alt

তৈরি পোশাক শিল্প

বন্দরে কন্টেইনার জট, ক্রয়াদেশ নিয়েও শঙ্কা

রেজাউল করিম : মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ইস্যূকে কেন্দ্র করে চার দিন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কন্টেইনার জট সৃষ্টি হয়েছে বন্দরে। এই জটে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী দেশের তৈরি পোশাক খাত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে প্রায় ৯ হাজারেরও বেশি কন্টেইনার বন্দরে আটকে আছে। যথা সময়ে সেগুলো পাঠাতে পারছেন না ব্যবসায়িরা। এতে ভবিষ্যতে ক্রয়াদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এমন আশঙ্কা করছেন তারা। সোমবার (২৯ জুলাই) এই খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সোমবার কথা হয় বাংলাদেশে তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট রাকিবুল আলম চৌধুরীর সঙ্গে। একই সঙ্গে তিনি এইচকেসি অ্যাপারেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কন্টেইনার জট বর্তমানে একটা বড় সংকট তৈরি করেছে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি সংবাদকে বলেন, ‘চার দিন বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে শুধু তৈরি পোশাক খাতের ৯ হাজারেরও বেশি কন্টেইনার জট বেঁধে রয়েছে বন্দরে। এই কন্টেইনারগুলো সময় মতো পাঠাতে না পারলে ব্যবসায়ীরা সমস্যা পড়বে। এতে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য যাবে বায়ারদের কাছে।’

এই জট আগেও ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই জট আগেও ছিল। কিন্তু চার দিন কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে সংকট আরও বেড়েছে, আর বেশি কন্টেইনার জমে গেছে। আমরা ইতোমধ্যেই সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি, যেকোনো মূল্যেই যেন এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করা হয়।’

কোটা সংস্কার আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস আকার ধারণ করে। এরপরে সংঘাত আরও বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৯ জুলাই শুক্রবার রাত থেকে কারফিউ বা সান্ধ্য আইন জারি করে সরকার। এর ফলে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। চার দিন (১৯-২২ জুলাই) চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। গত মঙ্গলবার পর্যায়ক্রমে কারখানা চালুর পাশাপাশি বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও শুরু হয়। পরদিন বুধবার থেকে সব কারখানা আবার উৎপাদনে ফেরে। তবে সবকিছু আবার চালু হলেও আগের পুরোদমে কার্যক্রমে যেতে পারেনি কোনো কার্যক্রমই।

এই পরিস্থিতিতে কেউ কেউ কার্গো বিমানে করে পণ্য পরিবহন শুরু করেছে। তবে এতে খরচ বেশি। তাই কার্গো বিমানে করে পণ্য পরিবহন করে কতদিন সংকট মোকাবিলা করতে পারবেন সেটি নিয়েও শঙ্কিত ব্যবসায়িরা। সোমবার কথা হয় বিজিএমইএ এর পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেলের সঙ্গে। একইসঙ্গে তিনি ডেনিম এক্সপার্টেও পরিচালক। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘কার্গো বিমানে করে পণ্য পরিবহন আমরা আগেও করতাম। এটা নতুন কিছু নয়। তবে বন্দরে জট লাগার কারণে কার্গোতে পণ্য পরিবহনের পরিমান হয়তো বেড়েছে। আমরা চাচ্ছি, খুব দ্রুত যেন সংকট কেটে যায়।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংবাদ এখন শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ইতোমধ্যেই বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের এই আন্দোলন নিয়ে সংবাদ প্রচার করেছে। এতে উদিয়মান অর্থনীতি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো।

ইতোমধ্যেই এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)। সংগঠনটির সভাপতি জাভেদ আখতার সম্প্রতি বলেছেন, ‘একটি নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের বিশ্বাসযোগ্যতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। ‘শাটডাউনে’ দেশের অর্থনীতিতে আনুমানিক ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু এফএমসিজি বা দ্রুত বিক্রি হয়, এমন পণ্যের ব্যবসা-সংশ্লিষ্ট শিল্পে ১০ কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থা ও পরিচালন উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত হওয়ায় ব্যবসায়ে ক্ষতি হয়েছে।’

এই অবস্থায় ভবিষ্যৎ ক্রয়াদেশ নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘গতকাল বায়ারস ফোরামের সঙ্গে মিটিং হলো। তারা এখনও আমাদের প্রতি ইতিবাচক রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কিভাবে উৎপাদন ও রপ্তানি কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারি, সেই বিষয়ে আমাদের পরামর্শও দিয়েছেন। যদি কিছুদিনের মধ্যে আমরা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারি অর্থাৎ সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়, তাহলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।’

তবে এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যদি আরও দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে ক্রয়াদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এমন আশঙ্কা মহিউদ্দিন রুবেলের। তিনি বলেন, ‘একটা খারাপ পরিস্থিতি যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে তাহলে তার প্রভাব তো পড়বেই। এটা নিয়ে যেমন আমাদের শঙ্কা রয়েছে তেমন আমাদের ইতিবাচক প্রত্যাশাও রয়েছে। আমরা আশা করছি, দেশ খুব দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। ইতোমধ্যেই আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে এসব জানিয়েছি।’

তৈরি পোশাক খাত দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী খাত। মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে এই খাত থেকে। প্রতিবছরই এই খাতে রপ্তানি বাড়ছে।

বিজিএমইএ’র পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করোনাভাইরাস মহামারীর আগে, অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সামগ্রিক রপ্তানি আয় ছিল ৪০ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার, যেখানে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ পোশাক রপ্তানির শেয়ার ছিল ৮৪ দশমিক ২১ শতাংশ। সে বছরটিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি বেড়েছিল।

এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছরে কোভিড-১৯ এর ধাক্কায় আমাদের পোশাক রপ্তানি নেমে আসে ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে। ২০২০-২১ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, যা প্রায় ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি।

২০২২-২৩ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৪৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার, যেখানে মোট রপ্তানিতে পোশাকের শেয়ার পৌঁছেছে ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আর সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এই শেয়ার ৮৫ দশমিক ৪২ শতাংশে পৌঁছেছে এবং এ সময়টিতে আমাদের অর্জিত প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০২৪ ক্যালেন্ডার বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে পোশাক রপ্তানি ছিল ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার, যা এই সময়ে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৬ দশমিক ২৪ শতাংশ।

তৈরি পোশাক খাত প্রতিবছরই বড় হচ্ছে। প্রতিবছরই নতুন নতুন বাজারে প্রবেশ করছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক। আর এই উদীয়মান একটি শিল্পের জন্য এমন পরিস্থিতি মুখোমুখি হওয়া খুব চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

ছবি

দেশের বাজারে শাওমি ব্ল্যাকশার্ক ব্র্যান্ডের প্যাড ৭ নিয়ে এলো টেকটাইম

ছবি

জুলাই-সেপ্টেম্বরে শুল্ক-কর আদায়ে ঘাটতি ৯ হাজার কোটি টাকা

ছবি

তিন দেশ থেকে এক লাখ মেট্রিক টন সার কিনবে সরকার

ছবি

টানা রেকর্ডের পর কমলো স্বর্ণ-রুপার দাম

ছবি

আল-আরাফাহ্ ব্যাংক ও সমাধান সার্ভিসেসের চুক্তি

ছবি

শিশুখাদ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিনের শর্ত শিথিল

ছবি

পুঁজিবাজারে গুজব ছড়াতে দেয়া যাবে না: আনিসুজ্জামান চৌধুরী

ছবি

রিজার্ভ ছাড়ালো ৩২ বিলিয়ন ডলার

ছবি

আইসিসিবিতে বাংলাদেশ-চীন গ্রিন টেক্সটাইল এক্সপো শুরু

ছবি

ডিজিটাল ব্যাংক করতে চায় প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স

ছবি

বেড়েছে ডলারের দাম

ছবি

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি. এর ৪১৮তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

ছবি

চার মাস পর ফের ৩০০ কোটি টাকার ঘরে শেয়ারবাজারের লেনদেন

ছবি

পুঁজিবাজারে শিবলী-রিয়াজ আজীবন নিষিদ্ধ

ছবি

দরপত্র ছাড়া ২৮ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল কিনবে সরকার

ছবি

সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ ও জেনারেল হাসপাতালে ব্যবহার হচ্ছে ওয়ালটনের স্মার্ট ইনভার্টার চিলার

ছবি

বিনিয়োগ ঝুঁকি ও সহনশীলতা সূচকে ১৯৩ তম অবস্থানে বাংলাদেশ: হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স

ছবি

প্রথম প্রান্তিকে এডিপি বাস্তবায়ন ৫ শতাংশ

ছবি

এলআর গ্লোবালের রিয়াজ ইসলাম শেয়ারবাজারে আজীবন নিষিদ্ধ

ছবি

আমদানি পণ্য ছাড় স্বাভাবিক হয়নি, ব্যবসায়ীরা কষছেন ক্ষতির হিসাব

ছবি

করাচি থেকে সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে: খাদ্য উপদেষ্টা

ছবি

ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন, চাল আমদানির অনুমতি সীমিত রাখার সুপারিশ

ছবি

বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার : বিডা চেয়ারম্যান

ছবি

দেশে একমাত্র মুনাফাকারী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক: বিটিএমএ সভাপতি

ছবি

নোভার্টিসের ওষুধ উৎপাদন শুরু করল নেভিয়ান

ছবি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গঠন হচ্ছে শরিয়াহ উপদেষ্টা পর্ষদ

ছবি

কারচুপি নয়, পরিসংখ্যানে পরোক্ষ অপব্যবহার হয়: পরিকল্পনা উপদেষ্টা

ছবি

নিয়োগ ও পদোন্নতি দেয়ার কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারীদের সম্মানী বাড়ল

ছবি

ঢাকায় তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী

ছবি

প্রাইম ব্যাংকের নতুন সিএফও হলেন মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন

ছবি

সূচকে বড় উত্থান হলেও লেনদেন তলানিতে

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কর্মবিরতি স্থগিত

ছবি

অবলোপন করা ঋণ আদায়ের ৫ শতাংশ পাবেন কর্মকর্তারা

ছবি

ড্যাপ সংশোধনী ও ইমারত বিধিমালা নীতিগত অনুমোদন

ছবি

কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি: এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন

ছবি

ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বিনিয়োগ সংস্থা একীভূত হবে: বিডা

tab

তৈরি পোশাক শিল্প

বন্দরে কন্টেইনার জট, ক্রয়াদেশ নিয়েও শঙ্কা

রেজাউল করিম

মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ইস্যূকে কেন্দ্র করে চার দিন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কন্টেইনার জট সৃষ্টি হয়েছে বন্দরে। এই জটে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী দেশের তৈরি পোশাক খাত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে প্রায় ৯ হাজারেরও বেশি কন্টেইনার বন্দরে আটকে আছে। যথা সময়ে সেগুলো পাঠাতে পারছেন না ব্যবসায়িরা। এতে ভবিষ্যতে ক্রয়াদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এমন আশঙ্কা করছেন তারা। সোমবার (২৯ জুলাই) এই খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সোমবার কথা হয় বাংলাদেশে তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট রাকিবুল আলম চৌধুরীর সঙ্গে। একই সঙ্গে তিনি এইচকেসি অ্যাপারেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কন্টেইনার জট বর্তমানে একটা বড় সংকট তৈরি করেছে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি সংবাদকে বলেন, ‘চার দিন বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে শুধু তৈরি পোশাক খাতের ৯ হাজারেরও বেশি কন্টেইনার জট বেঁধে রয়েছে বন্দরে। এই কন্টেইনারগুলো সময় মতো পাঠাতে না পারলে ব্যবসায়ীরা সমস্যা পড়বে। এতে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক তথ্য যাবে বায়ারদের কাছে।’

এই জট আগেও ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই জট আগেও ছিল। কিন্তু চার দিন কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে সংকট আরও বেড়েছে, আর বেশি কন্টেইনার জমে গেছে। আমরা ইতোমধ্যেই সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি, যেকোনো মূল্যেই যেন এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ করা হয়।’

কোটা সংস্কার আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস আকার ধারণ করে। এরপরে সংঘাত আরও বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৯ জুলাই শুক্রবার রাত থেকে কারফিউ বা সান্ধ্য আইন জারি করে সরকার। এর ফলে কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। চার দিন (১৯-২২ জুলাই) চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। গত মঙ্গলবার পর্যায়ক্রমে কারখানা চালুর পাশাপাশি বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমও শুরু হয়। পরদিন বুধবার থেকে সব কারখানা আবার উৎপাদনে ফেরে। তবে সবকিছু আবার চালু হলেও আগের পুরোদমে কার্যক্রমে যেতে পারেনি কোনো কার্যক্রমই।

এই পরিস্থিতিতে কেউ কেউ কার্গো বিমানে করে পণ্য পরিবহন শুরু করেছে। তবে এতে খরচ বেশি। তাই কার্গো বিমানে করে পণ্য পরিবহন করে কতদিন সংকট মোকাবিলা করতে পারবেন সেটি নিয়েও শঙ্কিত ব্যবসায়িরা। সোমবার কথা হয় বিজিএমইএ এর পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেলের সঙ্গে। একইসঙ্গে তিনি ডেনিম এক্সপার্টেও পরিচালক। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘কার্গো বিমানে করে পণ্য পরিবহন আমরা আগেও করতাম। এটা নতুন কিছু নয়। তবে বন্দরে জট লাগার কারণে কার্গোতে পণ্য পরিবহনের পরিমান হয়তো বেড়েছে। আমরা চাচ্ছি, খুব দ্রুত যেন সংকট কেটে যায়।’

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংবাদ এখন শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ইতোমধ্যেই বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশের এই আন্দোলন নিয়ে সংবাদ প্রচার করেছে। এতে উদিয়মান অর্থনীতি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো।

ইতোমধ্যেই এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)। সংগঠনটির সভাপতি জাভেদ আখতার সম্প্রতি বলেছেন, ‘একটি নির্ভরযোগ্য বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের বিশ্বাসযোগ্যতা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। ‘শাটডাউনে’ দেশের অর্থনীতিতে আনুমানিক ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু এফএমসিজি বা দ্রুত বিক্রি হয়, এমন পণ্যের ব্যবসা-সংশ্লিষ্ট শিল্পে ১০ কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে। সরবরাহ ব্যবস্থা ও পরিচালন উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যাহত হওয়ায় ব্যবসায়ে ক্ষতি হয়েছে।’

এই অবস্থায় ভবিষ্যৎ ক্রয়াদেশ নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘গতকাল বায়ারস ফোরামের সঙ্গে মিটিং হলো। তারা এখনও আমাদের প্রতি ইতিবাচক রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কিভাবে উৎপাদন ও রপ্তানি কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারি, সেই বিষয়ে আমাদের পরামর্শও দিয়েছেন। যদি কিছুদিনের মধ্যে আমরা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারি অর্থাৎ সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়, তাহলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।’

তবে এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যদি আরও দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে ক্রয়াদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এমন আশঙ্কা মহিউদ্দিন রুবেলের। তিনি বলেন, ‘একটা খারাপ পরিস্থিতি যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে তাহলে তার প্রভাব তো পড়বেই। এটা নিয়ে যেমন আমাদের শঙ্কা রয়েছে তেমন আমাদের ইতিবাচক প্রত্যাশাও রয়েছে। আমরা আশা করছি, দেশ খুব দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। ইতোমধ্যেই আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে এসব জানিয়েছি।’

তৈরি পোশাক খাত দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী খাত। মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশই আসে এই খাত থেকে। প্রতিবছরই এই খাতে রপ্তানি বাড়ছে।

বিজিএমইএ’র পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করোনাভাইরাস মহামারীর আগে, অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সামগ্রিক রপ্তানি আয় ছিল ৪০ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার, যেখানে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ পোশাক রপ্তানির শেয়ার ছিল ৮৪ দশমিক ২১ শতাংশ। সে বছরটিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি বেড়েছিল।

এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছরে কোভিড-১৯ এর ধাক্কায় আমাদের পোশাক রপ্তানি নেমে আসে ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলারে। ২০২০-২১ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি ২৭ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, যা প্রায় ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি।

২০২২-২৩ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৪৬ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার, যেখানে মোট রপ্তানিতে পোশাকের শেয়ার পৌঁছেছে ৮৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ। আর সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এই শেয়ার ৮৫ দশমিক ৪২ শতাংশে পৌঁছেছে এবং এ সময়টিতে আমাদের অর্জিত প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০২৪ ক্যালেন্ডার বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে পোশাক রপ্তানি ছিল ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার, যা এই সময়ে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৬ দশমিক ২৪ শতাংশ।

তৈরি পোশাক খাত প্রতিবছরই বড় হচ্ছে। প্রতিবছরই নতুন নতুন বাজারে প্রবেশ করছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক। আর এই উদীয়মান একটি শিল্পের জন্য এমন পরিস্থিতি মুখোমুখি হওয়া খুব চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

back to top