শষ্য ভান্ডার বলে খ্যাত এবং চাল উৎপাদনে উদ্বৃত্ত এলাকা বলে পরিচিত রংপুরে রমজান মাসে আবারো চালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে । কেজি প্রতি চালের প্রকার ভেদে ৬ থেকে ৮ টাকা কেজিতে দাম বেড়েছে। আড়ত গুলোতে হাজার হাজার বস্তা চাল থাকলেও চালের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
আকস্মিক ভাবে চালের দাম বৃদ্ধি স্বল্প আয়ের মানুষ , শ্রমজিবীসহ মধ্য বিত্ত পরিবার গুলো চরম বিপাকে পড়েছে। চালের দাম তাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে । অনেক পরিবার তিন বেলার পরিবর্তে দু বেলা ভাত খেতে বাধ্য হচ্ছেন। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর সহ প্রশাসনের নজরদারির অভাবে চালের বাজার অস্থির করেছে সিন্ডিকেট চক্র ।
বিভাগীয় নগরী রংপুরের দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম রংপুর সিটি বাজার ও মাহিগজ্ঞ মোকামে গিয়ে দেখা গেছে ৪২ টাকা কেঁজির মোটা চাল কেজি প্রতি ৬ থেকে ৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নাজির শাইল চাল ৭০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এক সপ্তাহের ব্যাবধানে তা বেড়ে এখন ৮২ টাকা কেঁজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একই ভাবে কাটারী ভোগ ৭২ টাকা থেকে বেড়ে ৮২ টাকা কেঁজি, মিনিকেট চাল ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৮ টাকা, জিরা শাইল চাল ৬৪ টাকা থেকে বেড়ে ৬৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও বিআর ২৮ চাল ৫৬ টাকার স্থলে ৬৪ টাকা কেঁজি দরে বিক্রি হচেছ। অন্যদিকে দেশী স্বর্না চাল ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন কেজি প্রতি ৪ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আড়তদাররা বলছেন বড় বড় মিলাররা হাজার হাজার বস্তা চাল গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় চালের দাম বেড়েছে। তারা বড় বড় মিলারদের দায়ি করলেও সিটি বাজার ও মাহিগজ্ঞ মোকামে ব্যবসায়ীদের গুদামে হাজার হাজার বস্তা চাল অবৈধ ভাবে মজুত রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন মঙ্গলবার রংপুর নগরীর সিটি বাজারে ঘুরে দেখা গেছে পর্যাপ্ত চাল থাকলেও রাতারাতি চালের বাজার অস্থির হওয়াকে অস্বাভিক বলছেন ব্যাবসায়ীরা।
বড় আড়তদার রহমান মিয়ার আড়তে ম্যানেজার মমতাজ উদ্দিন স্বীকার করেন, এক মাস ধরে তাদের গোডাউনে দুহাজারেরও বেশি বস্তা চাল মজুত ছিলো, এর মধ্যে হাজার খানেক বস্তা চাল বিক্রি হয়েছে। আবারো হাজারেও বেশি চাল তারা কিনেছেন।
আগের কেনা চাল কেমন করে দু দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি ৬ থেকে ৮ টাকা দাম বাড়লো - তার কোন ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি।
একই ভাবে আরেক বড় আড়তদারের ম্যানেজার সোহরাব জানালেন একই কথা। তাদের গোডাউনে দেড় দু’হাজার বস্তা চাল সব সময় মজুত থাকে। তারা চাল নিয়ে আসে দিনাজপুর নওগাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে। এক সপ্তাহ আগে তাদের আগের দামে কেনা চাল থাকার পরেও কেজি প্রতি ৬ থেকে ৮ টাকা চালের দাম বাড়লো কিভাবে? তার উত্তরে তিনি জানান আমাদের আগের দামে চাল কেনা থাকলেও এখন বড় বড় মোকামে চালের দাম বৃদ্ধি পাবার কারনে তাদেরকেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
কেন আগের দামে আগে থেকে ষ্টক করে রাখা চাল বিক্রি করা হলোনা - তার কোন ব্যাখ্যা তার কাছে নেই। তিনি মালিকের আদেশ বলে চালিয়ে দিলেন।
মাহিগজ্ঞ এলাকায় শতাধিক চালের আড়তদার-ব্যবসায়ী রয়েছেন। সেখানেও অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার বস্তা চাল আগের দরে কেনা রয়েছে। সিটি বাজার ও মাহিগজ্ঞ মোকামের চালের আড়তদাররা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে এক সাথে চালে দাম বাড়িয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আমন মৌসুমে।
রংপুরে ধানের বাম্পার ফলনের পরেও ধানের দাম বৃদ্ধি পাবার কোন কারন নেই, এটা সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজি বলে মন্তব্য করেছেন অবসরপ্রাপ্ত কৃষি বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ নুরুল আযম।
কৃষি কর্মকর্তারা যা বলছেন-
রংপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর রংপুরের উপ পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন জানিয়েছেন, রংপুর জেলা সব সময় ধান চাল উৎপাদনে উদ্বৃত্ত এলাকা। প্রতি বছর শুধু মাত্র রংপুর জেলা থেকে উৎপাদিত সাড়ে চাল লাখ মেট্রিক টন চাল দেশের অন্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
তিনি জানান আমন মৌসুমে রংপুর জেলায় আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিলো ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭শ ২৩ হেক্টরজমি। সেখানে লক্ষ্য মাত্রা ছাপিয়ে চাষ হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯শ ৪০ হেক্টর জমিতে।
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিলো ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪ মেট্রিক টন চাল। সেই লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশী চাল উৎপাদন হয়েছে।
রংপুরে চালের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পাওয়া সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজি বলে মনে করেন তিনি।
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫
শষ্য ভান্ডার বলে খ্যাত এবং চাল উৎপাদনে উদ্বৃত্ত এলাকা বলে পরিচিত রংপুরে রমজান মাসে আবারো চালের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে । কেজি প্রতি চালের প্রকার ভেদে ৬ থেকে ৮ টাকা কেজিতে দাম বেড়েছে। আড়ত গুলোতে হাজার হাজার বস্তা চাল থাকলেও চালের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
আকস্মিক ভাবে চালের দাম বৃদ্ধি স্বল্প আয়ের মানুষ , শ্রমজিবীসহ মধ্য বিত্ত পরিবার গুলো চরম বিপাকে পড়েছে। চালের দাম তাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে । অনেক পরিবার তিন বেলার পরিবর্তে দু বেলা ভাত খেতে বাধ্য হচ্ছেন। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর সহ প্রশাসনের নজরদারির অভাবে চালের বাজার অস্থির করেছে সিন্ডিকেট চক্র ।
বিভাগীয় নগরী রংপুরের দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম রংপুর সিটি বাজার ও মাহিগজ্ঞ মোকামে গিয়ে দেখা গেছে ৪২ টাকা কেঁজির মোটা চাল কেজি প্রতি ৬ থেকে ৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নাজির শাইল চাল ৭০ টাকা দরে বিক্রি হলেও এক সপ্তাহের ব্যাবধানে তা বেড়ে এখন ৮২ টাকা কেঁজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একই ভাবে কাটারী ভোগ ৭২ টাকা থেকে বেড়ে ৮২ টাকা কেঁজি, মিনিকেট চাল ৭০ টাকা থেকে বেড়ে ৭৮ টাকা, জিরা শাইল চাল ৬৪ টাকা থেকে বেড়ে ৬৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও বিআর ২৮ চাল ৫৬ টাকার স্থলে ৬৪ টাকা কেঁজি দরে বিক্রি হচেছ। অন্যদিকে দেশী স্বর্না চাল ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন কেজি প্রতি ৪ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আড়তদাররা বলছেন বড় বড় মিলাররা হাজার হাজার বস্তা চাল গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করায় চালের দাম বেড়েছে। তারা বড় বড় মিলারদের দায়ি করলেও সিটি বাজার ও মাহিগজ্ঞ মোকামে ব্যবসায়ীদের গুদামে হাজার হাজার বস্তা চাল অবৈধ ভাবে মজুত রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন মঙ্গলবার রংপুর নগরীর সিটি বাজারে ঘুরে দেখা গেছে পর্যাপ্ত চাল থাকলেও রাতারাতি চালের বাজার অস্থির হওয়াকে অস্বাভিক বলছেন ব্যাবসায়ীরা।
বড় আড়তদার রহমান মিয়ার আড়তে ম্যানেজার মমতাজ উদ্দিন স্বীকার করেন, এক মাস ধরে তাদের গোডাউনে দুহাজারেরও বেশি বস্তা চাল মজুত ছিলো, এর মধ্যে হাজার খানেক বস্তা চাল বিক্রি হয়েছে। আবারো হাজারেও বেশি চাল তারা কিনেছেন।
আগের কেনা চাল কেমন করে দু দিনের ব্যবধানে কেজি প্রতি ৬ থেকে ৮ টাকা দাম বাড়লো - তার কোন ব্যাখ্যা তিনি দিতে পারেননি।
একই ভাবে আরেক বড় আড়তদারের ম্যানেজার সোহরাব জানালেন একই কথা। তাদের গোডাউনে দেড় দু’হাজার বস্তা চাল সব সময় মজুত থাকে। তারা চাল নিয়ে আসে দিনাজপুর নওগাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে। এক সপ্তাহ আগে তাদের আগের দামে কেনা চাল থাকার পরেও কেজি প্রতি ৬ থেকে ৮ টাকা চালের দাম বাড়লো কিভাবে? তার উত্তরে তিনি জানান আমাদের আগের দামে চাল কেনা থাকলেও এখন বড় বড় মোকামে চালের দাম বৃদ্ধি পাবার কারনে তাদেরকেও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
কেন আগের দামে আগে থেকে ষ্টক করে রাখা চাল বিক্রি করা হলোনা - তার কোন ব্যাখ্যা তার কাছে নেই। তিনি মালিকের আদেশ বলে চালিয়ে দিলেন।
মাহিগজ্ঞ এলাকায় শতাধিক চালের আড়তদার-ব্যবসায়ী রয়েছেন। সেখানেও অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার বস্তা চাল আগের দরে কেনা রয়েছে। সিটি বাজার ও মাহিগজ্ঞ মোকামের চালের আড়তদাররা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে এক সাথে চালে দাম বাড়িয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আমন মৌসুমে।
রংপুরে ধানের বাম্পার ফলনের পরেও ধানের দাম বৃদ্ধি পাবার কোন কারন নেই, এটা সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজি বলে মন্তব্য করেছেন অবসরপ্রাপ্ত কৃষি বিশেষজ্ঞ কৃষিবিদ নুরুল আযম।
কৃষি কর্মকর্তারা যা বলছেন-
রংপুর কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর রংপুরের উপ পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন জানিয়েছেন, রংপুর জেলা সব সময় ধান চাল উৎপাদনে উদ্বৃত্ত এলাকা। প্রতি বছর শুধু মাত্র রংপুর জেলা থেকে উৎপাদিত সাড়ে চাল লাখ মেট্রিক টন চাল দেশের অন্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
তিনি জানান আমন মৌসুমে রংপুর জেলায় আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিলো ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭শ ২৩ হেক্টরজমি। সেখানে লক্ষ্য মাত্রা ছাপিয়ে চাষ হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯শ ৪০ হেক্টর জমিতে।
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিলো ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪ মেট্রিক টন চাল। সেই লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশী চাল উৎপাদন হয়েছে।
রংপুরে চালের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি পাওয়া সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজি বলে মনে করেন তিনি।