গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। এই পরিমান ঋণ মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। রোববার (১৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা সাংবাদিকদেরে এসব তথ্য জানান।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এই প্রথম খেলাপি ঋণের তথ্য পাওয়া গেল। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত জুন শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এরপর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন থেকে সেপ্টেম্বর- এই তিন মাসে খেলাপি ঋণ বাড়াতে সরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল বেসরকারি ব্যাংকগুলোর। এই সময়ে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৩ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। আর বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪৯ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।
গত জুন শেষে ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৪৯ শতাংশ ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৬ ব্যাংকে। এই ব্যাংকগুলো হলো, সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভোলপমেন্ট ব্যাংক। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের ৪৭ শতাংশ ছিল বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৯৯ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতে ব্যাংক আছে ৪৩টি। এছাড়া বিশেষায়িত দুই ব্যাংকে খেলাপি ঋণের প্রায় ৩ শতাংশ। এই ব্যাংক দুটি হলো- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এই ব্যাংক দুটিতে খেলাপি ঋণ রয়েছে ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। বাকি এক শতাংশ খেলাপি ঋণ বিদেশি ব্যাংকগুলোতে; যার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। বিদেশি খাতে ব্যাংক আছে ৯টি। সেপ্টেম্বর শেষে ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। একইভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেশ খানিকটা বেড়েছে।
পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, এস আলমসহ আরও কিছু বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। এতেও বেড়েছে খেলাপি ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ১১ কোটি টাকা, যা এ খাতের বিতরণ করা ঋণের ৪০ শতাংশেরও বেশি। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা, যা এ খাতের বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ।
বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ রয়েছে ৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা ঋণের মাত্র ৫ শতাংশ। বিশেষায়িত বাণিজ্যিক ব্যাংকে (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক-রাকাব) খেলাপি ঋণ রয়েছে ৫ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা, যা এ খাতের বিতরণ করা ঋণের ১৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুশনে আরা শিখা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে অনুসরণ করার কারণে খেলাপি ঋণ বেশি হয়েছে। আগে টার্ম লোনের গ্রেস পিরিয়ড ছয় মাসে ছিল। তা এখন তিন মাসে করা হয়েছে। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দা হওয়ার কারণে ঋণ পরিশোধ কম হচ্ছে। এর কারণেও খেলাপি বেড়ে গেছে।’
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হিসাবে অবলোপন করা ও আদালতের আদেশে স্থগিত থাকা ঋণ বিবেচনায় নেয়া হয়নি। সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাত সংস্কারে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র আগামী দিনে আরও বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। এই পরিমান ঋণ মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। রোববার (১৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা সাংবাদিকদেরে এসব তথ্য জানান।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এই প্রথম খেলাপি ঋণের তথ্য পাওয়া গেল। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত জুন শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এরপর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন থেকে সেপ্টেম্বর- এই তিন মাসে খেলাপি ঋণ বাড়াতে সরকারি ব্যাংকের চেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল বেসরকারি ব্যাংকগুলোর। এই সময়ে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৩ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। আর বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪৯ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।
গত জুন শেষে ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৪৯ শতাংশ ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৬ ব্যাংকে। এই ব্যাংকগুলো হলো, সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভোলপমেন্ট ব্যাংক। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের ৪৭ শতাংশ ছিল বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৯৯ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতে ব্যাংক আছে ৪৩টি। এছাড়া বিশেষায়িত দুই ব্যাংকে খেলাপি ঋণের প্রায় ৩ শতাংশ। এই ব্যাংক দুটি হলো- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এই ব্যাংক দুটিতে খেলাপি ঋণ রয়েছে ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। বাকি এক শতাংশ খেলাপি ঋণ বিদেশি ব্যাংকগুলোতে; যার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। বিদেশি খাতে ব্যাংক আছে ৯টি। সেপ্টেম্বর শেষে ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। একইভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেশ খানিকটা বেড়েছে।
পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, এস আলমসহ আরও কিছু বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। এতেও বেড়েছে খেলাপি ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ১১ কোটি টাকা, যা এ খাতের বিতরণ করা ঋণের ৪০ শতাংশেরও বেশি। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা, যা এ খাতের বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ।
বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ রয়েছে ৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা ঋণের মাত্র ৫ শতাংশ। বিশেষায়িত বাণিজ্যিক ব্যাংকে (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক-রাকাব) খেলাপি ঋণ রয়েছে ৫ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা, যা এ খাতের বিতরণ করা ঋণের ১৩ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুশনে আরা শিখা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে অনুসরণ করার কারণে খেলাপি ঋণ বেশি হয়েছে। আগে টার্ম লোনের গ্রেস পিরিয়ড ছয় মাসে ছিল। তা এখন তিন মাসে করা হয়েছে। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দা হওয়ার কারণে ঋণ পরিশোধ কম হচ্ছে। এর কারণেও খেলাপি বেড়ে গেছে।’
ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হিসাবে অবলোপন করা ও আদালতের আদেশে স্থগিত থাকা ঋণ বিবেচনায় নেয়া হয়নি। সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাত সংস্কারে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র আগামী দিনে আরও বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।