alt

ইন্টারনেট বন্ধের কারণে কাজ হারিয়ে ফ্রিল্যান্সারদের আহাজারি

রেজাউল করিম : শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪

টানা ৫ দিন ইন্টারনেট না থাকায় কাজ হারিয়ে আহাজারি করছেন দেশের প্রায় ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সার। কেউ কেউ হাতের সব কাজ হারিয়ে পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ এক বা দুটি কাজ নিয়ে কোনোমতে টিকে আছেন, সেই কাজগুলো শেষ হলো তারাও বেকার হয়ে পড়বেন। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য তৈরি ফেইসবুক গ্রুপগুলোতে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এই হতাশা, আহাজারি লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ একেবারে ভেঙে পড়েছে। কেউ এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছেন।

সারাবিশ্বের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস হলো ‘আপওয়ার্ক’। ওডেক্স ও ফ্রিল্যান্সার নামের দুইটি কোম্পানি একীভূত হয়ে এই নামকরণ করেছে। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের সবচেয়ে বড় কমিউনিটি হলো, ‘আপওয়ার্ক বাংলাদেশ’। বৃহস্পতিবার ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর আপওয়ার্ক বাংলাদেশের ফেইসবুক গ্রুপে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেন ফ্রিল্যান্সাররা। কাজ হারিয়ে কেউ কেউ এখন পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন, অথচ এই ক্যারিয়ার তৈরি করতে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পরিশ্রম করে যেতে হয়েছে তাদের।

নাইমুল ইসলাম রুবেল নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বৃহস্পতিবার বলেন, ‘এই ৫ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমার আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়ে গেছে। যতগুলো চলমান কাজ ছিল সবগুলো হারিয়েছি। ক্লায়েন্ট আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, আমার সঙ্গে আর কখনো কাজ করবে না। শুধু আপওয়ার্কই নয়, ফাইভারেও গিগ, রেসপন্স রেট ডাউন হয়ে গেছে। বুঝতে পারছি না, এখন আমি কি করবো।’

সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে, রনজন কায়াস নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘এই পাঁচ দিনে ৩০টি কাজ হারালাম। কায়েন্ট বলছে, ভবিষ্যতে আর কোনো কাজ দিবে না। এই ক্ষতিপূরণ আমাকে কে দেবে?’ সজিব চৌধুরী নামের একজন বলেন, ‘এই পাঁচ দিনে আমার ১ হাজার ডলার ক্ষতি হয়েছে। আমার মতো ছোট্ট ফ্রিল্যান্সারের এই অবস্থা, জানি না বাকিদের কি অবস্থা?’

সাকিব হোসেন নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘অনেক আগে থেকে মার্কেটপ্লেসে কাজ পাচ্ছিলাম না। বাইরের ৪টি চলমান প্রজেক্ট হাতে ছিল। সেগুলো এখন চান্দের দেশে চলে গেছে (বাতিল হয়েছে)।’ রোকুনুজ্জামান নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘২৫০ ডলারের একটা কাজ হারালাম। আর আগের করা একটা কাজের টাকা পেলাম না। কারণ ক্লায়েন্ট আমার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ক্লায়েন্টদের প্রধান শর্ত থাকে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ রাখা যা আমি এই ৫ দিন করতে পারিনি।’

দীর্ঘ সময় কায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারায় অনেকের অ্যাকাউন্ট ব্যাড রেটিংয়ের শিকার হয়েছে। ফিরোজ হোসেন নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘দুইটা চলমান প্রজেক্ট বাতিল হয়েছে। তিনটা প্রজেক্ট একসেপ্ট করতে পারিনি। একটা ব্যাড রেটিং দিয়েছে। এই রেটিংয়ের কারণে ভবিষ্যতে কাজ পেতে সমস্যা হবে।’

সাজ্জাদুল কবির নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘১৮শ’ ডলারের কাজ জয়বাংলা (বাতিল) হয়ে গেছে।’ শেখ আল মামুন নামের একজন বলেন, ‘যা হলো তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।’ আশরাফুল ইসলাম নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘এই পাঁচ দিনে তিনটা রানিং প্রজেক্ট ও ক্লায়েন্ট হারালাম। ক্ষতি কিভাবে কাটিয়ে উঠবো বুঝতে পারছি না।’

বাংলাদেশে ইন্টারনেট না থাকায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গিয়ে কাজ শুরু করেছেন অনেকে। তেমন একজন ফ্রিল্যান্সার হলেন নিখিল চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘সময়ে সঙ্গে তাল মেলাতে আমি ভারতে চলে এসেছি। আমি ছোট্ট একজন ফ্রিল্যান্সার। ওয়েবসাইট ডিজাইন করি।’

এ পরিস্থিতিতে অনেকে সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছেন। আকাশ হোসেন নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘মোট তিনজন ক্লায়েন্ট হারিয়েছি। এখন আমার হাতে কোনো কাজ নেই। আমাদের উচিত সরকারের কাছে প্রণোদনা চাওয়া। এটা আমাদের নায্য দাবি।’

বিবিসি, সিএনএন থেকে শুরু করে বিশ্বের বড় বড় গণমাধ্যম বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ প্রচার করেছে। এই সংবাদ অনেক ক্লায়েন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অনেকে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের প্রতি সদয়ও হয়েছেন। অনেক ক্লায়েন্ট প্রজেক্ট বাতিল করেনি। নিলুফা ইয়াসমিন লিমু নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘ক্লায়েন্টকে বুঝিয়ে বলেছিলাম। তিনি অনুগ্রহ করে প্রজেক্ট বাতিল করেনি। তবে ঘণ্টা ওয়েজ কাজগুলোর মধ্যে ৩০ ঘণ্টা কাজ করতে পারিনি। আমার এই ৩০ ঘণ্টা ক্ষতি। আমি প্রতি ঘণ্টায় ১৫ ডলার চার্জ করে থাকি।’

শারমিন আক্তার রিমা বলেন, ‘ক্লায়েন্ট হারাইনি। তবে এই ৫ দিনে প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে কাজ করতে না পারার কারণে।’ রফিকুল ইসলাম রাখি নামের একজন বলেন, ‘ভেবেছিলাম সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু ক্লায়েন্ট বাংলাদেশের অবস্থা আগে থেকে জানতেন। তাই এইবার বেঁচে গেলাম।’

অনেকে কাজ হারিয়ে পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন। রায়হান ইসলাম নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘একটা পার্মানেন্ট প্রজেক্ট হাতছাড়া হলো।’ এছাড়া এম.এন.ইসলাম সাজুর তিনটা, সাহিন হোসেনের ৪টা, আরাফাত হোসেনের ২টা- এমন অসংখ্যা ফ্রিল্যান্সার কাজ হারিয়ে এখন বেকার হয়ে পড়েছেন।

শুধু ফ্রিল্যান্সাররাই নয়, এই ৫ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় দেশের পুরো আইসিটি খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই ৫দিন অনলাইনভিত্তিক আর্থিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এক হিসাবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) জানিয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে পাঁচ দিনে সফটওয়্যার খাতের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০০ কোটি টাকার ওপরে।

এই সফটওয়ার খাত, ইকমার্স খাত ও ফ্রিল্যান্সাদের ক্ষতির হিসাব করলে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। বর্তমানে ইন্টারনেট চালু থাকলেও স্পিড খুবই কম। তাই এখনও পুরোপুরি কাজে ফিরতে পারেনি অনেক খাত।

ছবি

প্রতিদিনের মূল্য জানাতে ভোক্তা অধিদপ্তর নিয়ে এলো মোবাইল অ্যাপ-‘বাজারদর’

ছবি

সার আমদানিতে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

সিদ্ধান্ত ছিল তিন মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর, আমরা এক বছরেও বাড়াইনি : উপদেষ্টা

ছবি

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিজিএমইএর বৈঠক

ছবি

প্রাইম ব্যাংক ও প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এর মধ্যে পেরোল ব্যাংকিং চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

বৈশ্বিক অনিশ্চয়তায় সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে ব্রাজিল

ছবি

ডেলটা ফার্মার ৩১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, বেজার সঙ্গে লিজ চুক্তি

ছবি

কুঁড়ার তেল রফতানিতে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ

ছবি

বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষর

ছবি

ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার

ছবি

১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহে ২৮.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

ছবি

দুবাইয়ে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটিতে ২৬ ঘণ্টা ভোগান্তি

ছবি

২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ

ছবি

অধিকাংশ শেয়ারের দরপতন, সামান্য বেড়েছে লেনদেন

ছবি

অক্টোবরে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের প্রস্তুতি জাতিসংঘকে জানাতে হবে

ছবি

শ্রমিকের পাওনা পরিশোধে নাসা গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত

ছবি

একনেকে ৮৩৩৩ কোটি টাকার ১৩ প্রকল্প অনুমোদন

ছবি

ঢাকায় নিরাপত্তা প্রযুক্তির সর্বশেষ উদ্ভাবন নিয়ে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী

ছবি

পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মুখপাত্র মেজবাউল

ছবি

প্রথম চালানে ভারতে গেল সাড়ে ৩৭ টন ইলিশ

ছবি

তাপমাত্রা বাড়ায় বাংলাদেশের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা: বিশ্বব্যাংক

ছবি

পাঁচ বেসরকারি শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করার প্রথম ধাপে প্রশাসক বসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পেছানোর বিরোধিতা করছে

ছবি

শেয়ারবাজারে লেনদেন নামলো ৬শ’ কোটি টাকার ঘরে

ছবি

ব্যবসা মাঝে মন্থর ছিল, এখন একটু ভালো: অর্থ উপদেষ্টা.

ছবি

অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরে আশাবাদী জাপানি রাষ্ট্রদূত

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকে সভা: একীভূত হচ্ছে পাঁচ ব্যাংক, বসছে প্রশাসক

ছবি

বিজিএমইএ–মার্কিন প্রতিনিধিদল বৈঠক: শুল্ক কমাতে আহ্বান

ছবি

জুলাই-আগস্টে এডিপি বাস্তবায়ন ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ

ছবি

বিবিএসের নাম পরিবর্তন ও তদারক পরিষদ রাখার সুপারিশ

ছবি

শ্রম আইন সংশোধন দ্রুত শেষ করার তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের

ছবি

নগদ অর্থের ব্যবহার কমাতে আসছে একীভূত পেমেন্ট সিস্টেম: গভর্নর

ছবি

আড়াই মাসে ১৩৯ কোটি ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

ডিজিটাল ব্যাংক খুলতে আবেদনের সময় বাড়লো ২ নভেম্বর পর্যন্ত

ছবি

পুঁজিবাজারে সূচকের নামমাত্র উত্থান, লেনদেন আরও তলানিতে

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে গড়ে খরচ বাড়লো ৪১ শতাংশ

tab

ইন্টারনেট বন্ধের কারণে কাজ হারিয়ে ফ্রিল্যান্সারদের আহাজারি

রেজাউল করিম

শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪

টানা ৫ দিন ইন্টারনেট না থাকায় কাজ হারিয়ে আহাজারি করছেন দেশের প্রায় ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সার। কেউ কেউ হাতের সব কাজ হারিয়ে পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ এক বা দুটি কাজ নিয়ে কোনোমতে টিকে আছেন, সেই কাজগুলো শেষ হলো তারাও বেকার হয়ে পড়বেন। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য তৈরি ফেইসবুক গ্রুপগুলোতে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এই হতাশা, আহাজারি লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ একেবারে ভেঙে পড়েছে। কেউ এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছেন।

সারাবিশ্বের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস হলো ‘আপওয়ার্ক’। ওডেক্স ও ফ্রিল্যান্সার নামের দুইটি কোম্পানি একীভূত হয়ে এই নামকরণ করেছে। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের সবচেয়ে বড় কমিউনিটি হলো, ‘আপওয়ার্ক বাংলাদেশ’। বৃহস্পতিবার ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর আপওয়ার্ক বাংলাদেশের ফেইসবুক গ্রুপে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেন ফ্রিল্যান্সাররা। কাজ হারিয়ে কেউ কেউ এখন পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন, অথচ এই ক্যারিয়ার তৈরি করতে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পরিশ্রম করে যেতে হয়েছে তাদের।

নাইমুল ইসলাম রুবেল নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বৃহস্পতিবার বলেন, ‘এই ৫ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমার আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়ে গেছে। যতগুলো চলমান কাজ ছিল সবগুলো হারিয়েছি। ক্লায়েন্ট আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, আমার সঙ্গে আর কখনো কাজ করবে না। শুধু আপওয়ার্কই নয়, ফাইভারেও গিগ, রেসপন্স রেট ডাউন হয়ে গেছে। বুঝতে পারছি না, এখন আমি কি করবো।’

সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে, রনজন কায়াস নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘এই পাঁচ দিনে ৩০টি কাজ হারালাম। কায়েন্ট বলছে, ভবিষ্যতে আর কোনো কাজ দিবে না। এই ক্ষতিপূরণ আমাকে কে দেবে?’ সজিব চৌধুরী নামের একজন বলেন, ‘এই পাঁচ দিনে আমার ১ হাজার ডলার ক্ষতি হয়েছে। আমার মতো ছোট্ট ফ্রিল্যান্সারের এই অবস্থা, জানি না বাকিদের কি অবস্থা?’

সাকিব হোসেন নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘অনেক আগে থেকে মার্কেটপ্লেসে কাজ পাচ্ছিলাম না। বাইরের ৪টি চলমান প্রজেক্ট হাতে ছিল। সেগুলো এখন চান্দের দেশে চলে গেছে (বাতিল হয়েছে)।’ রোকুনুজ্জামান নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘২৫০ ডলারের একটা কাজ হারালাম। আর আগের করা একটা কাজের টাকা পেলাম না। কারণ ক্লায়েন্ট আমার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ক্লায়েন্টদের প্রধান শর্ত থাকে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ রাখা যা আমি এই ৫ দিন করতে পারিনি।’

দীর্ঘ সময় কায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারায় অনেকের অ্যাকাউন্ট ব্যাড রেটিংয়ের শিকার হয়েছে। ফিরোজ হোসেন নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘দুইটা চলমান প্রজেক্ট বাতিল হয়েছে। তিনটা প্রজেক্ট একসেপ্ট করতে পারিনি। একটা ব্যাড রেটিং দিয়েছে। এই রেটিংয়ের কারণে ভবিষ্যতে কাজ পেতে সমস্যা হবে।’

সাজ্জাদুল কবির নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘১৮শ’ ডলারের কাজ জয়বাংলা (বাতিল) হয়ে গেছে।’ শেখ আল মামুন নামের একজন বলেন, ‘যা হলো তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।’ আশরাফুল ইসলাম নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘এই পাঁচ দিনে তিনটা রানিং প্রজেক্ট ও ক্লায়েন্ট হারালাম। ক্ষতি কিভাবে কাটিয়ে উঠবো বুঝতে পারছি না।’

বাংলাদেশে ইন্টারনেট না থাকায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গিয়ে কাজ শুরু করেছেন অনেকে। তেমন একজন ফ্রিল্যান্সার হলেন নিখিল চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘সময়ে সঙ্গে তাল মেলাতে আমি ভারতে চলে এসেছি। আমি ছোট্ট একজন ফ্রিল্যান্সার। ওয়েবসাইট ডিজাইন করি।’

এ পরিস্থিতিতে অনেকে সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছেন। আকাশ হোসেন নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘মোট তিনজন ক্লায়েন্ট হারিয়েছি। এখন আমার হাতে কোনো কাজ নেই। আমাদের উচিত সরকারের কাছে প্রণোদনা চাওয়া। এটা আমাদের নায্য দাবি।’

বিবিসি, সিএনএন থেকে শুরু করে বিশ্বের বড় বড় গণমাধ্যম বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ প্রচার করেছে। এই সংবাদ অনেক ক্লায়েন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অনেকে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের প্রতি সদয়ও হয়েছেন। অনেক ক্লায়েন্ট প্রজেক্ট বাতিল করেনি। নিলুফা ইয়াসমিন লিমু নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘ক্লায়েন্টকে বুঝিয়ে বলেছিলাম। তিনি অনুগ্রহ করে প্রজেক্ট বাতিল করেনি। তবে ঘণ্টা ওয়েজ কাজগুলোর মধ্যে ৩০ ঘণ্টা কাজ করতে পারিনি। আমার এই ৩০ ঘণ্টা ক্ষতি। আমি প্রতি ঘণ্টায় ১৫ ডলার চার্জ করে থাকি।’

শারমিন আক্তার রিমা বলেন, ‘ক্লায়েন্ট হারাইনি। তবে এই ৫ দিনে প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে কাজ করতে না পারার কারণে।’ রফিকুল ইসলাম রাখি নামের একজন বলেন, ‘ভেবেছিলাম সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু ক্লায়েন্ট বাংলাদেশের অবস্থা আগে থেকে জানতেন। তাই এইবার বেঁচে গেলাম।’

অনেকে কাজ হারিয়ে পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন। রায়হান ইসলাম নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘একটা পার্মানেন্ট প্রজেক্ট হাতছাড়া হলো।’ এছাড়া এম.এন.ইসলাম সাজুর তিনটা, সাহিন হোসেনের ৪টা, আরাফাত হোসেনের ২টা- এমন অসংখ্যা ফ্রিল্যান্সার কাজ হারিয়ে এখন বেকার হয়ে পড়েছেন।

শুধু ফ্রিল্যান্সাররাই নয়, এই ৫ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় দেশের পুরো আইসিটি খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই ৫দিন অনলাইনভিত্তিক আর্থিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এক হিসাবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) জানিয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে পাঁচ দিনে সফটওয়্যার খাতের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০০ কোটি টাকার ওপরে।

এই সফটওয়ার খাত, ইকমার্স খাত ও ফ্রিল্যান্সাদের ক্ষতির হিসাব করলে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। বর্তমানে ইন্টারনেট চালু থাকলেও স্পিড খুবই কম। তাই এখনও পুরোপুরি কাজে ফিরতে পারেনি অনেক খাত।

back to top