরণে অলিগর্ক হয়ে উঠছেন।’

গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য চিকিৎসক জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘সমস্যা ক্যান্সারের মতো চারিদিকে ছড়িয়ে গিয়েছে। আর্থিক খাত এখন অলিগর্কদের দখলে। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা মিলে একটি নেক্সাস (বলয়) বানিয়েছে। এই নেক্সাসের কথায় ঋণ দেয়া হয়, ব্যাংক চলে। দুর্নীতি বন্ধ করতে যদি সরকার চায়, তাহলে হবে, না হলে কখনোই হবে না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এখন সমবায় সমিতিতে পরিণত হয়ে গেছে। সমবায় সমিতি যেমন সকলের সঙ্গে মিলেমিশে চলে, তেমনি ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আর্থিক খাতের প্রভাবশালীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে নীতি ঠিক করছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তাদের কাজ নীতি তৈরি ও তা বাস্তবায়ন করা মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এখন অর্থনীতি ঠিক করার সময়ে এমন নীতি তৈরি করছে তাতে সাধারণ মানুষের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে।’

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘এ ধরনের আলোচনায় অংশীজন হিসেবে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা থাকতে পারেন। কিন্তু তারা থাকেন না। থাকলে ভালো হয়, না থাকায় সরকারের ক্ষতি হচ্ছে, তারা তো অনেক কিছুই জানতে পারতেন।’

ব্যাংক খাতে তথ্য প্রবাহে বাধা এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘পাবলিক ফিগার বা পাবলিক ইস্যুতে সব কিছুই স্বচছ ও তথ্যর অবাধ প্রবাহ থাকার পক্ষে আমি। এ বিষয়ে আমি সরকারের উপরের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। স্পর্শকাতর তথ্য নাম দিয়ে কিছু তথ্য আড়াল করা হচ্ছে। এভাবে স্পর্শকাতর নাম দিয়ে অন্য কিছু করা হচ্ছে কিনা তা দেখা দরকার, সব তথ্যই প্রকাশ করা উচিত। তাহলে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।’

সিপিডির ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ব্যাংক খাত দেশের অর্থনীতিতে সচল রেখেছে। উদ্যোক্তা তৈরিতে ভূমিকা রাখছে এক সময়ে। ব্যাংক খাত সমস্যায় থাকলে অর্থনীতিতে প্রভাব আরও বেশি পড়বে।’

সেমিনারে আসা বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব ও সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদন সমন্বয় করে সুপারিশ আকারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

back to top