মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে থাকা সত্ত্বেও ইথিওপিয়া আজ আফ্রিকার অন্যতম বৃহৎ এয়ারলাইনস কোম্পানি ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের গর্বিত অধিকারী। সম্প্রতি ঢাকায় এসে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানালেন, সরকারের হস্তক্ষেপ মুক্ত ব্যবসায়িক নীতি ও উন্নত বিমান চলাচল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কীভাবে এই রাষ্ট্রীয় বিমানসংস্থা আজ আফ্রিকান মহাদেশের শীর্ষ এয়ারলাইন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বর্তমানে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের বহরে ১৫৪টি উড়োজাহাজ রয়েছে, যা দিয়ে তারা ১৩৬টি গন্তব্যে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংস্থাটি প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ যাত্রী এবং ৭ লাখ টন কার্গো পরিবহন করেছে, যা থেকে আয় হয়েছে ৬ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে তাদের আয় ছিল ৫ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার এবং নিট মুনাফা ৯৪ কোটি ২০ লাখ ডলার।
ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের সাফল্যের অন্যতম কারণ হিসেবে দেশটির উদার সিভিল অ্যাভিয়েশন নীতিকে দেখানো হয়। ইথিওপিয়ান সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির মহাপরিচালক গেটাচিউ মেনগিস্টি আলেমায়েহুর মতে, আকাশ পরিবহন শিল্পের উন্নতির মূল চাবিকাঠি হলো নমনীয় নীতিমালা। সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে আসছে। এ প্রসঙ্গে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের আঞ্চলিক পরিচালক (দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া) সলোমন বেকেল বলেন, “শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন হলেও ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের ওপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই, বরং দক্ষ কর্মী ও সেবার মান ধরে রেখেই আমরা সফল হয়েছি।”
আফ্রিকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৃহৎ সংখ্যা এবং ব্যবসায়িক সম্ভাবনা চিন্তা করে সম্প্রতি ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস ঢাকা-আদ্দিস আবাবা সরাসরি ফ্লাইট চালু করেছে। সলোমন বেকেল জানান, “আমরা অন্যান্য বৃহৎ এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সফলভাবে বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছি। ঢাকায়ও আমরা সেবা ও ফ্লাইট সুরক্ষায় আত্মবিশ্বাসী। বাংলাদেশের বাজারে টিকিটের দাম সহনীয় রাখা, অতিরিক্ত ব্যাগেজ সুবিধা এবং উচ্চমানের সেবা প্রদানের মাধ্যমে আমরা স্থায়ীভাবে নিজেদের জায়গা করে নিতে চাই।”
বাংলাদেশের ব্যবসায়িক খাতের জন্যও ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস সম্ভাবনা খুঁজছে। ইথিওপিয়া থেকে আসা কর্মকর্তারা জানান, আফ্রিকা ও ইউরোপে বাংলাদেশিদের যাতায়াত সহজ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও ওষুধ শিল্পের পণ্য পরিবহনেও তারা বিশেষ সুবিধা দিতে চায়। এছাড়া ইথিওপিয়ায় তারা একটি বাংলাদেশি বিজনেস কমিউনিটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন।
ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের বহরে বর্তমানে ২০টি বোয়িং ৭৩৭-ম্যাক্স উড়োজাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে একটি ২০১৯ সালে দুর্ঘটনায় পড়ে। তবে সলোমন বেকেল জানান, এই দুর্ঘটনা তদন্তে এয়ারলাইনস বা পাইলটদের কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি এবং ত্রুটি সারিয়ে নতুনভাবে ৭৩৭-ম্যাক্স দিয়ে নিরাপদে ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণ খাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা এবং যাত্রী সুবিধা নিশ্চিত করতে লুফথানসা, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ার চায়নাসহ আরও ৩৯টি এয়ারলাইনসের সঙ্গে কোড শেয়ারিং চুক্তি করেছে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস। এছাড়াও স্টার অ্যালায়েন্সের সদস্য হওয়ায় ২৬টি সহযোগী এয়ারলাইনসের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে তারা।
বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন খাতে দক্ষ পাইলট ও প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, যা দেশের বিমান শিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ইথিওপিয়ান সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ও অ্যাভিয়েশন ইনস্টিটিউট অন্যান্য দেশ থেকে প্রশিক্ষণার্থীদের আকর্ষণ করছে। বাংলাদেশের পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়েও তারা আগ্রহী এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে।
এই সব নীতিমালা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার ফলে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস আজ আফ্রিকার শীর্ষ এয়ারলাইনস এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় একটি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে, যা তাদের ব্যবসায়িক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছে।
বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪
মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে থাকা সত্ত্বেও ইথিওপিয়া আজ আফ্রিকার অন্যতম বৃহৎ এয়ারলাইনস কোম্পানি ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের গর্বিত অধিকারী। সম্প্রতি ঢাকায় এসে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানালেন, সরকারের হস্তক্ষেপ মুক্ত ব্যবসায়িক নীতি ও উন্নত বিমান চলাচল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কীভাবে এই রাষ্ট্রীয় বিমানসংস্থা আজ আফ্রিকান মহাদেশের শীর্ষ এয়ারলাইন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বর্তমানে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের বহরে ১৫৪টি উড়োজাহাজ রয়েছে, যা দিয়ে তারা ১৩৬টি গন্তব্যে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংস্থাটি প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ যাত্রী এবং ৭ লাখ টন কার্গো পরিবহন করেছে, যা থেকে আয় হয়েছে ৬ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে তাদের আয় ছিল ৫ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার এবং নিট মুনাফা ৯৪ কোটি ২০ লাখ ডলার।
ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের সাফল্যের অন্যতম কারণ হিসেবে দেশটির উদার সিভিল অ্যাভিয়েশন নীতিকে দেখানো হয়। ইথিওপিয়ান সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটির মহাপরিচালক গেটাচিউ মেনগিস্টি আলেমায়েহুর মতে, আকাশ পরিবহন শিল্পের উন্নতির মূল চাবিকাঠি হলো নমনীয় নীতিমালা। সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়ে আসছে। এ প্রসঙ্গে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের আঞ্চলিক পরিচালক (দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া) সলোমন বেকেল বলেন, “শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন হলেও ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের ওপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই, বরং দক্ষ কর্মী ও সেবার মান ধরে রেখেই আমরা সফল হয়েছি।”
আফ্রিকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের বৃহৎ সংখ্যা এবং ব্যবসায়িক সম্ভাবনা চিন্তা করে সম্প্রতি ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস ঢাকা-আদ্দিস আবাবা সরাসরি ফ্লাইট চালু করেছে। সলোমন বেকেল জানান, “আমরা অন্যান্য বৃহৎ এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সফলভাবে বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করছি। ঢাকায়ও আমরা সেবা ও ফ্লাইট সুরক্ষায় আত্মবিশ্বাসী। বাংলাদেশের বাজারে টিকিটের দাম সহনীয় রাখা, অতিরিক্ত ব্যাগেজ সুবিধা এবং উচ্চমানের সেবা প্রদানের মাধ্যমে আমরা স্থায়ীভাবে নিজেদের জায়গা করে নিতে চাই।”
বাংলাদেশের ব্যবসায়িক খাতের জন্যও ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস সম্ভাবনা খুঁজছে। ইথিওপিয়া থেকে আসা কর্মকর্তারা জানান, আফ্রিকা ও ইউরোপে বাংলাদেশিদের যাতায়াত সহজ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও ওষুধ শিল্পের পণ্য পরিবহনেও তারা বিশেষ সুবিধা দিতে চায়। এছাড়া ইথিওপিয়ায় তারা একটি বাংলাদেশি বিজনেস কমিউনিটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন।
ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের বহরে বর্তমানে ২০টি বোয়িং ৭৩৭-ম্যাক্স উড়োজাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে একটি ২০১৯ সালে দুর্ঘটনায় পড়ে। তবে সলোমন বেকেল জানান, এই দুর্ঘটনা তদন্তে এয়ারলাইনস বা পাইলটদের কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি এবং ত্রুটি সারিয়ে নতুনভাবে ৭৩৭-ম্যাক্স দিয়ে নিরাপদে ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণ খাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা এবং যাত্রী সুবিধা নিশ্চিত করতে লুফথানসা, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ার চায়নাসহ আরও ৩৯টি এয়ারলাইনসের সঙ্গে কোড শেয়ারিং চুক্তি করেছে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস। এছাড়াও স্টার অ্যালায়েন্সের সদস্য হওয়ায় ২৬টি সহযোগী এয়ারলাইনসের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে তারা।
বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন খাতে দক্ষ পাইলট ও প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, যা দেশের বিমান শিল্পের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ইথিওপিয়ান সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ও অ্যাভিয়েশন ইনস্টিটিউট অন্যান্য দেশ থেকে প্রশিক্ষণার্থীদের আকর্ষণ করছে। বাংলাদেশের পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়েও তারা আগ্রহী এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে।
এই সব নীতিমালা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার ফলে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস আজ আফ্রিকার শীর্ষ এয়ারলাইনস এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় একটি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে, যা তাদের ব্যবসায়িক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছে।