alt

অর্থ-বাণিজ্য

ইন্টারনেট বন্ধের কারণে কাজ হারিয়ে ফ্রিল্যান্সারদের আহাজারি

রেজাউল করিম : শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪

টানা ৫ দিন ইন্টারনেট না থাকায় কাজ হারিয়ে আহাজারি করছেন দেশের প্রায় ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সার। কেউ কেউ হাতের সব কাজ হারিয়ে পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ এক বা দুটি কাজ নিয়ে কোনোমতে টিকে আছেন, সেই কাজগুলো শেষ হলো তারাও বেকার হয়ে পড়বেন। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য তৈরি ফেইসবুক গ্রুপগুলোতে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এই হতাশা, আহাজারি লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ একেবারে ভেঙে পড়েছে। কেউ এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছেন।

সারাবিশ্বের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস হলো ‘আপওয়ার্ক’। ওডেক্স ও ফ্রিল্যান্সার নামের দুইটি কোম্পানি একীভূত হয়ে এই নামকরণ করেছে। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের সবচেয়ে বড় কমিউনিটি হলো, ‘আপওয়ার্ক বাংলাদেশ’। বৃহস্পতিবার ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর আপওয়ার্ক বাংলাদেশের ফেইসবুক গ্রুপে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেন ফ্রিল্যান্সাররা। কাজ হারিয়ে কেউ কেউ এখন পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন, অথচ এই ক্যারিয়ার তৈরি করতে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পরিশ্রম করে যেতে হয়েছে তাদের।

নাইমুল ইসলাম রুবেল নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বৃহস্পতিবার বলেন, ‘এই ৫ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমার আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়ে গেছে। যতগুলো চলমান কাজ ছিল সবগুলো হারিয়েছি। ক্লায়েন্ট আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, আমার সঙ্গে আর কখনো কাজ করবে না। শুধু আপওয়ার্কই নয়, ফাইভারেও গিগ, রেসপন্স রেট ডাউন হয়ে গেছে। বুঝতে পারছি না, এখন আমি কি করবো।’

সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে, রনজন কায়াস নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘এই পাঁচ দিনে ৩০টি কাজ হারালাম। কায়েন্ট বলছে, ভবিষ্যতে আর কোনো কাজ দিবে না। এই ক্ষতিপূরণ আমাকে কে দেবে?’ সজিব চৌধুরী নামের একজন বলেন, ‘এই পাঁচ দিনে আমার ১ হাজার ডলার ক্ষতি হয়েছে। আমার মতো ছোট্ট ফ্রিল্যান্সারের এই অবস্থা, জানি না বাকিদের কি অবস্থা?’

সাকিব হোসেন নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘অনেক আগে থেকে মার্কেটপ্লেসে কাজ পাচ্ছিলাম না। বাইরের ৪টি চলমান প্রজেক্ট হাতে ছিল। সেগুলো এখন চান্দের দেশে চলে গেছে (বাতিল হয়েছে)।’ রোকুনুজ্জামান নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘২৫০ ডলারের একটা কাজ হারালাম। আর আগের করা একটা কাজের টাকা পেলাম না। কারণ ক্লায়েন্ট আমার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ক্লায়েন্টদের প্রধান শর্ত থাকে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ রাখা যা আমি এই ৫ দিন করতে পারিনি।’

দীর্ঘ সময় কায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারায় অনেকের অ্যাকাউন্ট ব্যাড রেটিংয়ের শিকার হয়েছে। ফিরোজ হোসেন নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘দুইটা চলমান প্রজেক্ট বাতিল হয়েছে। তিনটা প্রজেক্ট একসেপ্ট করতে পারিনি। একটা ব্যাড রেটিং দিয়েছে। এই রেটিংয়ের কারণে ভবিষ্যতে কাজ পেতে সমস্যা হবে।’

সাজ্জাদুল কবির নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘১৮শ’ ডলারের কাজ জয়বাংলা (বাতিল) হয়ে গেছে।’ শেখ আল মামুন নামের একজন বলেন, ‘যা হলো তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।’ আশরাফুল ইসলাম নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘এই পাঁচ দিনে তিনটা রানিং প্রজেক্ট ও ক্লায়েন্ট হারালাম। ক্ষতি কিভাবে কাটিয়ে উঠবো বুঝতে পারছি না।’

বাংলাদেশে ইন্টারনেট না থাকায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গিয়ে কাজ শুরু করেছেন অনেকে। তেমন একজন ফ্রিল্যান্সার হলেন নিখিল চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘সময়ে সঙ্গে তাল মেলাতে আমি ভারতে চলে এসেছি। আমি ছোট্ট একজন ফ্রিল্যান্সার। ওয়েবসাইট ডিজাইন করি।’

এ পরিস্থিতিতে অনেকে সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছেন। আকাশ হোসেন নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘মোট তিনজন ক্লায়েন্ট হারিয়েছি। এখন আমার হাতে কোনো কাজ নেই। আমাদের উচিত সরকারের কাছে প্রণোদনা চাওয়া। এটা আমাদের নায্য দাবি।’

বিবিসি, সিএনএন থেকে শুরু করে বিশ্বের বড় বড় গণমাধ্যম বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ প্রচার করেছে। এই সংবাদ অনেক ক্লায়েন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অনেকে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের প্রতি সদয়ও হয়েছেন। অনেক ক্লায়েন্ট প্রজেক্ট বাতিল করেনি। নিলুফা ইয়াসমিন লিমু নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘ক্লায়েন্টকে বুঝিয়ে বলেছিলাম। তিনি অনুগ্রহ করে প্রজেক্ট বাতিল করেনি। তবে ঘণ্টা ওয়েজ কাজগুলোর মধ্যে ৩০ ঘণ্টা কাজ করতে পারিনি। আমার এই ৩০ ঘণ্টা ক্ষতি। আমি প্রতি ঘণ্টায় ১৫ ডলার চার্জ করে থাকি।’

শারমিন আক্তার রিমা বলেন, ‘ক্লায়েন্ট হারাইনি। তবে এই ৫ দিনে প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে কাজ করতে না পারার কারণে।’ রফিকুল ইসলাম রাখি নামের একজন বলেন, ‘ভেবেছিলাম সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু ক্লায়েন্ট বাংলাদেশের অবস্থা আগে থেকে জানতেন। তাই এইবার বেঁচে গেলাম।’

অনেকে কাজ হারিয়ে পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন। রায়হান ইসলাম নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘একটা পার্মানেন্ট প্রজেক্ট হাতছাড়া হলো।’ এছাড়া এম.এন.ইসলাম সাজুর তিনটা, সাহিন হোসেনের ৪টা, আরাফাত হোসেনের ২টা- এমন অসংখ্যা ফ্রিল্যান্সার কাজ হারিয়ে এখন বেকার হয়ে পড়েছেন।

শুধু ফ্রিল্যান্সাররাই নয়, এই ৫ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় দেশের পুরো আইসিটি খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই ৫দিন অনলাইনভিত্তিক আর্থিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এক হিসাবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) জানিয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে পাঁচ দিনে সফটওয়্যার খাতের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০০ কোটি টাকার ওপরে।

এই সফটওয়ার খাত, ইকমার্স খাত ও ফ্রিল্যান্সাদের ক্ষতির হিসাব করলে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। বর্তমানে ইন্টারনেট চালু থাকলেও স্পিড খুবই কম। তাই এখনও পুরোপুরি কাজে ফিরতে পারেনি অনেক খাত।

ছবি

বাংলাদেশে ওয়ানপ্লাস-এর প্রথম ফ্ল্যাগশিপ স্টোর উদ্বোধন

ছবি

পুষ্টিগ্রাম: বাড়ির আঙিনায় নিরাপদ সবজি চাষে ভাগ্যবদল

ছবি

বাজারে চাঁদাবাজি করলে ডিসিদের ব্যবস্থা নিতে বলেছি : অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

চলতি বছরে সোনার দাম বেড়েছে ২১ শতাংশ, কেনা বন্ধ রেখেছে চীন

ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামছে রিজার্ভ

‘আশা সবাই দেখায়, আসলে আমরা বলির পাঁঠা’,‘চারিদিকের অবস্থা খারাপ’

ছবি

বেক্সিমকো গ্রুপের সম্পদ দেখভালে রিসিভার নিয়োগে উচ্চ আদালতের রুল

ছবি

বন্যা ও অচলাবস্থার কারণে পণ্যবাজারে স্বস্তি দিতে শুল্ক ছাড়

ছবি

ইসলামী ব্যাংকের ঋণের অর্ধেকের বেশি নিয়েছে এস আলম

ছবি

শেয়ারবাজারে ইতিহাস, ৪১০০ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে লিন্ডে বিডি

ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি: আমানতকারীদের স্বার্থে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

ঋণ খেলাপি নিয়ন্ত্রণে তিনটি টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত

ছবি

বড় ঋণ খেলাপিদের সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে ঋণ আদায়ে উদ্যোগ: বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

পোশাক কারখানা খুলে দিতে বিজিএমইএ’র সিদ্ধান্ত, যৌথ অভিযান শুরু

ছবি

স্পট মার্কেট থেকে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন

ছবি

রেজার ক্যাপিটালের ‘সিরিজ এ’ বিনিয়োগ পেল আইফার্মার

ছবি

বিকাশে আইডিএলসি লোনের কিস্তি পরিশোধের সুযোগ

ছবি

সরানো হল সালমান এফ রহমানকে, আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহমুদ হোসেন

ছবি

সূচকের ওঠানামায় পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে

ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বাড়লো ৬৬ হাজার কোটি টাকা

ছবি

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা আল আরাফাহ ও কমার্স ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন

ছবি

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ রেকর্ড পরিমাণে, জুন শেষে ছাড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার কোটি

ছবি

পর্ষদ পুনর্গঠন করা ব্যাংকের সংকট নিয়ে বসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

বিএসইসির কমিশনার হলেন ফারজানা লালারুখ

ছবি

ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গুঁড়া দুধ ছাড়া সব পণ্য আমদানির অনুমতি

ছবি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন, নিয়োগ পেলেন সাত স্বতন্ত্র পরিচালক

ছবি

সূচকের উত্থানে পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন

ছবি

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে সিআইডির অনুসন্ধান

ছবি

সেপ্টেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম কমালো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

ছবি

এক্সিম ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন

ছবি

ডিমের দাম বেড়েছে, কমেছে সবজির

ছবি

বাজারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন স্যামসাংয়ের নতুন রেফ্রিজারেটর

ছবি

দেশের বেকারত্বের হার বৃদ্ধি: বিবিএসের জরিপ

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট মুনাফা ১৫,১০০ কোটি টাকা

ছবি

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সচিব আকিজ উদ্দিনের ব্যাংক হিসাব জব্দ

ছবি

সালমান এফ রহমান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ

tab

অর্থ-বাণিজ্য

ইন্টারনেট বন্ধের কারণে কাজ হারিয়ে ফ্রিল্যান্সারদের আহাজারি

রেজাউল করিম

শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪

টানা ৫ দিন ইন্টারনেট না থাকায় কাজ হারিয়ে আহাজারি করছেন দেশের প্রায় ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সার। কেউ কেউ হাতের সব কাজ হারিয়ে পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ এক বা দুটি কাজ নিয়ে কোনোমতে টিকে আছেন, সেই কাজগুলো শেষ হলো তারাও বেকার হয়ে পড়বেন। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য তৈরি ফেইসবুক গ্রুপগুলোতে বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) এই হতাশা, আহাজারি লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ একেবারে ভেঙে পড়েছে। কেউ এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছেন।

সারাবিশ্বের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস হলো ‘আপওয়ার্ক’। ওডেক্স ও ফ্রিল্যান্সার নামের দুইটি কোম্পানি একীভূত হয়ে এই নামকরণ করেছে। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের সবচেয়ে বড় কমিউনিটি হলো, ‘আপওয়ার্ক বাংলাদেশ’। বৃহস্পতিবার ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর আপওয়ার্ক বাংলাদেশের ফেইসবুক গ্রুপে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেন ফ্রিল্যান্সাররা। কাজ হারিয়ে কেউ কেউ এখন পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন, অথচ এই ক্যারিয়ার তৈরি করতে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পরিশ্রম করে যেতে হয়েছে তাদের।

নাইমুল ইসলাম রুবেল নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বৃহস্পতিবার বলেন, ‘এই ৫ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমার আপওয়ার্ক অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়ে গেছে। যতগুলো চলমান কাজ ছিল সবগুলো হারিয়েছি। ক্লায়েন্ট আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, আমার সঙ্গে আর কখনো কাজ করবে না। শুধু আপওয়ার্কই নয়, ফাইভারেও গিগ, রেসপন্স রেট ডাউন হয়ে গেছে। বুঝতে পারছি না, এখন আমি কি করবো।’

সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে, রনজন কায়াস নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘এই পাঁচ দিনে ৩০টি কাজ হারালাম। কায়েন্ট বলছে, ভবিষ্যতে আর কোনো কাজ দিবে না। এই ক্ষতিপূরণ আমাকে কে দেবে?’ সজিব চৌধুরী নামের একজন বলেন, ‘এই পাঁচ দিনে আমার ১ হাজার ডলার ক্ষতি হয়েছে। আমার মতো ছোট্ট ফ্রিল্যান্সারের এই অবস্থা, জানি না বাকিদের কি অবস্থা?’

সাকিব হোসেন নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘অনেক আগে থেকে মার্কেটপ্লেসে কাজ পাচ্ছিলাম না। বাইরের ৪টি চলমান প্রজেক্ট হাতে ছিল। সেগুলো এখন চান্দের দেশে চলে গেছে (বাতিল হয়েছে)।’ রোকুনুজ্জামান নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘২৫০ ডলারের একটা কাজ হারালাম। আর আগের করা একটা কাজের টাকা পেলাম না। কারণ ক্লায়েন্ট আমার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ক্লায়েন্টদের প্রধান শর্ত থাকে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ রাখা যা আমি এই ৫ দিন করতে পারিনি।’

দীর্ঘ সময় কায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারায় অনেকের অ্যাকাউন্ট ব্যাড রেটিংয়ের শিকার হয়েছে। ফিরোজ হোসেন নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘দুইটা চলমান প্রজেক্ট বাতিল হয়েছে। তিনটা প্রজেক্ট একসেপ্ট করতে পারিনি। একটা ব্যাড রেটিং দিয়েছে। এই রেটিংয়ের কারণে ভবিষ্যতে কাজ পেতে সমস্যা হবে।’

সাজ্জাদুল কবির নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘১৮শ’ ডলারের কাজ জয়বাংলা (বাতিল) হয়ে গেছে।’ শেখ আল মামুন নামের একজন বলেন, ‘যা হলো তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।’ আশরাফুল ইসলাম নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘এই পাঁচ দিনে তিনটা রানিং প্রজেক্ট ও ক্লায়েন্ট হারালাম। ক্ষতি কিভাবে কাটিয়ে উঠবো বুঝতে পারছি না।’

বাংলাদেশে ইন্টারনেট না থাকায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গিয়ে কাজ শুরু করেছেন অনেকে। তেমন একজন ফ্রিল্যান্সার হলেন নিখিল চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘সময়ে সঙ্গে তাল মেলাতে আমি ভারতে চলে এসেছি। আমি ছোট্ট একজন ফ্রিল্যান্সার। ওয়েবসাইট ডিজাইন করি।’

এ পরিস্থিতিতে অনেকে সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়েছেন। আকাশ হোসেন নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘মোট তিনজন ক্লায়েন্ট হারিয়েছি। এখন আমার হাতে কোনো কাজ নেই। আমাদের উচিত সরকারের কাছে প্রণোদনা চাওয়া। এটা আমাদের নায্য দাবি।’

বিবিসি, সিএনএন থেকে শুরু করে বিশ্বের বড় বড় গণমাধ্যম বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ প্রচার করেছে। এই সংবাদ অনেক ক্লায়েন্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অনেকে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের প্রতি সদয়ও হয়েছেন। অনেক ক্লায়েন্ট প্রজেক্ট বাতিল করেনি। নিলুফা ইয়াসমিন লিমু নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘ক্লায়েন্টকে বুঝিয়ে বলেছিলাম। তিনি অনুগ্রহ করে প্রজেক্ট বাতিল করেনি। তবে ঘণ্টা ওয়েজ কাজগুলোর মধ্যে ৩০ ঘণ্টা কাজ করতে পারিনি। আমার এই ৩০ ঘণ্টা ক্ষতি। আমি প্রতি ঘণ্টায় ১৫ ডলার চার্জ করে থাকি।’

শারমিন আক্তার রিমা বলেন, ‘ক্লায়েন্ট হারাইনি। তবে এই ৫ দিনে প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে কাজ করতে না পারার কারণে।’ রফিকুল ইসলাম রাখি নামের একজন বলেন, ‘ভেবেছিলাম সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু ক্লায়েন্ট বাংলাদেশের অবস্থা আগে থেকে জানতেন। তাই এইবার বেঁচে গেলাম।’

অনেকে কাজ হারিয়ে পুরোপুরি বেকার হয়ে পড়েছেন। রায়হান ইসলাম নামের একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, ‘একটা পার্মানেন্ট প্রজেক্ট হাতছাড়া হলো।’ এছাড়া এম.এন.ইসলাম সাজুর তিনটা, সাহিন হোসেনের ৪টা, আরাফাত হোসেনের ২টা- এমন অসংখ্যা ফ্রিল্যান্সার কাজ হারিয়ে এখন বেকার হয়ে পড়েছেন।

শুধু ফ্রিল্যান্সাররাই নয়, এই ৫ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় দেশের পুরো আইসিটি খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই ৫দিন অনলাইনভিত্তিক আর্থিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এক হিসাবে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) জানিয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে পাঁচ দিনে সফটওয়্যার খাতের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০০ কোটি টাকার ওপরে।

এই সফটওয়ার খাত, ইকমার্স খাত ও ফ্রিল্যান্সাদের ক্ষতির হিসাব করলে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। বর্তমানে ইন্টারনেট চালু থাকলেও স্পিড খুবই কম। তাই এখনও পুরোপুরি কাজে ফিরতে পারেনি অনেক খাত।

back to top