এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের (উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ) সময় বাড়াতে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও নিজ নিজ জায়গা থেকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এত অল্প সময়ে সরকারের একার পক্ষে সময় বাড়ানো প্রায় অসম্ভব। তাই আপনারা (ব্যবসায়ীরা) নিজেদের বায়ার ও আমদানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে লবিং করুন। শুধু যুক্তরাজ্য বা কয়েকটি দেশের সমর্থনে গ্র্যাজুয়েশন ঠেকানো যাবে না, আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থন জোগাড় করতে হবে।’
শনিবার, (১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এই আহ্বান জানান। ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। সেমিনারে বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারের আকার বড় হওয়ায় এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী ঝুঁকি অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। তাই সরকার ও ব্যবসায়ীদের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব নয়।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘নেপাল ও লাওস যদি গ্র্যাজুয়েশন পেছানোর আবেদন করে, বাংলাদেশও তা করতে পারবে। তবে ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী লবিং ছাড়া এটি সম্ভব নয়। অতীতে ভুয়া ও বিকৃত তথ্য দিয়ে গ্র্যাজুয়েশনের পথে আনা হয়েছিল বাংলাদেশকে। এখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফার্মাসিউটিক্যালস রপ্তানিতে জট দূর হয়েছে, ন্যাশনাল ক্রেডিট রেটিং শুরু হয়েছে, কৃষি ও বন্ডেড সুবিধায় উন্নতি হয়েছে।’
কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও জিম্বাবুয়ের উদাহরণ টেনে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, এসব দেশ এলডিসি সুবিধা ছাড়াই সফল হয়েছে। বাংলাদেশও চ্যালেঞ্জ নিতে পারবে।
সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা বাড়াতে হবে। ভিয়েতনাম কম মজুরি দিয়েও প্রতিযোগিতায় এগিয়েছে, অথচ নানা সুবিধা পেয়েও বাংলাদেশ পিছিয়ে।’
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, ‘ভুল তথ্য উপাত্ত ও ম্যানিপুলেটেড তথ্য দিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে বিগত সরকারের সময়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। আমি আগেই এই বিষয়গুলো বলে আসছিলাম। এই তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেই এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সিদ্ধান্ত এসেছে, যা আমাদের ব্যবসায়ীদের ঝুঁকিতে ফেলেছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার অর্থনীতিকে ভালো অবস্থায় নিতে কাজ করছে। আমাদের এখন সরকারকে সময় দিতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৮টি দেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হয়েছে। তাদের রপ্তানি বাজার অতটা বড় না হওয়ায় এটি সহজ হয়েছে। তবে আমাদের রপ্তানি বাজার অনেক বড়, এখানেই আমাদের ঝুঁকি। গ্র্যাজুয়েশন হলে আমাদের রপ্তানি বাজারে বড় ধাক্কা লাগতে পারে।’
মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ‘আমাদের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তীতে কী কী ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো নিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে। আমাদের সঙ্গে বসেই ঠিক করতে হবে কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার গত এক বছরেরও বেশি সময়ে এটি নিয়ে আমাদের সঙ্গে বসেনি। আমাদের কাস্টমসে অনেক সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধান করতে হবে। অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো সমাধান করলে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পথ সহজ হবে বলে মনে করছি।’
সেমিনারে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হতে হবে, তার বিকল্প নেই। তবে কখন গ্র্যাজুয়েশন হতে হবে সেটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার ও প্রাইভেট সেক্টরকে বসেই সময় ঠিক করতে হবে। গ্র্যাজুয়েশন হলে সমস্যা কী হবে তা নিয়েও আলোচনা করতে হবে।’
নেপাল ও লাওসের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রপ্তানি বাজার বিশ্লেষণে আমাদের বাজার তুলনামূলকভাবে অনেক বড়, নেপাল ও লাওস সেখানে অনেক পিছিয়ে আছে। তাই নেপাল ও লাওসের গ্র্যাজুয়েশন সহজ হলেও বাংলাদেশের জন্য এটি কঠিন।’
মাশরুর রিয়াজ আরও বলেন, ‘আমাদের জ্বালানি সংকট দূর করতে হবে। সরকার উদ্যোগ নিলেও এটির তেমন অগ্রগতি হয়নি। কাস্টমসে অনেক সমস্যা আছে। এগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলে আমাদের শুল্কহার ভিয়েতনাম ও ভারতের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।’
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির (বাপি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ‘যে বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ওষুধ উৎপাদন করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে, তারা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলে থাকবে না। কারণ, তারা তো এত বেশি শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করতে এখানে উৎপাদন করবে না। এ ছাড়া ওই কোম্পানিগুলো আমাদের দেশে ওষুধ উৎপাদন না করলে অনেক ওষুধই বাংলাদেশের মানুষকে বেশি দামে কিনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গ্র্যাজুয়েশন হতে আমাদের সেক্টরে যে ধরনের দক্ষ জনবল থাকা দরকার, সেটি আমাদের নেই। আমাদের গবেষণা খাত অনেক পিছিয়ে আছে। রিসার্চ না বাড়ালে আমাদের ওষুধের রপ্তানি বাজার খুব বেশি সম্প্রসারণের সুযোগ নেই। সরকারের উচিত এই গবেষণার প্রতি জোর দেওয়া। পাশাপাশি আরও কিছুটা সময় নিয়েই গ্র্যাজুয়েশন হওয়া দরকার।’
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট এনামুল হক খান এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য অন্তত তিন বছর সময় বাড়ানোর দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা গ্র্যাজুয়েশন হতে চাই। তবে এটি আরও অন্তত তিন বছরের জন্য সময় নিয়ে হতে চাচ্ছি। আমরা রপ্তানিকারকরা এই মুহূর্তে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুত নই। আমরা রপ্তানি বাজারে একবার নিজেদের অবস্থান থেকে নেমে গেলে সেখান থেকে ব্যাক করাটা অনেক চ্যালেঞ্জ হবে। তাই আমাদের তিন বছর সময় দেওয়া হলে আমরা এই চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলা করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে। ইউরোপের বাজারেও এখন অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে। অনেক ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও কার্বন সার্টিফিকেট নিতে হচ্ছে। যেটি বাধ্যতামূলক হতে যাচ্ছে। আমরা যদি ২০২১ সাল থেকে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারতাম, তাহলে গ্র্যাজুয়েশন হওয়াটা আমাদের জন্য সহজ হতো। আগের সরকার সেই প্রস্তুতি নিতে আমাদের শক্তিশালী হওয়ার পরামর্শ দেয়নি।’
এনামুল হক খান আরও বলেন, ‘ইইউ আমাদের ভর্তুকি বন্ধ করে দিলে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকতে সমস্যা হবে। এই ভর্তুকিটা ২০২৩ সাল থেকে কমে আসছে। গ্র্যাজুয়েশন হলে এটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে, তখন ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারবে না। তা ছাড়া বিশ্বজুড়ে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এটিও আমাদের ক্ষতির কারণ হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমদানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের জিটুজি ভিত্তিতে চুক্তি করতে হবে। এটা গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তীতে টিকে থাকতে সহায়তা করবে। আমাদের বন্দরগুলো উন্নত করতে হবে। বে-টার্মিনালগুলোকে সচল করতে হবে। মোংলা পোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে হবে। আমাদের কর্মীদের সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এটি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তীতে আমাদের সক্ষমতা বাড়াবে। এক্ষেত্রে সরকারকে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।’
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের (উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ) সময় বাড়াতে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও নিজ নিজ জায়গা থেকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এত অল্প সময়ে সরকারের একার পক্ষে সময় বাড়ানো প্রায় অসম্ভব। তাই আপনারা (ব্যবসায়ীরা) নিজেদের বায়ার ও আমদানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে লবিং করুন। শুধু যুক্তরাজ্য বা কয়েকটি দেশের সমর্থনে গ্র্যাজুয়েশন ঠেকানো যাবে না, আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থন জোগাড় করতে হবে।’
শনিবার, (১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এই আহ্বান জানান। ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। সেমিনারে বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারের আকার বড় হওয়ায় এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী ঝুঁকি অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। তাই সরকার ও ব্যবসায়ীদের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব নয়।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ‘নেপাল ও লাওস যদি গ্র্যাজুয়েশন পেছানোর আবেদন করে, বাংলাদেশও তা করতে পারবে। তবে ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী লবিং ছাড়া এটি সম্ভব নয়। অতীতে ভুয়া ও বিকৃত তথ্য দিয়ে গ্র্যাজুয়েশনের পথে আনা হয়েছিল বাংলাদেশকে। এখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফার্মাসিউটিক্যালস রপ্তানিতে জট দূর হয়েছে, ন্যাশনাল ক্রেডিট রেটিং শুরু হয়েছে, কৃষি ও বন্ডেড সুবিধায় উন্নতি হয়েছে।’
কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও জিম্বাবুয়ের উদাহরণ টেনে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, এসব দেশ এলডিসি সুবিধা ছাড়াই সফল হয়েছে। বাংলাদেশও চ্যালেঞ্জ নিতে পারবে।
সেমিনারে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা বাড়াতে হবে। ভিয়েতনাম কম মজুরি দিয়েও প্রতিযোগিতায় এগিয়েছে, অথচ নানা সুবিধা পেয়েও বাংলাদেশ পিছিয়ে।’
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, ‘ভুল তথ্য উপাত্ত ও ম্যানিপুলেটেড তথ্য দিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে বিগত সরকারের সময়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। আমি আগেই এই বিষয়গুলো বলে আসছিলাম। এই তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেই এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সিদ্ধান্ত এসেছে, যা আমাদের ব্যবসায়ীদের ঝুঁকিতে ফেলেছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার অর্থনীতিকে ভালো অবস্থায় নিতে কাজ করছে। আমাদের এখন সরকারকে সময় দিতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৮টি দেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হয়েছে। তাদের রপ্তানি বাজার অতটা বড় না হওয়ায় এটি সহজ হয়েছে। তবে আমাদের রপ্তানি বাজার অনেক বড়, এখানেই আমাদের ঝুঁকি। গ্র্যাজুয়েশন হলে আমাদের রপ্তানি বাজারে বড় ধাক্কা লাগতে পারে।’
মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ‘আমাদের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তীতে কী কী ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো নিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে। আমাদের সঙ্গে বসেই ঠিক করতে হবে কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার গত এক বছরেরও বেশি সময়ে এটি নিয়ে আমাদের সঙ্গে বসেনি। আমাদের কাস্টমসে অনেক সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধান করতে হবে। অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো সমাধান করলে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পথ সহজ হবে বলে মনে করছি।’
সেমিনারে পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হতে হবে, তার বিকল্প নেই। তবে কখন গ্র্যাজুয়েশন হতে হবে সেটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার ও প্রাইভেট সেক্টরকে বসেই সময় ঠিক করতে হবে। গ্র্যাজুয়েশন হলে সমস্যা কী হবে তা নিয়েও আলোচনা করতে হবে।’
নেপাল ও লাওসের সঙ্গে তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রপ্তানি বাজার বিশ্লেষণে আমাদের বাজার তুলনামূলকভাবে অনেক বড়, নেপাল ও লাওস সেখানে অনেক পিছিয়ে আছে। তাই নেপাল ও লাওসের গ্র্যাজুয়েশন সহজ হলেও বাংলাদেশের জন্য এটি কঠিন।’
মাশরুর রিয়াজ আরও বলেন, ‘আমাদের জ্বালানি সংকট দূর করতে হবে। সরকার উদ্যোগ নিলেও এটির তেমন অগ্রগতি হয়নি। কাস্টমসে অনেক সমস্যা আছে। এগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলে আমাদের শুল্কহার ভিয়েতনাম ও ভারতের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।’
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রির (বাপি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান আশঙ্কা প্রকাশ করেন, ‘যে বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ওষুধ উৎপাদন করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে, তারা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলে থাকবে না। কারণ, তারা তো এত বেশি শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করতে এখানে উৎপাদন করবে না। এ ছাড়া ওই কোম্পানিগুলো আমাদের দেশে ওষুধ উৎপাদন না করলে অনেক ওষুধই বাংলাদেশের মানুষকে বেশি দামে কিনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘গ্র্যাজুয়েশন হতে আমাদের সেক্টরে যে ধরনের দক্ষ জনবল থাকা দরকার, সেটি আমাদের নেই। আমাদের গবেষণা খাত অনেক পিছিয়ে আছে। রিসার্চ না বাড়ালে আমাদের ওষুধের রপ্তানি বাজার খুব বেশি সম্প্রসারণের সুযোগ নেই। সরকারের উচিত এই গবেষণার প্রতি জোর দেওয়া। পাশাপাশি আরও কিছুটা সময় নিয়েই গ্র্যাজুয়েশন হওয়া দরকার।’
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট এনামুল হক খান এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য অন্তত তিন বছর সময় বাড়ানোর দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা গ্র্যাজুয়েশন হতে চাই। তবে এটি আরও অন্তত তিন বছরের জন্য সময় নিয়ে হতে চাচ্ছি। আমরা রপ্তানিকারকরা এই মুহূর্তে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুত নই। আমরা রপ্তানি বাজারে একবার নিজেদের অবস্থান থেকে নেমে গেলে সেখান থেকে ব্যাক করাটা অনেক চ্যালেঞ্জ হবে। তাই আমাদের তিন বছর সময় দেওয়া হলে আমরা এই চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলা করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে। ইউরোপের বাজারেও এখন অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে। অনেক ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও কার্বন সার্টিফিকেট নিতে হচ্ছে। যেটি বাধ্যতামূলক হতে যাচ্ছে। আমরা যদি ২০২১ সাল থেকে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারতাম, তাহলে গ্র্যাজুয়েশন হওয়াটা আমাদের জন্য সহজ হতো। আগের সরকার সেই প্রস্তুতি নিতে আমাদের শক্তিশালী হওয়ার পরামর্শ দেয়নি।’
এনামুল হক খান আরও বলেন, ‘ইইউ আমাদের ভর্তুকি বন্ধ করে দিলে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকতে সমস্যা হবে। এই ভর্তুকিটা ২০২৩ সাল থেকে কমে আসছে। গ্র্যাজুয়েশন হলে এটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে, তখন ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকতে পারবে না। তা ছাড়া বিশ্বজুড়ে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এটিও আমাদের ক্ষতির কারণ হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমদানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের জিটুজি ভিত্তিতে চুক্তি করতে হবে। এটা গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তীতে টিকে থাকতে সহায়তা করবে। আমাদের বন্দরগুলো উন্নত করতে হবে। বে-টার্মিনালগুলোকে সচল করতে হবে। মোংলা পোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে হবে। আমাদের কর্মীদের সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এটি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তীতে আমাদের সক্ষমতা বাড়াবে। এক্ষেত্রে সরকারকে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে।’