বর্তমানে পোশাক খাতে ১২ শতাংশ করপোরেট কর দিতে হয়। ‘সবুজ কারখানা’ হলে দিতে হয় ১০ শতাংশ। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকে বর্তমানে যে করপোরেট কর রয়েছে, তা আর না বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ জানিয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে এনবিআর আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় ব্যবসায়ীরা এ প্রত্যাশা তুলে ধরেন। যুক্তি হিসেবে তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে রপ্তানিমুখী এ খাত ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে করপোরেট কর বাড়ানো হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ‘আস্থার ঘাটতি’ দেখা দিতে পারে।
বর্তমানে পোশাক খাতে ১২ শতাংশ করপোরেট কর দিতে হয়। ‘সবুজ কারখানা’ হলে দিতে হয় ১০ শতাংশ। আইএমএফের শর্তে রাজস্ব আদায় বাড়াতে আগামী বাজেটে এই করহার বাড়াতে চায় এনবিআর। কিন্তু বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) চাইছে, এ হার অপরিবর্তিত থাকুক।
ব্যবসায়ীদের এ প্রত্যাশার বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, “বিজিএমইএ থেকে যেটা প্রস্তাব এসেছে যে, আলাদা একটা রেট (করপোরেট করহার), ওনারা দীর্ঘদিন ধরে বেনিফিট নিচ্ছেন, ২০০৩ সাল থেকে, সেটা যেন অব্যাহত থাকে।
“একই সঙ্গে আমরা অনেকের কাছ থেকে এমন অভিযোগও পাই যে, ট্যাক্স রেটের সঙ্গে ইফেক্টিভ ট্যাক্স রেটের যোজন যোজন ফারাক বিভিন্ন কারণে। টিডিএস (উৎসে কর), মিনিমাম ট্যাক্স- এগুলোর কারণে।”
এগুলোর জন্য তৈরি পোশাক খাতও কম করের সুবিধা ঠিকঠাক পান না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমি জানি না ওনারা (গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা) ১০ বা ১২ শতাংশ ট্যাক্সের বেনিফিট কতটুকু এনজয় করতে পারেন।
“এগুলোকে আমরা যতটা সম্ভব সহজ করব। কিন্তু যত প্রস্তাব আমরা পাই, প্রত্যেক জায়গায় আমরা দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের টোটাল ডিউটি কমানো, টিডিএস বার্ডেন কমানো।”
তিনি বলেন, “তার ফলে আল্টিমেটলি যা আদায় হচ্ছে, আরও কমে যাবে। যদিও কথাগুলো অযৌক্তিক নয়, তারপরও আমি বলব, এই যৌক্তিক কথাগুলো মানতে গেলে আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও এখন আছে ৭ দশমিক ৪, এটা ৫ এ নেমে চলে আসবে। এটা হল বাস্তবতা।
বাট আপনারা সবাই জানেন, বিশেষ করে আমাদের ইকোনমিস্টরা আজ খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, সেই সুযোগ আমাদের নাই।”
প্রস্তাবের পক্ষে বিজিএমইএর সহায়ক কমিটির সদস্য এনামুল হক বলেন, “গ্যাসের দাম বেড়েছে। এই মূল্য বৃদ্ধির ধাক্কা কীভাবে সামলাব, জানি না। আবার যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিপদে আছেন। আমাদের হাতে মাত্র তিন মাস সময় আছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নিয়ে সমাধানে আসতে হবে।
“তৈরি পোশাক শিল্পে করপোরেট করহার পরিবর্তন করা হলে স্থানীয় ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের আস্থার ঘাটতি দেখা দেবে।”
এ বিষয়ে আলাদা বক্তব্য না তুলে ধরে বিকেএমই সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “বিজেএমইএর প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা পুরোপুরি একমত।”
বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ ছাড়াও বিটিএমএ, এসএমই ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “সোলার সিস্টেমের ওপর কর মওকুফ প্রয়োজন। সরকার আমাদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা সেখানে সরকারের সহযোগী ভূমিকা চাচ্ছি। আমরা সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চাই।”
বর্তমান করনীতি নিয়ে এ ব্যবসায়ী নেতার মূল্যায়ন হল, “আমার বিশ্বাস করনীতি পরিবর্তন হবে। বর্তমান করনীতি নিয়ে আমি অনেকবার বলেছি যে, এটা কোনোভাবেই বিনিয়োগ বা ব্যবসার সহায়ক নয়।”
বিটিএমএর প্রস্তাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- স্থানীয় উৎপাদন খরচ ও আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য বিবেচনায় নিয়ে ফেব্রিকের ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ এবং আগের মত বিটিএমএ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে বন্ড ছাড়া পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করা।
এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রস্তাবে রয়েছে- নতুন এসএমইদের জন্য ১০ বছর পর্যন্ত টার্নওভার বা গ্রস রিসিপ্টে ন্যূনতম কর আরোপ না করা, যেসব এসএমইর বাৎসরিক টার্নওভার ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত, তাদের ভ্যাট রিটার্ন প্রতি মাসের পরিবর্তে ষাণ্মাসিক করা; রপ্তানিমুখী শিল্পে স্থানীয় মুদ্রায় সরাসরি উপকরণ সরবরাহের ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি দেওয়া এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ শিল্পে ব্যাকওয়ার্ড লিংকড ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ দেওয়া।
বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
বর্তমানে পোশাক খাতে ১২ শতাংশ করপোরেট কর দিতে হয়। ‘সবুজ কারখানা’ হলে দিতে হয় ১০ শতাংশ। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকে বর্তমানে যে করপোরেট কর রয়েছে, তা আর না বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ জানিয়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে এনবিআর আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় ব্যবসায়ীরা এ প্রত্যাশা তুলে ধরেন। যুক্তি হিসেবে তারা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে রপ্তানিমুখী এ খাত ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে করপোরেট কর বাড়ানো হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ‘আস্থার ঘাটতি’ দেখা দিতে পারে।
বর্তমানে পোশাক খাতে ১২ শতাংশ করপোরেট কর দিতে হয়। ‘সবুজ কারখানা’ হলে দিতে হয় ১০ শতাংশ। আইএমএফের শর্তে রাজস্ব আদায় বাড়াতে আগামী বাজেটে এই করহার বাড়াতে চায় এনবিআর। কিন্তু বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) চাইছে, এ হার অপরিবর্তিত থাকুক।
ব্যবসায়ীদের এ প্রত্যাশার বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, “বিজিএমইএ থেকে যেটা প্রস্তাব এসেছে যে, আলাদা একটা রেট (করপোরেট করহার), ওনারা দীর্ঘদিন ধরে বেনিফিট নিচ্ছেন, ২০০৩ সাল থেকে, সেটা যেন অব্যাহত থাকে।
“একই সঙ্গে আমরা অনেকের কাছ থেকে এমন অভিযোগও পাই যে, ট্যাক্স রেটের সঙ্গে ইফেক্টিভ ট্যাক্স রেটের যোজন যোজন ফারাক বিভিন্ন কারণে। টিডিএস (উৎসে কর), মিনিমাম ট্যাক্স- এগুলোর কারণে।”
এগুলোর জন্য তৈরি পোশাক খাতও কম করের সুবিধা ঠিকঠাক পান না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমি জানি না ওনারা (গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা) ১০ বা ১২ শতাংশ ট্যাক্সের বেনিফিট কতটুকু এনজয় করতে পারেন।
“এগুলোকে আমরা যতটা সম্ভব সহজ করব। কিন্তু যত প্রস্তাব আমরা পাই, প্রত্যেক জায়গায় আমরা দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের টোটাল ডিউটি কমানো, টিডিএস বার্ডেন কমানো।”
তিনি বলেন, “তার ফলে আল্টিমেটলি যা আদায় হচ্ছে, আরও কমে যাবে। যদিও কথাগুলো অযৌক্তিক নয়, তারপরও আমি বলব, এই যৌক্তিক কথাগুলো মানতে গেলে আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও এখন আছে ৭ দশমিক ৪, এটা ৫ এ নেমে চলে আসবে। এটা হল বাস্তবতা।
বাট আপনারা সবাই জানেন, বিশেষ করে আমাদের ইকোনমিস্টরা আজ খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, সেই সুযোগ আমাদের নাই।”
প্রস্তাবের পক্ষে বিজিএমইএর সহায়ক কমিটির সদস্য এনামুল হক বলেন, “গ্যাসের দাম বেড়েছে। এই মূল্য বৃদ্ধির ধাক্কা কীভাবে সামলাব, জানি না। আবার যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিপদে আছেন। আমাদের হাতে মাত্র তিন মাস সময় আছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নিয়ে সমাধানে আসতে হবে।
“তৈরি পোশাক শিল্পে করপোরেট করহার পরিবর্তন করা হলে স্থানীয় ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের আস্থার ঘাটতি দেখা দেবে।”
এ বিষয়ে আলাদা বক্তব্য না তুলে ধরে বিকেএমই সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “বিজেএমইএর প্রস্তাবের সঙ্গে আমরা পুরোপুরি একমত।”
বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ ছাড়াও বিটিএমএ, এসএমই ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “সোলার সিস্টেমের ওপর কর মওকুফ প্রয়োজন। সরকার আমাদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা সেখানে সরকারের সহযোগী ভূমিকা চাচ্ছি। আমরা সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চাই।”
বর্তমান করনীতি নিয়ে এ ব্যবসায়ী নেতার মূল্যায়ন হল, “আমার বিশ্বাস করনীতি পরিবর্তন হবে। বর্তমান করনীতি নিয়ে আমি অনেকবার বলেছি যে, এটা কোনোভাবেই বিনিয়োগ বা ব্যবসার সহায়ক নয়।”
বিটিএমএর প্রস্তাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- স্থানীয় উৎপাদন খরচ ও আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য বিবেচনায় নিয়ে ফেব্রিকের ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ এবং আগের মত বিটিএমএ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে বন্ড ছাড়া পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করা।
এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রস্তাবে রয়েছে- নতুন এসএমইদের জন্য ১০ বছর পর্যন্ত টার্নওভার বা গ্রস রিসিপ্টে ন্যূনতম কর আরোপ না করা, যেসব এসএমইর বাৎসরিক টার্নওভার ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত, তাদের ভ্যাট রিটার্ন প্রতি মাসের পরিবর্তে ষাণ্মাসিক করা; রপ্তানিমুখী শিল্পে স্থানীয় মুদ্রায় সরাসরি উপকরণ সরবরাহের ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি দেওয়া এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ শিল্পে ব্যাকওয়ার্ড লিংকড ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ দেওয়া।