দীর্ঘদিন ধরে বাড়ছিল নিত্যপণ্যের দাম। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার তিন মাস পেরিয়ে গেলো। নতুন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল এবার ‘সিন্ডিকেট’ ভাঙবে পণ্যের দাম কমবে। তবে, বর্তমান সরকার পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও না কমে উল্টো বেড়েছে। বাজারে পণ্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতি দেখে ক্রেতারা হতাশ। তারা বলছেন, ‘আগের থেকে দাম (পণ্যের) আরও বাড়ছে!’ বিক্রেতা বলছেন, ‘বাড়ছে বাড়ছে, দাম বাড়ছে!’ আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘মানুষের কষ্ট বাড়ছে! একটা বিহিত ব্যবস্থা করা উচিত।’ শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর গত তিন মাসের ঢাকা মহানগরীর বাজার দরের তালিকার ১০টি পণ্যের দর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার তিন মাস অতিবাহিত হলেও প্রায় পণ্যের দাম না কমে উল্টো বেড়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার পাইকারি আড়ত থেকে এক পাল্লা আলু কিনে ফিরছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আলমগীর হোসেন। আলু কতো দরে কিনলেন? এমন প্রশ্নে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এক পাল্লা (৫ কেজি) ৩৫০ টাকা (প্রতি কেজি ৭০ টাকা)। করার কিছু নাই, খাতি হবে তো।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগের থেকে দাম (পণ্যের) আরও বাড়ছে! আগে এতো ছিল না। চালের দাম বস্তা প্রতি ২০০ টাকা বাড়িছে। দেশি পেঁয়াজের কেজি ১৬০ টাকা।’
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, ‘এ দেশে আর কি হবে? আর হওয়ার কিছু নাই। গরীবের ভাগ্যে যা আছে, তাই হবে। আগে সাত হাজার টাকা বেতন দিয়া চলতে পারছি, এখন পঁচিশ-ত্রিশ হাজার টাকা দিয়াও চলতে পারছি না; আরও দেনা হচ্ছে। এছাড়া করার কিছু নাই।’
সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা ও পাইকারী উভয় বাজারে বেড়েছে আলুর দাম। রাজধানির খুচরা বাজারে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে স্থান ও জাতভেদে আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। কারওয়ান বাজারে পাইকারীতে বস্তা হিসেবে দেশি ডায়মন্ড/কাডিনাল জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৬১ থেকে ৬৫ টাকা আর মানভেদে প্রতিপাল্লা আলু ৩৫০ (প্রতি কেজি ৭০) টাকা। গত সপ্তাহে পাইকারীতে বিক্রি হয়েছিল ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায়।
আলুর দাম বাড়ার বিষয়ে কথা হয় কারওয়ান বাজার পাইকারী আড়ত বিক্রমপুর ভা-ারের বিক্রেতা ওহিদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমার জীবনেও দেখি নাই, আলুর এতো দাম! ৪০ বছর রানিং (আলু ব্যবসার সঙ্গে সংযুক্ত)।’
পেঁয়াজের ঝাঁজ এখনও কমেনি। খুচরা বাজারে জাতভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, আমদানি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। এছাড়া দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা আর আমদানি করা রসুন ১৪০ টাকায়।
চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল। খুচরা বাজারে মান ও স্থান ভেদে স্বর্ণা জাতের মোটা চাল কেজি ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, বিআর-২৮ জাতের চাল ৬৫ থেকে ৬৭ টাকা, মিনিকেট নামক চাল ৭৫ থেকে ৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের দরদামের বিষয়ে কথা হয় রাজধানি মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট চালের পইকারী আড়ত তিতাস এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার আবদুল মতিনের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘৫০ কেজি ওজনের ১ বস্তা বিআর-২৮ জাতের চাল ৩০০০ থেকে ৩১০০ টাকা (প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকা)। একই ওজনের ১ বস্তা মিনিকেট চাল ৩৪০০শ থেকে ৩৫০০শ টাকা (প্রতিকেজি ৬৮ থেকে ৭০ টাকা)। আর গুটি স্বর্ণা ১ বস্তা ২৪০০-২৬০০শ টাকা (প্রতি কেজি ৪৮-৫২ টাকা)।’
গত সপ্তাহের থেকে এ সপ্তাহে কি চালের দাম বেড়েছে? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ বাড়ছে বাড়ছে, কেজিতে ১-২ টাকা বাড়ছে।’ দাম কমাবাড়ার বিষিয়ে তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমদানি না হবে, সাপ্লাই না বাড়বে ততক্ষণ দাম পর্যন্ত কমবে না।’
শুক্রবার সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর বাজারগুলোতে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়লেও সপ্তাহের ব্যবধানে দামে তেমন একটা হেরফের হয়নি। গত সপ্তাহের ন্যায় এ সপ্তাহেও মুলা বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭০ টাকায়। বাজারে ১ কেজি মিষ্টি কুমড়া ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা, গোলাপী রঙয়ের গোল বেগুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, করলা-পটল-ঝিঙা-চিচিঙ্গা-ভেন্ডি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, সিম ১২০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। এছাড়া ৪শ থেকে ৫শ গ্রাম ওজনের এক পিস ফুলকপি ৬০ টাকা, একপিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
এক প্রশ্নের জবাবে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান সংবাদকে বলেন, ‘মানুষের কষ্ট বাড়ছে, এটা তো অস্বীকার করার উপাই নাই। এটা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এমনকি আমাদের মতো মধ্যবিত্তরাও হিমসিম খাচ্ছি। এটার একটা বিহিত ব্যবস্থা করা উচিত। বর্তমান যারা আছেন, তারা অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন কিন্তু তার প্রতিফলন/প্রভাব বাজারে পড়ছে না। আরও জোরালো পদক্ষেপ নেয়া দরকার। তাহলে মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরে আসতে পারে।’
‘দাম বৃদ্ধির কারণ একমাত্র সিন্ডিকেট নয় বলে আমার মনে হয়। আরও অনেক কারণ আছে,’ বলেও মনে করেন তিনি।
শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪
দীর্ঘদিন ধরে বাড়ছিল নিত্যপণ্যের দাম। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার তিন মাস পেরিয়ে গেলো। নতুন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল এবার ‘সিন্ডিকেট’ ভাঙবে পণ্যের দাম কমবে। তবে, বর্তমান সরকার পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও না কমে উল্টো বেড়েছে। বাজারে পণ্যমূল্যের এই উর্ধ্বগতি দেখে ক্রেতারা হতাশ। তারা বলছেন, ‘আগের থেকে দাম (পণ্যের) আরও বাড়ছে!’ বিক্রেতা বলছেন, ‘বাড়ছে বাড়ছে, দাম বাড়ছে!’ আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘মানুষের কষ্ট বাড়ছে! একটা বিহিত ব্যবস্থা করা উচিত।’ শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর গত তিন মাসের ঢাকা মহানগরীর বাজার দরের তালিকার ১০টি পণ্যের দর বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার তিন মাস অতিবাহিত হলেও প্রায় পণ্যের দাম না কমে উল্টো বেড়েছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার পাইকারি আড়ত থেকে এক পাল্লা আলু কিনে ফিরছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী আলমগীর হোসেন। আলু কতো দরে কিনলেন? এমন প্রশ্নে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘এক পাল্লা (৫ কেজি) ৩৫০ টাকা (প্রতি কেজি ৭০ টাকা)। করার কিছু নাই, খাতি হবে তো।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগের থেকে দাম (পণ্যের) আরও বাড়ছে! আগে এতো ছিল না। চালের দাম বস্তা প্রতি ২০০ টাকা বাড়িছে। দেশি পেঁয়াজের কেজি ১৬০ টাকা।’
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, ‘এ দেশে আর কি হবে? আর হওয়ার কিছু নাই। গরীবের ভাগ্যে যা আছে, তাই হবে। আগে সাত হাজার টাকা বেতন দিয়া চলতে পারছি, এখন পঁচিশ-ত্রিশ হাজার টাকা দিয়াও চলতে পারছি না; আরও দেনা হচ্ছে। এছাড়া করার কিছু নাই।’
সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা ও পাইকারী উভয় বাজারে বেড়েছে আলুর দাম। রাজধানির খুচরা বাজারে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে স্থান ও জাতভেদে আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। কারওয়ান বাজারে পাইকারীতে বস্তা হিসেবে দেশি ডায়মন্ড/কাডিনাল জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৬১ থেকে ৬৫ টাকা আর মানভেদে প্রতিপাল্লা আলু ৩৫০ (প্রতি কেজি ৭০) টাকা। গত সপ্তাহে পাইকারীতে বিক্রি হয়েছিল ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায়।
আলুর দাম বাড়ার বিষয়ে কথা হয় কারওয়ান বাজার পাইকারী আড়ত বিক্রমপুর ভা-ারের বিক্রেতা ওহিদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমার জীবনেও দেখি নাই, আলুর এতো দাম! ৪০ বছর রানিং (আলু ব্যবসার সঙ্গে সংযুক্ত)।’
পেঁয়াজের ঝাঁজ এখনও কমেনি। খুচরা বাজারে জাতভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, আমদানি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। এছাড়া দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা আর আমদানি করা রসুন ১৪০ টাকায়।
চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল। খুচরা বাজারে মান ও স্থান ভেদে স্বর্ণা জাতের মোটা চাল কেজি ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, বিআর-২৮ জাতের চাল ৬৫ থেকে ৬৭ টাকা, মিনিকেট নামক চাল ৭৫ থেকে ৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের দরদামের বিষয়ে কথা হয় রাজধানি মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট চালের পইকারী আড়ত তিতাস এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার আবদুল মতিনের সঙ্গে। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘৫০ কেজি ওজনের ১ বস্তা বিআর-২৮ জাতের চাল ৩০০০ থেকে ৩১০০ টাকা (প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬২ টাকা)। একই ওজনের ১ বস্তা মিনিকেট চাল ৩৪০০শ থেকে ৩৫০০শ টাকা (প্রতিকেজি ৬৮ থেকে ৭০ টাকা)। আর গুটি স্বর্ণা ১ বস্তা ২৪০০-২৬০০শ টাকা (প্রতি কেজি ৪৮-৫২ টাকা)।’
গত সপ্তাহের থেকে এ সপ্তাহে কি চালের দাম বেড়েছে? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ বাড়ছে বাড়ছে, কেজিতে ১-২ টাকা বাড়ছে।’ দাম কমাবাড়ার বিষিয়ে তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত আমদানি না হবে, সাপ্লাই না বাড়বে ততক্ষণ দাম পর্যন্ত কমবে না।’
শুক্রবার সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর বাজারগুলোতে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়লেও সপ্তাহের ব্যবধানে দামে তেমন একটা হেরফের হয়নি। গত সপ্তাহের ন্যায় এ সপ্তাহেও মুলা বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭০ টাকায়। বাজারে ১ কেজি মিষ্টি কুমড়া ৮০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা, গোলাপী রঙয়ের গোল বেগুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, করলা-পটল-ঝিঙা-চিচিঙ্গা-ভেন্ডি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, সিম ১২০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। এছাড়া ৪শ থেকে ৫শ গ্রাম ওজনের এক পিস ফুলকপি ৬০ টাকা, একপিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
এক প্রশ্নের জবাবে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান সংবাদকে বলেন, ‘মানুষের কষ্ট বাড়ছে, এটা তো অস্বীকার করার উপাই নাই। এটা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এমনকি আমাদের মতো মধ্যবিত্তরাও হিমসিম খাচ্ছি। এটার একটা বিহিত ব্যবস্থা করা উচিত। বর্তমান যারা আছেন, তারা অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন কিন্তু তার প্রতিফলন/প্রভাব বাজারে পড়ছে না। আরও জোরালো পদক্ষেপ নেয়া দরকার। তাহলে মানুষের জীবনে স্বস্তি ফিরে আসতে পারে।’
‘দাম বৃদ্ধির কারণ একমাত্র সিন্ডিকেট নয় বলে আমার মনে হয়। আরও অনেক কারণ আছে,’ বলেও মনে করেন তিনি।