alt

অর্থ-বাণিজ্য

সাড়ে ৮ মাসেই ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল রেমিট্যান্স

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

রমজান মাসে পরিবার-পরিজনের বাড়তি খরচ মেটাতে বেশি বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এ কারণে অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় থাকা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ঢল নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিট্যান্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, নতুন বছরের তৃতীয় মাস এবং ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নবম মাস মার্চের ১৫ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৬৫ কোটি ৬১ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন।

বর্তমান বিনিময় হার (রেমিট্যান্স প্রতি ডলার ১২৩ টাকা) হিসাবে এই অর্থের পরিমাণ ২০ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১১ কোটি শূন্য চার লাখ ডলার টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ৩৫৮ কোটি। মাসের বাকি ১৬ দিন (১৬ থেকে ৩১ মার্চ) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক প্রায় ৩৫০ কোটি (৩.৫ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে ঠেকবে, যা হবে একক মাসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল এক মাসে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ সামনে আরও বেশি রেমিটেন্স পাঠাবেন প্রবাসীরা। আর সেটা যদি হয়, তাহলে মার্চ মাসে রেমিটেন্স সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা। এমনিতেই প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে গত কয়েক মাস ধরে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের আট মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সাত মাসেই ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমনটা দেখা যায়নি।

জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মোট ১ হাজার ৮৪৮ কোটি ৮৭ লাখ (১৮.৪৯ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরের সাড়ে আট মাসে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১৫ মার্চ) ২ হাজার ১৫ কোটি (২০.১৫ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে। বাকি সাড়ে তিন মাসে (১৬ মার্চ থেকে ৩০ জুন) এই হারে এলে এবার অর্থ বছর শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৮ বিলিয়ন (২ হাজার ৮০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে হিসাব বলছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, জুন মাসে দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। ওই ঈদকে ঘিরেও বেশি রেমিটেন্স পাঠাবেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরে মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক সাড়ে ২৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে যা হবে রেকর্ড। তবে রেমিটেন্সের উল্লম্ফনের পরও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না। আবারও ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে এই সূচক। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।

গত ১০ মার্চ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। গ্রস হিসাবে নামে ২৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে। আকুর বিল শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। আকু হলো এশিয়ার কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যকার একটি আন্ত-আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, তার মূল্য প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি করা হয়।

অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্যদেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। আকুর সদস্যদেশগুলোর মধ্যে ভারত পরিশোধ করা অর্থের তুলনায় অন্য দেশগুলো থেকে বেশি ডলার আয় করে। বেশিরভাগ দেশকেই আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় হিসেবে অতিরিক্ত ডলার খরচ করতে হয়।

রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। ২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৭ কোটি ৪ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে ছিল ৮৬০ কোটি টাকা। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছিল। টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৩২ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৮ কোটি ৫১ লাখ ডলার। টাকায় ছিল এক হাজার ৩৯ কোটি টাকা।

চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার। চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার। অর্থ বছরের সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) হিসাবে এক হাজার ৫৯৬ কোটি ৭১ লাখ (১৫.৯৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১ হাজার ৮৪৮ কোটি ৮৭ লাখ (১৮.৪৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পুরো সময়ে (জুলাই-জুন) এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থ বছরে আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার যা ছিল অর্থ বছরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে জুলাই মাসে রেমিটেন্স কমেছিল। চলতি অর্থ বছরের আট মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মধ্যে শুধু জুলাই মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের কম রেমিটেন্স এসেছিল। পরের সাত মাসেই (আগস্ট-ফেব্রুয়ারি) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা সাত মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স কখনই আসেনি। জুলাইয়ের আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে দেশে রেমিটেন্স না পাঠাতে সোশাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে মাত্র এক দিন। শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে বিদায়ী সরকার। এরপর ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে কোনো প্রবাসী আয় আসেনি।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর রেমিটেন্স প্রবাহে আরও ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের। রেমিটেন্স প্রবাহেও গতি ফেরে। দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি মুদ্রার সংকট চলছে। কোভিড মহামারির সময়ে আমদানি তলানিতে নামায় একপর্যায়ে দেশে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ব বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি খরচ অনেক বেড়ে যায়। একই সঙ্গে প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় রিজার্ভ দ্রুত কমতে থাকে। সঙ্কট কাটাতে ও রিজার্ভ বাড়াতে প্রবাসী আয়সহ বিদেশ থেকে অর্থ আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে এই সূচকে।

ছবি

ঈদুল আজহা সামনে রেখে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি ২১ মে থেকে

ছবি

এপ্রিল মাসে অর্থনীতির গতি কমেছে, পিএমআই সূচক নামলো ৮ দশমিক ৮ পয়েন্টে

অনিবন্ধিত ও মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার

বাংলাদেশ জুড়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের টেকসই নানা উদ্যোগ

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করলেন এডিবি প্রেসিডেন্ট

মূল্যস্ফীতি ৪ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব: বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর

ছবি

কর প্রশাসন আধুনিকায়নে এডিবির সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থ উপদেষ্টার

বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ২ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ

ছবি

২০৩০ সালে চালু হবে বে টার্মিনাল, কর্মসংস্থান লাখ মানুষের

ছবি

চলতি অর্থবছরের সর্বনিম্ন রপ্তানি আয় এপ্রিলে

ছবি

গ্লাস শিল্পে কাঁচামাল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০৩০ সাল পর্যন্ত মওকুফ

বিজিএমইএ নির্বাচন: সম্মিলিত পরিষদের ৩৫ সদস্যের প্যানেল ঘোষণা

ছবি

মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মুনাফা ৩৩০০ কোটি টাকা, যা ব্র্যাক, সিটি ও পূবালী ব্যাংকের চেয়েও বেশি

দ্বিতীয় দিনেও আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতা হয়নি

ছবি

ডেনিম এক্সপো শুরু হচ্ছে ১২ মে

যুদ্ধের প্রভাবে সূচক পড়েছে ভারতের শেয়ারবাজারে, রুপিরও দরপতন

একনেকে ৩৭৫৬ কোটি টাকার ৯ প্রকল্প অনুমোদন

ছবি

রাজশাহীতে দেড় হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্য

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় ঢাকার শেয়ারবাজারে বড় ধস

ছবি

পুঁজিবাজার নিয়ে বৈঠকে বসছেন প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার হবে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা

ছবি

ফের পতন শেয়ারবাজারে, সূচকের অবস্থান ৪ হাজার ৯৫১ পয়েন্টে

চার খাতে এডিবির কাছে সহযোগিতা চাইলেন অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

বাংলাদেশকে প্রায় ৪০ কোটি ইউরো ঋণ ও অনুদান দিচ্ছে ইআইবি এবং ইইউ

ছবি

এপ্রিলে তৈরি পোশাকে রপ্তানি আয় ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার

ছবি

চট করে আইএমএফের শর্ত মেনে নিয়ে কিছুই করব না: অর্থ উপদেষ্টা

বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন শেয়ারবাজারে

ছবি

বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হলো সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডিকে

বিনিয়োগ নিয়ে কাজ করা ছয় সংস্থা একীভূত করার উদ্যোগে কমিটি গঠন

ছবি

মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ২০ ব্যাংকের

রাষ্ট্রমালিকানাধীন ছয় ব্যাংকে অভিন্ন পদোন্নতি নীতিমালা

ছবি

আড়াই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন ডিএসইতে, সূচক বেড়েছে ৮ পয়েন্ট

ছবি

ঋণের দুই কিস্তি ছাড়ে ফের আলোচনায় বসছে আইএমএফ

ছবি

আইএমএফ ঋণ নিয়ে এডিবির জিজ্ঞাসা, আশ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ

ছবি

উদ্যোক্তাদের সুবিধায় বিনিয়োগ সুবিধা নিয়ে এলো জাতিক ক্যাপিটাল

tab

অর্থ-বাণিজ্য

সাড়ে ৮ মাসেই ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল রেমিট্যান্স

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫

রমজান মাসে পরিবার-পরিজনের বাড়তি খরচ মেটাতে বেশি বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এ কারণে অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় থাকা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ঢল নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার রেমিট্যান্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, নতুন বছরের তৃতীয় মাস এবং ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নবম মাস মার্চের ১৫ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৬৫ কোটি ৬১ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন।

বর্তমান বিনিময় হার (রেমিট্যান্স প্রতি ডলার ১২৩ টাকা) হিসাবে এই অর্থের পরিমাণ ২০ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ১১ কোটি শূন্য চার লাখ ডলার টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ৩৫৮ কোটি। মাসের বাকি ১৬ দিন (১৬ থেকে ৩১ মার্চ) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক প্রায় ৩৫০ কোটি (৩.৫ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে ঠেকবে, যা হবে একক মাসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল এক মাসে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিবারের মতো এবারও ঈদ সামনে আরও বেশি রেমিটেন্স পাঠাবেন প্রবাসীরা। আর সেটা যদি হয়, তাহলে মার্চ মাসে রেমিটেন্স সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা। এমনিতেই প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে গত কয়েক মাস ধরে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের আট মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সাত মাসেই ২ বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমনটা দেখা যায়নি।

জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মোট ১ হাজার ৮৪৮ কোটি ৮৭ লাখ (১৮.৪৯ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরের সাড়ে আট মাসে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১৫ মার্চ) ২ হাজার ১৫ কোটি (২০.১৫ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে। বাকি সাড়ে তিন মাসে (১৬ মার্চ থেকে ৩০ জুন) এই হারে এলে এবার অর্থ বছর শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৮ বিলিয়ন (২ হাজার ৮০০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে হিসাব বলছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, জুন মাসে দেশে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। ওই ঈদকে ঘিরেও বেশি রেমিটেন্স পাঠাবেন প্রবাসীরা। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরে মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক সাড়ে ২৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে যা হবে রেকর্ড। তবে রেমিটেন্সের উল্লম্ফনের পরও বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটছে না। আবারও ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে এই সূচক। গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৪ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার।

গত ১০ মার্চ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) আমদানি বিল পরিশোধের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে রিজার্ভ ১৯ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। গ্রস হিসাবে নামে ২৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে। আকুর বিল শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৬ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। আকু হলো এশিয়ার কয়েকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যকার একটি আন্ত-আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, তার মূল্য প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি করা হয়।

অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্যদেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। আকুর সদস্যদেশগুলোর মধ্যে ভারত পরিশোধ করা অর্থের তুলনায় অন্য দেশগুলো থেকে বেশি ডলার আয় করে। বেশিরভাগ দেশকেই আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় হিসেবে অতিরিক্ত ডলার খরচ করতে হয়।

রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। ২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৭ কোটি ৪ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে ছিল ৮৬০ কোটি টাকা। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে এসেছিল। টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৩২ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৮ কোটি ৫১ লাখ ডলার। টাকায় ছিল এক হাজার ৩৯ কোটি টাকা।

চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার। চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার। অর্থ বছরের সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) হিসাবে এক হাজার ৫৯৬ কোটি ৭১ লাখ (১৫.৯৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ১ হাজার ৮৪৮ কোটি ৮৭ লাখ (১৮.৪৯ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পুরো সময়ে (জুলাই-জুন) এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থ বছরে আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার যা ছিল অর্থ বছরের হিসাবে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে জুলাই মাসে রেমিটেন্স কমেছিল। চলতি অর্থ বছরের আট মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মধ্যে শুধু জুলাই মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের কম রেমিটেন্স এসেছিল। পরের সাত মাসেই (আগস্ট-ফেব্রুয়ারি) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা সাত মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স কখনই আসেনি। জুলাইয়ের আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার জন্য সরকারকে দায়ী করে দেশে রেমিটেন্স না পাঠাতে সোশাল মিডিয়ায় কেউ কেউ প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলে মাত্র এক দিন। শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে বিদায়ী সরকার। এরপর ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে কোনো প্রবাসী আয় আসেনি।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর রেমিটেন্স প্রবাহে আরও ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকারের। রেমিটেন্স প্রবাহেও গতি ফেরে। দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি মুদ্রার সংকট চলছে। কোভিড মহামারির সময়ে আমদানি তলানিতে নামায় একপর্যায়ে দেশে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ব বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি খরচ অনেক বেড়ে যায়। একই সঙ্গে প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় রিজার্ভ দ্রুত কমতে থাকে। সঙ্কট কাটাতে ও রিজার্ভ বাড়াতে প্রবাসী আয়সহ বিদেশ থেকে অর্থ আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে এই সূচকে।

back to top