ব্যয়ের ক্ষেত্রে আমরা যত দরিদ্র, আয়ের দিক থেকে তার চেয়ে বেশি দরিদ্র। প্রতিবছর এই দরিদ্রের হার বাড়ছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ দরিদ্র না হলেও দরিদ্র্যসীমার ঠিক ওপরেই অবস্থান করছেন। তাঁদের অবস্থান টেকসই নয়, সামান্য ধাক্কায় তাঁরা দরিদ্র হয়ে যেতে পারেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, কিছু মানুষ নাকবরাবর পানিতে দাঁড়িয়ে আছেন। সামান্য ঢেউ এলেই তাঁরা তলিয়ে যাবেন। তাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কোনোভাবে শুধু জীবনধারণ করে যাচ্ছেন।
সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে চীন–মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স অন সোশ্যাল প্রটেকশন ২০২৫’–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ন্যায্যতাভিত্তিক সমাজে চরম দারিদ্র্য থাকতে পারে না। কোনো দেশ এত গরিব হতে পারে না যে তার সব মানুষের জন্য অন্তত জীবনধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। এখন অজুহাত দেখালে চলবে না যে সবাইকে ন্যূনতম সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে দারিদ্র্য দূর করাকে অন্যতম মূল উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে এটিকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে এখন থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।
ভাতাভোগীর অর্ধেক ভুতুড়ে ও রাজনৈতিক
সামাজিক ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে উপকারভোগী নির্ধারণে বড় সমস্যা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে যাঁরা ভাতা পান, তাঁদের ৫০ শতাংশই সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নন। তাঁরা ভুতুড়ে অথবা রাজনৈতিক বিবেচনায় ভাতা পাচ্ছেন। জাতীয়ভাবে সমন্বিত তালিকা তৈরি ও মাঠপর্যায়ে তদারকি করা গেলে প্রকৃত উপকারভোগী ও যোগ্যদের নাম বের হয়ে আসবে।
সমতাভিত্তিক রাষ্ট্রে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সুবিধা দিতে হবে। যাঁর জীবনধারণের কোনো উপায় নেই, তাঁর কাছে বিদ্যালয় বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র অর্থহীন। কাজেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গত বছরের জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানেরও সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল সাম্যভিত্তিক সমাজ গড়া। সবার আয় সমান হবে না, কিন্তু সুযোগ সমান থাকতে হবে।
দারিদ্র্যঘন নতুন এলাকা
দেশে কিছু দারিদ্র্যঘন এলাকা আছে উল্লেখ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, রংপুর একসময় মৌসুমি দারিদ্র্যঘন এলাকা ছিল, যা ‘মঙ্গা’ হিসেবে পরিচিত। ২০০৩–০৫ সালে মঙ্গা নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হয়। আগে সরকার মঙ্গার কথা অস্বীকার করলেও গণমাধ্যমের কারণে সরকার মঙ্গাকে স্বীকৃতি দেয় এবং নিরোধে কর্মসূচি নেয়। বর্তমানে রংপুর অঞ্চলে মৌসুমি ক্ষুধা অতটা নেই, তবে দারিদ্র্য রয়েছে।
তিনি বলেন, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালীর মতো জেলায় নতুন দারিদ্র্যঘন অঞ্চল তৈরি হয়েছে। এদের লক্ষ্য করে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সরকার মাত্র কয়েক মাসের জন্য আছে, তবুও একটি পথনকশা তৈরি করে দিতে চাই। ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার সেখান থেকে শুরু করতে পারবে।
ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী
দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোকে চিহ্নিত করে কাজ করতে হবে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্যই হলো ঝুঁকিপূর্ণ দারিদ্র্য কমানো। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির দুর্বলতা কমাতে সমন্বিত তথ্যভান্ডার তৈরি প্রয়োজন।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য মনজুর হোসেন বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা আরও বাড়াতে হবে। গত এক দশকে জিডিপিতে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি মাত্র ২ শতাংশ। অর্থাৎ কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর পেছনে সুশাসনের অভাব, আর্থিক খাতে অনিয়ম, প্রতিষ্ঠান দুর্বল করা ও ন্যায়বিচারের অভাব দায়ী।
তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। বন্ড, বিমাসহ কিছু মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষার পরিধি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে রাজস্ব বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান, মন্ত্রিপরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন, ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রতিনিধি স্টেফেন লিলার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান মিচেল ক্রেৎজা ও ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পপকি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত সচিব মো. খালেদ হাসান।
সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ব্যয়ের ক্ষেত্রে আমরা যত দরিদ্র, আয়ের দিক থেকে তার চেয়ে বেশি দরিদ্র। প্রতিবছর এই দরিদ্রের হার বাড়ছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ দরিদ্র না হলেও দরিদ্র্যসীমার ঠিক ওপরেই অবস্থান করছেন। তাঁদের অবস্থান টেকসই নয়, সামান্য ধাক্কায় তাঁরা দরিদ্র হয়ে যেতে পারেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, কিছু মানুষ নাকবরাবর পানিতে দাঁড়িয়ে আছেন। সামান্য ঢেউ এলেই তাঁরা তলিয়ে যাবেন। তাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কোনোভাবে শুধু জীবনধারণ করে যাচ্ছেন।
সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে চীন–মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স অন সোশ্যাল প্রটেকশন ২০২৫’–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ন্যায্যতাভিত্তিক সমাজে চরম দারিদ্র্য থাকতে পারে না। কোনো দেশ এত গরিব হতে পারে না যে তার সব মানুষের জন্য অন্তত জীবনধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। এখন অজুহাত দেখালে চলবে না যে সবাইকে ন্যূনতম সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে দারিদ্র্য দূর করাকে অন্যতম মূল উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে এটিকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে এখন থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।
ভাতাভোগীর অর্ধেক ভুতুড়ে ও রাজনৈতিক
সামাজিক ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে উপকারভোগী নির্ধারণে বড় সমস্যা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে যাঁরা ভাতা পান, তাঁদের ৫০ শতাংশই সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নন। তাঁরা ভুতুড়ে অথবা রাজনৈতিক বিবেচনায় ভাতা পাচ্ছেন। জাতীয়ভাবে সমন্বিত তালিকা তৈরি ও মাঠপর্যায়ে তদারকি করা গেলে প্রকৃত উপকারভোগী ও যোগ্যদের নাম বের হয়ে আসবে।
সমতাভিত্তিক রাষ্ট্রে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সুবিধা দিতে হবে। যাঁর জীবনধারণের কোনো উপায় নেই, তাঁর কাছে বিদ্যালয় বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র অর্থহীন। কাজেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গত বছরের জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানেরও সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল সাম্যভিত্তিক সমাজ গড়া। সবার আয় সমান হবে না, কিন্তু সুযোগ সমান থাকতে হবে।
দারিদ্র্যঘন নতুন এলাকা
দেশে কিছু দারিদ্র্যঘন এলাকা আছে উল্লেখ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, রংপুর একসময় মৌসুমি দারিদ্র্যঘন এলাকা ছিল, যা ‘মঙ্গা’ হিসেবে পরিচিত। ২০০৩–০৫ সালে মঙ্গা নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হয়। আগে সরকার মঙ্গার কথা অস্বীকার করলেও গণমাধ্যমের কারণে সরকার মঙ্গাকে স্বীকৃতি দেয় এবং নিরোধে কর্মসূচি নেয়। বর্তমানে রংপুর অঞ্চলে মৌসুমি ক্ষুধা অতটা নেই, তবে দারিদ্র্য রয়েছে।
তিনি বলেন, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালীর মতো জেলায় নতুন দারিদ্র্যঘন অঞ্চল তৈরি হয়েছে। এদের লক্ষ্য করে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সরকার মাত্র কয়েক মাসের জন্য আছে, তবুও একটি পথনকশা তৈরি করে দিতে চাই। ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার সেখান থেকে শুরু করতে পারবে।
ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠী
দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোকে চিহ্নিত করে কাজ করতে হবে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্যই হলো ঝুঁকিপূর্ণ দারিদ্র্য কমানো। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির দুর্বলতা কমাতে সমন্বিত তথ্যভান্ডার তৈরি প্রয়োজন।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য মনজুর হোসেন বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা আরও বাড়াতে হবে। গত এক দশকে জিডিপিতে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি মাত্র ২ শতাংশ। অর্থাৎ কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর পেছনে সুশাসনের অভাব, আর্থিক খাতে অনিয়ম, প্রতিষ্ঠান দুর্বল করা ও ন্যায়বিচারের অভাব দায়ী।
তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়। বন্ড, বিমাসহ কিছু মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষার পরিধি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে রাজস্ব বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান, মন্ত্রিপরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন, ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রতিনিধি স্টেফেন লিলার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান মিচেল ক্রেৎজা ও ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পপকি। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত সচিব মো. খালেদ হাসান।