ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
ব্যয়ের ক্ষেত্রে আমরা যত দরিদ্র, তার চেয়ে বেশি দরিদ্র আয়ের দিক থেকে। প্রতিবছর এই দরিদ্রের হার বাড়ছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ দরিদ্র না হলেও দরিদ্র্যসীমার ঠিক ওপরেই অবস্থান করছেন। তাদের অবস্থান টেকসই নয়, সামান্য ধাক্কায় তারা দরিদ্র হয়ে যেতে পারেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষ নাকবরাবর পানিতে দাঁড়িয়ে আছেন। সামান্য ঢেউ এলেই তাঁরা তলিয়ে যাবেন। তাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কোনোভাবে শুধু জীবনধারণ করে যাচ্ছেন।’
সোমবার,(০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স অন সোশ্যাল প্রটেকশন ২০২৫’ বা সামাজিক সুরক্ষাবিষয়ক জাতীয় সম্মেলন শীর্ষক অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা উপদেষ্টা এ কথাগুলো বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘ন্যায্যতাভিত্তিক সমাজে চরম দারিদ্র্য থাকতে পারে না। কোনো দেশ এত গরিব হতে পারে না যে তার সব মানুষের জন্য সে অন্তত জীবনধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। এখন তো আমাদের কোনো অজুহাত দেখালে চলবে না যে আমরা সবাইকে ন্যূনতম সামাজিক নিরাপত্তা দিতে পারব না। ফলে এই দারিদ্র্য দূর করা আমাদের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে এটিকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে এখন থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।’
সামাজিক ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে উপকারভোগী নির্ধারণে বড় সমস্যা আছে উল্লেখ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বর্তমানে যারা ভাতা পান, তাদের ৫০ শতাংশই এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নন। তারা ভুতুড়ে অথবা রাজনৈতিক বিবেচনায় সুবিধা পাচ্ছেন। জাতীয়ভাবে সমন্বিত তালিকা তৈরি করা ও মাঠপর্যায়ে তদারকি করা গেলে প্রকৃত উপকারভোগী ও যোগ্যদের নাম বের হয়ে আসবে।’
সমতাভিত্তিক রাষ্ট্রে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি সবাইকে বাঁচার জন্য ন্যূনতম যা দরকার, তা দিতে হবে। যার জীবনধারণের কোনো উপায় নেই, তাকে বিদ্যালয় বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র দিয়ে তো লাভ নেই। সেগুলো গ্রহণ করার মতো অবস্থায় তিনি নেই। কাজেই এ দুটি বিষয় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গত বছরের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানেরও সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল সাম্যভিত্তিক সমাজ গড়া। সবার আয় সমান হবে না, কিন্তু সুযোগ সমান থাকতে হবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘দেশে কিছু দারিদ্র্যঘন এলাকা আছে। রংপুর একসময় মৌসুমি দারিদ্র্যঘন এলাকা ছিল। এই মৌসুমি দারিদ্র্য মঙ্গা হিসেবে পরিচিত। ২০০৩-০৫ সালের দিকে মঙ্গা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক আলোচনা হয়েছে। আগে তো সরকার মঙ্গার কথা অস্বীকার করত। সংবাদমাধ্যমের কারণেই সরকার মঙ্গাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং মঙ্গা নিরোধের জন্য অনেক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রংপুর অঞ্চলে মৌসুমি ক্ষুধা এখন অতটা আর নেই, তবে দারিদ্র্য আছে।’
দেশের আর কিছু অঞ্চলে দারিদ্র্যঘন এলাকা তৈরি হয়েছে বলে জানান ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালীর মতো জেলায় নতুন এসব অঞ্চল তৈরি হয়েছে। এদের লক্ষ্য করে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। আমরা এই সরকার মাত্র কয়েক মাসের জন্য আছি। তা সত্ত্বেও আমরা পথনকশা তৈরি করে দিতে চাই। সেটা করা গেলে ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকারের সুবিধা হবে। সেখান থেকে তারা শুরু করতে পারবে।’
দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ দারিদ্র্য কমানো। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির দুর্বলতা কমাতে সমন্বিত তথ্যভান্ডার তৈরি করা প্রয়োজন।’
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘গত এক দশকে জিডিপিতে আমরা বেশ উন্নতি করেছি, প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু এই সময়ে আমাদের কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ২ শতাংশ। অর্থাৎ কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর পেছনের কারণ ছিল সুশাসনের অভাব, আর্থিক খাতে অনিয়ম, প্রতিষ্ঠান দুর্বল করা, ন্যায়বিচার না থাকা।’
মনজুর হোসেন আরও বলেন, ‘বর্তমানে সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা পর্যাপ্ত নয়। বন্ড, বিমাসহ কিছু মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষার পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে সরকারকে রাজস্ব বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান, মন্ত্রিপরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন, ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রতিনিধি স্টেফেন লিলার, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান মিচেল ক্রেৎজা, ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পপকি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত সচিব মো. খালেদ হাসান।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ব্যয়ের ক্ষেত্রে আমরা যত দরিদ্র, তার চেয়ে বেশি দরিদ্র আয়ের দিক থেকে। প্রতিবছর এই দরিদ্রের হার বাড়ছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ দরিদ্র না হলেও দরিদ্র্যসীমার ঠিক ওপরেই অবস্থান করছেন। তাদের অবস্থান টেকসই নয়, সামান্য ধাক্কায় তারা দরিদ্র হয়ে যেতে পারেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কিছু মানুষ নাকবরাবর পানিতে দাঁড়িয়ে আছেন। সামান্য ঢেউ এলেই তাঁরা তলিয়ে যাবেন। তাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কোনোভাবে শুধু জীবনধারণ করে যাচ্ছেন।’
সোমবার,(০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী ‘ন্যাশনাল কনফারেন্স অন সোশ্যাল প্রটেকশন ২০২৫’ বা সামাজিক সুরক্ষাবিষয়ক জাতীয় সম্মেলন শীর্ষক অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা উপদেষ্টা এ কথাগুলো বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘ন্যায্যতাভিত্তিক সমাজে চরম দারিদ্র্য থাকতে পারে না। কোনো দেশ এত গরিব হতে পারে না যে তার সব মানুষের জন্য সে অন্তত জীবনধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। এখন তো আমাদের কোনো অজুহাত দেখালে চলবে না যে আমরা সবাইকে ন্যূনতম সামাজিক নিরাপত্তা দিতে পারব না। ফলে এই দারিদ্র্য দূর করা আমাদের অন্যতম মূল উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। সেই সঙ্গে এটিকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে এখন থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।’
সামাজিক ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে উপকারভোগী নির্ধারণে বড় সমস্যা আছে উল্লেখ করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বর্তমানে যারা ভাতা পান, তাদের ৫০ শতাংশই এ সুবিধা পাওয়ার যোগ্য নন। তারা ভুতুড়ে অথবা রাজনৈতিক বিবেচনায় সুবিধা পাচ্ছেন। জাতীয়ভাবে সমন্বিত তালিকা তৈরি করা ও মাঠপর্যায়ে তদারকি করা গেলে প্রকৃত উপকারভোগী ও যোগ্যদের নাম বের হয়ে আসবে।’
সমতাভিত্তিক রাষ্ট্রে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি সবাইকে বাঁচার জন্য ন্যূনতম যা দরকার, তা দিতে হবে। যার জীবনধারণের কোনো উপায় নেই, তাকে বিদ্যালয় বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র দিয়ে তো লাভ নেই। সেগুলো গ্রহণ করার মতো অবস্থায় তিনি নেই। কাজেই এ দুটি বিষয় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গত বছরের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানেরও সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল সাম্যভিত্তিক সমাজ গড়া। সবার আয় সমান হবে না, কিন্তু সুযোগ সমান থাকতে হবে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘দেশে কিছু দারিদ্র্যঘন এলাকা আছে। রংপুর একসময় মৌসুমি দারিদ্র্যঘন এলাকা ছিল। এই মৌসুমি দারিদ্র্য মঙ্গা হিসেবে পরিচিত। ২০০৩-০৫ সালের দিকে মঙ্গা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক আলোচনা হয়েছে। আগে তো সরকার মঙ্গার কথা অস্বীকার করত। সংবাদমাধ্যমের কারণেই সরকার মঙ্গাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং মঙ্গা নিরোধের জন্য অনেক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রংপুর অঞ্চলে মৌসুমি ক্ষুধা এখন অতটা আর নেই, তবে দারিদ্র্য আছে।’
দেশের আর কিছু অঞ্চলে দারিদ্র্যঘন এলাকা তৈরি হয়েছে বলে জানান ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালীর মতো জেলায় নতুন এসব অঞ্চল তৈরি হয়েছে। এদের লক্ষ্য করে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। আমরা এই সরকার মাত্র কয়েক মাসের জন্য আছি। তা সত্ত্বেও আমরা পথনকশা তৈরি করে দিতে চাই। সেটা করা গেলে ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকারের সুবিধা হবে। সেখান থেকে তারা শুরু করতে পারবে।’
দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ দারিদ্র্য কমানো। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির দুর্বলতা কমাতে সমন্বিত তথ্যভান্ডার তৈরি করা প্রয়োজন।’
সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য মনজুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘গত এক দশকে জিডিপিতে আমরা বেশ উন্নতি করেছি, প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু এই সময়ে আমাদের কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ২ শতাংশ। অর্থাৎ কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর পেছনের কারণ ছিল সুশাসনের অভাব, আর্থিক খাতে অনিয়ম, প্রতিষ্ঠান দুর্বল করা, ন্যায়বিচার না থাকা।’
মনজুর হোসেন আরও বলেন, ‘বর্তমানে সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তা পর্যাপ্ত নয়। বন্ড, বিমাসহ কিছু মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষার পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে সরকারকে রাজস্ব বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে।’
অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান, মন্ত্রিপরিষদের সমন্বয় ও সংস্কার বিভাগের সচিব জাহেদা পারভীন, ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রতিনিধি স্টেফেন লিলার, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান মিচেল ক্রেৎজা, ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার ক্লিনটন পপকি। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত সচিব মো. খালেদ হাসান।