শ্রীংলকা, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়া ইত্যাদি দেশে জিডিপিতে এ খাতের অবদান প্রায় ৫০ শতাংশ
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বাংলাদেশের জিডিপিতে এসএমইদের অবদান ২৮ শতাংশ হলেও, শ্রীংলকা, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার জিডিপিতে এখাতের অবদান প্রায় ৫০ শতাংশ। প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা না পাওয়া, সরকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা, অপ্রতুল অবকাঠামো, দক্ষতার স্বল্পতা, নীতি সহায়তা না পাওয়ার পাশাপাশি কঠিন শর্তাবলী, স্থানীয় ও বৈশ্বিক বাজারে অভিগম্যতার সীমাবদ্ধতা এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকার কারণে আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পখাতের উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সোমবার,(২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘সিএমএসএমই খাতের ব্র্যান্ডিং ও বিপণন চ্যালেঞ্জ: রপ্তানির সম্ভাবনা’ বিষয়ক ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ এসব কথা বলেন।
ডিসিসিআই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ ওবায়দুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)-এর চেয়ারম্যান মোঃ সাইফুল ইসলাম এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ-এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করবেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ। এতে তিনি বলেন, ‘আমাদের শিল্পখাতের প্রায় ৯০ শতাংশ সিএমএসএমই যেখানে প্রায় ১১ দশমিক ৮ মিলিয়ন মানুষ কর্মরত আছে এবং জিডিপিতে এখাতের অবদান ২৮ শতাংশ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আমাদের রপ্তানির উপর অতিরিক্ত শুল্কারোপের কারণে বিশেষকরে তৈরি পোষাকের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে খরচ বৃদ্ধি পাবে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের জরুরী ভিত্তিতে ব্যয় হ্রাসে উদ্ভাবন ও সক্ষমতা বাড়ানোর উপর নজর দিতে হবে। আমাদের এসএমইরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঋণ সহায়তা না পাওয়া, অপ্রতুল অবকাঠামো, দক্ষতার স্বল্পতা, নীতি সহায়তা না পাওয়ার পাশাপাশি কঠিন শর্তাবলী, বাজারে অভিগম্যতার সীমাবদ্ধতা এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকার মুখোমুখি হয়ে থাকেন। এছাড়াও পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের জটিলতা, পণ্য মূল্যের উচ্চ হার, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার দক্ষতার অভাব প্রভৃতি বিষয়গুলো আমাদের উদ্যোক্তাদের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে। এসএমইদের উন্নয়নে পণ্যের সনদ ও কমপ্লায়েন্স সহযোগিতা প্রদান, টেকসই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা প্রদান, পণ্যের মান উন্নয়ন ও ব্র্যান্ডিং, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণে সরকারী সহায়তা ও ক্লাস্টার উন্নয়ন, সমন্বিত নীতি সহায়তা, সিএমএসএমই ডাটাবেইজ তৈরি, বেকওয়ার্ড লিংকেজ খাতের সম্প্রসারণে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষন এবং স্টার্টআপ উদ্যোক্তা উন্নয়নে সার্বিক সহায়তার আহ্বান জানাচ্ছি।’
শিল্প সচিব মোঃ ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ব্রান্ডিং ও মার্কেটিং আমাদের সিএমএসএমইদের জন্য অতবী গুরুত্বপূর্ণ, সেই সাথে চ্যালেঞ্জিংও। তবে নিজেদের বৈশ্বিক ব্রান্ড না থাকায় রপ্তানি কাঙ্খিত মাত্রায় উন্নীত হচ্ছে না। উদ্যেক্তাদের প্রণোদনা সহায়তা প্রাপ্তিতে আস্থার অভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারের বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিদ্যমান সমস্যা ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করার পাশাপাশি কর্মকৌশল নির্ধারণে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কার্যক্রম আরো গতিশীল হওয়া প্রয়োজন। ২০১৯ সালের তৈরিকৃত এসএমই নীতিমালাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে এবং সেখানে নতুন নতুন ব্যবসায়িক খাতগুলোকে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনায় সহায়তা করতে ট্রেড লাইসেন্স প্রদানে উদ্যোক্তাদের বসবাসের ঠিকানাকে ব্যবসায়িক ঠিকানা ব্যবহারের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করে যেতে পারে।
ব্রান্ডিং সাথে পণ্যের মান ও মেধাসত্ত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে আমাদের রপ্তানি বেশ বৃদ্ধি পাবে। এসএমই খাতের উন্নয়নে সরকারী সকল সংস্থার একটি সম্মিলিত উদ্যোগ একান্ত অপরিহার্য।’
বিসিক চেয়ারম্যান মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, তার প্রতিষ্ঠানের নানাবিধ সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও উদ্যোক্তাদের জন্য শিল্প পার্ক স্থাপন, স্বল্প হারে আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে এবং বিসিক শিল্প পার্কে শিল্প স্থাপনে হোল্ডিং ট্যাক্স অব্যাহিত দেওয়ার লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশী পণ্যের অর্ন্তভূক্তি আরো বাড়নোর জরুরী বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের পণ্যের প্যাকেজিং তেমন আকর্ষনীয় নয়, যেখানে উদ্যোক্তারা আরো মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। বিসিক চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘এসএমই খাতের বিভিন্ন ক্যাটাগরীর উদ্যোক্তাদের তথ্য সম্বলিত একটি ডাটাবেইজ তৈরীতে তার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’
ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ বলেন, ‘বৈশ্বিক বাজারে পণ্য প্রসারের জন্য দেশের ইতিবাচক ব্রান্ডিং তৈরির পাশাপাশি দেশের জনগনের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। পণ্যের ব্রান্ডিং-এর ক্ষেত্রে ভোক্তারা অভিরুচি, ইচ্ছা ও আগ্রহের বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরী। সেই সাথে সরকারি-বেসরকারিখাতের মধ্যকার সমন্বয় বাড়ানোর উপর জোরারোপ করেন।’
তিনি জানান, ইপিবিতে শীঘ্রই রপ্তানি ইকো-সিস্টেম এবং সিএমএসএমই হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হবে, যেখানে সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে অর্ন্তভূক্ত থাকবেন, যার মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের সহায়তা নিশ্চিত হবে। এছাড়াও তিনি জানান, আগামী বছরে ব্রাজিলের অনুষ্ঠিতব্য বাণিজ্য মেলায় বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ইপিবি কাজ করছে। দেশীয় উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষকদের সহায়তার প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর আয়োজন করা হবে তিনি অভহিত করেন।
অনুষ্ঠনের নির্ধারিত আলেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমইএসপিডি’র অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস্ ম্যানুফেকচার্ড অ্যান্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ)’র সভাপতি শামীম আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের উপ সচিব ড. মোঃ রাজ্জাকুল ইসলাম, ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন পরিচালক ও ক্রিয়েশন (প্রাইভেট) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রাশেদুল করিম মুন্না, বাংলাদেশ জুট গুডস্ এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল করিম পিন্টু এবং হাত বাক্স-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাফাত কাদের অংশগ্রহণ করেন।
মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এসএমইদের রপ্তানি সম্প্রসারণে পণ্যের লোগো এবং ভোক্তাদের চাহিদা মাথায় রেখে পণ্য তৈরি, প্রচার-প্রচারণা, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পার্টনারদের সাথে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক হতে জামানত বিহীন ৫ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির সার্কুলার প্রদান করা হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুয়ায়ী, গতবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট এসএমই লোনের ১২ শতাংশ উদ্যোক্তা জামানত বিহীন।’
শামীম আহমেদ আরও বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে সেই অঞ্চলের মানুষের রুচি, সংষ্কৃতি এমনকি পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পণ্যের ডিজাইন করা জরুরী।’
ড. মোঃ রাজ্জাকুল ইসলাম জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য প্রসারের লক্ষ্যে পণ্যর বহুমুখীকরণ ও উদ্ভাবনের উপর গুরুত্ব দিয়ে বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল একটি ইনোভেশন ল্যাব স্থাপনের পরিকল্পনা করছে।
মোঃ রাশেদুল করিম মুন্না বলেন, ‘বৈশ্বিক বাজারে পণ্য রপ্তানিতে কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেশন অতীব জরুরী, যদিও আমরা এক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে রয়েছি, তাই আমাদের সম্ভাবনাময় রপ্তানিমুখী পণ্যের কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেশন নিশ্চিত প্রয়োজন।’
শাফাত কাদের বলেন, ‘সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পারষ্পরিক শুল্কারোপের কারণে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও পণ্যের ব্রান্ডিং ও বাজারজাতকরণ সঠিক ভাবে করতে পারলে রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে, সেই সাথে আর্ন্তজাতিক বাজারে আমাদের রপ্তানি বাড়াতে পণ্যের প্যাকেজিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’ ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মোঃ সালিম সোলায়মান সহ সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শ্রীংলকা, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়া ইত্যাদি দেশে জিডিপিতে এ খাতের অবদান প্রায় ৫০ শতাংশ
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বাংলাদেশের জিডিপিতে এসএমইদের অবদান ২৮ শতাংশ হলেও, শ্রীংলকা, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার জিডিপিতে এখাতের অবদান প্রায় ৫০ শতাংশ। প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা না পাওয়া, সরকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা, অপ্রতুল অবকাঠামো, দক্ষতার স্বল্পতা, নীতি সহায়তা না পাওয়ার পাশাপাশি কঠিন শর্তাবলী, স্থানীয় ও বৈশ্বিক বাজারে অভিগম্যতার সীমাবদ্ধতা এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকার কারণে আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পখাতের উদ্যোক্তাদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সোমবার,(২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘সিএমএসএমই খাতের ব্র্যান্ডিং ও বিপণন চ্যালেঞ্জ: রপ্তানির সম্ভাবনা’ বিষয়ক ফোকাস গ্রুপ আলোচনায় ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ এসব কথা বলেন।
ডিসিসিআই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ ওবায়দুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক)-এর চেয়ারম্যান মোঃ সাইফুল ইসলাম এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ-এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করবেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ। এতে তিনি বলেন, ‘আমাদের শিল্পখাতের প্রায় ৯০ শতাংশ সিএমএসএমই যেখানে প্রায় ১১ দশমিক ৮ মিলিয়ন মানুষ কর্মরত আছে এবং জিডিপিতে এখাতের অবদান ২৮ শতাংশ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আমাদের রপ্তানির উপর অতিরিক্ত শুল্কারোপের কারণে বিশেষকরে তৈরি পোষাকের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতে খরচ বৃদ্ধি পাবে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশীয় উদ্যোক্তাদের জরুরী ভিত্তিতে ব্যয় হ্রাসে উদ্ভাবন ও সক্ষমতা বাড়ানোর উপর নজর দিতে হবে। আমাদের এসএমইরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঋণ সহায়তা না পাওয়া, অপ্রতুল অবকাঠামো, দক্ষতার স্বল্পতা, নীতি সহায়তা না পাওয়ার পাশাপাশি কঠিন শর্তাবলী, বাজারে অভিগম্যতার সীমাবদ্ধতা এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে থাকার মুখোমুখি হয়ে থাকেন। এছাড়াও পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের জটিলতা, পণ্য মূল্যের উচ্চ হার, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার দক্ষতার অভাব প্রভৃতি বিষয়গুলো আমাদের উদ্যোক্তাদের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে। এসএমইদের উন্নয়নে পণ্যের সনদ ও কমপ্লায়েন্স সহযোগিতা প্রদান, টেকসই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা প্রদান, পণ্যের মান উন্নয়ন ও ব্র্যান্ডিং, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণে সরকারী সহায়তা ও ক্লাস্টার উন্নয়ন, সমন্বিত নীতি সহায়তা, সিএমএসএমই ডাটাবেইজ তৈরি, বেকওয়ার্ড লিংকেজ খাতের সম্প্রসারণে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষন এবং স্টার্টআপ উদ্যোক্তা উন্নয়নে সার্বিক সহায়তার আহ্বান জানাচ্ছি।’
শিল্প সচিব মোঃ ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ব্রান্ডিং ও মার্কেটিং আমাদের সিএমএসএমইদের জন্য অতবী গুরুত্বপূর্ণ, সেই সাথে চ্যালেঞ্জিংও। তবে নিজেদের বৈশ্বিক ব্রান্ড না থাকায় রপ্তানি কাঙ্খিত মাত্রায় উন্নীত হচ্ছে না। উদ্যেক্তাদের প্রণোদনা সহায়তা প্রাপ্তিতে আস্থার অভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারের বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিদ্যমান সমস্যা ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করার পাশাপাশি কর্মকৌশল নির্ধারণে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কার্যক্রম আরো গতিশীল হওয়া প্রয়োজন। ২০১৯ সালের তৈরিকৃত এসএমই নীতিমালাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে এবং সেখানে নতুন নতুন ব্যবসায়িক খাতগুলোকে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনায় সহায়তা করতে ট্রেড লাইসেন্স প্রদানে উদ্যোক্তাদের বসবাসের ঠিকানাকে ব্যবসায়িক ঠিকানা ব্যবহারের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করে যেতে পারে।
ব্রান্ডিং সাথে পণ্যের মান ও মেধাসত্ত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে আমাদের রপ্তানি বেশ বৃদ্ধি পাবে। এসএমই খাতের উন্নয়নে সরকারী সকল সংস্থার একটি সম্মিলিত উদ্যোগ একান্ত অপরিহার্য।’
বিসিক চেয়ারম্যান মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, তার প্রতিষ্ঠানের নানাবিধ সীমাবদ্ধতা থাকা সত্বেও উদ্যোক্তাদের জন্য শিল্প পার্ক স্থাপন, স্বল্প হারে আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে এবং বিসিক শিল্প পার্কে শিল্প স্থাপনে হোল্ডিং ট্যাক্স অব্যাহিত দেওয়ার লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশী পণ্যের অর্ন্তভূক্তি আরো বাড়নোর জরুরী বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের পণ্যের প্যাকেজিং তেমন আকর্ষনীয় নয়, যেখানে উদ্যোক্তারা আরো মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। বিসিক চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘এসএমই খাতের বিভিন্ন ক্যাটাগরীর উদ্যোক্তাদের তথ্য সম্বলিত একটি ডাটাবেইজ তৈরীতে তার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’
ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ বলেন, ‘বৈশ্বিক বাজারে পণ্য প্রসারের জন্য দেশের ইতিবাচক ব্রান্ডিং তৈরির পাশাপাশি দেশের জনগনের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। পণ্যের ব্রান্ডিং-এর ক্ষেত্রে ভোক্তারা অভিরুচি, ইচ্ছা ও আগ্রহের বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরী। সেই সাথে সরকারি-বেসরকারিখাতের মধ্যকার সমন্বয় বাড়ানোর উপর জোরারোপ করেন।’
তিনি জানান, ইপিবিতে শীঘ্রই রপ্তানি ইকো-সিস্টেম এবং সিএমএসএমই হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হবে, যেখানে সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে অর্ন্তভূক্ত থাকবেন, যার মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের সহায়তা নিশ্চিত হবে। এছাড়াও তিনি জানান, আগামী বছরে ব্রাজিলের অনুষ্ঠিতব্য বাণিজ্য মেলায় বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ইপিবি কাজ করছে। দেশীয় উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষকদের সহায়তার প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর আয়োজন করা হবে তিনি অভহিত করেন।
অনুষ্ঠনের নির্ধারিত আলেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমইএসপিডি’র অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস্ ম্যানুফেকচার্ড অ্যান্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ)’র সভাপতি শামীম আহমেদ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের উপ সচিব ড. মোঃ রাজ্জাকুল ইসলাম, ঢাকা চেম্বারের প্রাক্তন পরিচালক ও ক্রিয়েশন (প্রাইভেট) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রাশেদুল করিম মুন্না, বাংলাদেশ জুট গুডস্ এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল করিম পিন্টু এবং হাত বাক্স-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাফাত কাদের অংশগ্রহণ করেন।
মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এসএমইদের রপ্তানি সম্প্রসারণে পণ্যের লোগো এবং ভোক্তাদের চাহিদা মাথায় রেখে পণ্য তৈরি, প্রচার-প্রচারণা, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পার্টনারদের সাথে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক হতে জামানত বিহীন ৫ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির সার্কুলার প্রদান করা হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুয়ায়ী, গতবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট এসএমই লোনের ১২ শতাংশ উদ্যোক্তা জামানত বিহীন।’
শামীম আহমেদ আরও বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে সেই অঞ্চলের মানুষের রুচি, সংষ্কৃতি এমনকি পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পণ্যের ডিজাইন করা জরুরী।’
ড. মোঃ রাজ্জাকুল ইসলাম জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য প্রসারের লক্ষ্যে পণ্যর বহুমুখীকরণ ও উদ্ভাবনের উপর গুরুত্ব দিয়ে বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল একটি ইনোভেশন ল্যাব স্থাপনের পরিকল্পনা করছে।
মোঃ রাশেদুল করিম মুন্না বলেন, ‘বৈশ্বিক বাজারে পণ্য রপ্তানিতে কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেশন অতীব জরুরী, যদিও আমরা এক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে রয়েছি, তাই আমাদের সম্ভাবনাময় রপ্তানিমুখী পণ্যের কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেশন নিশ্চিত প্রয়োজন।’
শাফাত কাদের বলেন, ‘সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পারষ্পরিক শুল্কারোপের কারণে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও পণ্যের ব্রান্ডিং ও বাজারজাতকরণ সঠিক ভাবে করতে পারলে রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে, সেই সাথে আর্ন্তজাতিক বাজারে আমাদের রপ্তানি বাড়াতে পণ্যের প্যাকেজিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’ ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মোঃ সালিম সোলায়মান সহ সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তাবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।