ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকার নতুন করে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে যে, বাজারে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং জনগণের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
দেশে প্রতিদিন প্রায় ৫ কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে ডিমের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে জনগণের মাঝে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাই বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাময়িকভাবে সীমিত সময়ের জন্য ১২টি প্রতিষ্ঠানের ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমদানির এই অনুমতি আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
১২টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া আমদানির পরিমাণ
যে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হলো:
এটকম ইন্টারন্যাশনালকে ৩০ লাখ ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সরদার এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট ৫০ লাখ ডিম আমদানি করতে পারবে।
এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেড এবং মের্সাস সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজও ৫০ লাখ করে ডিম আমদানি করবে।
এএমআই এন্টারপ্রাইজ ৫ লাখ, মিতা এন্টারপ্রাইজ ৩ লাখ, এবং থ্রী স্টার এন্টারপ্রাইজ ৫০ লাখ ডিম আমদানির অনুমতি পেয়েছে।
ইমিকো ট্রেডিং কোং এবং বারাকাহ ইমেক্স অ্যান্ড ট্রেডিং ৫০ লাখ এবং ৩০ লাখ ডিম আমদানির সুযোগ পেয়েছে।
মান্নাত ট্রেডিং ৫০ লাখ, জারিন ট্রেডিং করপোরেশন ২ লাখ, এবং এ আর থ্রেড ইন্টারন্যাশনাল ৩০ লাখ ডিম আমদানি করবে।
ডিম আমদানির শর্তাবলি
সরকার ডিম আমদানির জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত আরোপ করেছে, যা আমদানিকারকদের মেনে চলতে হবে। শর্তগুলো নিম্নরূপ:
১. বিশ্ব প্রাণিস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে চলা: রফতানিকারক দেশের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বার্ড ফ্লুমুক্ত জোনিং বা কম্পার্টমেন্টালাইজেশনের সার্টিফিকেট দাখিল করতে হবে। এতে নিশ্চিত করতে হবে যে, আমদানিকৃত ডিমগুলি বার্ড ফ্লু থেকে মুক্ত।
২. স্বাস্থ্য সনদ দাখিল: আমদানিকৃত ডিমের প্রতিটি চালানের জন্য রফতানিকারক দেশের নির্ধারিত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দেওয়া এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (বার্ড ফ্লু) এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত মর্মে সনদ দাখিল করতে হবে।
৩. শুল্ক ও কর পরিশোধ: আমদানিকারকদের সরকার-নির্ধারিত শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হবে এবং অন্যান্য আইন ও বিধিবিধান মেনে চলতে হবে।
৪. সংগনিরোধ অবহিতকরণ: প্রতিটি ডিম আমদানির চালানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংগনিরোধ কর্মকর্তাকে অন্তত ১৫ দিন আগে অবহিত করতে হবে।
৫. অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল: আমদানির অনুমতি পাওয়ার পরবর্তী ৭ দিন পরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
৬. মেয়াদ: আমদানির অনুমতির মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিম আমদানির প্রয়োজনীয়তা
বর্তমানে বাজারে ডিমের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ জনগণ ভোগান্তিতে পড়েছে। প্রতিদিনের ডিমের চাহিদা পাঁচ কোটি হলেও, উৎপাদন ও সরবরাহের ঘাটতির কারণে বাজারে ডিমের মূল্য বেড়েই চলেছে। গত কয়েক মাসে ডিমের দাম দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে স্বল্প আয়ের মানুষদের খাদ্যতালিকা থেকে এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি বাদ পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজারে ডিমের দাম স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাবে। ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং জনগণের চাহিদা পূরণে সরকার ডিম আমদানির এই সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী ও কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিম আমদানির মাধ্যমে সাময়িকভাবে চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে এবং বাজারে অতিরিক্ত চাপে দাম কমে আসবে। তবে, দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।
ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে অতীতের অভিজ্ঞতা
এর আগেও সরকার বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে। পেঁয়াজ, চিনি এবং ভোজ্যতেলের মতো পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানির মাধ্যমে সাময়িকভাবে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে ডিমের ক্ষেত্রে আমদানির সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে বাজারে ডিমের মূল্য কমে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। যদিও আমদানি প্রক্রিয়ায় সময় লাগতে পারে, তারপরও আশা করা হচ্ছে শিগগিরই ডিমের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ
সরকার একদিকে ডিম আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে, অন্যদিকে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনাও নিয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মতে, দেশীয় পর্যায়ে উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা গেলে ভবিষ্যতে আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং দেশীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪
ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকার নতুন করে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে যে, বাজারে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং জনগণের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
দেশে প্রতিদিন প্রায় ৫ কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে ডিমের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে জনগণের মাঝে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাই বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাময়িকভাবে সীমিত সময়ের জন্য ১২টি প্রতিষ্ঠানের ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমদানির এই অনুমতি আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
১২টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া আমদানির পরিমাণ
যে ১২টি প্রতিষ্ঠানকে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হলো:
এটকম ইন্টারন্যাশনালকে ৩০ লাখ ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সরদার এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট ৫০ লাখ ডিম আমদানি করতে পারবে।
এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেড এবং মের্সাস সাজ্জাদ এন্টারপ্রাইজও ৫০ লাখ করে ডিম আমদানি করবে।
এএমআই এন্টারপ্রাইজ ৫ লাখ, মিতা এন্টারপ্রাইজ ৩ লাখ, এবং থ্রী স্টার এন্টারপ্রাইজ ৫০ লাখ ডিম আমদানির অনুমতি পেয়েছে।
ইমিকো ট্রেডিং কোং এবং বারাকাহ ইমেক্স অ্যান্ড ট্রেডিং ৫০ লাখ এবং ৩০ লাখ ডিম আমদানির সুযোগ পেয়েছে।
মান্নাত ট্রেডিং ৫০ লাখ, জারিন ট্রেডিং করপোরেশন ২ লাখ, এবং এ আর থ্রেড ইন্টারন্যাশনাল ৩০ লাখ ডিম আমদানি করবে।
ডিম আমদানির শর্তাবলি
সরকার ডিম আমদানির জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত আরোপ করেছে, যা আমদানিকারকদের মেনে চলতে হবে। শর্তগুলো নিম্নরূপ:
১. বিশ্ব প্রাণিস্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে চলা: রফতানিকারক দেশের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বার্ড ফ্লুমুক্ত জোনিং বা কম্পার্টমেন্টালাইজেশনের সার্টিফিকেট দাখিল করতে হবে। এতে নিশ্চিত করতে হবে যে, আমদানিকৃত ডিমগুলি বার্ড ফ্লু থেকে মুক্ত।
২. স্বাস্থ্য সনদ দাখিল: আমদানিকৃত ডিমের প্রতিটি চালানের জন্য রফতানিকারক দেশের নির্ধারিত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দেওয়া এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (বার্ড ফ্লু) এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত মর্মে সনদ দাখিল করতে হবে।
৩. শুল্ক ও কর পরিশোধ: আমদানিকারকদের সরকার-নির্ধারিত শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হবে এবং অন্যান্য আইন ও বিধিবিধান মেনে চলতে হবে।
৪. সংগনিরোধ অবহিতকরণ: প্রতিটি ডিম আমদানির চালানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংগনিরোধ কর্মকর্তাকে অন্তত ১৫ দিন আগে অবহিত করতে হবে।
৫. অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল: আমদানির অনুমতি পাওয়ার পরবর্তী ৭ দিন পরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।
৬. মেয়াদ: আমদানির অনুমতির মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিম আমদানির প্রয়োজনীয়তা
বর্তমানে বাজারে ডিমের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ জনগণ ভোগান্তিতে পড়েছে। প্রতিদিনের ডিমের চাহিদা পাঁচ কোটি হলেও, উৎপাদন ও সরবরাহের ঘাটতির কারণে বাজারে ডিমের মূল্য বেড়েই চলেছে। গত কয়েক মাসে ডিমের দাম দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে স্বল্প আয়ের মানুষদের খাদ্যতালিকা থেকে এই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি বাদ পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজারে ডিমের দাম স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাবে। ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং জনগণের চাহিদা পূরণে সরকার ডিম আমদানির এই সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী ও কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিম আমদানির মাধ্যমে সাময়িকভাবে চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে এবং বাজারে অতিরিক্ত চাপে দাম কমে আসবে। তবে, দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।
ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে অতীতের অভিজ্ঞতা
এর আগেও সরকার বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে। পেঁয়াজ, চিনি এবং ভোজ্যতেলের মতো পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানির মাধ্যমে সাময়িকভাবে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে ডিমের ক্ষেত্রে আমদানির সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে বাজারে ডিমের মূল্য কমে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। যদিও আমদানি প্রক্রিয়ায় সময় লাগতে পারে, তারপরও আশা করা হচ্ছে শিগগিরই ডিমের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ
সরকার একদিকে ডিম আমদানি করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে, অন্যদিকে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনাও নিয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মতে, দেশীয় পর্যায়ে উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ডিম উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করা গেলে ভবিষ্যতে আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং দেশীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।