alt

মোবাইলে আর্থিক সেবার গ্রাহক ২৪ কোটি ছাড়ালো

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) গ্রহীতার সংখ্যা ২৪ কোটি ছাড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারি শেষে দেশে এমএফএস গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ২৪ কোটি ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৩৩৪।

গত ছয় বছরে দেশে এমএফএস গ্রাহকের সংখ্যা সাড়ে তিন গুণের বেশি বেড়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এমএফএস গ্রাহক ছিল ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৮। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২২ কোটি ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৫ জন।

আগের মাস জানুয়ারি শেষে এমএফএস সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৯৩ লাখ ২ হাজার ৯৯১। ডিসেম্বরে ছিল ২৩ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার ১৫৩। নভেম্বরে ছিল ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ১২ হাজার ৫১৫। এভাবে প্রতি মাসেই এমএফএস গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে চলেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ হিসাবে দেশে মোট জনসংখ্যা এখন ১৭ কোটি ৩৫ লাখ। একজন গ্রাহক একাধিক এমএফএস সেবায় হিসাব খুলতে পারেন। তাই এই সংখ্যা মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেড়ে গেছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে ঠিক কত নাগরিক এমএফএসের আওতায় এসেছেন, তা বলা যাচ্ছে না। তবে প্রতিটি পরিবারেই সেবাটি পৌঁছে গেছে বলা যায়।

গত ছয় বছরে দেশে এমএফএস গ্রাহকের সংখ্যা সাড়ে তিন গুণের বেশি বেড়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এমএফএস গ্রাহক ছিল ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৮। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২২ কোটি ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৫ জন। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরেই প্রায় দুই কোটি এমএফএস গ্রাহক বেড়েছে।

গ্রাহক বৃদ্ধির পাশাপাশি মোবাইলে আর্থিক সেবার মাধ্যমে লেনদেনও বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এমএফএসে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। একক মাসের হিসাবে এই লেনদেন তৃতীয় সর্বোচ্চ। আগের মাস জানুয়ারিতে লেনদেনের অঙ্ক ছিল এর চেয়ে একটু বেশি ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা, যা ছিল অতীতের যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি। তার আগের মাস গত বছরের ডিসেম্বরে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত ছয় বছরে এমএফএসে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৪১৫ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে ব্যক্তিপর্যায়ের লেনদেন। এরপরে এগিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মার্চেন্ট পেমেন্ট, বেতন পরিশোধ, পরিষেবা বিল, সরকারি ভাতা, টকটাইম ও প্রবাসীয় আয়সংক্রান্ত লেনদেন।

হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিই এখন আর্থিক লেনদেনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। যোগাযোগের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আর্থিক লেনদেনে ব্যবহৃত হচ্ছে মুঠোফোন। বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) মাধ্যমে প্রতিদিন এখন সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে।

এসব লেনদেনে অনেক সময় কারও সহায়তার প্রয়োজন হচ্ছে না। কারণ, গ্রাহক নিজেই নিজের হিসাবে টাকা জমা করে অন্যকে পাঠানোর পাশাপাশি কেনাকাটাও করতে পারেন। যেমন মুঠোফোনে রিচার্জ, বিভিন্ন কেনাকাটা, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়া ও পরিষেবার বিল পরিশোধ, টিকিট ক্রয় ইত্যাদি। পাশাপাশি এখন অর্থ স্থানান্তর, প্রবাসী আয় গ্রহণ, সরকারি ভাতা ও বৃত্তি বিতরণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-বোনাস প্রদান এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠছে এসব সেবা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালের এপ্রিলে এসব সেবায় প্রথমবারের মতো লেনদেন এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর ২০২৪ সালের মার্চে তা দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়ায়। আনুষ্ঠানিক মাধ্যমের কারণে এসব লেনদেনের হিসাব থাকছে। কে কাকে কখন কত টাকা টাকা দিয়েছেন, সে তথ্য জমা থাকছে। ফলে দিন দিন অবৈধ অর্থায়ন কিংবা ঘুষের মতো অপরাধ কমাতে এসব সেবা বড় মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গ্রাহকসেবা দিতে সারা দেশে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ এজেন্ট রয়েছে।

এমএফএসে শীর্ষে রয়েছে বিকাশ। তাদের নিবন্ধিত গ্রাহক আট কোটি। বিকাশে দিনে লেনদেন হয় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা।

এ সেবায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে নগদ। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দৈনিক লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ সেবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে চালু হলেও এখন শহরে বসবাসকারী নাগরিকেরাও এর বড় ব্যবহারকারী। ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এ সেবা এখন শুধু টাকা পাঠানো ও গ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিল পরিশোধ, কেনাকাটা, মুঠোফোনে রিচার্জ, টাকা জমানো, ঋণ গ্রহণসহ নানা ধরনের লেনদেনে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বিশেষ করে উৎসবে-পার্বণে এসব সেবার ব্যবহার ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। ফলে রোজা ও ঈদ উপলক্ষে চলতি মাসে লেনদেনে বড় উল্লম্ফন ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এমএফএস চালুর ফলে কম আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে বড় করপোরেট ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পমালিকেরাও এর সুবিধা পেয়েছেন।

এখন দেশের সব বড় ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বিক্রির টাকা এ সেবার মাধ্যমে সংগ্রহ করছে, যেটাকে কালেকশন সেবা বলছে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার অনেক বড় শিল্পগোষ্ঠী তাদের শ্রমিকের বেতন দিচ্ছে এমএফএসের মাধ্যমে।

শুধু তাই নয় সরকারি ভাতা, বৃত্তি, কেনাকাটা, পরিষেবা বিল পরিশোধ- সবই করা যাচ্ছে এমএফসের মাধ্যমে। আবার ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ ও আদায় এবং বিদেশি সংস্থার তহবিল বিতরণও হচ্ছে এসব সেবার মাধ্যমে।

বাংলাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের ৩১ মার্চ। বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করে। পরে এটির নাম বদলে হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমএফএস সেবা চালু করে বিকাশ। পরবর্তী সময়ে আরও অনেক ব্যাংক এ সেবায় এসেছে। বর্তমানে বিকাশ, রকেটের পাশাপাশি মাই ক্যাশ, এম ক্যাশ, উপায়, শিওর ক্যাশসহ ১৫টি ব্যাংক এ সেবা দিচ্ছে। এর বাইরে ডাক বিভাগের নগদও দিচ্ছে এই সেবা।

ছবি

এলসি জটিলতায় মেঘনা সিমেন্ট, বেড়েছে লোকসান

ছবি

দেশের জাহাজনির্মাণ শিল্পের বড় রপ্তানি, আমিরাত যাচ্ছে তিন ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট

ছবি

ই-সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যারের উদ্বোধন

ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কাজ করবে বিএফটিআই

ছবি

কম সুদে ছোট অঙ্কের ঋণ দেবে ইউসিবি

ছবি

নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে সরকার

ছবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে ভরি ২ লাখ ৯ হাজার ৫২০ টাকা

ছবি

আন্তর্জাতিক কার্ডে কেনা যাবে বিমানের টিকিট

ছবি

শ্রম আইনে সংশোধনীর বিষয়ে আইএলওকে অবহিত করেছেন শ্রম উপদেষ্টা

ছবি

মৎস্য প্রক্রিয়াকরণে মানদণ্ড অনুসরণের তাগিদ

ছবি

তিন রাজস্ব আইনের অথেনটিক ইংরেজি টেক্সটের গেজেট প্রকাশ

ছবি

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত পাঠানো: জাতীয় কমিটির সংস্কার চূড়ান্ত

ছবি

এখনই নতুন বিনিয়োগ না করলে আগামীতে বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিবে: সেমিনারে বক্তারা

ছবি

এনইআইআর বাতিল নয়, পুনর্গঠন চান মোবাইল ব্যবসায়ীরা

ছবি

দুই বছর কমলো, ৩ বছর পরপর বাড়বে শ্রমিকের মজুরি

ছবি

বিএসটিআইয়ের সব সেবা পাওয়া যাবে অনলাইনে

ছবি

নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত, মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা

ছবি

বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সাপ্লাই চেইন শক্তিশালী করতে নতুন প্ল্যাটফর্ম চালু

ছবি

রুলস হওয়ার আগেই পুঁজিবাজারের সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে: ডিএসই চেয়ারম্যান

ছবি

শ্রম আইন নিয়ে অধ্যাদেশ প্রত্যাখ্যান করেছে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিএমএ

ছবি

শ্রম আইন সংশোধন: ন্যূনতম ২০ জনের সম্মতি থাকলেই ট্রেড ইউনিয়ন, অধ্যাদেশ জারি

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে ধোঁয়াশা

ছবি

ডিএসইতে উত্থান, লেনদেন নয় দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ

ছবি

সরকার পাট পণ্যের বৈচিত্রকরণে কাজ করছে: বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা

ছবি

রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী অবকাঠামো তৈরির প্রস্তাব অনুমোদন

ছবি

২২ বছরের জন্য পানগাঁও টার্মিনালের দায়িত্বে সুইস প্রতিষ্ঠান মেডলগ

ছবি

বাজারে গিগাবাইট বি৮৫০আই মিনি-আইটিএক্স মাদারবোর্ড

ছবি

লালদিয়ায় কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই

ছবি

বন্ড ব্যবস্থার অটোমেশন সিদ্ধান্ত, ম্যানুয়াল আর থাকবে না

ছবি

শেয়ারবাজারে বড় উত্থান

ছবি

সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বেচবে না বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

অর্থ উপদেষ্টার নামে ফেইক ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সতর্কতা

ছবি

ইউনিয়ন ব্যাংকে প্রশাসক ও সহযোগী প্রশাসকদের দায়িত্ব গ্রহণ

ছবি

লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণে এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে সরকারের চুক্তি

ছবি

নভেম্বরে ১৫ দিনে এলো দেড় বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স

ছবি

লালদিয়ার চরে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু

tab

মোবাইলে আর্থিক সেবার গ্রাহক ২৪ কোটি ছাড়ালো

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) গ্রহীতার সংখ্যা ২৪ কোটি ছাড়িয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারি শেষে দেশে এমএফএস গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ২৪ কোটি ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৩৩৪।

গত ছয় বছরে দেশে এমএফএস গ্রাহকের সংখ্যা সাড়ে তিন গুণের বেশি বেড়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এমএফএস গ্রাহক ছিল ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৮। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২২ কোটি ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৫ জন।

আগের মাস জানুয়ারি শেষে এমএফএস সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৯৩ লাখ ২ হাজার ৯৯১। ডিসেম্বরে ছিল ২৩ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার ১৫৩। নভেম্বরে ছিল ২৩ কোটি ৭৩ লাখ ১২ হাজার ৫১৫। এভাবে প্রতি মাসেই এমএফএস গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে চলেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ হিসাবে দেশে মোট জনসংখ্যা এখন ১৭ কোটি ৩৫ লাখ। একজন গ্রাহক একাধিক এমএফএস সেবায় হিসাব খুলতে পারেন। তাই এই সংখ্যা মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেড়ে গেছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে ঠিক কত নাগরিক এমএফএসের আওতায় এসেছেন, তা বলা যাচ্ছে না। তবে প্রতিটি পরিবারেই সেবাটি পৌঁছে গেছে বলা যায়।

গত ছয় বছরে দেশে এমএফএস গ্রাহকের সংখ্যা সাড়ে তিন গুণের বেশি বেড়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এমএফএস গ্রাহক ছিল ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৮। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২২ কোটি ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৫ জন। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, গত এক বছরেই প্রায় দুই কোটি এমএফএস গ্রাহক বেড়েছে।

গ্রাহক বৃদ্ধির পাশাপাশি মোবাইলে আর্থিক সেবার মাধ্যমে লেনদেনও বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এমএফএসে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। একক মাসের হিসাবে এই লেনদেন তৃতীয় সর্বোচ্চ। আগের মাস জানুয়ারিতে লেনদেনের অঙ্ক ছিল এর চেয়ে একটু বেশি ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা, যা ছিল অতীতের যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি। তার আগের মাস গত বছরের ডিসেম্বরে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত ছয় বছরে এমএফএসে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৪১৫ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে ব্যক্তিপর্যায়ের লেনদেন। এরপরে এগিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মার্চেন্ট পেমেন্ট, বেতন পরিশোধ, পরিষেবা বিল, সরকারি ভাতা, টকটাইম ও প্রবাসীয় আয়সংক্রান্ত লেনদেন।

হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিই এখন আর্থিক লেনদেনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। যোগাযোগের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আর্থিক লেনদেনে ব্যবহৃত হচ্ছে মুঠোফোন। বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবার (এমএফএস) মাধ্যমে প্রতিদিন এখন সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে।

এসব লেনদেনে অনেক সময় কারও সহায়তার প্রয়োজন হচ্ছে না। কারণ, গ্রাহক নিজেই নিজের হিসাবে টাকা জমা করে অন্যকে পাঠানোর পাশাপাশি কেনাকাটাও করতে পারেন। যেমন মুঠোফোনে রিচার্জ, বিভিন্ন কেনাকাটা, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়া ও পরিষেবার বিল পরিশোধ, টিকিট ক্রয় ইত্যাদি। পাশাপাশি এখন অর্থ স্থানান্তর, প্রবাসী আয় গ্রহণ, সরকারি ভাতা ও বৃত্তি বিতরণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-বোনাস প্রদান এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠছে এসব সেবা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালের এপ্রিলে এসব সেবায় প্রথমবারের মতো লেনদেন এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর ২০২৪ সালের মার্চে তা দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়ায়। আনুষ্ঠানিক মাধ্যমের কারণে এসব লেনদেনের হিসাব থাকছে। কে কাকে কখন কত টাকা টাকা দিয়েছেন, সে তথ্য জমা থাকছে। ফলে দিন দিন অবৈধ অর্থায়ন কিংবা ঘুষের মতো অপরাধ কমাতে এসব সেবা বড় মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। গ্রাহকসেবা দিতে সারা দেশে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ এজেন্ট রয়েছে।

এমএফএসে শীর্ষে রয়েছে বিকাশ। তাদের নিবন্ধিত গ্রাহক আট কোটি। বিকাশে দিনে লেনদেন হয় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা।

এ সেবায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে নগদ। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দৈনিক লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ সেবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে চালু হলেও এখন শহরে বসবাসকারী নাগরিকেরাও এর বড় ব্যবহারকারী। ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এ সেবা এখন শুধু টাকা পাঠানো ও গ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিল পরিশোধ, কেনাকাটা, মুঠোফোনে রিচার্জ, টাকা জমানো, ঋণ গ্রহণসহ নানা ধরনের লেনদেনে ব্যবহৃত হচ্ছে।

বিশেষ করে উৎসবে-পার্বণে এসব সেবার ব্যবহার ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। ফলে রোজা ও ঈদ উপলক্ষে চলতি মাসে লেনদেনে বড় উল্লম্ফন ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এমএফএস চালুর ফলে কম আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে বড় করপোরেট ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পমালিকেরাও এর সুবিধা পেয়েছেন।

এখন দেশের সব বড় ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বিক্রির টাকা এ সেবার মাধ্যমে সংগ্রহ করছে, যেটাকে কালেকশন সেবা বলছে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার অনেক বড় শিল্পগোষ্ঠী তাদের শ্রমিকের বেতন দিচ্ছে এমএফএসের মাধ্যমে।

শুধু তাই নয় সরকারি ভাতা, বৃত্তি, কেনাকাটা, পরিষেবা বিল পরিশোধ- সবই করা যাচ্ছে এমএফসের মাধ্যমে। আবার ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ ও আদায় এবং বিদেশি সংস্থার তহবিল বিতরণও হচ্ছে এসব সেবার মাধ্যমে।

বাংলাদেশে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের ৩১ মার্চ। বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করে। পরে এটির নাম বদলে হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমএফএস সেবা চালু করে বিকাশ। পরবর্তী সময়ে আরও অনেক ব্যাংক এ সেবায় এসেছে। বর্তমানে বিকাশ, রকেটের পাশাপাশি মাই ক্যাশ, এম ক্যাশ, উপায়, শিওর ক্যাশসহ ১৫টি ব্যাংক এ সেবা দিচ্ছে। এর বাইরে ডাক বিভাগের নগদও দিচ্ছে এই সেবা।

back to top