রেজাউল করিম

মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০২৪

গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় ব্যাংক দখল করেছে এস আলম গ্রুপ

image

গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় ব্যাংক দখল করেছে এস আলম গ্রুপ

মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০২৪
রেজাউল করিম

কোনো ধরনের আইনের তোয়াক্কা না করে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় ব্যাংক দখল করেছে এস আলম গ্রুপ। ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু করেনি। উল্টো বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক বড় কর্তা এত বড় অনিয়মকে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ।

এস আলম গ্রুপ ব্যাংক দখলের শুরু ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। এরপর একে একে আরও কয়েকটি ব্যাংক দখল করেছে। আর কিছু ব্যাংক তারা নিজেরা খুলে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে দিয়েছে।

ইসলামী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে’ ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংককে ‘জামায়াতমুক্ত’ করার উদ্যোগ হিসেবে এর মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করা হয়। মালিকানা দেয়া হয় এস আলম গ্রুপকে। তৎকালীন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ইসলামী ব্যাংকের তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তাদের একটি হোটেলে নিয়ে ‘চাপ দিয়ে’ ব্যাংকটির মালিকানা পরিবর্তন করে।

মালিকানা পরিবর্তন হওয়ার পরই ব্যাংকটির অবস্থা নাজুক হতে শুরু করে। এক সময় যে ব্যাংক দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছিল সেই ব্যাংকটি ভুগতে শুরু করে তারল্য সংকটে। গত সাড়ে সাত বছরে নামে-বেনামে ব্যাংকটি থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ। এই অর্থ ব্যাংকটির মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশ। এই টাকা বের করতে কোনো নিয়মকানুন মানা হয়নি। এই টাকা বের করা হয়েছে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম, তার স্ত্রী, মেয়ের স্বামী, আত্মীয়সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে।

একই কায়দায় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দখল করে এস আলম গ্রুপ। সময়টা একই, ২০১৭ সাল। ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর রেজাউল হক (অব.) বলেন, ‘২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর ব্যাংকের এমডি, ভাইস চেয়ারম্যান ও আমাকে ডেকে নিয়ে যায় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। সেখানে তাদের কার্যালয়ে আমাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করানো হয়। এরপর আমার সঙ্গে দেখা করেন সাইফুল আলম, তার ভাই আবদুস সামাদ লাবু ও বেলাল আহমেদ। পরে সংস্থাটির মহাপরিচালক সাইফুল আবেদীন আমাকে জানান, ওপরের নির্দেশে এই মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে।’

ব্যাংকটি দখলের পর থেকে অবস্থা নাজুক হতে শুরু করে। ব্যাংকের গ্রাহকের আমানত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে পরিশোধ করার প্রক্রিয়া চলমান থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পরিচালিত চলতি হিসাবে ঘাটতি দিন দিন বাড়ছে। এ ছাড়া পটিয়ার লোকজনকে একচেটিয়া নিয়োগ দেয়ায় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ব্যাংকটিতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে পরিচালনা পর্ষদ দ্রুত ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি ‘এস আলমের আজ্ঞাবহ এমডি, ডিএমডিসহ সব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে অপসারণ’ করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

একইভাবে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক দখল করেছে এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটির ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক সরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। বাকি শেয়ার ছিল বিকল্পধারার সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নানের হাতে। ২০১৬ সালে আবদুল মান্নানের শেয়ার কিনে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। এরপর পটিয়া এলাকার লোকদের ব্যাপক হারে নিয়োগ দেয়া হয়। ব্যাংকটির ১ হাজার কর্মকর্তার মধ্যে ৭০০ জনই পটিয়া এলাকার।

কমার্স ব্যাংক থেকে বিভিন্নভাবে প্রায় ৬১০ কোটি টাকা ধার নেয় এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো। এসব ব্যাংক হলো ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। কিন্তু ওই টাকা ফেরত আসছে না। এর ফলে তারল্যসংকটে ভুগছে কমার্স ব্যাংক। ব্যাংকটি কর্মচারীদের স্থায়ী চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিচ্ছে।

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা বাকি ব্যাংকগুলো হলো, আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। নামে বেনামে ঋণ দিয়ে সেই টাকা নিজেদের পটেকে ঢুকিয়েছে এস আলম পরিবার। ব্যাংকিং নীতিমালার ন্যূনতম বাস্তবায়ন করা হয়নি এসব ব্যাংকে। কখনো নিজেদের লোকজন দিয়ে আবার কখনো সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় দিনের পর দিন অনিয়ম করেছে গেছে এই শিল্প গ্রুপটি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি হিসাবে ঘাটতি থাকায় নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে ‘টাকা ছাপিয়ে’ ও নানা ‘অভিনব সুবিধা’ দিয়ে এস আলম-নিয়ন্ত্রিত ছয়টি ব্যাংককে টিকিয়ে রেখেছিলেন সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এতে তৎকালীন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সায় ছিল। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরপরই আত্মগোপনে চলে যান সাবেক গভর্নর।

গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকিং খাতের ক্ষতগুলো সামনে আসতে শুরু করেছে। এমন অবস্থায় সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ৭টি ব্যাংকসহ মোট ১২টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং নীতি ও প্রবিধি বিভাগ কাজ শুরু করেছে। সকল দাপ্তরিক কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। দাপ্তরিক কাজ শেষ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নব-নিযুক্ত গভর্ণর ড. আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে। সোমবার (১৯ আগস্ট) এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা গেছে ইতোমধ্যেই ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

‘অর্থ-বাণিজ্য’ : আরও খবর

» রপ্তানিমুখী ১৫০টির বেশি সুপারির ট্রাক আটক বেনাপোল স্থলবন্দরে

» শেয়ারবাজারে মূলধন কমলো সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা

» চীনের ইউনান প্রদেশের বাণিজ্য বিভাগের সঙ্গে ইপিবির সমঝোতা

» মেঘনা ব্যাংকের এমডি হলেন সৈয়দ মিজানুর রহমান

» যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলো আরও ৬১ হাজার টন গম

» পর্যাপ্ত মজুদ সত্ত্বেও লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

» নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে খাতভিত্তিক নীতি কাঠামো প্রয়োজন, আলোচনায় বক্তারা

» ভরা মৌসুমেও সবজির দাম বাড়তি, হঠাৎ বেড়েছে পেঁয়াজ ও তেলের দাম

» পরপর চার মাস রপ্তানি কমেছে

» আইএলও’র কনভেনশন বাস্তবায়নের আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

» সিগারেট কোম্পানির ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি

» ঋণ খেলাপি কমাতে আংশিক অবলোপনে আরও ছাড় দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

» ইতিহাসের সবচেয়ে তলানিতে ডলারের বিপরিতে ভারতের রুপির দাম

» নারী সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট চালু করল সীমান্ত ব্যাংক

» বাংলাদেশ ব্যাংকে অর্থনীতির নবায়িত দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করলেন ইউআইইউর অধ্যাপক

» নভেম্বরে এক ব্যক্তি ও তিন প্রতিষ্ঠানকে ১৬ কোটি টাকা জরিমানা

» তেলের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের ‘কারণ দর্শাও’ নোটিস দিয়ে বৈঠকে ডেকেছে সরকার

» বিডা আয়োজিত সংলাপে ব্যবসায়ীরা বললেন, আমরা কর-সন্ত্রাস থেকে মুক্তি চাই

» অর্থনৈতিক গতি ফিরে আসা আগামী নির্বাচনের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে

» ‘খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে’

সম্প্রতি