alt

ব্যাংক খাত থেকে ‘১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে হাসিনার সহযোগীরা : গভর্নর

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা তার শাসনামলে ব্যাংক খাত থেকে প্রায় ১৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকর গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এই কাজে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশেরই একটি গোয়েন্দা সংস্থার কিছু সদস্য। সম্প্রতি প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গভর্নর এসব অভিযোগ করেন।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা দপ্তরের সাবেক কিছু কর্মকর্তা শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক দখল করতে সহায়তা করেছেন। এসব ব্যাংক দখল করে আনুমানিক ২ লাখ কোটি টাকা (১ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার) বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন শেয়ারধারীদের ঋণ দেয়া ও আমদানির অতিরিক্ত খরচ দেখানোর মতো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘যেকোনো বৈশ্বিক মানদ-ে এটি বড়, সবচেয়ে ব্যাপক ব্যাংক ডাকাতি। এই মাত্রায় (ব্যাংক ডাকাতি) অন্য কোথাও হয়নি। এটি ছিল রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট এবং গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িতরা (ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহীদের) মাথায় বন্দুক না ঠেকালে এটা হতে পারত না।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় কয়েকটি ব্যাংক দখল করার পর ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার সহযোগীরা ‘অন্তত’ ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ‘বের করে নিয়েছেন’। তার মতে, ‘তারা প্রতিদিনই নিজেদের জন্য ঋণ অনুমোদন করেছেন।’

সাইফুল আলমের পক্ষে আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন এমানুয়েল আরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভান একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে এস আলম গ্রুপ জানিয়েছে, গভর্নরের অভিযোগের ‘কোনো সত্যতা নেই’। এতে বলা হয়, ‘এস আলম গ্রুপ ও বাংলাদেশের আরও কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের সমন্বিত প্রচারণা এমনকি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মৌলিক নীতির প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।’

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর মন্তব্যের জন্য তাদের অনুরোধে সাড়া দেয়নি এবং ডিজিএফআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শেখ হাসিনা দুই দশক ধরে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশটির ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু তার শাসনামলে ভোট কারচুপি, বিরোধীদের কারাগারে পাঠানো ও নির্যাতন করা এবং ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আগস্টে তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকার অর্থ উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দেয়।

আহসান এইচ মনসুর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একজন সাবেক কর্মকর্তা। গত মাসে তিনি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন যে শেখ হাসিনার সহযোগীদের বিদেশে থাকা সম্পদের বিষয়ে তদন্ত করতে তিনি যুক্তরাজ্য সরকারের সহায়তা কামনা করেছেন। ব্যাংক খাত নিয়ে তার সর্বশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে ব্যাংকের পরিচালকদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছিল।’

গভর্নর বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন কিছু সদস্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের ‘তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে’ এবং এরপর হোটেলের মতো জায়গায় নিয়ে যায়। এরপর ‘অস্ত্রের মুখে’ তাদেরকে তাদের শেয়ার ‘মি. এস আলমের কাছে’ বিক্রির জন্য এবং তাদেরকে পরিচালকের পদ ছাড়তে বলেন। তার কথায়, ‘একের পর এক ব্যাংকের ক্ষেত্রে তারা এটা করেছে।’

একটি ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, ‘জোর করে ব্যাংক দখলের প্রক্রিয়ায় তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।’

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘২০১৩ সালে ‘তৎকালীন সরকারের সঙ্গে জড়িত লোকেরা’ তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পরামর্শমতো পরিচালক নিয়োগ এবং ব্যাংকের একজন বিদেশি পরিচালকের হোটেল রুমে ‘সরকারি সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের’ দ্বারা তল্লাশি চালানো।’

মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘২০১৭ সালে তিনি যখন ব্যাংকের পর্ষদ সভায় যাচ্ছিলেন, তখন তাকে একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এরপর পুরো একটি দিন তাকে আটকে রেখে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। তারা ব্যাংকের জাল কাগজপত্র তৈরি করেছিলেন। আমাকে শেষ পর্যন্ত একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল।’

গত সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।

গত দশকে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকিং ব্যবসায় নাম লিখিয়েছে। গ্রুপের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সাতটি ব্যাংকে তাদের ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ’ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।

আহসান এইচ মনসুর তার সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘শেখ হাসিনার সময়ে দখল করা হয়েছিল এমন প্রায় ১২টি ব্যাংকের অবস্থা নিরীক্ষা করার পর বাংলাদেশ চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারের পদক্ষেপ নেবে। আমরা এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেশে ও দেশের বাইরের আদালতে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই।’

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এসব ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর শেয়ার ‘ভালো মানের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের’ কাছে বিক্রি করে সেগুলোকে পুনঃ অর্থায়নের জন্য কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা করেছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর খারাপ হয়ে পড়া সম্পদের ব্যবস্থাপনা ও নিষ্পত্তি করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠন করারও পরিকল্পনা করছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘লোপাট হওয়া ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা দেশ থেকে যে অর্থ দুবাই, সিঙ্গাপুর বা অন্যান্য স্থানে পাচার করে নিজেদের আয়ত্তে রেখেছেন, তা উদ্ধারের চেষ্টায় আন্তর্জাতিক আইন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে।

ছবি

প্রতিদিনের মূল্য জানাতে ভোক্তা অধিদপ্তর নিয়ে এলো মোবাইল অ্যাপ-‘বাজারদর’

ছবি

সার আমদানিতে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

সিদ্ধান্ত ছিল তিন মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর, আমরা এক বছরেও বাড়াইনি : উপদেষ্টা

ছবি

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিজিএমইএর বৈঠক

ছবি

প্রাইম ব্যাংক ও প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স-এর মধ্যে পেরোল ব্যাংকিং চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

বৈশ্বিক অনিশ্চয়তায় সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে ব্রাজিল

ছবি

ডেলটা ফার্মার ৩১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, বেজার সঙ্গে লিজ চুক্তি

ছবি

কুঁড়ার তেল রফতানিতে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ

ছবি

বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষর

ছবি

ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার

ছবি

১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহে ২৮.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

ছবি

দুবাইয়ে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটিতে ২৬ ঘণ্টা ভোগান্তি

ছবি

২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ

ছবি

অধিকাংশ শেয়ারের দরপতন, সামান্য বেড়েছে লেনদেন

ছবি

অক্টোবরে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের প্রস্তুতি জাতিসংঘকে জানাতে হবে

ছবি

শ্রমিকের পাওনা পরিশোধে নাসা গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত

ছবি

একনেকে ৮৩৩৩ কোটি টাকার ১৩ প্রকল্প অনুমোদন

ছবি

ঢাকায় নিরাপত্তা প্রযুক্তির সর্বশেষ উদ্ভাবন নিয়ে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী

ছবি

পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মুখপাত্র মেজবাউল

ছবি

প্রথম চালানে ভারতে গেল সাড়ে ৩৭ টন ইলিশ

ছবি

তাপমাত্রা বাড়ায় বাংলাদেশের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা: বিশ্বব্যাংক

ছবি

পাঁচ বেসরকারি শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করার প্রথম ধাপে প্রশাসক বসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পেছানোর বিরোধিতা করছে

ছবি

শেয়ারবাজারে লেনদেন নামলো ৬শ’ কোটি টাকার ঘরে

ছবি

ব্যবসা মাঝে মন্থর ছিল, এখন একটু ভালো: অর্থ উপদেষ্টা.

ছবি

অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরে আশাবাদী জাপানি রাষ্ট্রদূত

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকে সভা: একীভূত হচ্ছে পাঁচ ব্যাংক, বসছে প্রশাসক

ছবি

বিজিএমইএ–মার্কিন প্রতিনিধিদল বৈঠক: শুল্ক কমাতে আহ্বান

ছবি

জুলাই-আগস্টে এডিপি বাস্তবায়ন ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ

ছবি

বিবিএসের নাম পরিবর্তন ও তদারক পরিষদ রাখার সুপারিশ

ছবি

শ্রম আইন সংশোধন দ্রুত শেষ করার তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের

ছবি

নগদ অর্থের ব্যবহার কমাতে আসছে একীভূত পেমেন্ট সিস্টেম: গভর্নর

ছবি

আড়াই মাসে ১৩৯ কোটি ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

ডিজিটাল ব্যাংক খুলতে আবেদনের সময় বাড়লো ২ নভেম্বর পর্যন্ত

ছবি

পুঁজিবাজারে সূচকের নামমাত্র উত্থান, লেনদেন আরও তলানিতে

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে গড়ে খরচ বাড়লো ৪১ শতাংশ

tab

ব্যাংক খাত থেকে ‘১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে হাসিনার সহযোগীরা : গভর্নর

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা তার শাসনামলে ব্যাংক খাত থেকে প্রায় ১৭ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাচার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকর গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এই কাজে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশেরই একটি গোয়েন্দা সংস্থার কিছু সদস্য। সম্প্রতি প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গভর্নর এসব অভিযোগ করেন।

সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা দপ্তরের সাবেক কিছু কর্মকর্তা শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক দখল করতে সহায়তা করেছেন। এসব ব্যাংক দখল করে আনুমানিক ২ লাখ কোটি টাকা (১ হাজার ৬৭০ কোটি ডলার) বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নতুন শেয়ারধারীদের ঋণ দেয়া ও আমদানির অতিরিক্ত খরচ দেখানোর মতো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘যেকোনো বৈশ্বিক মানদ-ে এটি বড়, সবচেয়ে ব্যাপক ব্যাংক ডাকাতি। এই মাত্রায় (ব্যাংক ডাকাতি) অন্য কোথাও হয়নি। এটি ছিল রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট এবং গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িতরা (ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহীদের) মাথায় বন্দুক না ঠেকালে এটা হতে পারত না।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ডিজিএফআইয়ের সহায়তায় কয়েকটি ব্যাংক দখল করার পর ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলমের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার সহযোগীরা ‘অন্তত’ ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ‘বের করে নিয়েছেন’। তার মতে, ‘তারা প্রতিদিনই নিজেদের জন্য ঋণ অনুমোদন করেছেন।’

সাইফুল আলমের পক্ষে আইনি প্রতিষ্ঠান কুইন এমানুয়েল আরকুহার্ট অ্যান্ড সুলিভান একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে এস আলম গ্রুপ জানিয়েছে, গভর্নরের অভিযোগের ‘কোনো সত্যতা নেই’। এতে বলা হয়, ‘এস আলম গ্রুপ ও বাংলাদেশের আরও কিছু শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের সমন্বিত প্রচারণা এমনকি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মৌলিক নীতির প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।’

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর মন্তব্যের জন্য তাদের অনুরোধে সাড়া দেয়নি এবং ডিজিএফআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শেখ হাসিনা দুই দশক ধরে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশটির ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু তার শাসনামলে ভোট কারচুপি, বিরোধীদের কারাগারে পাঠানো ও নির্যাতন করা এবং ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আগস্টে তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত সরকার অর্থ উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দেয়।

আহসান এইচ মনসুর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একজন সাবেক কর্মকর্তা। গত মাসে তিনি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিলেন যে শেখ হাসিনার সহযোগীদের বিদেশে থাকা সম্পদের বিষয়ে তদন্ত করতে তিনি যুক্তরাজ্য সরকারের সহায়তা কামনা করেছেন। ব্যাংক খাত নিয়ে তার সর্বশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে ব্যাংকের পরিচালকদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছিল।’

গভর্নর বলেন, ‘গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন কিছু সদস্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের ‘তাদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে’ এবং এরপর হোটেলের মতো জায়গায় নিয়ে যায়। এরপর ‘অস্ত্রের মুখে’ তাদেরকে তাদের শেয়ার ‘মি. এস আলমের কাছে’ বিক্রির জন্য এবং তাদেরকে পরিচালকের পদ ছাড়তে বলেন। তার কথায়, ‘একের পর এক ব্যাংকের ক্ষেত্রে তারা এটা করেছে।’

একটি ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, ‘জোর করে ব্যাংক দখলের প্রক্রিয়ায় তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।’

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘২০১৩ সালে ‘তৎকালীন সরকারের সঙ্গে জড়িত লোকেরা’ তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের পরামর্শমতো পরিচালক নিয়োগ এবং ব্যাংকের একজন বিদেশি পরিচালকের হোটেল রুমে ‘সরকারি সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের’ দ্বারা তল্লাশি চালানো।’

মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘২০১৭ সালে তিনি যখন ব্যাংকের পর্ষদ সভায় যাচ্ছিলেন, তখন তাকে একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং এরপর পুরো একটি দিন তাকে আটকে রেখে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। তারা ব্যাংকের জাল কাগজপত্র তৈরি করেছিলেন। আমাকে শেষ পর্যন্ত একটি পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল।’

গত সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।

গত দশকে এস আলম গ্রুপ ব্যাংকিং ব্যবসায় নাম লিখিয়েছে। গ্রুপের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সাতটি ব্যাংকে তাদের ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ’ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।

আহসান এইচ মনসুর তার সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘শেখ হাসিনার সময়ে দখল করা হয়েছিল এমন প্রায় ১২টি ব্যাংকের অবস্থা নিরীক্ষা করার পর বাংলাদেশ চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারের পদক্ষেপ নেবে। আমরা এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেশে ও দেশের বাইরের আদালতে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করতে চাই।’

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এসব ব্যাংকের শেয়ার বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর শেয়ার ‘ভালো মানের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের’ কাছে বিক্রি করে সেগুলোকে পুনঃ অর্থায়নের জন্য কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা করেছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর খারাপ হয়ে পড়া সম্পদের ব্যবস্থাপনা ও নিষ্পত্তি করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি গঠন করারও পরিকল্পনা করছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘লোপাট হওয়া ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা দেশ থেকে যে অর্থ দুবাই, সিঙ্গাপুর বা অন্যান্য স্থানে পাচার করে নিজেদের আয়ত্তে রেখেছেন, তা উদ্ধারের চেষ্টায় আন্তর্জাতিক আইন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হবে।

back to top