ব্যাংক খাতে উচ্চ সুদের হার ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। বিদ্যমান সংকট নিরসনে তারা সরকারের কাছে সুদের হার কমানোসহ বাজার ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার আহ্বান জানান। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের পাশাপাশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ার আশঙ্কাও করছেন তারা।
গতকাল ঢাকার ইস্কাটনে বিজ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের সংলাপ-অর্থনৈতিক সংলাপ প্রসঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। সংলাপে বিশেষ বক্তা ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং সভাপতিত্ব করেন সিজিএসের চেয়ার মুনিরা খান।
প্রথম বক্তা সাদিক মাহবুব ইসলাম সরকারি চাকরিতে প্রবেশে সমান সুযোগ নিয়ে আন্দোলনের পক্ষে কথা বলেন। তিনি মনে করেন, দেশের বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ না হওয়ায় কর্মসংস্থানে সংকট তৈরি হয়েছে। আরেক শিক্ষার্থী সুপ্রভা শোভা জামান বলেন, “সাম্প্রতিক উন্নয়নের গল্প সাধারণ মানুষের জীবনে পৌঁছায়নি, বরং সংকট মোকাবিলার জন্যই তাদের আন্দোলনে নামতে হয়েছে।” তাদের মতে, দেশের বাজারে সিন্ডিকেট ও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু দেশের বিভিন্ন খাতে পরিসংখ্যানের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন, “দেশে প্রতি বছর ২৫-২৭ লাখ কর্মক্ষম ব্যক্তি চাকরির উপযোগী হন, যার মধ্যে ৫ শতাংশ সরকারি চাকরি পায়, বাকি সবাইকে বেসরকারি খাতে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক মূলধন ও সঞ্চয়ের অভাব তৈরি হয়েছে।” তার মতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে সঞ্চয় ও মজুরি বৃদ্ধির হার কমেছে।
অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরা উচ্চ সুদের হার নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মীর নাসির উদ্দিন, এফবিসিসিআইয়ের আরেক সাবেক সভাপতি, বলেন, “সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে মুদ্রা সরবরাহ কমে গেছে এবং উচ্চ সুদের হার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলেও তাতে বিনিয়োগ কমছে, যার প্রভাব পড়ছে শিল্প ও বাণিজ্যে।” গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের সংকটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী উৎপাদন কার্যক্রমে সমস্যায় পড়েছেন।”
বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক স্থিতিশীলতা ও অবকাঠামোর অভাবের বিষয়টি উল্লেখ করে মিন্টু বলেন, “ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ২০০ কিলোমিটারের রাস্তা এখনো পাড়ি দিতে আট ঘণ্টা সময় লাগে।” এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব এবং জ্বালানি সংকটের কথা বলেন, যা ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে ফেলেছে।
এ সময়, বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, “ব্যবসায়ীদের আস্থা কমে গেছে, যা বিনিয়োগ ও ব্যবসা পরিচালনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি থাকায় ব্যবসায়ীরা স্বস্তিতে নেই।”
সংলাপে বক্তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর জানান, পূর্বের সরকারের বাজেট এখনো চালু রয়েছে, যা বর্তমান বাস্তবতায় সংশোধনের প্রয়োজন। তার মতে, বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নতি না হলে মূল্যস্ফীতি কমানো কঠিন হয়ে পড়বে। অর্থনীতিবিদ আবু ইউসুফ সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং দাবি করেন যে, ভ্যাট আদায়ের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় সরকারের আয়ও হ্রাস পাচ্ছে।
ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা তাদের আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জাহিদ অভিযোগ করেন, “ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ক্ষেত্রে ফেরত আদায়ের ক্ষেত্রে উদাসীনতা রয়েছে।” এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ এনবিআরের নীতি ও প্রশাসনকে আলাদা করার পরামর্শ দেন, যা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “ব্যবসায়ীদের বক্তব্যে মনে হয় দেশে স্বাভাবিক সরকার বিদ্যমান রয়েছে। তবে বাস্তবে সরকার একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রয়েছে, যা স্বাভাবিক পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনীয় নয়। জাতীয় আয় এবং মূল্যস্ফীতি নিয়েও তথ্য বিকৃতির কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।” তিনি সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেন এবং বলেন, “দ্রব্যমূল্য নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ভবিষ্যতে এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে।”
রোববার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪
ব্যাংক খাতে উচ্চ সুদের হার ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। বিদ্যমান সংকট নিরসনে তারা সরকারের কাছে সুদের হার কমানোসহ বাজার ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার আহ্বান জানান। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের পাশাপাশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ার আশঙ্কাও করছেন তারা।
গতকাল ঢাকার ইস্কাটনে বিজ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের সংলাপ-অর্থনৈতিক সংলাপ প্রসঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। সংলাপে বিশেষ বক্তা ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং সভাপতিত্ব করেন সিজিএসের চেয়ার মুনিরা খান।
প্রথম বক্তা সাদিক মাহবুব ইসলাম সরকারি চাকরিতে প্রবেশে সমান সুযোগ নিয়ে আন্দোলনের পক্ষে কথা বলেন। তিনি মনে করেন, দেশের বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ না হওয়ায় কর্মসংস্থানে সংকট তৈরি হয়েছে। আরেক শিক্ষার্থী সুপ্রভা শোভা জামান বলেন, “সাম্প্রতিক উন্নয়নের গল্প সাধারণ মানুষের জীবনে পৌঁছায়নি, বরং সংকট মোকাবিলার জন্যই তাদের আন্দোলনে নামতে হয়েছে।” তাদের মতে, দেশের বাজারে সিন্ডিকেট ও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু দেশের বিভিন্ন খাতে পরিসংখ্যানের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন, “দেশে প্রতি বছর ২৫-২৭ লাখ কর্মক্ষম ব্যক্তি চাকরির উপযোগী হন, যার মধ্যে ৫ শতাংশ সরকারি চাকরি পায়, বাকি সবাইকে বেসরকারি খাতে প্রবেশ করতে হয়। কিন্তু বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক মূলধন ও সঞ্চয়ের অভাব তৈরি হয়েছে।” তার মতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে সঞ্চয় ও মজুরি বৃদ্ধির হার কমেছে।
অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরা উচ্চ সুদের হার নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মীর নাসির উদ্দিন, এফবিসিসিআইয়ের আরেক সাবেক সভাপতি, বলেন, “সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে মুদ্রা সরবরাহ কমে গেছে এবং উচ্চ সুদের হার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলেও তাতে বিনিয়োগ কমছে, যার প্রভাব পড়ছে শিল্প ও বাণিজ্যে।” গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের সংকটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী উৎপাদন কার্যক্রমে সমস্যায় পড়েছেন।”
বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক স্থিতিশীলতা ও অবকাঠামোর অভাবের বিষয়টি উল্লেখ করে মিন্টু বলেন, “ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ২০০ কিলোমিটারের রাস্তা এখনো পাড়ি দিতে আট ঘণ্টা সময় লাগে।” এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব এবং জ্বালানি সংকটের কথা বলেন, যা ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে ফেলেছে।
এ সময়, বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, “ব্যবসায়ীদের আস্থা কমে গেছে, যা বিনিয়োগ ও ব্যবসা পরিচালনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি থাকায় ব্যবসায়ীরা স্বস্তিতে নেই।”
সংলাপে বক্তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর জানান, পূর্বের সরকারের বাজেট এখনো চালু রয়েছে, যা বর্তমান বাস্তবতায় সংশোধনের প্রয়োজন। তার মতে, বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নতি না হলে মূল্যস্ফীতি কমানো কঠিন হয়ে পড়বে। অর্থনীতিবিদ আবু ইউসুফ সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং দাবি করেন যে, ভ্যাট আদায়ের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় সরকারের আয়ও হ্রাস পাচ্ছে।
ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা তাদের আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জাহিদ অভিযোগ করেন, “ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ক্ষেত্রে ফেরত আদায়ের ক্ষেত্রে উদাসীনতা রয়েছে।” এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ এনবিআরের নীতি ও প্রশাসনকে আলাদা করার পরামর্শ দেন, যা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “ব্যবসায়ীদের বক্তব্যে মনে হয় দেশে স্বাভাবিক সরকার বিদ্যমান রয়েছে। তবে বাস্তবে সরকার একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রয়েছে, যা স্বাভাবিক পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনীয় নয়। জাতীয় আয় এবং মূল্যস্ফীতি নিয়েও তথ্য বিকৃতির কারণে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।” তিনি সামাজিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেন এবং বলেন, “দ্রব্যমূল্য নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ভবিষ্যতে এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে।”