দেশে পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যাগ ব্যবহারকে বাধ্যতামূলক করতে প্রয়োজন হলে পাটের রপ্তানি বন্ধ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাট এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, পণ্যে পাটজাত মোড়কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে গিয়ে পাটের অভাব দেখা দিলে প্রয়োজনে রপ্তানি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হবে। এর পাশাপাশি, কিছু ক্ষেত্রে পাট চোরাকারবারিদের মাধ্যমে পাচারও হয়, যা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
রবিবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীতে ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন -২০১০’ বাস্তবায়ন বিষয়ক এক সভায় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
পাটের সংকট হলে রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ
ড. সাখাওয়াত হোসেন জানান, বর্তমানে পরিবেশবান্ধব পাটজাত ব্যাগের উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হচ্ছে, যাতে করে পণ্য পরিবহন ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করা যায়। তিনি বলেন, “পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলে পাটের সংকট হবে না, তবে সংকট দেখা দিলে রপ্তানি বন্ধের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।” তার মতে, পাটের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি এর চোরাচালান রোধেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ব্যবসায়ীদের পাটের ব্যাগ ব্যবহারে নির্দেশনা
সভায় বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীদের নভেম্বর মাসের পর থেকে পাটজাত ব্যাগ ব্যবহারের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আইন কার্যকরের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত সময় দিয়ে পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানানো হয়। উপদেষ্টা বলেন, “ইমিডিয়েটলি আমরা কোনো খাতকে চাপে ফেলছি না। সবাইকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যেন পাটের ব্যাগ ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন, সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহযোগিতাও দেওয়া হবে।”
পাটের স্থানান্তরিত গুরুত্ব ও পুনঃস্থাপন
সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, “ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিকের কারখানা স্থাপন করে পাটকে বাধাগ্রস্ত করছিলেন, তবে এখন থেকে এ ধরনের কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না। আমাদের পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য পাটকে এগিয়ে নিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, ৩২ টাকার পাটের ব্যাগের মূল্য নিয়ে কিছু মানুষের অসন্তোষ আছে, তবে এ ধরনের ব্যাগ বারবার ব্যবহার করা যাবে এবং এটি সাধারণ মানুষের ব্যাগ ব্যবহারের অভ্যাসকে বাড়িয়ে তুলবে। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, পাটের ব্যাগ ব্যবহার করা আমাদের দেশের একটি প্রচলিত ঐতিহ্য ছিল, যা পুনরায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
পাটের জিআই উদ্যোগ: গোল্ডেন ফাইবার অফ বাংলাদেশ
বক্তব্যে ড. সাখাওয়াত হোসেন উল্লেখ করেন যে, পাটকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন) সার্টিফিকেটের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, পাটকে ‘গোল্ডেন ফাইবার অফ বাংলাদেশ’ নামে জিআই স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এটি পাট শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও বাংলাদেশের পাটের পরিচিতি বৃদ্ধি করবে।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বক্তব্য
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানও এ সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, অনেকেই বলছেন যে, পাটের ব্যাগ ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলে বাজারে পাটের ব্যাগ পাওয়া যাবে না। তবে তিনি জানান, প্রথমে পাটের ব্যাগের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে এবং এরপরে নিজেদের উদ্যোগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “একটি কার্যকর আইন রয়েছে এবং এর বাস্তবায়ন সবাইকে মানতে হবে। আইনকে অবজ্ঞা করে চলা যাবে না।” যেসব ব্যবসায়ীর সমস্যা হবে, তাদের সমস্যা ধীরে ধীরে সমাধান করে এগোনো হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
জুট অ্যাসোসিয়েশনের প্রস্তুতি ও প্রতিশ্রুতি
এ সভায় জুট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, বর্তমানে দেশের ৩০০ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পাটজাত ব্যাগ ও বস্তা সরবরাহ করতে প্রস্তুত রয়েছে। ফলে বাজারে পাটের ব্যাগ বা বস্তার কোনো সংকট হবে না বলে তাদের বিশ্বাস।
বাজারে পাটের ব্যাগ ব্যবহার নিশ্চিতে আইনি পদক্ষেপ
এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, আগামী মাস থেকে আইনের বাস্তবায়ন কঠোরভাবে তদারকি করা হবে। ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিকের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাধ্য হবেন। সরকার এই আইনটি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যাতে পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা যায় এবং পাট শিল্পের উন্নয়ন ঘটে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: দেশে ইমিল্যাবের স্মার্ট হোম সিকিউরিটি ক্যামেরা আনলো সেলেক্সট্রা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: সিনেমা, গেম ও স্ট্রিমিংয়ে বাড়ছে এইআই-নির্ভর সাইবার হুমকি
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: বাংলাদেশের বাজারে নতুন স্মার্টফোন হেলিও ৫৫