অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রেসক্রিপশন নিয়ে দেশ চালানোর চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশের যে অবস্থা, তাতে এই প্রেসক্রিপশনে কাজ হবে না।’ গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথাগুলো বলেন আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিসিআই।
বিসিআইয়ের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক নীতি নিয়েছে। তারল্য সরবরাহ কমিয়েছে। এগুলো দেশের অর্থনীতি, শিল্প ও ব্যবসায়ীদের জন্য অনুকূল নয়। বাংলাদেশ আইএমএফের প্রেসক্রিপশন নিয়ে কিছু জায়গায় প্রস্তুতি নিতে পারি। কমপ্লায়েন্স পূরণ করার জন্য অনেক জায়গায় কাজ করতে পারি। কিন্তু আইএমএফের প্রেসক্রিপশন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে গেলে আমাদের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
আনোয়ার-উল আলম বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কার্যক্রমে অর্থনীতি অগ্রাধিকার পাচ্ছে না, এটা পরিষ্কার। সরকার একদিকে সুদহার বাড়িয়ে রেখেছে, অন্যদিকে আছে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত জ্বালানি সমস্যার সুরাহা হয়নি। বরং নতুন করে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা হচ্ছে। ফলে এটা পরিষ্কার, সরকারের কার্যক্রম শিল্প খাতের জন্য ইতিবাচক নয়। এভাবে চললে নতুন শিল্প স্থাপন তো দূরের কথা, বিদ্যমান শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পক্ষেও টিকে থাকা কঠিন।’
রাজনৈতিক দলগুলোও অর্থনীতি নিয়ে চিন্তিত নয় বলে জানান বিসিআইয়ের সভাপতি। তারা একে অপরকে নিয়ে নানা কথা বললেও অর্থনীতি নিয়ে কিছু বলছে না। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আনোয়ার-উল আলম বলেন, ‘রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ভয় কে পাচ্ছে না, সবাই পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সমাধানও দেখা যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকার যতো দ্রুত সম্ভব নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় চলে যাওয়া উচিত। তাতে সবার মধ্যে স্বস্তি আসবে।’
গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া কখনও স্বস্তি আসবে না উল্লেখ করে আনোয়ার-উল আলম আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যতো দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার করে বাকি সংস্কারের জন্য পথ-নকশা করে দিতে পারে, ততই মঙ্গল।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়লেও ব্যবসায়ীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’ অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘ভ্যাট যা বাড়ানো হয়েছে, তাতে জিনিসপত্রের দাম তেমন একটা বাড়েনি।’ সরকারের শীর্ষ নীতি নির্ধারকদের এমন বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক বলে মন্তব্য করেছেন বিসিআইয়ের সভাপতি।
আনোয়ার-উল আলম বলেন, ‘সরকারের এমন বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক। সরকারের ব্যয় সংকোচনমূলক পদক্ষেপ কিছু দেখা যাচ্ছে না। রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) করজাল না বাড়িয়ে সহজ ওপায়ে (ভ্যাট বৃদ্ধি) গেছে। আবার বলা হচ্ছে, ভ্যাট বৃদ্ধি দামের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না। এ বিষয়গুলোর কারণে শিল্পোদ্যোক্তারা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন।’
দু-চারজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যারা ব্যাংক লুট করেছে, তাদের দায় সবার ওপর চাপানো হলে অবিচার হবে বলে মনে করেন বিসিআইয়ের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা বর্তমানে হতাশায় ভুগছেন। তারা মানসম্মান নিয়ে চলতে চান। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ঢালাওভাবে খেলাপি বলা হয়। তারা কেন খেলাপি হলেন, সেটি দেখা হয় না। বিগত সময়ে বিভিন্ন কারণে যে পরিমাণে ব্যবসায়িক খরচ বেড়েছে, তা সবার পক্ষে সামলানো সম্ভব হয়নি। তাই অনেকে খেলাপি হয়েছেন। এ জন্য কি সেই উদ্যোক্তারা দায়ী?’
আনোয়ার-উল আলম বলেন, ‘খেলাপি ঋণ নিয়ে সরকারের যেমন নীতি আছে, প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্বও সরকারের আছে। সুরক্ষা দিতে না পারলে উদ্যোক্তাকে ব্যবসা থেকে বিদায় নিতে হবে। কিন্তু দেশে দেউলিয়া আইন নেই।’ এ বিষয়ে সম্প্রতি গভর্নরের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘গভর্নর এ বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন।’
২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে আসার কথা। তবে এই সময়সীমা আরও ৩ বছরের জন্য অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত পেছানোর দাবি জানিয়েছে বিসিআই। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি বলেন, ‘গত (আওয়ামী লীগ) সরকার বাহবা নেয়ার জন্য ফোলানো-ফাঁপানো অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান দিয়ে উত্তরণের পথে হেঁটেছিল। আমরা ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এই সময়সীমা পেছানো না হলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধস নামবে।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের নীতি সহায়তা প্রয়োজন উল্লেখ করে আনোয়ার-উল আলম বলেন, ‘আমরা চাই, বিনিয়োগ যেন বিফলে না যায়। অন্তর্বর্তী সরকার ও আগামী সরকার যেন জাতিকে অর্থনৈতিক স্বস্তি উপহার দেয়।’ বর্তমান পরিস্থিতিতে উৎপাদন খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে উৎপাদন খাতের পক্ষে বিসিআই থেকে সরকারকে কিছু প্রস্তাব দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী, পরিচালক শহিদুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার, জাহাঙ্গীর আলম, রেহানা রহমান, শাহ আলম লিটু, নাজমুল আনোয়ার ও খায়ের মিয়া।
শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫
অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রেসক্রিপশন নিয়ে দেশ চালানোর চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশের যে অবস্থা, তাতে এই প্রেসক্রিপশনে কাজ হবে না।’ গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথাগুলো বলেন আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিসিআই।
বিসিআইয়ের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক নীতি নিয়েছে। তারল্য সরবরাহ কমিয়েছে। এগুলো দেশের অর্থনীতি, শিল্প ও ব্যবসায়ীদের জন্য অনুকূল নয়। বাংলাদেশ আইএমএফের প্রেসক্রিপশন নিয়ে কিছু জায়গায় প্রস্তুতি নিতে পারি। কমপ্লায়েন্স পূরণ করার জন্য অনেক জায়গায় কাজ করতে পারি। কিন্তু আইএমএফের প্রেসক্রিপশন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে গেলে আমাদের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
আনোয়ার-উল আলম বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কার্যক্রমে অর্থনীতি অগ্রাধিকার পাচ্ছে না, এটা পরিষ্কার। সরকার একদিকে সুদহার বাড়িয়ে রেখেছে, অন্যদিকে আছে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত জ্বালানি সমস্যার সুরাহা হয়নি। বরং নতুন করে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা হচ্ছে। ফলে এটা পরিষ্কার, সরকারের কার্যক্রম শিল্প খাতের জন্য ইতিবাচক নয়। এভাবে চললে নতুন শিল্প স্থাপন তো দূরের কথা, বিদ্যমান শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পক্ষেও টিকে থাকা কঠিন।’
রাজনৈতিক দলগুলোও অর্থনীতি নিয়ে চিন্তিত নয় বলে জানান বিসিআইয়ের সভাপতি। তারা একে অপরকে নিয়ে নানা কথা বললেও অর্থনীতি নিয়ে কিছু বলছে না। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আনোয়ার-উল আলম বলেন, ‘রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার ভয় কে পাচ্ছে না, সবাই পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সমাধানও দেখা যাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকার যতো দ্রুত সম্ভব নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় চলে যাওয়া উচিত। তাতে সবার মধ্যে স্বস্তি আসবে।’
গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া কখনও স্বস্তি আসবে না উল্লেখ করে আনোয়ার-উল আলম আরও বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার যতো দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার করে বাকি সংস্কারের জন্য পথ-নকশা করে দিতে পারে, ততই মঙ্গল।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়লেও ব্যবসায়ীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’ অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘ভ্যাট যা বাড়ানো হয়েছে, তাতে জিনিসপত্রের দাম তেমন একটা বাড়েনি।’ সরকারের শীর্ষ নীতি নির্ধারকদের এমন বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক বলে মন্তব্য করেছেন বিসিআইয়ের সভাপতি।
আনোয়ার-উল আলম বলেন, ‘সরকারের এমন বক্তব্য বিভ্রান্তিমূলক। সরকারের ব্যয় সংকোচনমূলক পদক্ষেপ কিছু দেখা যাচ্ছে না। রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) করজাল না বাড়িয়ে সহজ ওপায়ে (ভ্যাট বৃদ্ধি) গেছে। আবার বলা হচ্ছে, ভ্যাট বৃদ্ধি দামের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে না। এ বিষয়গুলোর কারণে শিল্পোদ্যোক্তারা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন।’
দু-চারজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যারা ব্যাংক লুট করেছে, তাদের দায় সবার ওপর চাপানো হলে অবিচার হবে বলে মনে করেন বিসিআইয়ের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা বর্তমানে হতাশায় ভুগছেন। তারা মানসম্মান নিয়ে চলতে চান। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ঢালাওভাবে খেলাপি বলা হয়। তারা কেন খেলাপি হলেন, সেটি দেখা হয় না। বিগত সময়ে বিভিন্ন কারণে যে পরিমাণে ব্যবসায়িক খরচ বেড়েছে, তা সবার পক্ষে সামলানো সম্ভব হয়নি। তাই অনেকে খেলাপি হয়েছেন। এ জন্য কি সেই উদ্যোক্তারা দায়ী?’
আনোয়ার-উল আলম বলেন, ‘খেলাপি ঋণ নিয়ে সরকারের যেমন নীতি আছে, প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্বও সরকারের আছে। সুরক্ষা দিতে না পারলে উদ্যোক্তাকে ব্যবসা থেকে বিদায় নিতে হবে। কিন্তু দেশে দেউলিয়া আইন নেই।’ এ বিষয়ে সম্প্রতি গভর্নরের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘গভর্নর এ বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছেন।’
২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে আসার কথা। তবে এই সময়সীমা আরও ৩ বছরের জন্য অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত পেছানোর দাবি জানিয়েছে বিসিআই। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি বলেন, ‘গত (আওয়ামী লীগ) সরকার বাহবা নেয়ার জন্য ফোলানো-ফাঁপানো অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান দিয়ে উত্তরণের পথে হেঁটেছিল। আমরা ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এই সময়সীমা পেছানো না হলে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধস নামবে।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের নীতি সহায়তা প্রয়োজন উল্লেখ করে আনোয়ার-উল আলম বলেন, ‘আমরা চাই, বিনিয়োগ যেন বিফলে না যায়। অন্তর্বর্তী সরকার ও আগামী সরকার যেন জাতিকে অর্থনৈতিক স্বস্তি উপহার দেয়।’ বর্তমান পরিস্থিতিতে উৎপাদন খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আগামী দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে উৎপাদন খাতের পক্ষে বিসিআই থেকে সরকারকে কিছু প্রস্তাব দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী, পরিচালক শহিদুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার, জাহাঙ্গীর আলম, রেহানা রহমান, শাহ আলম লিটু, নাজমুল আনোয়ার ও খায়ের মিয়া।