অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, এ ধরনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী সংস্কার বাস্তবায়ন ৪-৫ বছর সময়ের দাবি রাখে। তবে সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ১৮ মাস থেকে দুই বছরের মধ্যে নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্বভার তুলে দেওয়া হলে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে। তিনি এ সংস্কারের ধারাবাহিকতা রক্ষায় ভবিষ্যৎ সরকারগুলোর ভূমিকা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।
আজ বুধবার রাজধানীর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত নেহরীন খান স্মৃতি বক্তৃতা ও সম্মাননা অনুষ্ঠান ২০২৪-এ অধ্যাপক রেহমান সোবহান এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশে আরও ন্যায়সংগত সমাজ গঠন’ শীর্ষক বক্তৃতায় তিনি বৈষম্য দূর করতে বাজার, রাজনীতি এবং শাসন কাঠামোয় গভীর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর আলোকপাত করেন।
অধ্যাপক সোবহান বলেন, “বাংলাদেশে সামাজিক অবিচার, অসম সামাজিক সুযোগ, অন্যায্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং রাষ্ট্রের অবিচার—এই চারটি প্রধান সমস্যার সমাধানে সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে বাজারের বৈষম্যমূলক চরিত্র দূর করার জন্য দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য তথ্য, সম্পদ ও ন্যায্য সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বিগত বছরগুলোতে রাজনীতি ও ব্যবসার মেলবন্ধন এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছে যেখানে ক্ষমতা শুধুমাত্র ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যবহৃত হয়েছে। এর ফলে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়েছেন। এই অসমতা দূর করতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সংস্কারের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে।”
রাজনীতির অপরাধীকরণের দিকটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অপরাধীদের অংশগ্রহণ এবং অর্থের ভূমিকা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় সংসদ ধনীদের চেম্বার অব কমার্সে পরিণত হয়েছে। এ ধরনের রাজনীতির কারণে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী ক্ষমতায় অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।”
অধ্যাপক সোবহান বলেন, “রাষ্ট্রের বাজেটের একটি বড় অংশ সরকারি কর্মকর্তা, প্রতিরক্ষা খাত এবং ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়। কিন্তু দরিদ্র জনগণের মানব উন্নয়ন ও জীবনমান উন্নয়নে যথাযথ বিনিয়োগ করা হয় না। ধনী ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করছেন, যা দরিদ্র জনগণের জন্য আরও বৈষম্য তৈরি করছে।”
তিনি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা, শ্রমবাজারের ন্যায্যতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সমবায়ের মতো কাঠামো তৈরির সুপারিশ করেন।
তিনি আরও বলেন, “ন্যায়সংগত সমাজ গঠনে রাজনৈতিক নেতৃত্ব আন্তরিক হলে এই লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। এটি রোমান্টিক কল্পনার মতো শোনালেও বাস্তবায়নযোগ্য। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে, তা ভবিষ্যৎ সরকারের মাধ্যমে অব্যাহত রাখতে হবে।”
অনুষ্ঠানটি নেহরীন খানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আয়োজিত হয়। নেহরীন খান ছিলেন প্রয়াত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান ও সানবিমস স্কুলের শিক্ষক হামীম খানের একমাত্র কন্যা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অধ্যাপক ফকরুল আলম এবং সমাপনী বক্তব্য দেন ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অধ্যাপক রেহমান সোবহান একটি ন্যায়সংগত ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: ২৭তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে ১টি গোল্ড মেডেলসহ ১১টি পদক অর্জন করল বাংলাদেশ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলের ১৬ হাজারের বেশি কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিলো বিকাশ
সারাদেশ: পঞ্চগড়ে বড় দিন উদযাপিত