alt

news » business

খেলাপি ঋণে এশিয়ায় শীর্ষে এখন বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : রোববার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংক খাতের লুকানো খেলাপি ঋণ বের হয়ে আসছে। আবার আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের ঋণও খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। তাতে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ এক বছরের ব্যবধানে ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের এক-চতুর্থাংশের বেশি এখন খেলাপি। আর তাতেই খেলাপি ঋণে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে এখন বাংলাদেশের নাম।

সম্প্রতি প্রকাশিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণের দিক থেকে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের শীর্ষে উঠে আসার বিষয়টি উঠে এসেছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর আর্থিক বিভিন্ন সূচকের অবস্থা নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তবে খেলাপি ঋণের তুলনায় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে ২০২৩ সালের তথ্য। তাতেই বাংলাদেশ শীর্ষে।

এডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। ২০২৩ সাল শেষে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। এডিবির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে প্রতিবছরই বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের হার বেড়েছে। ২০২১ সালে এই হার ছিল ৮ শতাংশ, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৭ শতাংশে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মতো ২০২১ সাল থেকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে নেপাল ও শ্রীলঙ্কার। বাকি দেশগুলোর খেলাপি ঋণ কমেছে। যেমন ভুটানের খেলাপি ঋণের হার ২০২০ সালে ছিল ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০২২ সালে কমে হয়েছে ৩ শতাংশ। ভারতের খেলাপি ঋণের হার ২০২০ সালে ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে কমে হয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। মালদ্বীপের খেলাপি ঋণ এই সময়ে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ।

এডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম খেলাপি ঋণের হার চীনের তাইপে ও হংকংয়ে। আর বাংলাদেশের পর সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণের হার কিরগিজস্তানে। তবে দেশটির খেলাপি ঋণের হার কমছে। ২০২২ সালে দেশটির খেলাপি ঋণের হার ছিল ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০২৪ সাল শেষে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। আর সর্বশেষ গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকায়, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের চার ভাগের এক ভাগের বেশি খেলাপি হয়ে গেছে।

এডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম খেলাপি ঋণ তাইপে ও কোরিয়ার। দেশ দুটির খেলাপি ঋণের হার যথাক্রমে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ ও শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, তা এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। আবার ঋণ খেলাপি হওয়ার নিয়ম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কারণেও দেশে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। যেসব ঋণ নবায়ন করা হয়, তার অনেকগুলো আদায় হচ্ছে না। অনিয়মের কারণে অনেক ঋণকে খেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যা সামনে আরও বাড়তে পারে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এর পর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। অর্থনীতিবিদেরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন যে আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালীরা নানা অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নিয়ে যাচ্ছেন, যার একটা বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।

সূত্রগুলো বলছে, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ও বহুল সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া ব্যাংকগুলোর ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেশি বেড়েছে। একইভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেড়েছে। এই পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি সরকারি খাতের অগ্রণী ও জনতা এবং বেসরকারি খাতের আইএফআইসি, ইউসিবি, এনআরবি ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বাড়ছে।

জানা গেছে, খেলাপি হয়ে পড়া প্রায় ১ হাজার ৪০০ প্রতিষ্ঠান ঋণ পুনর্গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠানের ঋণ নিয়মিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন নীতিমালা তৈরি করে ব্যাংকগুলোকে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নীতিমালায় ১ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হবে। তবে ঋণ পরিশোধে যতটা সময় বিরতি পাবে, ওই সময়ে সুদ পরিশোধ করতে হবে। এর ফলে খেলাপি ঋণ কমে আসবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

ছবি

এক বছরে সর্বোচ্চ লেনদেন ডিএসইতে

ছবি

এক মাসে ৭৮১ বিদেশি বিও হিসাব বন্ধ

ছবি

মাথাপিছু জিডিপিতে দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম

ছবি

এক্সচেঞ্জ রেটের কারণে বছরে ১৬ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স হারাচ্ছে বাংলাদেশ

ছবি

বাণিজ্য সুবিধা আদায়ে বাংলাদেশ যথেষ্ট শক্তিশালী নয়: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে, সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প আয়ের মানুষ

ছবি

চলতি বছর ৩৯ হাজার কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণ হবে

ছবি

প্লাস্টিক ব্যবহার কমানোর ব্যবসায়িক ধারণা দিলেই পুরস্কার ১ লাখ টাকা

ছবি

ট্রেড ইউনিয়নের সুপারিশ নিয়ে উদ্বেগ বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের

ছবি

ডিমের ডজন ১৫০ টাকা ছাড়ালেই আমদানির অনুমতি

ছবি

ডিএসইর বাজার মূলধনে যোগ হলো সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা

ছবি

একীভূত হতে সম্মতি তিন ব্যাংকের, দুটি সময় চায়

ছবি

নতুন টেলিকম নীতিমালা অনুমোদন: একক নিয়ন্ত্রণ কমিয়ে সুলভ ও মানসম্মত সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্য

ছবি

ছাদে সৌরবিদ্যুৎ সম্প্রসারণে বড় বাধা অর্থায়ন

ছবি

বাংলাদেশের আজিজ খান সিঙ্গাপুরের ৪৯তম ধনী

ছবি

ব্যাংক মার্জার : আরও ২ ব্যাংকের বক্তব্য শুনলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

ওয়ালটন হাই-টেকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে ওয়ালটন ডিজি-টেক

ছবি

১০টির বেশি সিম নয়: বাড়তি থাকলে ছাড়তে হবে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে

ছবি

ঢাকায় টোয়াবের পর্যটন মেলা এবার বড় পরিসরে

ছবি

সুলভ মূল্য নয়, ন্যায্য দামে টেকসই শিল্প চায় বিজিএমইএ

ছবি

স্বর্ণের দামে সব রেকর্ড ছাড়ালো

ছবি

১০ দফায় ১ বিলিয়ন ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

‘শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে ফান্ডামেন্টালের সঙ্গে কৌশল ও টুলস জানতে হবে’: মিনহাজ মান্নান

ছবি

চলতি বছরে প্রথমবার ১৩শ’ কোটি টাকার লেনদেন

ছবি

আগস্টে তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে

ছবি

বিদেশি কর্মীদের নিরাপত্তা ছাড়পত্র এখন অনলাইনে পাওয়া যাবে

ছবি

শেয়ারবাজারে বিও হিসাবের রক্ষণাবেক্ষণ মাশুল কমলো ৩০০ টাকা

ছবি

স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের জন্য ৫০০ কোটি টাকার তহবিল

ছবি

প্রতি মাসে ‘মিট দ্যা বিজনেস’ আয়োজন করবে এনবিআর

ছবি

আরও ৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

এশিয়ান প্রফেশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫

ছবি

পারিবারিক ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে যোগ্যতার ভিত্তিতেই নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে: এমসিসিআই

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে রেকর্ড গড়লো ড্রাই ডক

ছবি

বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিসহ চুক্তি বাস্তবায়নে জরুরি কার্যকর পদক্ষেপ: ডিসিসিআই

ছবি

দেশের প্রথম ফি ছাড়া ক্রেডিট কার্ড চালু করলো প্রাইম ব্যাংক

ছবি

১১ মাসে সর্বোচ্চ অবস্থানে ডিএসই সূচক, বেড়েছে লেনদেনও

tab

news » business

খেলাপি ঋণে এশিয়ায় শীর্ষে এখন বাংলাদেশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

রোববার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংক খাতের লুকানো খেলাপি ঋণ বের হয়ে আসছে। আবার আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের ঋণও খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। তাতে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ এক বছরের ব্যবধানে ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের এক-চতুর্থাংশের বেশি এখন খেলাপি। আর তাতেই খেলাপি ঋণে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে এখন বাংলাদেশের নাম।

সম্প্রতি প্রকাশিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে খেলাপি ঋণের দিক থেকে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের শীর্ষে উঠে আসার বিষয়টি উঠে এসেছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর আর্থিক বিভিন্ন সূচকের অবস্থা নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তবে খেলাপি ঋণের তুলনায় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে ২০২৩ সালের তথ্য। তাতেই বাংলাদেশ শীর্ষে।

এডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। ২০২৩ সাল শেষে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। এডিবির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে প্রতিবছরই বাংলাদেশের খেলাপি ঋণের হার বেড়েছে। ২০২১ সালে এই হার ছিল ৮ শতাংশ, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৭ শতাংশে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মতো ২০২১ সাল থেকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে নেপাল ও শ্রীলঙ্কার। বাকি দেশগুলোর খেলাপি ঋণ কমেছে। যেমন ভুটানের খেলাপি ঋণের হার ২০২০ সালে ছিল ১১ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০২২ সালে কমে হয়েছে ৩ শতাংশ। ভারতের খেলাপি ঋণের হার ২০২০ সালে ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে কমে হয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। মালদ্বীপের খেলাপি ঋণ এই সময়ে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ।

এডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম খেলাপি ঋণের হার চীনের তাইপে ও হংকংয়ে। আর বাংলাদেশের পর সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণের হার কিরগিজস্তানে। তবে দেশটির খেলাপি ঋণের হার কমছে। ২০২২ সালে দেশটির খেলাপি ঋণের হার ছিল ১২ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০২৪ সাল শেষে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। আর সর্বশেষ গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকায়, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংক খাতের বিতরণ করা মোট ঋণের চার ভাগের এক ভাগের বেশি খেলাপি হয়ে গেছে।

এডিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম খেলাপি ঋণ তাইপে ও কোরিয়ার। দেশ দুটির খেলাপি ঋণের হার যথাক্রমে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ ও শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, তা এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। আবার ঋণ খেলাপি হওয়ার নিয়ম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কারণেও দেশে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। যেসব ঋণ নবায়ন করা হয়, তার অনেকগুলো আদায় হচ্ছে না। অনিয়মের কারণে অনেক ঋণকে খেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, যা সামনে আরও বাড়তে পারে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। এর পর থেকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। অর্থনীতিবিদেরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন যে আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ও প্রভাবশালীরা নানা অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নিয়ে যাচ্ছেন, যার একটা বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।

সূত্রগুলো বলছে, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ও বহুল সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া ব্যাংকগুলোর ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেশি বেড়েছে। একইভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেড়েছে। এই পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি সরকারি খাতের অগ্রণী ও জনতা এবং বেসরকারি খাতের আইএফআইসি, ইউসিবি, এনআরবি ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বাড়ছে।

জানা গেছে, খেলাপি হয়ে পড়া প্রায় ১ হাজার ৪০০ প্রতিষ্ঠান ঋণ পুনর্গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠানের ঋণ নিয়মিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন নীতিমালা তৈরি করে ব্যাংকগুলোকে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নীতিমালায় ১ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হবে। তবে ঋণ পরিশোধে যতটা সময় বিরতি পাবে, ওই সময়ে সুদ পরিশোধ করতে হবে। এর ফলে খেলাপি ঋণ কমে আসবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

back to top