alt

রাজশাহী অঞ্চলে আলু বীজের সংকট, দিশেহারা কৃষক, জরুরি সভা

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী : রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

রাজশাহীর আলু বীজের সংকট দিশেহারা কৃষক। কৃষকেরা জানান, ৮০ টাকা কেজি দরের উচ্চ ফলনশীল জাতের আলু বীজ ১০০ টাকা কেজিতেও মিলছে না। আলুর ভরা মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ প্রয়োজনীয় আলু বীজ সংগ্রহ করতে না পারায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট কৃষকরা। এমন উদ্ভূত আলু বীজ সংকট পরিস্থিতির কারণে চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বীজ আলুর সংকট নিরসন করে প্রকৃত আলু চাষীদের বীজ আলু প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে এক জরুরী আলোচনা সভা করা হয়েছে।

রাজশাহী অঞ্চলের বাঘা তানেঅর মোহনপুর সমস্ত এলাকায় সবচেয়ে বেশী আলু উৎপাদন হয়, তারমধ্যে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা অন্যতম। কিন্তু এ বছর বাজারে খাওয়ার আলুর দাম অনেক বেশী হওয়ায়, বীজ আলু-খাবার আলু হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে বীজ আলুর সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষকদের দাবি, সরকার যে কোন মুল্যে বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রন করতে ব্যার্থ হলে, এবার ডিসেম্বরে শুরুতে মৌসুম ভিত্তিক আলুর উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

বাঘার চরাঞ্চলের কৃষকরা বলছেন, এবার আলুর দাম বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বীজ আলু খাবার আলু হিসাবে কাজে লাগাচ্ছে। যদি এমন অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে সামনের মৌসুমে শুরু থেকে নতুন আলুর দাম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে বিপাকে পড়বে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও কৃষকরা।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবর শেষে দেশে বীজ আলুর মজুত ছিল ৫.৬৭ লাখ টন। আর বীজ আলুর চাহিদা ছিল ৭.৫ লাখ টন। অর্থাৎ ইতিমধ্যেই প্রায় ২ লাখ টন বীজ আলুর মজুত খাওয়ার আলু হিসেবে ব্যবহার হয়ে গেছে। এর ফলে চরম হতাশার মধ্যে রয়েছেন আলু চাষীরা।

বাঘার কৃষকরা বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর সকল পন্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আলু অন্যতম। এখন বাজারে প্রতি কেজি খাবার আলু বিক্রয় হচ্ছে ৭৫ টাকা বা তারও বেশি দামে। কিন্তু প্রকার ভেদে বিভিন্ন কোম্পানি বীজ আলু বিক্রি করছে ৭০ থেকে ৭৩ টাকা কেজি দরে। ফলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বীজ আলু খাবার আলু হিসেবে ব্যবহার হওয়ায়।

তারা আরো জানান, যদি এমনি ভাবে চলতে থাকে এবং বাজার নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব না হয়, তাহলে এখন থেকে বীজ আলুর আরো সংকট তৈরি হবে। তখন সরকার দেশের বাইরে থেকে বীজ সরবরাহ করতে না পারলে কৃষকদের মাথায় হাত পড়বে। বাঘার চরাঞ্চলের আলু চাষী গোলাম মোস্তফা জানান, প্রতি বছর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও বেসরকারি খাত বীজ আলুর জোগান দেয়। এ ছাড়াও চাষিদের কাছে অল্প কিছু বীজের জোগান থাকে। বর্তমানে বীজ আলু যা আছে, তা যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হলে শুধু কৃষক নয়, সরকারও বিপাকে পড়বেন।

রাজশাহী সাহেব বাজার মাষ্টার পাড়া এলাকার নামপ্রকাশের অনিচ্ছুক পাইকারী এক কাচামাল ব্যাবসায়ী বলেন, । সাধারণত প্রতি বছর আলুর দাম উৎপাদন মৌসুমে ২০-৩০ টাকা এবং মৌসুম শেষে ৪৫-৫০ টাকায় ওঠে। কিন্তু এ বছর উৎপাদন মৌসুম থেকেই আলুর দাম চড়া, এখন সেটি ৭০-৭৫ টাকায় উঠেছে। এর প্রধান কারন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এর মধ্যে সরকার আলু আমদানির ওপর থেকে শুল্ক কমিয়ে আমদানি সহজ করেছে। কিন্তু আমদানি করেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

অপরদিকে রাজশাহীর তানোরে আলু বীজের সংকট দিশেহারা কৃষক। কৃষকেরা জানান, ৮০ টাকা কেজি দরের উচ্চ ফলনশীল জাতের আলু বীজ ১০০ টাকা কেজিতেও মিলছে না। আলুর ভরা মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী কাক্ষিত পরিমাণ প্রয়োজনীয় আলু বীজ সংগ্রহ করতে না পারায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট কৃষকরা। এমন উদ্ভূত আলু বীজ সংকট পরিস্থিতির কারণে চলতি মৌসুমে উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, জেলার তানোর উপজেলায় বেশী আলু চাষাবাদ হয়।কিন্ত তানোরে ব্র্যাকের মাত্র একজন আলু বীজ ডিলার রয়েছে। অন্যদিকে জেলার মোহনপুর উপজেলায় সব চাইতে কম আলু চাষাবাদ হয়। অথচ মোহনপুরে ব্র্যাকের ৪ জন বীজ ডিলার রয়েছে।

এদিকে কৃষি বিভাগের দাবি, সংকট নয় একশ্রেণির মুনাফালোভী অসাধু বীজ ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই আলু বীজের দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ তুলছেন কৃষকরা। কিন্তু ভুক্তভোগী কৃষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, এ বছর সরকারি-বেসরকারি প্রতি কেজি ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রেডের উচ্চ ফলনশীল আলু বীজ প্রকারভেদে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে ওই দামে কাক্ষিত বীজ মিলছে না।

এদিকে শনিবার বিকালে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা সিদ্দিকার সভাপতিত্বে তার নিজ কার্যালয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) জোবায়দা সুলতানা, মোহনপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুল ইমলাম, মোহনপুর থানার এস.আই নওশাদ আলী। এসময় উপজেলার আলু চাষী, আলু মজুদকারী, হিমাগার কর্তৃপক্ষ সহ গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে মতামত জানা হয়।

মোহনপুর উপজেলায় আলু সংকট নিরসনে করণীয় হিসেবে, আলু মজুতদারদের তালিকা নিশ্চিত করা, মোহনপুরে অবস্থিত সকল হিমাগারের মালিক/ম্যানেজারদের সাথে আলু বীজের বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করা, পাইকারী থেকে খুচরা সকল পর্যায়ে পাকা রশিদ নিশ্চিত করাসহ রংপুরে প্রাণ এগ্রো ৪৫ টাকা দরে আলু বিক্রি শুরু করেছে। এমন কোন কার্যক্রম মোহনপুর এলাকায় ব্যবস্থা করা যায় কিনা। নতুন কোন কর্ম পরিকল্পনা হাতে নিয়ে আগামী দিনে খাবার আলু এবং বীজ আলুর দাম কমানো যায় কিনা, এরকম মতামত উঠে আসে এ আলোচনা সভায়।

এবিষয়ে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়শা সিদ্দিকা বলেন, খাবার আলু এবং বীজ আলুর ন্যায্যমূল্য গ্রাহক ও প্রান্তিক আলু চাষীদের নিকট নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে আলুর বাজার নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে এই মিটিং আয়োজিত হয়েছে। বীজ আলুর সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং খাবার আলুর মূল্য হ্রাসে এ ধরনের প্রচেষ্টা চালু থাকবে।

ছবি

বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ, সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম কমেছে

ছবি

আইএমএফ থেকে পরের কিস্তি পাওয়ার আলোচনা হবে নতুন সরকারের সঙ্গে

ছবি

পাঁচ ব্যাংক নয়, সরকারের টাকা পাবে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’

ছবি

খেলাপি হার ২০ শতাংশ হলেও তহবিল পরিচালনায় যোগ্য হবে ব্যাংক

ছবি

এবার স্বর্ণের দাম ভরিতে বাড়লো ৫ হাজার টাকা

ছবি

সার ডিলার নিয়োগ ও বিতরণ নীতিমালা অনুমোদন

ছবি

ঠিকায় কাজ করা পোশাক কারখানাও প্রণোদনা পাবে

ছবি

রমজান-নির্বাচন উপলক্ষে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানোর তাগিদ

ছবি

বাকিতে আমদানি করা যাবে রোজার পণ্য

ছবি

সুমিটোমো থার্ড টার্মিনালের অপারেশনস-মেইটেনেন্স কাজ করতে আগ্রহী জাপান

ছবি

চলমান গ্যাস সংকট কমাতে দীর্ঘ পরিকল্পনা পেট্রোবাংলার

ছবি

প্রথম প্রান্তিকে ওয়ালটনের মুনাফায় ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

ছবি

সয়াবিন তেল ও চিনি কিনছে সরকার

ছবি

১৬৪ টাকায় সয়াবিন তেল, ৯৪ টাকায় চিনি কিনবে সরকার

ছবি

ভারতে মূল্যস্ফীতি শূন্যের কাছাকাছি

ছবি

সিএমএসএমইর তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ল

ছবি

সরকারের জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ, অর্থবিভাগ-এর সাথে সর্বজনীন পেনশন স্কিমসমুহে রেজিস্ট্রেশন

ছবি

মিউচুয়াল ফান্ড বিধিমালা নিয়ে গেজেট, থাকছে না মেয়াদি ফান্ড

ছবি

মেট্রোরেল প্রকল্প বাতিল হয়নি, ব্যয় কমানোর চেষ্টা চলছে: ডিএমটিসিএল এমডি

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে চিঠি

ছবি

নতুন পে-স্কেলের ফ্রেমওয়ার্ক দিয়ে যাবে বর্তমান সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

চট্টগ্রামে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল: ৩০ বছর চালাবে ডেনমার্কের কোম্পানি

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানত নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার অনুরোধ প্রশাসকদের

ছবি

বৃহস্পতিবার দোকান ও বিপণিবিতান খোলা রাখার ঘোষণা ব্যবসায়ীদের

ছবি

চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চান ব্যবসায়ীরা

ছবি

তিন শতাধিক শেয়ারের দরপতনে তলানিতে লেনদেন শেয়ারবাজারে

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার ‘শূন্য’ ঘোষণা একতরফা সিদ্ধান্ত: বিএমবিএ

ছবি

সাবেক এমপিদের ৩১ বিলাসবহুল গাড়ি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে দিল এনবিআর

ছবি

তরূণদের অংশগ্রহনে নারায়ণগঞ্জে উদ্যোক্তা সম্মেলন হলো

ছবি

বাজারে নতুন স্মার্টফোন হেলিও ৪৫

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে রিয়েলমি সি৮৫ প্রো উন্মোচন

ছবি

এলডিসি উত্তরণ ৩ বছর পিছিয়ে দেয়ার অনুরোধ ব্যবসায়ীদের

ছবি

শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করবে আরএসসি, সায় দিচ্ছে না বিজিএমইএ

ছবি

শেয়ারবাজারে ৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

ছবি

বাংলাদেশের তৈরি ফ্যাশনেবল পোশাকের আমদানি বাড়াবে জাপান

ছবি

স্বর্ণের দাম আবার বাড়লো

tab

রাজশাহী অঞ্চলে আলু বীজের সংকট, দিশেহারা কৃষক, জরুরি সভা

জেলা বার্তা পরিবেশক, রাজশাহী

রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

রাজশাহীর আলু বীজের সংকট দিশেহারা কৃষক। কৃষকেরা জানান, ৮০ টাকা কেজি দরের উচ্চ ফলনশীল জাতের আলু বীজ ১০০ টাকা কেজিতেও মিলছে না। আলুর ভরা মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ প্রয়োজনীয় আলু বীজ সংগ্রহ করতে না পারায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট কৃষকরা। এমন উদ্ভূত আলু বীজ সংকট পরিস্থিতির কারণে চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এদিকে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বীজ আলুর সংকট নিরসন করে প্রকৃত আলু চাষীদের বীজ আলু প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে এক জরুরী আলোচনা সভা করা হয়েছে।

রাজশাহী অঞ্চলের বাঘা তানেঅর মোহনপুর সমস্ত এলাকায় সবচেয়ে বেশী আলু উৎপাদন হয়, তারমধ্যে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা অন্যতম। কিন্তু এ বছর বাজারে খাওয়ার আলুর দাম অনেক বেশী হওয়ায়, বীজ আলু-খাবার আলু হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে বীজ আলুর সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষকদের দাবি, সরকার যে কোন মুল্যে বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রন করতে ব্যার্থ হলে, এবার ডিসেম্বরে শুরুতে মৌসুম ভিত্তিক আলুর উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

বাঘার চরাঞ্চলের কৃষকরা বলছেন, এবার আলুর দাম বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বীজ আলু খাবার আলু হিসাবে কাজে লাগাচ্ছে। যদি এমন অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে সামনের মৌসুমে শুরু থেকে নতুন আলুর দাম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে বিপাকে পড়বে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষও কৃষকরা।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবর শেষে দেশে বীজ আলুর মজুত ছিল ৫.৬৭ লাখ টন। আর বীজ আলুর চাহিদা ছিল ৭.৫ লাখ টন। অর্থাৎ ইতিমধ্যেই প্রায় ২ লাখ টন বীজ আলুর মজুত খাওয়ার আলু হিসেবে ব্যবহার হয়ে গেছে। এর ফলে চরম হতাশার মধ্যে রয়েছেন আলু চাষীরা।

বাঘার কৃষকরা বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর সকল পন্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আলু অন্যতম। এখন বাজারে প্রতি কেজি খাবার আলু বিক্রয় হচ্ছে ৭৫ টাকা বা তারও বেশি দামে। কিন্তু প্রকার ভেদে বিভিন্ন কোম্পানি বীজ আলু বিক্রি করছে ৭০ থেকে ৭৩ টাকা কেজি দরে। ফলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বীজ আলু খাবার আলু হিসেবে ব্যবহার হওয়ায়।

তারা আরো জানান, যদি এমনি ভাবে চলতে থাকে এবং বাজার নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব না হয়, তাহলে এখন থেকে বীজ আলুর আরো সংকট তৈরি হবে। তখন সরকার দেশের বাইরে থেকে বীজ সরবরাহ করতে না পারলে কৃষকদের মাথায় হাত পড়বে। বাঘার চরাঞ্চলের আলু চাষী গোলাম মোস্তফা জানান, প্রতি বছর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও বেসরকারি খাত বীজ আলুর জোগান দেয়। এ ছাড়াও চাষিদের কাছে অল্প কিছু বীজের জোগান থাকে। বর্তমানে বীজ আলু যা আছে, তা যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হলে শুধু কৃষক নয়, সরকারও বিপাকে পড়বেন।

রাজশাহী সাহেব বাজার মাষ্টার পাড়া এলাকার নামপ্রকাশের অনিচ্ছুক পাইকারী এক কাচামাল ব্যাবসায়ী বলেন, । সাধারণত প্রতি বছর আলুর দাম উৎপাদন মৌসুমে ২০-৩০ টাকা এবং মৌসুম শেষে ৪৫-৫০ টাকায় ওঠে। কিন্তু এ বছর উৎপাদন মৌসুম থেকেই আলুর দাম চড়া, এখন সেটি ৭০-৭৫ টাকায় উঠেছে। এর প্রধান কারন ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এর মধ্যে সরকার আলু আমদানির ওপর থেকে শুল্ক কমিয়ে আমদানি সহজ করেছে। কিন্তু আমদানি করেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

অপরদিকে রাজশাহীর তানোরে আলু বীজের সংকট দিশেহারা কৃষক। কৃষকেরা জানান, ৮০ টাকা কেজি দরের উচ্চ ফলনশীল জাতের আলু বীজ ১০০ টাকা কেজিতেও মিলছে না। আলুর ভরা মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী কাক্ষিত পরিমাণ প্রয়োজনীয় আলু বীজ সংগ্রহ করতে না পারায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট কৃষকরা। এমন উদ্ভূত আলু বীজ সংকট পরিস্থিতির কারণে চলতি মৌসুমে উপজেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, জেলার তানোর উপজেলায় বেশী আলু চাষাবাদ হয়।কিন্ত তানোরে ব্র্যাকের মাত্র একজন আলু বীজ ডিলার রয়েছে। অন্যদিকে জেলার মোহনপুর উপজেলায় সব চাইতে কম আলু চাষাবাদ হয়। অথচ মোহনপুরে ব্র্যাকের ৪ জন বীজ ডিলার রয়েছে।

এদিকে কৃষি বিভাগের দাবি, সংকট নয় একশ্রেণির মুনাফালোভী অসাধু বীজ ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণেই আলু বীজের দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগ তুলছেন কৃষকরা। কিন্তু ভুক্তভোগী কৃষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, এ বছর সরকারি-বেসরকারি প্রতি কেজি ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রেডের উচ্চ ফলনশীল আলু বীজ প্রকারভেদে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে ওই দামে কাক্ষিত বীজ মিলছে না।

এদিকে শনিবার বিকালে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়েশা সিদ্দিকার সভাপতিত্বে তার নিজ কার্যালয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) জোবায়দা সুলতানা, মোহনপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুল ইমলাম, মোহনপুর থানার এস.আই নওশাদ আলী। এসময় উপজেলার আলু চাষী, আলু মজুদকারী, হিমাগার কর্তৃপক্ষ সহ গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে মতামত জানা হয়।

মোহনপুর উপজেলায় আলু সংকট নিরসনে করণীয় হিসেবে, আলু মজুতদারদের তালিকা নিশ্চিত করা, মোহনপুরে অবস্থিত সকল হিমাগারের মালিক/ম্যানেজারদের সাথে আলু বীজের বিষয়টি নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করা, পাইকারী থেকে খুচরা সকল পর্যায়ে পাকা রশিদ নিশ্চিত করাসহ রংপুরে প্রাণ এগ্রো ৪৫ টাকা দরে আলু বিক্রি শুরু করেছে। এমন কোন কার্যক্রম মোহনপুর এলাকায় ব্যবস্থা করা যায় কিনা। নতুন কোন কর্ম পরিকল্পনা হাতে নিয়ে আগামী দিনে খাবার আলু এবং বীজ আলুর দাম কমানো যায় কিনা, এরকম মতামত উঠে আসে এ আলোচনা সভায়।

এবিষয়ে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আয়শা সিদ্দিকা বলেন, খাবার আলু এবং বীজ আলুর ন্যায্যমূল্য গ্রাহক ও প্রান্তিক আলু চাষীদের নিকট নিশ্চিত করতে উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে আলুর বাজার নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে এই মিটিং আয়োজিত হয়েছে। বীজ আলুর সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং খাবার আলুর মূল্য হ্রাসে এ ধরনের প্রচেষ্টা চালু থাকবে।

back to top