ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
তিন দশকে বিশ্বব্যাপী অনেক উন্নয়ন হলেও বৈষম্য, আস্থাহীনতা ও নীতির ঘাটতি এখনো সামাজিক ন্যায়বিচারের পথে বড় অন্তরায়। বিশ্বে এখনো ৭১ শতাংশ মানুষের রোজগার নির্ধারিত হয় তাদের জন্মসূত্রে। অর্থাৎ কোন দেশে জন্ম হয়েছে, কোন লিঙ্গের মানুষ, পারিবারিক পটভূমি কেমন ইত্যাদির ভিত্তিতে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নতুন প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটি গতকাল মঙ্গলবার ‘সামাজিক ন্যায়বিচারের অবস্থা: অগ্রসরমাণ একটি কাজ’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
১৯৯৫ সালের সামাজিক উন্নয়নবিষয়ক কোপেনহেগেন শীর্ষ সম্মেলনের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আইএলও। আগামী নভেম্বরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠেয় বিশ্ব সামাজিক শীর্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে এটি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, বৈশ্বিক লিঙ্গভিত্তিক মজুরিবৈষম্য এখনো দূর হয়নি। শ্রমশক্তিতে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের ব্যবধান ২০০৫ সালের পর থেকে মাত্র ৩ শতাংশ কমেছে। এই হার এখন ২৪ শতাংশ। এভাবে চলতে থাকলে বৈশ্বিক লিঙ্গভিত্তিক মজুরিবৈষম্য দূর হতে আরও ১০০ বছর লাগবে।
আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষের আস্থা কমেছে এবং বিরাজমান বৈষম্যের কারণে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বৈশ্বিক অগ্রগতি স্তিমিত হয়ে পড়েছে। তবে তিন দশকে দারিদ্র্য হ্রাস, শিক্ষা ও উৎপাদনশীলতায় উন্নতি হয়েছে। শিশুশ্রমের হার ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ থেকে কমে ১০ শতাংশে নেমেছে। চরম দারিদ্র্য ৩৯ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১০ শতাংশ। প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পন্নের হার বেড়েছে ১০ শতাংশ। প্রথমবারের মতো বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যার সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করাও সম্ভব হয়েছে। তবে এত সব অর্জনের সুফল সবার মধ্যে সমানভাবে পৌঁছায়নি। অগ্রগতির আড়ালে প্রচুর বৈষম্য রয়ে গেছে।
১৯৮২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা কমছে এবং হতাশা ক্রমেই বাড়ছে। আইএলও সতর্ক করে বলেছে, এ আস্থাহীনতা যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও বৈশ্বিক সহযোগিতার বৈধতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আইএলও বলেছে, পরিবেশগত, ডিজিটাল এবং ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তন অবিশ্বাস্য গতিতে শ্রমবাজারকে রূপান্তর করছে। সুস্পষ্ট নীতিমালা না থাকলে এসব রূপান্তর বৈষম্যকে আরও প্রকট করে তুলতে পারে। এ অবস্থায় দরকার দক্ষতা ও সামাজিক সুরক্ষায় বিনিয়োগ, ন্যায্য পারিশ্রমিক পদ্ধতি প্রবর্তন এবং সক্রিয় শ্রমবাজার নীতিমালা প্রণয়ন।
আইএলওর মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ হাউংবো বলেন, ‘বিশ্বে অবশ্যই অগ্রগতি হয়েছে। তবে আমরা এ কথা উপেক্ষা করতে পারি না যে এখনো কোটি কোটি মানুষ কাজের মর্যাদা ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত। সামাজিক ন্যায়বিচার শুধু নৈতিক প্রয়োজন নয়, এটি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সামাজিক সংহতি ও শান্তির জন্য অপরিহার্য।’
প্রতিবেদনটিতে অসম সুযোগ মোকাবিলায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। অর্থনৈতিক অর্জনের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা এবং পরিবেশগত, ডিজিটাল ও জনসংখ্যাগত রূপান্তর এমনভাবে পরিচালনার কথা বলা হয়েছে, যাতে কেউ পিছিয়ে না থাকে।
আইএলওর প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, অর্থায়ন ও শিল্প থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, জলবায়ু—সব ক্ষেত্রে সামাজিক ন্যায়বিচারকে নীতিমালার কেন্দ্রে রাখতে হবে। সরকার, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক অংশীদারদের সহযোগিতা বাড়াতে হবে, যাতে তারা বৈশ্বিক প্রতিকূলতায় একসঙ্গে সাড়া দিতে পারে। আইএলও আশা করছে, দোহায় আসন্ন বিশ্ব সামাজিক সম্মেলনে এ প্রতিবেদন উপস্থাপিত হলে বৈষম্য মোকাবিলা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন দিকনির্দেশনা আসবে।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
তিন দশকে বিশ্বব্যাপী অনেক উন্নয়ন হলেও বৈষম্য, আস্থাহীনতা ও নীতির ঘাটতি এখনো সামাজিক ন্যায়বিচারের পথে বড় অন্তরায়। বিশ্বে এখনো ৭১ শতাংশ মানুষের রোজগার নির্ধারিত হয় তাদের জন্মসূত্রে। অর্থাৎ কোন দেশে জন্ম হয়েছে, কোন লিঙ্গের মানুষ, পারিবারিক পটভূমি কেমন ইত্যাদির ভিত্তিতে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নতুন প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটি গতকাল মঙ্গলবার ‘সামাজিক ন্যায়বিচারের অবস্থা: অগ্রসরমাণ একটি কাজ’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
১৯৯৫ সালের সামাজিক উন্নয়নবিষয়ক কোপেনহেগেন শীর্ষ সম্মেলনের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে আইএলও। আগামী নভেম্বরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠেয় বিশ্ব সামাজিক শীর্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে এটি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, বৈশ্বিক লিঙ্গভিত্তিক মজুরিবৈষম্য এখনো দূর হয়নি। শ্রমশক্তিতে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের ব্যবধান ২০০৫ সালের পর থেকে মাত্র ৩ শতাংশ কমেছে। এই হার এখন ২৪ শতাংশ। এভাবে চলতে থাকলে বৈশ্বিক লিঙ্গভিত্তিক মজুরিবৈষম্য দূর হতে আরও ১০০ বছর লাগবে।
আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষের আস্থা কমেছে এবং বিরাজমান বৈষম্যের কারণে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বৈশ্বিক অগ্রগতি স্তিমিত হয়ে পড়েছে। তবে তিন দশকে দারিদ্র্য হ্রাস, শিক্ষা ও উৎপাদনশীলতায় উন্নতি হয়েছে। শিশুশ্রমের হার ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ থেকে কমে ১০ শতাংশে নেমেছে। চরম দারিদ্র্য ৩৯ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১০ শতাংশ। প্রাথমিক বিদ্যালয় সম্পন্নের হার বেড়েছে ১০ শতাংশ। প্রথমবারের মতো বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যার সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করাও সম্ভব হয়েছে। তবে এত সব অর্জনের সুফল সবার মধ্যে সমানভাবে পৌঁছায়নি। অগ্রগতির আড়ালে প্রচুর বৈষম্য রয়ে গেছে।
১৯৮২ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা কমছে এবং হতাশা ক্রমেই বাড়ছে। আইএলও সতর্ক করে বলেছে, এ আস্থাহীনতা যদি অব্যাহত থাকে, তবে তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও বৈশ্বিক সহযোগিতার বৈধতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আইএলও বলেছে, পরিবেশগত, ডিজিটাল এবং ডেমোগ্রাফিক পরিবর্তন অবিশ্বাস্য গতিতে শ্রমবাজারকে রূপান্তর করছে। সুস্পষ্ট নীতিমালা না থাকলে এসব রূপান্তর বৈষম্যকে আরও প্রকট করে তুলতে পারে। এ অবস্থায় দরকার দক্ষতা ও সামাজিক সুরক্ষায় বিনিয়োগ, ন্যায্য পারিশ্রমিক পদ্ধতি প্রবর্তন এবং সক্রিয় শ্রমবাজার নীতিমালা প্রণয়ন।
আইএলওর মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ হাউংবো বলেন, ‘বিশ্বে অবশ্যই অগ্রগতি হয়েছে। তবে আমরা এ কথা উপেক্ষা করতে পারি না যে এখনো কোটি কোটি মানুষ কাজের মর্যাদা ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত। সামাজিক ন্যায়বিচার শুধু নৈতিক প্রয়োজন নয়, এটি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সামাজিক সংহতি ও শান্তির জন্য অপরিহার্য।’
প্রতিবেদনটিতে অসম সুযোগ মোকাবিলায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। অর্থনৈতিক অর্জনের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা এবং পরিবেশগত, ডিজিটাল ও জনসংখ্যাগত রূপান্তর এমনভাবে পরিচালনার কথা বলা হয়েছে, যাতে কেউ পিছিয়ে না থাকে।
আইএলওর প্রতিবেদনে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, অর্থায়ন ও শিল্প থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, জলবায়ু—সব ক্ষেত্রে সামাজিক ন্যায়বিচারকে নীতিমালার কেন্দ্রে রাখতে হবে। সরকার, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক অংশীদারদের সহযোগিতা বাড়াতে হবে, যাতে তারা বৈশ্বিক প্রতিকূলতায় একসঙ্গে সাড়া দিতে পারে। আইএলও আশা করছে, দোহায় আসন্ন বিশ্ব সামাজিক সম্মেলনে এ প্রতিবেদন উপস্থাপিত হলে বৈষম্য মোকাবিলা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন দিকনির্দেশনা আসবে।