বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ। বেশ কিছুদিন ধরেই এই সূচক নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল। তবে এখন সন্তোষজনক অবস্থায় উঠেছে; প্রতিদিনই বাড়ছে। আরও বাড়বে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের শেষ মাস জুনের বাকি ক’দিনের মধ্যে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে বলে হিসাব দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্কর্তারা।
আর গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে স্বস্তি ফিরে আসার মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতেও স্বস্তি ফিরে আসার আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। গতকাল মঙ্গলবার দিন শেষে বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেড়ে ২২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। এই রিজার্ভ ২২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
২০২৩ সালের ১০ আগস্ট বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। এর পর রিজার্ভ আর কখনই ২২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের উপরে ওঠেনি। শুধু একবার ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল, গত ৩০ এপ্রিল। ওইদিন রিজার্ভ ছিল ২২ দশমিক শূন্য চার বিলিয়ন ডলার।
৭ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের ১৮৮ কোটি ৩০ লাখ (১.৮৮ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। তার পর থেকে রিজার্ভ ২০ থেকে ২১ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ছিল। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ায় ২২ জুন রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ওইদন রিজার্ভ ওঠে ২১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে। ২৩ জুন (সোমবার) তা আরও বেড়ে ২১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।
মঙ্গলবার এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) বাজেট সহায়তার ৪০ কোটি ডলার যোগ হওয়ায় বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারে অবস্থান করছে। এদিন গ্রস হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৭ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার।
কয়েক দিনের মধ্যে রিজার্ভ আরও বাড়বে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘আজকেই (বুধবার) আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ ওপঞ্চম কিস্তির ১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভে যোগ হবে। সোমবার সংস্থাটির নির্বাহী বোর্ড এই ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া এডিবি (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে ) ৯০ কোটি ডলার এবং বিশ্ব ব্যাংক দিচ্ছে ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দুই-চার দিনের মধ্যে রিজার্ভে যোগ হবে।’
সব মিলিয়ে জুন মাসের মধ্যেই বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছবে। আর গ্রস রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার হবে বলে হিসাব কষে জানান তিনি। আরিফ খান বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে। রিজার্ভের আরেক উৎস রপ্তানি আয়ও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। এর পর দাতা সংস্থাগুলোর ঋণে রিজার্ভ বাড়ছে। আর এতে অর্থনীতিতেও স্বস্তি ফিরে আসবে।’
এছাড়া জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কাছ থেকে ৪০ কোটি ডলারের বেশি বাজেট সহায়তা পাওয়ার কথা রয়েছে। ১০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দিচ্ছে ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট। এ্ দুটি ঋণও জুনের মধ্যেই পাওয়া কথা রয়েছে। যদি পাওয়া যায় তাহলে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, ‘আইএমএফসহ একাধিক উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে জুন মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার পাবে। এতে দেশের রিজার্ভ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সময় বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বাড়তে-বাড়তে গত ৩০ এপ্রিল বেড়ে ২২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। তবে গত ৬ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর তা কমে ২০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। ১৯ মাস পর চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল রিজার্ভ ফের ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ হিসেবে দাবি করে।
সবশেষ গত মার্চ মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে বর্তমানের ২২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দিয়ে প্রায় চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়।
২০২৩ সালের ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রস হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। ওই দিন বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।
১২ জুলাইয়ের আগে শুধুমাত্র গ্রস হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। ওই বছরের ২৪ আগস্ট রিজার্ভ ৪৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে ওঠেছিল। এর পর থেকে কমছিল।
আকু হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়ে শ্রীলঙ্কা।
রিজার্ভের প্রধান দুটি উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২৪-২৫ চলতি অর্থ বছরের প্রথম ১১ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে মোট ৪ হাজার ৪৯৪ কোটি ৬০ লাখ (৪৪.৯৫ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থ বছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে ) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ২ হাজার ৭৫০ কোটি (২৭.৫০বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি।
বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫
বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ। বেশ কিছুদিন ধরেই এই সূচক নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছিল। তবে এখন সন্তোষজনক অবস্থায় উঠেছে; প্রতিদিনই বাড়ছে। আরও বাড়বে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের শেষ মাস জুনের বাকি ক’দিনের মধ্যে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে বলে হিসাব দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্কর্তারা।
আর গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে স্বস্তি ফিরে আসার মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতেও স্বস্তি ফিরে আসার আভাস পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। গতকাল মঙ্গলবার দিন শেষে বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেড়ে ২২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। এই রিজার্ভ ২২ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
২০২৩ সালের ১০ আগস্ট বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। এর পর রিজার্ভ আর কখনই ২২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের উপরে ওঠেনি। শুধু একবার ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল, গত ৩০ এপ্রিল। ওইদিন রিজার্ভ ছিল ২২ দশমিক শূন্য চার বিলিয়ন ডলার।
৭ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের ১৮৮ কোটি ৩০ লাখ (১.৮৮ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। তার পর থেকে রিজার্ভ ২০ থেকে ২১ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ছিল। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ায় ২২ জুন রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। ওইদন রিজার্ভ ওঠে ২১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে। ২৩ জুন (সোমবার) তা আরও বেড়ে ২১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।
মঙ্গলবার এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) বাজেট সহায়তার ৪০ কোটি ডলার যোগ হওয়ায় বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারে অবস্থান করছে। এদিন গ্রস হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৭ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার।
কয়েক দিনের মধ্যে রিজার্ভ আরও বাড়বে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘আজকেই (বুধবার) আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ ওপঞ্চম কিস্তির ১ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভে যোগ হবে। সোমবার সংস্থাটির নির্বাহী বোর্ড এই ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া এডিবি (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকে ) ৯০ কোটি ডলার এবং বিশ্ব ব্যাংক দিচ্ছে ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দুই-চার দিনের মধ্যে রিজার্ভে যোগ হবে।’
সব মিলিয়ে জুন মাসের মধ্যেই বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছবে। আর গ্রস রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার হবে বলে হিসাব কষে জানান তিনি। আরিফ খান বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে। রেকর্ডের পর রেকর্ড হচ্ছে। রিজার্ভের আরেক উৎস রপ্তানি আয়ও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। এর পর দাতা সংস্থাগুলোর ঋণে রিজার্ভ বাড়ছে। আর এতে অর্থনীতিতেও স্বস্তি ফিরে আসবে।’
এছাড়া জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কাছ থেকে ৪০ কোটি ডলারের বেশি বাজেট সহায়তা পাওয়ার কথা রয়েছে। ১০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা দিচ্ছে ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট। এ্ দুটি ঋণও জুনের মধ্যেই পাওয়া কথা রয়েছে। যদি পাওয়া যায় তাহলে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছিলেন, ‘আইএমএফসহ একাধিক উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান থেকে জুন মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার পাবে। এতে দেশের রিজার্ভ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সময় বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বাড়তে-বাড়তে গত ৩০ এপ্রিল বেড়ে ২২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। তবে গত ৬ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর তা কমে ২০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। ১৯ মাস পর চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল রিজার্ভ ফের ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ হিসেবে দাবি করে।
সবশেষ গত মার্চ মাসের আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, ওই মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে বর্তমানের ২২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দিয়ে প্রায় চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুদ থাকতে হয়।
২০২৩ সালের ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রস হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। ওই দিন বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।
১২ জুলাইয়ের আগে শুধুমাত্র গ্রস হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। ওই বছরের ২৪ আগস্ট রিজার্ভ ৪৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে ওঠেছিল। এর পর থেকে কমছিল।
আকু হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যকার একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এশিয়ার ৯টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা প্রতি দুই মাস পরপর নিষ্পত্তি হয়। অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। তবে দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সম্প্রতি এ ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়ে শ্রীলঙ্কা।
রিজার্ভের প্রধান দুটি উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২৪-২৫ চলতি অর্থ বছরের প্রথম ১১ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মে সময়ে মোট ৪ হাজার ৪৯৪ কোটি ৬০ লাখ (৪৪.৯৫ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থ বছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে ) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ২ হাজার ৭৫০ কোটি (২৭.৫০বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি।