ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
গত সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, তার সাড়ে চারগুণ বেশি প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে। বিপুল পরিমাণ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের পরও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে মাত্র ১৪৬ কোটি টাকা। তবে এতে সূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি। এর মাধ্যমে টানা দুই সপ্তাহ শেয়ারবাজারে পতন হলো।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৬৮টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৬টির। আর ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় ৪ দশমিক ৫০ গুণ বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অন্যভাবে বলা যায়, সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৭৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে।
এমন বিপুল পরিমাণ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের পরও সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ২৪ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১৪৬ কোটি টাকা বা দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ৩ হাজার ১৮০ কোটি টাকা।
বাজার মূলধন অল্প পরিমাণে কমলেও সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স সপ্তাহজুড়ে কমেছে ৭৩ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৯০ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। অর্থাৎ টানা দুই সপ্তাহের পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমলো ১৬৪ পয়েন্ট।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ৪৩ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বা ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩১ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট। দুই সপ্তাহে বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক কমেছে ৭৫ পয়েন্ট। আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ১৮ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩৩ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
এদিকে, গত সপ্তাহের ডিএসইতে লেনদেনের গতিও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭০১ কোটি ৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৪৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা বা ৩৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে খান ব্রদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সামিট এলায়েন্স পোর্টের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রবি। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, টেকনো ড্রাগস, ওরিয়ন ইনফিউশন, সোনালী পেপার, লাভেলো আইসক্রিম, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট এবং ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক।
গত সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি। দাম কমার এ তালিকায় নেতৃত্ব দিয়েছে আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান প্রাইম ফাইন্যান্স। বিনিয়োগকারীদের বড় অংশ কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে আগ্রহী না হওয়ায় গত সপ্তাহজুড়েই দাম কমেছে। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম কমার শীর্ষস্থান দখল করেছে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মাত্র ৬৮ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৬টির। এছাড়া ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় সাড়ে চারগুণ বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এমন পতনের বাজারে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসে প্রাইম ফাইন্যান্সের প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ৮০ পয়সা বা ২৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এতে এই পাঁচদিনে শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে কমেছে ২১ কোটি ৮৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৮৬ টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ১০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ২ টাকা ৯০ পয়সা।
এমন দরপতন হওয়া কোম্পানিটি ২০১৯ সালের পর বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে বিনিয়োগকারীদের ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তার আগে ২০১৪ সালে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় প্রাইম ফাইন্যান্স।
কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২৭ কোটি ২৯ লাখ ১৬ হাজার ৪৮৩টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৫৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৩৩ দশমিক ৩১ শতাংশই আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
প্রাইম ফাইন্যান্সের পর গত সপ্তাহে দাম কমার তালিকায় ছিল সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ২৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। শেয়ারের দাম ২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমার মাধ্যমে দাম কমার তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
এছাড়া দাম কামার তালিকায় থাকা শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ডের কমেছে ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ। এক্সিম ব্যাংকের ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ, প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, বিবিএস কেবলসের ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ দাম কমেছে। মুন্নু ফেব্রিক্সের ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ, ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিংয়ের ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ফার্স্ট সিউকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ দাম কমেছে।
গত সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, তার সাড়ে চারগুণ বেশি প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে। এ পতনের বাজারে শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে এনভয় টেক্সটাইল। এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কাছে গত সপ্তাহজুড়ে এ কোম্পানিটির শেয়ার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পছন্দের শীর্ষে ছিল। এতে সপ্তাহজুড়েই দাম বেড়েছে। ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দাম বাড়ার শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে এ কোম্পানিটি।
গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি ইউনিটের দাম বেড়েছে ৯ টাকা ৬০ পয়সা। এতে এক সপ্তাহে শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে বেড়েছে ১৬১ কোটি ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬৩ টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৬১ টাকা, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ৫১ টাকা ৪০ পয়সা।
শেয়ার দাম এভাবে বাড়া কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর আগে ২০২৩ ও ২০২২ সালে ১৫ শতাংশ করে নগদ এবং ২০২১ সালে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ২ টাকা ৪৪ পয়সা। এতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (২০২৪ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত) শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৬ টাকা ৩ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় ২ টাকা ৬২ পয়সা।
২০১২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির মোট শেয়ারসংখ্যা ১৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭৬৭টি। এর মধ্যে ৬৫ দশমিক ১৮ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি ইউনিটের মধ্যে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ শেয়ার আছে।
এনভয় টেক্সটাইলের পর গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় ছিল শ্যামপুর সুগার মিল। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে পরের স্থানে রয়েছে ইউসিবি ব্যাংক।
এছাড়া গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা- টেকনো ড্রাগসের ১৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ক্রাউন সিমেন্টের ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের ১৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, বিডি ফাইন্যান্সের ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং মেট্রো স্পিনিংয়ের ১০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ দাম বেড়েছে।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
গত সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হওয়া যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, তার সাড়ে চারগুণ বেশি প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে। বিপুল পরিমাণ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের পরও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে মাত্র ১৪৬ কোটি টাকা। তবে এতে সূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি। এর মাধ্যমে টানা দুই সপ্তাহ শেয়ারবাজারে পতন হলো।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ৬৮টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৬টির। আর ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় ৪ দশমিক ৫০ গুণ বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অন্যভাবে বলা যায়, সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৭৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে।
এমন বিপুল পরিমাণ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের পরও সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ২৪ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১৪৬ কোটি টাকা বা দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ৩ হাজার ১৮০ কোটি টাকা।
বাজার মূলধন অল্প পরিমাণে কমলেও সবকটি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স সপ্তাহজুড়ে কমেছে ৭৩ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৯০ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। অর্থাৎ টানা দুই সপ্তাহের পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমলো ১৬৪ পয়েন্ট।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ৪৩ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বা ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩১ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট। দুই সপ্তাহে বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক কমেছে ৭৫ পয়েন্ট। আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে ১৮ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৩৩ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
এদিকে, গত সপ্তাহের ডিএসইতে লেনদেনের গতিও কমেছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭০১ কোটি ৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ, প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৪৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা বা ৩৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে খান ব্রদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সামিট এলায়েন্স পোর্টের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রবি। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, টেকনো ড্রাগস, ওরিয়ন ইনফিউশন, সোনালী পেপার, লাভেলো আইসক্রিম, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট এবং ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক।
গত সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের গতি। দাম কমার এ তালিকায় নেতৃত্ব দিয়েছে আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান প্রাইম ফাইন্যান্স। বিনিয়োগকারীদের বড় অংশ কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে আগ্রহী না হওয়ায় গত সপ্তাহজুড়েই দাম কমেছে। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম কমার শীর্ষস্থান দখল করেছে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া মাত্র ৬৮ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৬টির। এছাড়া ২৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় সাড়ে চারগুণ বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এমন পতনের বাজারে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসে প্রাইম ফাইন্যান্সের প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ৮০ পয়সা বা ২৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এতে এই পাঁচদিনে শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে কমেছে ২১ কোটি ৮৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৮৬ টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ১০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ২ টাকা ৯০ পয়সা।
এমন দরপতন হওয়া কোম্পানিটি ২০১৯ সালের পর বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে বিনিয়োগকারীদের ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তার আগে ২০১৪ সালে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় প্রাইম ফাইন্যান্স।
কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২৭ কোটি ২৯ লাখ ১৬ হাজার ৪৮৩টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে রয়েছে ৫৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৩৩ দশমিক ৩১ শতাংশই আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
প্রাইম ফাইন্যান্সের পর গত সপ্তাহে দাম কমার তালিকায় ছিল সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। এই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ২৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। শেয়ারের দাম ২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমার মাধ্যমে দাম কমার তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক।
এছাড়া দাম কামার তালিকায় থাকা শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ডের কমেছে ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ। এক্সিম ব্যাংকের ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ, প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, বিবিএস কেবলসের ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ দাম কমেছে। মুন্নু ফেব্রিক্সের ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ, ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিংয়ের ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ফার্স্ট সিউকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ দাম কমেছে।
গত সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, তার সাড়ে চারগুণ বেশি প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়েছে। এ পতনের বাজারে শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে এনভয় টেক্সটাইল। এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কাছে গত সপ্তাহজুড়ে এ কোম্পানিটির শেয়ার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পছন্দের শীর্ষে ছিল। এতে সপ্তাহজুড়েই দাম বেড়েছে। ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দাম বাড়ার শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে এ কোম্পানিটি।
গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি ইউনিটের দাম বেড়েছে ৯ টাকা ৬০ পয়সা। এতে এক সপ্তাহে শেয়ার দাম সম্মিলিতভাবে বেড়েছে ১৬১ কোটি ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬৩ টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৬১ টাকা, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ৫১ টাকা ৪০ পয়সা।
শেয়ার দাম এভাবে বাড়া কোম্পানিটি সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর আগে ২০২৩ ও ২০২২ সালে ১৫ শতাংশ করে নগদ এবং ২০২১ সালে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ২ টাকা ৪৪ পয়সা। এতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (২০২৪ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত) শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৬ টাকা ৩ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় ২ টাকা ৬২ পয়সা।
২০১২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির মোট শেয়ারসংখ্যা ১৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭৬৭টি। এর মধ্যে ৬৫ দশমিক ১৮ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি ইউনিটের মধ্যে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ শেয়ার আছে।
এনভয় টেক্সটাইলের পর গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় ছিল শ্যামপুর সুগার মিল। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে পরের স্থানে রয়েছে ইউসিবি ব্যাংক।
এছাড়া গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা- টেকনো ড্রাগসের ১৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ক্রাউন সিমেন্টের ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের ১৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, বিডি ফাইন্যান্সের ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং মেট্রো স্পিনিংয়ের ১০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ দাম বেড়েছে।