বিদেশি ঋণ পরিশোধে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে বাংলাদেশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন সময়ে দাতাদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের সুদ-আসল বাবদ ৩৫০ কোটি ৭২ লাখ (৩.৫০ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। পরিশোধের এই অঙ্ক গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। আর পুরো অর্থ বছরের চেয়ে ৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ বেশি। ঋণ পরিশোধের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থনীবিদরা। এতে অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
ঋণ পরিশোধের এই অঙ্ক গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। আর পুরো অর্থ বছরের চেয়ে ৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ বেশি
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শেষ হতে এক মাস বাকি; ৩০ জুন শেষ হবে এই অর্থ বছর। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) চলতি অর্থ বছরের প্রথম দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি, প্রাপ্তি, ও পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, এই দশ মাসে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে থেকে ৫১৬ কোটি ৩৪ লাখ (৬.১৬ বিলিয়ন) ডলার বিদেশি ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১২ কোটি (১.১২ বিলিয়ন) ডলার কম। শতাংশ হিসাবে কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ।
গত অর্থ বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে উন্নয়ান সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ৬২৮ কোটি ৪০ লাখ (৬.২৮ বিলিয়ন) পেয়েছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে একই সময়ে বাংলাদেশকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩৫০ কোটি ৭২ লাখ (৩.৫ বিলিয়ন) ডলার যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। গত অর্থ বছরের একই সময়ে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হয়েছিল ২৮১ কোটি ১৭ লাখ (২.৮১ বিলিয়ন) ডলার। আর অর্থ বছরের পুরো সময়ে (১২ মাস, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন) ৩৩৭ কোটি (৩.৩৭ বিলিয়ন) ডলার শোধ করতে হয়েছিল।
হিসাব বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয় বিদেশি ঋণের পরিশোধ বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ; অর্থ বছরের পুরো সময়ের চেয়ে বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি।
বিদেশি ঋণ পরিশোধ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আগেই টের পাওয়া গিয়েছিল, বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়ে যাবে। এখন সেটাই দেখা যাচ্ছে। মূলত বিগত সময়ে নেওয়া বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের বড় অঙ্কের ঋণ ও বাজেট সহায়তার গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমাগত বাড়ছে, যা আগামী বছরগুলোয় দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়াতে পারে।’
ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৩৫০ কোটি ৭২ লাখ (৩.৫০ বিলিয়ন) ডলারের যে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে, তার মধ্যে ২২১ কোটি (২.২১ বিলিয়ন) ডলার শোধ করা হয়েছে আসল বাবদ। আর সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৩০ কোটি (১.৩০ বিলিয়ন) ডলার। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে যে ২৮১ কোটি ১৭ লাখ (২.৮১ বিলিয়ন) ডলার শোধ করা হয়েছিল, তার মধ্যে সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছিল ১১৫ কোটি (১.১৫ বিলিয়ন) ডলার। আসল শোধে গিয়েছে ১৬৬ কোটি ৩৭ লাখ (১.৬৬ বিলিয়ন) ডলার।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণের সুদ-আসল পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ রাখা আছে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। টাকার হিসাবে ইআরডি বিদেশি ঋণ পরিশোধের যে হিসাব দিয়েছে তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরের দশ মাসেই (জুলাই-এপ্রিল) ৪২ হাজার ২৮২ কোটি চলে গেছে। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছ, চলতি অর্থ বছরের বাজেটে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ যতো টাকা রাখা বরাদ্দ রাখা আছে, তার চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি অর্থ দশ মাসেই শোধ করা হয়েছে।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা করা হয়।
ডলারের দাম বাড়ায় টাকার অঙ্কে বিদেশি ঋণ পরিশোধে খরচ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ইআরডি’র কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২২ টাকা ৮৬। অর্থাৎ এক ডলারের জন্য ১২২ টাকা ৮৬ খরচ করতে হয়েছে। এক বছর আগে ২০২৪ সালের ২৩ মে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ১১৭ টাকা ৮২ পয়সা। হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়েছে ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।
বিদেশি ঋণ পরিশোধ নিয়ে অর্থনীতিবিদেরা শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। কারণ, কয়েক বছর ধরেই বিদেশি ঋণ পরিশোধ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১১০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ। পরের ১০ বছরে অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ২০১ কোটি ডলারে উন্নীত হয়।
২০২২-২৩ অর্থবছরে তা পৌনে তিন শ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ ৩৩৭ কোটি ডলার দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। আর চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের দুই মাস বাকি থাকতেই (দশ মাস, জুলাই-এপ্রিল) ৩৫০ ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। হিসাব বলছে, ১২ বছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ সাড়ে তিন গুণ বেড়েছে।
ইআরডি’র তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-এপ্রিল সময়ে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৫১৬ কোটি ৩৪ লাখ (৫.১৬ বিলিয়ন) ডলারের যে ঋণ পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ১৪০ কোটি ৩৪ লাখ (১.৪০ বিলিয়ন) ডলারই দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। হিসাব বলছে, এই দশ মাসে মোট ঋণের ২৭ দশমিক ১৮ শতাংশই দিয়েছে এডিবি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৫ কোটি ৮৪ লাখ (১.১৫ বিলিয়ন) ডলার দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। মোট ঋণের ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশ দিয়েছে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থাটি। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার দিয়েছে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। রাশিয়া দিয়েছে ৬৭ কোটি ৪৯ লাখ ডলার।
অন্য দাতা দেশ ও সংস্থার মধ্যে জুলাই-এপ্রিল সময়ে চীনের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ৩২ কোটি ৭ লাখ ডলার। ভারত ছাড় করেছে ১৫ কোটি ২২ লাখ ডলার। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) দিয়েছে ৮ কোটি ৩৩ লাখ ডলার।
কয়েক বছর ধরেই বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। দুই বছর ধরে আরও বেশি বেড়েছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধের এই চাপ শুরু হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন দেশে দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে রিজার্ভ ও বাজেটে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ইআরডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, দাতাদেশ ও সংস্থাগুলোর নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে। জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৪২৫ কোটি ৯৪ লাখ (৪.২৬ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা, যা শনিবার,(৩১ মে ২০২৫) অর্থ বছরের একই সময়ে ছিল ৭৬০ কোটি ৩৪ লাখ (৭.৬০ বিলিয়ন) ডলার। এ হিসাবে এই দশ মাসে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৪৪ শতাংশ।
শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
বিদেশি ঋণ পরিশোধে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে বাংলাদেশ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) বিভিন্ন সময়ে দাতাদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের সুদ-আসল বাবদ ৩৫০ কোটি ৭২ লাখ (৩.৫০ বিলিয়ন) ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। পরিশোধের এই অঙ্ক গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। আর পুরো অর্থ বছরের চেয়ে ৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ বেশি। ঋণ পরিশোধের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থনীবিদরা। এতে অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
ঋণ পরিশোধের এই অঙ্ক গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। আর পুরো অর্থ বছরের চেয়ে ৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ বেশি
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শেষ হতে এক মাস বাকি; ৩০ জুন শেষ হবে এই অর্থ বছর। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) চলতি অর্থ বছরের প্রথম দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি, প্রাপ্তি, ও পরিশোধ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, এই দশ মাসে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে থেকে ৫১৬ কোটি ৩৪ লাখ (৬.১৬ বিলিয়ন) ডলার বিদেশি ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১২ কোটি (১.১২ বিলিয়ন) ডলার কম। শতাংশ হিসাবে কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ।
গত অর্থ বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে উন্নয়ান সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ৬২৮ কোটি ৪০ লাখ (৬.২৮ বিলিয়ন) পেয়েছিল বাংলাদেশ। অন্যদিকে একই সময়ে বাংলাদেশকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩৫০ কোটি ৭২ লাখ (৩.৫ বিলিয়ন) ডলার যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। গত অর্থ বছরের একই সময়ে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে বাংলাদেশকে পরিশোধ করতে হয়েছিল ২৮১ কোটি ১৭ লাখ (২.৮১ বিলিয়ন) ডলার। আর অর্থ বছরের পুরো সময়ে (১২ মাস, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন) ৩৩৭ কোটি (৩.৩৭ বিলিয়ন) ডলার শোধ করতে হয়েছিল।
হিসাব বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয় বিদেশি ঋণের পরিশোধ বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ; অর্থ বছরের পুরো সময়ের চেয়ে বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি।
বিদেশি ঋণ পরিশোধ অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আগেই টের পাওয়া গিয়েছিল, বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়ে যাবে। এখন সেটাই দেখা যাচ্ছে। মূলত বিগত সময়ে নেওয়া বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের বড় অঙ্কের ঋণ ও বাজেট সহায়তার গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমাগত বাড়ছে, যা আগামী বছরগুলোয় দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়াতে পারে।’
ইআরডির তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৩৫০ কোটি ৭২ লাখ (৩.৫০ বিলিয়ন) ডলারের যে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে, তার মধ্যে ২২১ কোটি (২.২১ বিলিয়ন) ডলার শোধ করা হয়েছে আসল বাবদ। আর সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ১৩০ কোটি (১.৩০ বিলিয়ন) ডলার। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে যে ২৮১ কোটি ১৭ লাখ (২.৮১ বিলিয়ন) ডলার শোধ করা হয়েছিল, তার মধ্যে সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছিল ১১৫ কোটি (১.১৫ বিলিয়ন) ডলার। আসল শোধে গিয়েছে ১৬৬ কোটি ৩৭ লাখ (১.৬৬ বিলিয়ন) ডলার।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণের সুদ-আসল পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ রাখা আছে ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। টাকার হিসাবে ইআরডি বিদেশি ঋণ পরিশোধের যে হিসাব দিয়েছে তাতে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরের দশ মাসেই (জুলাই-এপ্রিল) ৪২ হাজার ২৮২ কোটি চলে গেছে। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছ, চলতি অর্থ বছরের বাজেটে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ যতো টাকা রাখা বরাদ্দ রাখা আছে, তার চেয়ে ১৬ শতাংশ বেশি অর্থ দশ মাসেই শোধ করা হয়েছে।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা করা হয়।
ডলারের দাম বাড়ায় টাকার অঙ্কে বিদেশি ঋণ পরিশোধে খরচ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ইআরডি’র কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ১২২ টাকা ৮৬। অর্থাৎ এক ডলারের জন্য ১২২ টাকা ৮৬ খরচ করতে হয়েছে। এক বছর আগে ২০২৪ সালের ২৩ মে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ১১৭ টাকা ৮২ পয়সা। হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান বেড়েছে ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।
বিদেশি ঋণ পরিশোধ নিয়ে অর্থনীতিবিদেরা শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। কারণ, কয়েক বছর ধরেই বিদেশি ঋণ পরিশোধ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ১১০ কোটি ডলার ঋণ পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ। পরের ১০ বছরে অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ২০১ কোটি ডলারে উন্নীত হয়।
২০২২-২৩ অর্থবছরে তা পৌনে তিন শ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ ৩৩৭ কোটি ডলার দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। আর চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের দুই মাস বাকি থাকতেই (দশ মাস, জুলাই-এপ্রিল) ৩৫০ ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। হিসাব বলছে, ১২ বছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ সাড়ে তিন গুণ বেড়েছে।
ইআরডি’র তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-এপ্রিল সময়ে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ৫১৬ কোটি ৩৪ লাখ (৫.১৬ বিলিয়ন) ডলারের যে ঋণ পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ১৪০ কোটি ৩৪ লাখ (১.৪০ বিলিয়ন) ডলারই দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। হিসাব বলছে, এই দশ মাসে মোট ঋণের ২৭ দশমিক ১৮ শতাংশই দিয়েছে এডিবি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১৫ কোটি ৮৪ লাখ (১.১৫ বিলিয়ন) ডলার দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। মোট ঋণের ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশ দিয়েছে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থাটি। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৯০ কোটি ৪৫ লাখ ডলার দিয়েছে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। রাশিয়া দিয়েছে ৬৭ কোটি ৪৯ লাখ ডলার।
অন্য দাতা দেশ ও সংস্থার মধ্যে জুলাই-এপ্রিল সময়ে চীনের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ৩২ কোটি ৭ লাখ ডলার। ভারত ছাড় করেছে ১৫ কোটি ২২ লাখ ডলার। এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) দিয়েছে ৮ কোটি ৩৩ লাখ ডলার।
কয়েক বছর ধরেই বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। দুই বছর ধরে আরও বেশি বেড়েছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধের এই চাপ শুরু হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন দেশে দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে রিজার্ভ ও বাজেটে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ইআরডির প্রতিবেদনে দেখা যায়, দাতাদেশ ও সংস্থাগুলোর নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে। জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৪২৫ কোটি ৯৪ লাখ (৪.২৬ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা, যা শনিবার,(৩১ মে ২০২৫) অর্থ বছরের একই সময়ে ছিল ৭৬০ কোটি ৩৪ লাখ (৭.৬০ বিলিয়ন) ডলার। এ হিসাবে এই দশ মাসে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৪৪ শতাংশ।