alt

অর্থ-বাণিজ্য

ট্রাম্পের জয়ে বেড়েছে ডলার-বিটকয়েনের দাম; দাম কমেছে স্বর্ণ-তেলের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪

ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে চাঙা ভাব এসেছে। মার্কিন ডলার ও বিটকয়েনের মূল্যও বেড়েছে। আট বছরের মধ্যে গতকাল বুধবার এক দিনে মার্কিন ডলারের সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। বিটকয়েনের দামও এযাবৎকালের সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে।

ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প কর হ্রাস ও আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করলে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। এতে নীতি সুদহার হ্রাসের গতি কমতে পারে। নীতি সুদহার বাড়তি থাকলে বিনিয়োগকারীরা ডলারভিত্তিক সঞ্চয় পরিকল্প ও বিনিয়োগ থেকে বেশি মুনাফা পাবেন। খবর বিবিসির

গতকাল মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের শেয়ার ও মুদ্রাবাজার নড়েচড়ে বসেছে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক ঠিক কী কী ঘটল:

১. যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শেয়ার সূচক বেড়েছে, বিশেষ করে ব্যাংকের শেয়ার ভালো করেছে।

২. পাউন্ড, ইয়েনসহ বিভিন্ন বড় মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বিশেষ করে ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের দরপতন হয়েছে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ, গত ৮ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।

৩. যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলোর সূচক এফটিএসই ১০০ দিনের শুরুতে বেড়ে যায়, যদিও দিন শেষে তা কিছুটা কমেছে।

৪. ডলারের বিপরীতে ইউরোর দরপতন হয়েছে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ, গত জুন মাসের পর যা সর্বনিম্ন।

৫. জাপানের বাজারে প্রধান সূচক নিক্কি ২২৫ সূচক বেড়ে হয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। এটি জাপানি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।

৬. চীনের মূল ভূখণ্ডে সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্স অবশ্য কিছুটা কমেছে। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক কমেছে ২ দশমিক ২৩ শতাংশ।

গতকাল বিটকয়েনের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বিশ্বের বিটকয়েন ও ক্রিপ্টোকারেন্সির পরাশক্তি বানানোর’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর এই প্রতিশ্রুতির কারণে বিটকয়েনের মূল্য ৬ হাজার ৬০০ ডলার বেড়ে ৭৫ হাজার ৯৯৯ ডলারে উঠেছে।

বিষয়টি হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের অমিল দেখা যাচ্ছে। বাইডেন প্রশাসন ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিলেও ট্রাম্প তার উল্টো অবস্থান নিয়েছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ব্যয়ে যে অপচয় হয়েছে, তার নিরীক্ষার দায়িত্ব দিতে চান তিনি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ককে। ইলন মাস্ক দীর্ঘদিন ধরেই ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করছেন। তাঁর কোম্পানি টেসলা ২০২১ সালে বিটকয়েনে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছিল; যদিও বিটকয়েনের মূল্য ওঠানামা করে। মাস্কের বিনিয়োগ বিটকয়েনের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এদিকে গতকাল টেসলার শেয়ারের মূল্য ১৪ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ইলন মাস্ক নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। তাঁর এই সমর্থন এবং ট্রাম্পের ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি ইতিবাচক মনোভাবের কারণে বিটকয়েনের মূল্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া ও অন্যান্য অনিশ্চয়তার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আর্থিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। এদিকে গতকাল মার্কিন বন্ডের সুদহার বেড়েছে।

বাজারের গতিপ্রকৃতি দেখে বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ট্রাম্পের নতুন সরকার আরও বেশি ঋণ করবে। এই ক্রমবর্ধমান ঋণের সঙ্গে যে ঝুঁকি জড়িয়ে আছে, তার প্রিমিয়াম হিসেবে বিনিয়োগকারীরা অতিরিক্ত সুদ দাবি করছেন।

২০১৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম মেয়াদেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তথাকথিত বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেন। তখন তাঁর মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল চীন। কিন্তু এবারে তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, নির্বাচিত হলে এই বাণিজ্যযুদ্ধের পরিসর আরও বিস্তৃত হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছেই। ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে কেবল চীন নয়, বরং বিশ্বের সব দেশই তাঁর কঠোর বাণিজ্যনীতির কবলে পড়বে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যসহ ধনী দেশগুলোর ওপর এই প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই বাস্তবতায় ট্রাম্পের সঙ্গে মুক্ত ও অবাধ বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র‍্যাচেল রিভস।

ট্রাম্প বারবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য আমদানি করে, তার ওপর ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। আর চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক হবে ৬০ শতাংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি এমনকি ১০০ শতাংশও হতে পারে।

পররাষ্ট্রনীতিতে আগের জামানার ধারাবাহিকতায় বিচ্ছিন্নতাবাদী অবস্থান নেবেন। ফলে বাইডেন প্রশাসন যেভাবে চীনের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে তাইওয়ানের সহায় হয়েছিল, ট্রাম্পের জামানায় তা হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

তাইওয়ান বিশ্বের অন্যতম প্রধান কম্পিউটার চিপ উৎপাদনকারী দেশ। বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ক্ষেত্রে এই চিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাইডেনের চলমান শাসনামলে তাইওয়ান নিয়েও চীন-মার্কিন উত্তেজনা বেড়েছে।

এ সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। আজ বৃহস্পতিবার মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার নিয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দেবে। ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল কী বলেন, তার দিকে তাকিয়ে থাকবে সারা বিশ্ব।

যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদের ওপর বিশ্ব অর্থনীতি অনেকাংশে নির্ভর করে। যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদহার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের সুদও বাড়ে। ফলে বিনিয়োগকারীরা টালমাটাল সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। তাঁরা ভাবেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করাই ভালো, ভালো সুদ পাওয়া যাবে। বন্ডে বিনিয়োগ বেড়ে গেলে বিশ্বজুড়ে হার্ড কারেন্সি হিসেবে ডলারের সংকট তৈরি হয়। ফলে ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়ে; দেশে দেশে স্থানীয় মুদ্রার দরপতন হয়। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার কমলে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বিনিয়োগ আসে।

ছবি

তিনদিনের ব্যবধানে ফের কমলো স্বর্ণের দাম

ছবি

খাদ্য-মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ালো ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ

ছবি

ব্যাংক থেকে একসঙ্গে আমানত উত্তোলন না করার আহ্বান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

অপ্রয়োজনীয় টাকা না তোলার অনুরোধ বাংলাদেশ ব্যাংকের

বৈশ্বিক বাজারে স্মার্টফোন রপ্তানিতে শীর্ষে স্যামসাং

ছবি

সাউথইস্ট ব্যাংক, মাস্টারকার্ড ও যান্ত্রিকের যৌথ প্রিপেইড কার্ড চালু

ছবি

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ ঘোষণা, সর্বনিম্ন খরচ ৫ লাখ ২৩ হাজার

ছবি

শাহজালাল বিমানবন্দরে বোর্ডিং ব্রিজ সমস্যায় কুয়েত এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডেড

ছবি

ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের সাফল্যের গল্প: ১৫০ উড়োজাহাজের বহর গড়ে তুলেছে কীভাবে ইথিওপিয়া

ছবি

বেসিস সদস্যদের জন্য জামানতবিহীন ঋণ সুবিধা চালু করছে ব্র্র্যাক ব্যাংক

ছবি

১১-২১ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে দারাজ ১১.১১ ক্যাম্পেইন

ছবি

অপো বাংলাদেশের ১০ম বর্ষপূর্তিতে বিশেষ অফার

ছবি

ইউসিবি চালু করলো ভিসা পেমেন্ট গেটওয়ে সল্যুশন সাইবারসোর্স

ছবি

পুঁজিবাজারে মূলধনী মুনাফায় কর হার কমেছে

ছবি

অক্টোবর মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ অনেক বেড়েছে

ছবি

বকেয়া পরিশোধ না হলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকি আদানি পাওয়ারের

ছবি

টাকার পাচার ঠেকাতে মৌলিক সংস্কার জরুরি

ছবি

সাইবার আক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে, সতর্ক করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা

ছবি

বাংলাদেশে চাল আমদানির শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার

ডিজেল- কেরোসিন: লিটারে ৫০ পয়সা দাম কমালো সরকার

ছবি

মালদ্বীপে রেমিট্যান্স প্রবাহে শীর্ষে বাংলাদেশ, বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা স্থাপনের দাবি প্রবাসীদের

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক ভর্তি কন্টেইনার, দ্রুত অপসারণের তাগিদ

ছবি

ইসলামী ব্যাংকের লোকসানে বছর শুরুর ধাক্কা

ছবি

সঞ্চয়পত্রের চেয়ে বেশি সুদ দিচ্ছে ট্রেজারি বিল

ছবি

বিশ্বসেরা ১০০ ব্র্যান্ডের তালিকায় শাওমি

ছবি

দেশে চীনের আইমা ব্র্যান্ডের মোটরবাইক

ছবি

৩ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে ইউনিলিভার বাংলাদেশের ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা ‘বিজমায়েস্ট্রোজ’

ছবি

নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগে কর প্রণোদনা পুনর্বহাল

ছবি

ইন্টারনেট সেবায় বৈষম্য দূর করার আহবান

আবারও গ্লোবাল টপ ফাইভ ব্র্যান্ডের তালিকায় স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স

ব্যাংক খাত থেকে ‘১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে হাসিনার সহযোগীরা : গভর্নর

ছবি

খুলনায় ভর্তুকিমূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রি শুরু

ছবি

ব্যাংক লুটপাটে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ,

ছবি

হাসিনার সহযোগীরা সরিয়েছেন ১৭ বিলিয়ন ডলার, ১০ বিলিয়ন একাই এস আলম: গভর্নর

ছবি

সূচকের বড় পতনে ডিএসইতে লেনদেন চলছে

ছবি

বড় পতন শেয়ারবাজারে, সূচক চার বছরে সর্বনিম্নে

tab

অর্থ-বাণিজ্য

ট্রাম্পের জয়ে বেড়েছে ডলার-বিটকয়েনের দাম; দাম কমেছে স্বর্ণ-তেলের

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪

ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে চাঙা ভাব এসেছে। মার্কিন ডলার ও বিটকয়েনের মূল্যও বেড়েছে। আট বছরের মধ্যে গতকাল বুধবার এক দিনে মার্কিন ডলারের সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। বিটকয়েনের দামও এযাবৎকালের সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে।

ব্যবসায়ীরা ধারণা করছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প কর হ্রাস ও আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করলে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। এতে নীতি সুদহার হ্রাসের গতি কমতে পারে। নীতি সুদহার বাড়তি থাকলে বিনিয়োগকারীরা ডলারভিত্তিক সঞ্চয় পরিকল্প ও বিনিয়োগ থেকে বেশি মুনাফা পাবেন। খবর বিবিসির

গতকাল মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের শেয়ার ও মুদ্রাবাজার নড়েচড়ে বসেছে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক ঠিক কী কী ঘটল:

১. যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শেয়ার সূচক বেড়েছে, বিশেষ করে ব্যাংকের শেয়ার ভালো করেছে।

২. পাউন্ড, ইয়েনসহ বিভিন্ন বড় মুদ্রার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। বিশেষ করে ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের দরপতন হয়েছে ১ দশমিক ১৬ শতাংশ, গত ৮ মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।

৩. যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলোর সূচক এফটিএসই ১০০ দিনের শুরুতে বেড়ে যায়, যদিও দিন শেষে তা কিছুটা কমেছে।

৪. ডলারের বিপরীতে ইউরোর দরপতন হয়েছে ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ, গত জুন মাসের পর যা সর্বনিম্ন।

৫. জাপানের বাজারে প্রধান সূচক নিক্কি ২২৫ সূচক বেড়ে হয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ। এটি জাপানি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।

৬. চীনের মূল ভূখণ্ডে সাংহাই কম্পোজিট ইনডেক্স অবশ্য কিছুটা কমেছে। হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক কমেছে ২ দশমিক ২৩ শতাংশ।

গতকাল বিটকয়েনের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বিশ্বের বিটকয়েন ও ক্রিপ্টোকারেন্সির পরাশক্তি বানানোর’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁর এই প্রতিশ্রুতির কারণে বিটকয়েনের মূল্য ৬ হাজার ৬০০ ডলার বেড়ে ৭৫ হাজার ৯৯৯ ডলারে উঠেছে।

বিষয়টি হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের অমিল দেখা যাচ্ছে। বাইডেন প্রশাসন ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নিলেও ট্রাম্প তার উল্টো অবস্থান নিয়েছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ব্যয়ে যে অপচয় হয়েছে, তার নিরীক্ষার দায়িত্ব দিতে চান তিনি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ককে। ইলন মাস্ক দীর্ঘদিন ধরেই ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করছেন। তাঁর কোম্পানি টেসলা ২০২১ সালে বিটকয়েনে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছিল; যদিও বিটকয়েনের মূল্য ওঠানামা করে। মাস্কের বিনিয়োগ বিটকয়েনের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এদিকে গতকাল টেসলার শেয়ারের মূল্য ১৪ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ইলন মাস্ক নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। তাঁর এই সমর্থন এবং ট্রাম্পের ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি ইতিবাচক মনোভাবের কারণে বিটকয়েনের মূল্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস, ট্রাম্পের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া ও অন্যান্য অনিশ্চয়তার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আর্থিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। এদিকে গতকাল মার্কিন বন্ডের সুদহার বেড়েছে।

বাজারের গতিপ্রকৃতি দেখে বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ট্রাম্পের নতুন সরকার আরও বেশি ঋণ করবে। এই ক্রমবর্ধমান ঋণের সঙ্গে যে ঝুঁকি জড়িয়ে আছে, তার প্রিমিয়াম হিসেবে বিনিয়োগকারীরা অতিরিক্ত সুদ দাবি করছেন।

২০১৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম মেয়াদেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তথাকথিত বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেন। তখন তাঁর মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল চীন। কিন্তু এবারে তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, নির্বাচিত হলে এই বাণিজ্যযুদ্ধের পরিসর আরও বিস্তৃত হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছেই। ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে কেবল চীন নয়, বরং বিশ্বের সব দেশই তাঁর কঠোর বাণিজ্যনীতির কবলে পড়বে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যসহ ধনী দেশগুলোর ওপর এই প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই বাস্তবতায় ট্রাম্পের সঙ্গে মুক্ত ও অবাধ বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী র‍্যাচেল রিভস।

ট্রাম্প বারবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যেসব পণ্য আমদানি করে, তার ওপর ১০ থেকে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি। আর চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক হবে ৬০ শতাংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি এমনকি ১০০ শতাংশও হতে পারে।

পররাষ্ট্রনীতিতে আগের জামানার ধারাবাহিকতায় বিচ্ছিন্নতাবাদী অবস্থান নেবেন। ফলে বাইডেন প্রশাসন যেভাবে চীনের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে তাইওয়ানের সহায় হয়েছিল, ট্রাম্পের জামানায় তা হবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

তাইওয়ান বিশ্বের অন্যতম প্রধান কম্পিউটার চিপ উৎপাদনকারী দেশ। বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ক্ষেত্রে এই চিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাইডেনের চলমান শাসনামলে তাইওয়ান নিয়েও চীন-মার্কিন উত্তেজনা বেড়েছে।

এ সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। আজ বৃহস্পতিবার মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার নিয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দেবে। ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল কী বলেন, তার দিকে তাকিয়ে থাকবে সারা বিশ্ব।

যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদের ওপর বিশ্ব অর্থনীতি অনেকাংশে নির্ভর করে। যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদহার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের সুদও বাড়ে। ফলে বিনিয়োগকারীরা টালমাটাল সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বিনিয়োগে আগ্রহী হন না। তাঁরা ভাবেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করাই ভালো, ভালো সুদ পাওয়া যাবে। বন্ডে বিনিয়োগ বেড়ে গেলে বিশ্বজুড়ে হার্ড কারেন্সি হিসেবে ডলারের সংকট তৈরি হয়। ফলে ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়ে; দেশে দেশে স্থানীয় মুদ্রার দরপতন হয়। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার কমলে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় বিনিয়োগ আসে।

back to top