ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
দেশে ডেকোরেটিভ কাজে ব্যবহৃত রঙে ১ লাখ ৯০ পিপিএম পর্যন্ত বিপজ্জনক ভারী ধাতু সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যেখানে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী রঙে সিসা ব্যবহারের সর্বোচ্চ মাত্রা ৯০ পিপিএম। দেশে রং বাজারজাতকারী বহুজাতিক ও বড় রঙের ব্র্যান্ডগুলো সিসামুক্ত রং উৎপাদনে অনেকাংশে সফল হলেও এসব বিপজ্জনক রং উৎপাদন করছে ক্ষুদ্র, অনিবন্ধিত বা লেবেলবিহীন রঙের উৎপাদনকারীরা। যারা বাজারের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ দখল করে রয়েছে। মঙ্গলবার,(২৮ অক্টোবর ২০২৫) এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন- এসডোর এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
লেড এক্সপোজার এলিমিনেশন প্রজেক্ট ও ইন্সটিগ্লিও এর সহযোগিতায় পরিচালিত ‘রঙে সিসার উপস্থিতি ও সিসামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অগ্রগতি মূল্যায়ন’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রেস ব্রিফিং হয়েছে লালমাটিয়া এসডোর প্রধান কার্যালয়ে। এসময় জানানো হয়, গবেষণায় পরীক্ষিত মোট ১৬১টি নমুনার মধ্যে ৯৩টি (৫৭.৮ শতাংশ) নমুনায় নিরাপদ মাত্রা (৯০ পিপিএম-এর কম) পাওয়া গেছে। নমুনাগুলো শীর্ষস্থানীয় ন্যাশনাল ও মাল্টিন্যাশনাল উভয় ব্র্যান্ডের রং।
তবে ৪২.২ শতাংশ (১৬১টির মধ্যে ৬৮টি) নমুনা বিএসটিআই নির্ধারিত সিসার নিরাপদ মাত্রা ৯০ পিপিএম-এর অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে ২৬.২ শতাংশ নমুনায় ১,০০০ পিপিএম-এর বেশি এবং ৩.১ শতাংশ নমুনায় ৫০,০০০ পিপিএম-এর বেশি সিসা পাওয়া গেছে।
নির্ধারিত মাত্রা অতিক্রমকারী এই ব্র্যান্ডগুলো মূলত ক্ষুদ্র, স্থানীয় বা অনিবন্ধিত উৎপাদক, যাদের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকির অভাব রয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে এসডোর চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ‘আমরা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সব প্রকার রং থেকে সিসা নির্মূল করার জন্য কর্তৃপক্ষ ও শিল্প খাতের স্টেকহোল্ডারদের কাছে অবিলম্বে পদক্ষেপ দাবি করছি। উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহারে সম্মিলিত দায়বদ্ধতার পক্ষে আমরা কথা বলছি।’
অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব কবির মিলন বলেন, ‘আমদানি নীতিতে রং আমদানির ক্ষেত্রে লেড ফ্রি করতে হবে, তাহলে আমরা একটা লাগাম টানতে পারবো। যেগুলো আসবে, সেগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। যেসব ভালো ব্র?্যান্ড লেড ফ্রি রং করছে, তাদের ধন্যবাদ। তারা ঘোষণা দিয়ে এটা করছে, সেটা প্রসংশার দাবি রাখে। তাদের আরও সুরক্ষার জন্য শিল্প ক্ষেত্রে লেড ক্রোমেড পাউডার আমদানিও নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করা দরকার। তাহলে শুধু রং নয়, খাবার থেকে শুরু করে অনেক কিছুর ক্ষেত্রে আমরা এ মারাত্মক ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত হবো।’
এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘গবেষণাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, কেবল আইন প্রণয়ন নয়, তার যথাযথ বাস্তবায়নও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের লক্ষ্য কাউকে দোষারোপ করা নয় বরং একটি সম্মিলিত সংকট মোকাবিলা করা, যেখানে শিল্পকলা, উৎপাদন এবং দৈনন্দিন জীবনে নিরাপত্তাকে অবশ্যই আপসহীন একটি অংশ হতে হবে।’
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বলেন, ‘আমরা যে রং ব্যবহার করি তা যদি নিরাপদ না হয় তবে এটি প্রতিটি পরিবার ও শিল্পীর জন্য জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং মানসিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে সীসামুক্ত ভবিষ্যৎ অর্জনে আমরা সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ক্যাঙ্গারু ব্র্যান্ডের একটি রঙে ১ লাখ ৯০ হাজার পিপিএম সিসার সর্বোচ্চ উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে ওই গবেষণায়। এরপরই রয়েছে ইউরো ব্র?্যান্ডের রং, যা ১ লাখ ৭০ পিপিএম। অন্যান্য উচ্চ মাত্রার সিসাযুক্ত নমুনার মধ্যে রয়েছে নাহার (৮১,০০০ পিপিএম), নিউ টুয়া (৭৪,০০০ পিপিএম), টপ সিল (৫৪,০০০ পিপিএম), মদিনা বেটার রুবিল্যাক (১৯,০০০ পিপিএম), মেঘনা প্লাস (১৮,০০০ পিপিএম), র?্যামি (১৮,০০০ পিপিএম) এবং তুর্কি (১৬,০০০ পিপিএম)। এসব রং ছিল হলুদ বা সোনালি-হলুদ রঙের অয়েল, সন্ডেন্ট-ভিত্তিক ডেকোরেটিভ রং। হলুদ রঙে সর্বোচ্চ সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। লাল ও সাদা রঙেও সিসার উচ্চ মাত্রা পাওয়া গেছে। এ তিনটি রং বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। কিছু রং শিল্পকারখানায় ব্যবহারের জন্য বাজারজাত করা হলেও সেগুলো ডেকোরেটিভ রং হিসেবে বিক্রি হয়।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, মাত্র ২১.৬ শতাংশ রঙে (১৬২টির মধ্যে ৩৫টি) ‘সিসামুক্ত’ বা ‘পরিবেশ-বান্ধব’ লেবেল ছিল। আর জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেকেরও বেশি দোকানদার বিএসটিআই-এর সিসার নির্ধারিত মাত্রা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। এ গবেষণায় ১০,০০০ পিপিএম-এর বেশি সিসাযুক্ত সমস্ত নমুনা ক্ষুদ্র বা অনানুষ্ঠানিক উৎপাদকদের কাছ থেকে এসেছে। চীন, সিঙ্গাপুর ও কিছু অলেখিত আমদানি করা নমুনাগুলোতেও অসঙ্গতিপূর্ণ সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং কাস্টমস স্ক্রিনিংয়ের দুর্বলতার ইঙ্গিত দিয়েছে গবেষণায়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএসটিআই, পরিবেশ অধিদপ্তর, পেইন্ট অ্যাসোসিয়েশন ও কয়েকটি কোম্পানির প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
দেশে ডেকোরেটিভ কাজে ব্যবহৃত রঙে ১ লাখ ৯০ পিপিএম পর্যন্ত বিপজ্জনক ভারী ধাতু সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যেখানে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী রঙে সিসা ব্যবহারের সর্বোচ্চ মাত্রা ৯০ পিপিএম। দেশে রং বাজারজাতকারী বহুজাতিক ও বড় রঙের ব্র্যান্ডগুলো সিসামুক্ত রং উৎপাদনে অনেকাংশে সফল হলেও এসব বিপজ্জনক রং উৎপাদন করছে ক্ষুদ্র, অনিবন্ধিত বা লেবেলবিহীন রঙের উৎপাদনকারীরা। যারা বাজারের ১০ থেকে ১৫ শতাংশ দখল করে রয়েছে। মঙ্গলবার,(২৮ অক্টোবর ২০২৫) এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন- এসডোর এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
লেড এক্সপোজার এলিমিনেশন প্রজেক্ট ও ইন্সটিগ্লিও এর সহযোগিতায় পরিচালিত ‘রঙে সিসার উপস্থিতি ও সিসামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অগ্রগতি মূল্যায়ন’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রেস ব্রিফিং হয়েছে লালমাটিয়া এসডোর প্রধান কার্যালয়ে। এসময় জানানো হয়, গবেষণায় পরীক্ষিত মোট ১৬১টি নমুনার মধ্যে ৯৩টি (৫৭.৮ শতাংশ) নমুনায় নিরাপদ মাত্রা (৯০ পিপিএম-এর কম) পাওয়া গেছে। নমুনাগুলো শীর্ষস্থানীয় ন্যাশনাল ও মাল্টিন্যাশনাল উভয় ব্র্যান্ডের রং।
তবে ৪২.২ শতাংশ (১৬১টির মধ্যে ৬৮টি) নমুনা বিএসটিআই নির্ধারিত সিসার নিরাপদ মাত্রা ৯০ পিপিএম-এর অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে ২৬.২ শতাংশ নমুনায় ১,০০০ পিপিএম-এর বেশি এবং ৩.১ শতাংশ নমুনায় ৫০,০০০ পিপিএম-এর বেশি সিসা পাওয়া গেছে।
নির্ধারিত মাত্রা অতিক্রমকারী এই ব্র্যান্ডগুলো মূলত ক্ষুদ্র, স্থানীয় বা অনিবন্ধিত উৎপাদক, যাদের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকির অভাব রয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে এসডোর চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ‘আমরা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সব প্রকার রং থেকে সিসা নির্মূল করার জন্য কর্তৃপক্ষ ও শিল্প খাতের স্টেকহোল্ডারদের কাছে অবিলম্বে পদক্ষেপ দাবি করছি। উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহারে সম্মিলিত দায়বদ্ধতার পক্ষে আমরা কথা বলছি।’
অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব কবির মিলন বলেন, ‘আমদানি নীতিতে রং আমদানির ক্ষেত্রে লেড ফ্রি করতে হবে, তাহলে আমরা একটা লাগাম টানতে পারবো। যেগুলো আসবে, সেগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে। যেসব ভালো ব্র?্যান্ড লেড ফ্রি রং করছে, তাদের ধন্যবাদ। তারা ঘোষণা দিয়ে এটা করছে, সেটা প্রসংশার দাবি রাখে। তাদের আরও সুরক্ষার জন্য শিল্প ক্ষেত্রে লেড ক্রোমেড পাউডার আমদানিও নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করা দরকার। তাহলে শুধু রং নয়, খাবার থেকে শুরু করে অনেক কিছুর ক্ষেত্রে আমরা এ মারাত্মক ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত হবো।’
এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘গবেষণাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, কেবল আইন প্রণয়ন নয়, তার যথাযথ বাস্তবায়নও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের লক্ষ্য কাউকে দোষারোপ করা নয় বরং একটি সম্মিলিত সংকট মোকাবিলা করা, যেখানে শিল্পকলা, উৎপাদন এবং দৈনন্দিন জীবনে নিরাপত্তাকে অবশ্যই আপসহীন একটি অংশ হতে হবে।’
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা বলেন, ‘আমরা যে রং ব্যবহার করি তা যদি নিরাপদ না হয় তবে এটি প্রতিটি পরিবার ও শিল্পীর জন্য জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং মানসিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে সীসামুক্ত ভবিষ্যৎ অর্জনে আমরা সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ক্যাঙ্গারু ব্র্যান্ডের একটি রঙে ১ লাখ ৯০ হাজার পিপিএম সিসার সর্বোচ্চ উপস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে ওই গবেষণায়। এরপরই রয়েছে ইউরো ব্র?্যান্ডের রং, যা ১ লাখ ৭০ পিপিএম। অন্যান্য উচ্চ মাত্রার সিসাযুক্ত নমুনার মধ্যে রয়েছে নাহার (৮১,০০০ পিপিএম), নিউ টুয়া (৭৪,০০০ পিপিএম), টপ সিল (৫৪,০০০ পিপিএম), মদিনা বেটার রুবিল্যাক (১৯,০০০ পিপিএম), মেঘনা প্লাস (১৮,০০০ পিপিএম), র?্যামি (১৮,০০০ পিপিএম) এবং তুর্কি (১৬,০০০ পিপিএম)। এসব রং ছিল হলুদ বা সোনালি-হলুদ রঙের অয়েল, সন্ডেন্ট-ভিত্তিক ডেকোরেটিভ রং। হলুদ রঙে সর্বোচ্চ সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। লাল ও সাদা রঙেও সিসার উচ্চ মাত্রা পাওয়া গেছে। এ তিনটি রং বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। কিছু রং শিল্পকারখানায় ব্যবহারের জন্য বাজারজাত করা হলেও সেগুলো ডেকোরেটিভ রং হিসেবে বিক্রি হয়।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, মাত্র ২১.৬ শতাংশ রঙে (১৬২টির মধ্যে ৩৫টি) ‘সিসামুক্ত’ বা ‘পরিবেশ-বান্ধব’ লেবেল ছিল। আর জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেকেরও বেশি দোকানদার বিএসটিআই-এর সিসার নির্ধারিত মাত্রা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। এ গবেষণায় ১০,০০০ পিপিএম-এর বেশি সিসাযুক্ত সমস্ত নমুনা ক্ষুদ্র বা অনানুষ্ঠানিক উৎপাদকদের কাছ থেকে এসেছে। চীন, সিঙ্গাপুর ও কিছু অলেখিত আমদানি করা নমুনাগুলোতেও অসঙ্গতিপূর্ণ সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং কাস্টমস স্ক্রিনিংয়ের দুর্বলতার ইঙ্গিত দিয়েছে গবেষণায়।
সংবাদ সম্মেলনে বিএসটিআই, পরিবেশ অধিদপ্তর, পেইন্ট অ্যাসোসিয়েশন ও কয়েকটি কোম্পানির প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।